প্রিয় স্নিগ্ধা, কোভিড-নাইনটিনের এই বিষণ্ণ দিনগুলিতে,
আমার রোজ সকালটা শুরু হয় তোমার কবিতা পড়ে।
তোমার নতুন কোনও নির্মাণ ছুঁয়ে দেখার অপেক্ষা নিয়ে
থাকতে…আমার ভালো লাগে। তোমার ধৈর্য, তোমার নিষ্ঠা
…আমাকে প্রতিদিনই মুগ্ধ, আবিষ্ট করে রাখে।
তোমার কিছু লেখায় মিশে থাকে শেকড়স্পর্শী অনুভব,
যা আমাকে এই দুঃসময়েও শান্ত ও স্থির করে রাখে।
এই সময়, মনের সমস্ত শক্তি হারিয়ে, দুমড়ে মুচড়ে আছি যখন,
তখন তোমার কবিতা আমাকে ভাবায়, এক নির্ভার আশ্রয় দেয়,
আমার মধ্যে শুভ কিছু বোধের উদয় ঘটায়।
তোমার কবিতা আমাকে শেখায়,
এখন সব কিছুই মেনে নেওয়া ছাড়া
আর কিছুই করার নেই। তাই,
আমি এখন মেনে নিচ্ছি, মেনে নেবো,
…যা-কিছু হয় হোক।
তোমার লেখা আমাকে এই আশ্চর্য শক্তি এনে দিল!
আমি চাই, তোমার কলমের সুস্থ আয়ু হোক।
এ পৃথিবীতে তুমি একজন শব্দজাদুকর হয়ে বেঁচে থাকো,
…প্রার্থনা রইল। তোমাকে ভালোবাসতে পেরে একধরনের
শিখরছোঁয়ার অহংবোধ কাজ করে আমার মধ্যে, ইদানীং।
স্নিগ্ধা, বেশ কিছুদিন ধরে খেয়াল করছি,
তুমি ভীষণ ভালো গাইতেও পারো।
গানের শেষদিকটায় এসে যখন তুমি বলো,
অ্যাই ছেলে! এবার একটা তালি দাও তো!
…আমি তখন সজোরে নিজের সাথেই হেসে উঠি।
তুমি কখনও তা শুনতে পাও না, কেননা
তোমার নিজস্ব কিছু মগ্নতা আছে, তুমি একইসাথে,
অনেক কিছুর মাঝে হারিয়ে থাকো।
তোমার এই...মুহূর্তে হারিয়েযাওয়া,
আবার মুহূর্তেই আমার কাছে ফিরেআসা,
…দুটোই আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি।
ইতোমধ্যেই, তুমি খুব ভালো করেই বুঝেছ,
আমি তোমাকে কিছুই বলতে পারি না, গুছিয়ে।
তুমি যা-ই বল, তার উত্তরে, আমি কেবলই,
কিছু হ্যাঁ কিংবা না, এই দুইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকি।
জানো, আজকাল তোমার কথা শুনতে শুনতে…
আমি আমার চোখের ভেতরের কান্নাটা…খুলে পাশে রাখি,
ভুলে যাই বুকের ভেতর জমে জমে থাকা…কিছু দীর্ঘশ্বাস।
তুমি আমি কখনও শুধুই নিজস্ব আলাপ নিয়ে থাকি না,
আমাদের আলাপে থাকে সমস্ত পৃথিবীর নানান বৃত্তান্ত।
তোমাকে শুনতে শুনতে তোমার হৃৎপিণ্ডের সাহসটা বুঝি,
তোমার হৃদয়ের ক্ষত বুঝি,…ক্ষোভ কিংবা দ্রোহ…তা-ও বুঝি।
বুঝি, মানুষের মৃত্যুতে তোমার কষ্টটা।
স্পষ্ট হয় তোমার মানবিকবোধ,
স্পষ্ট হয় আরও অনেক কিছুই।
তুমি সুস্থতা নিয়ে বেঁচে থেকো, স্নিগ্ধা!
তুমি কবিতা না লিখলে আরও কিছু মানুষ
অবসাদ কাটাতে শুধুই মারণাস্ত্র বানাবে!