আমি তখন স্কুলে। মানুষটা আমাকে সেই তখন থেকেই নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে। আমি অনুভব করি, তার জন্য আমার কোনো অনুভূতি নেই জেনেও মানুষটা আমাকে নিয়ে ভেবে ভেবে তার পুরো জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে। অথচ আমি সেই তখন থেকে এখন পর্যন্ত কখনোই সেই মানুষটাকে ভালোই লাগাতে পারিনি। অনেক চেষ্টা করেছি, নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি যে, তার চেয়ে ভালো আমাকে আর কেউই রাখবে না। এমনকী আমার ফ্যামিলিও একসময় আমাকে বোঝাত, কিন্তু আমি কেন জানি কোনোভাবেই তাকে মন থেকে কখনোই ভালো লাগাতে পারি না।
আমি জানি, সে আমাকে অনেক ভালো রাখবে, তার সাথে থাকলে আমি অনেক সুখে থাকব, কিন্তু তারপরও আমার তার প্রতি সেই ভালোলাগা বা ভালোবাসাটা কখনোই কাজ করে না। এর কারণ, যে-দিকগুলো বিবেচনা করে কোনো মানুষকে আমার ভালো লাগে, তার কোনোটাই তার মাঝে নেই; এই যেমন পার্সোনালিটি, পড়াশোনা। আমি আবার একটু স্যাপিয়োসেক্সুয়াল ইন নেচার, আর সেদিক থেকে সে একদমই ওরকম ভালোলাগার মতো কিছু নয়।
এবার আসি আসল ঘটনায়। এমন একটা মানুষ আমার পেছনে ১২ বছর ঘোরার পরও আমি তাকে যেহেতু ভালোই লাগাতে পারিনি, তাই আর তাকে বিয়েও করিনি। আমার যেমন কাউকে ভালো লাগে, ঠিক তেমনই একজনকে বিয়ে করি। এরপর যা ঘটার, তা-ই ঘটে। যেখানে কোনো ভালোলাগা ছিল না, সেখানেই সব সুখ ছিল; আর যার প্রতি অনেক ভালোলাগা-ভালোবাসা ছিল, সেখানেই আমার কোনো সুখ হলো না। এটা আগের জনের অভিশাপ বা দীর্ঘশ্বাসের ফল হয়তো।
যা-ই হোক, একসময় নিজের সব ভালোলাগা-ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে সরেই আসি, কারণ আর কোনোভাবেই সেখানে সংসার করা সম্ভব হচ্ছিল না।
সেইসাথে সব পুরুষ মানুষের উপরও কেন জানি সকল বিশ্বাসই আমার অনেক হালকা হয়ে যায়; মানে, আমি আর মন থেকে কাউকেই বিশ্বাস করতে পারি না। আমার শুধুই মনে হয়, পরবর্তীতে যে আসবে, সে-ও হয়তো ক-দিন ভালোর অভিনয় করে আবার তার আসল রূপ দেখানো শুরু করবে। আমি সেই আস্থাটা আর কারও উপরই রাখতে পারি না—কেবলই ওই আগের সেই মানুষটা বাদে।
আমি এখনও বুঝি, এই পৃথিবীতে আমি যদি চোখ বন্ধ করে কাউকে বিশ্বাস করতে পারি, যে আমাকে ভালো রাখবে, তাহলে সেটা একমাত্র সে-ই; সে বাদে আর কেউই রাখতে পারবে না, সেটাও বলছি না, কিন্তু কারও উপরই সেই বিশ্বাসটা আমার পুরোপুরি নেই, যেটা ওর প্রতি আমার আছে।
আমার ডিভোর্স হয়ে যাবার পরও মানুষটা আমাকে ঠিক সেভাবেই আগের মতোই চায়। আমিও জীবনে শিক্ষা হবার পর বুঝতে শিখেছি, আমি আসলে তার কাছে থাকলেই ভালো থাকব। অনেক তো ভালোলাগাকে প্রাধান্য দিয়েছি, তেমন কাউকে দেখে বিয়েও করেছি। লাভ কী হলো? সুখ তো আর পেলাম না! তার চেয়ে বরং এখন আর ভালোলাগা না খুঁজে তাকেই বিয়ে করি! ভালোলাগায় না হোক, সুখে তো অন্তত থাকব। সে আমাকে অন্তত ভালো তো রাখবে অনেক!
কিন্তু সমস্যাটা সেটাই, যেটা আগেও ছিল—আমার কেন জানি মন থেকেই আর সেই সায়টা আসে না। মানে, আমি তাকে আমার হাজব্যান্ড হিসেবে মানতেই পারি না। তার প্রতি আমার কেন জানি কোনো মায়া, আবেগ, ভালোলাগা, মুগ্ধতা কোনোটাই কাজ করে না।
আবার অন্য কাউকে এখন বিয়ে করতে বেশ ভয় লাগে, যেহেতু এমন কোনো কনফিডেন্স আর কারও উপর কাজও করে না, যে আমাকে তার মতো করে ভালো রাখবে। কী যে একটা বিপদে আছি আমি!
একদিকে না পারি তাকে মেনে নিতে, আবার অন্যদিকে এটাও বুঝি যে, সে-ই সবচেয়ে বেশি আমায় ভালো রাখবে। এই কনফিউশনের জ্বালায় আমি সামনে এগোতেই পারছি না।
আপনি আমার জায়গায় হলে কী করতেন? আমার এই ব্যাপারটা নিয়ে আপনার মতামত কী?