(আবৃত্তির স্ক্রিপ্ট-আকারে)
শিরোনাম: জন্মান্তরের ছায়াস্নানে
বাচনভঙ্গি: আবেগ-স্নিগ্ধ, ধীর, মাঝে মাঝে ব্যথাভেজা কণ্ঠে থেমে যাওয়া
[সৌম্য আবহ: হালকা বাতাস, দূরের ঘণ্টাধ্বনি]
তিথি (মৃদু গলায়): ভুলে যেয়ো আমায়,
আমি নিভে-যাওয়া প্রদীপের আঁধারেই থেকে যাব।
নীড় (চঞ্চল উদ্বেগে): ইসস্! তোমার শরীর তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে!
তিথি… এই শরীর নিয়ে এত উদাসীন কেন তুমি?
তিথি (মৃদু বিষাদে): আমার একান্তে নিঃসঙ্গ হয়ে যাবার রাতে
তোমার বুকে আশ্রয় চেয়েছিলাম…
অনাকাঙ্ক্ষিত নিখোঁজ সেই মুহূর্তের কথা—
তুমি জানতে চাওনি কখনও।
নীড় (ক্ষীণ প্রতিবাদে): এমন হেঁয়ালি করছ কেন, তিথি?
সময় খুব সামান্য… এসো, অনুভব করি।
আমার সব অভিমান তোমার আত্মায় জড়িয়ে নাও।
আমাকে গ্রহণ করো—জোরে নিঃশ্বাস নাও,
যেন আমার শরীরটা একটু আরও পুড়ে যায়...
(পজ – হালকা সংগীত)
তিথি (কাঁপা কণ্ঠে): তুমি কি বুঝতে পারো না, আমি কতটা অসহায়?
নীড় (নিচুগলায়): আমার আজ ভয় করছে, তিথি।
তিথি (আদরে, একটু মজা করে): কীসের ভয়, পাগল? আমি আছি তো... তোমার বুকের ভেতর।
নীড়: জানি না… তোমাকে হারানোর ভয়।
তোমার জন্যই শুধু—
আমি কি 'অন্য এক আমি' হয়ে যাই?
তিথি (ধরাগলায়): এত বেশি কাছে এসো না, নীড়…
আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে তো!
তুমি এত অস্থির কেন?
নীড়: তোমার সব কিছুতে আমার অধিকার থাকুক।
নিজেকে কেন এত কষ্ট দাও?
বলেছি তো—তোমাকে ছেড়ে যাব না।
এবার অন্তত… নিজের যত্ন নিয়ো।
তিথি: নিজেকে নিয়ে এই উদাসীনতাই
তোমার কাছে পৌঁছে দেয় আমার অনুভূতি।
আমার যত অসুখ—তোমার প্রতীক্ষাতেই জেগে থাকে।
‘তা যদি তুমি জানতে… নীড়।’
(পজ – দীর্ঘ নীরবতা)
নীড়: আমাকে ভালোবাসলে, নিজেকে অবহেলা কোরো না, তিথি।
তিথি (অস্ফুট গলায়): অনেক ভালোবাসার পর বুঝলাম—
আমি আসলে তোমার কেউই নই।
কখনও কি বলেছিলে,
আমি তোমার বুকের খাঁচায় রাখা এক নীল পাখি…
যাকে মুক্ত রেখেই তুমি দায়মুক্ত?
নীড় (সজোরে): বলার প্রয়োজন হয়নি—
তুমিই তো আমার সব।
নীল পাখিটা আমার…
তাকে আলাদা করে আটকে রাখার দায় নেই,
আর দায়মুক্ত হবার তো প্রশ্নই আসে না।
(সাউন্ডইফেক্ট: সিগারেট জ্বালানোর শব্দ, দূর থেকে ঝিরঝির বৃষ্টি)
তিথি (অবিচল কণ্ঠে): কাছে থাকতে এত দ্বিধা তোমার?
আমাকে অহেতুক সারিয়ে তোলার বৃথা চেষ্টা কোরো না।
আমি যে মৃত্যুকে ডেকেছি…
(পজ)
…তা কি তোমার অজানা?
নীড় (ব্যাকুলতায়): থামো! এত সিগারেট খাও কেন, তিথি?
এটা ভালো অভ্যাস নয়।
তিথি (হালকা হাসি-মেশানো স্বরে): তোমার অভ্যস্ততায় একবার জড়িয়ে ধরো আমায়…
দেখো, সিগারেট ছেড়ে দেবো!
এই যে ধোঁয়া—
এটাই তোমার ছায়া আবছা করে দিতে জানে।
নীড়: আমার ছায়া কি তোমার কষ্টের কারণ?
তিথি (ধীর, মায়াভরা): নাহ্… সুখের।
বেশি সুখ আমি সহ্য করতে পারি না।
তোমার ক্ষীণ ছায়াই আমার জন্য অধিক।
(সাউন্ডইফেক্ট: পদচারণার ধ্বনি, হালকা বাতাস)
নীড় (চমকে): এতদিন পর এ পথে এলে?
তিথি, খুঁজছিলে আমায়?
তিথি (ঠান্ডা গলায়): না।
আমায় আর খুঁজতে হবে না,
আমি আর আসব না।
নীড় (চোখে জল): এত শক্ত করে কেউ আগে জড়িয়ে ধরেছে তোমায়?
বলো না…
দেখি, তুমি কীভাবে না এসে পারো!
তিথি (আবছা কণ্ঠে):
বদলে-যাওয়া নিয়মের বাইরেও
কিছু আত্মকথন থেকে যায়—
যা দু-হাতে আগলে রাখলেই মনে হয়…
তোমাকেই ছুঁয়ে আছি।
(সাউন্ডইফেক্ট: কেটলিতে চা ফুটছে।)
নীড় (স্মিত হেসে): তুমি ভীষণ ভালো চা বানাও—
বড্ড নেশা নেশা লাগে।
তিথি (দৃষ্টি ঘন করে): তুমি এত শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকো কেন, নীড়?
জানো…
আমার চোখে তোমার জন্য মায়া জমে থাকে।
(নিঃশ্বাস ফেলে)
তোমার ফিরিয়ে-দেওয়া মুহূর্তগুলো
আমার অশ্রুতে ছটফট করে মরে কিছুক্ষণ।
তাই… আজ আমার চোখে তাকিয়ো না, নীড়।
নীড় (নরম গলায়): এত ভালোবাসো কেন আমায়?
তিথি (স্পষ্ট উচ্চারণে): বলতে ইচ্ছে করে…
তুমি আমার ‘পৃথিবী’।
নীড়: তোমার অনুভব খুব প্রখর।
তিথি (শেষবারের মতো): একগুচ্ছ সাদা গোলাপ রেখে গেলাম।
সময় করে আমার কবরে দিয়ে এসো…
[শেষ আবহ: ধীরে ধীরে নিঃশব্দ হয়ে-যাওয়া হাওয়া, হালকা বৃষ্টির শব্দ]
নিঃশব্দ পাঠ:
> তিথির না-ফেরা একান্ত যাত্রায়,
নীড় আজও দাঁড়িয়ে—
একটা নিঃশব্দ কবিতার মতো…
(শেষ।)