“ধৃতি” ও “তিতিক্ষা”—এই দুই মিলেই গঠিত “পরম-বীর্য”, যা অহিংসা ও সহিষ্ণুতার মধ্য দিয়ে আত্মার স্থিতি স্থাপন করে। এই স্থিতিই আত্মার মুক্তির ভূমি, কারণ যে-আত্মা অচল, সে আর কোনো বাহ্যিক প্ররোচনায় টলে না।
অন্যদিকে শাক্ত তন্ত্রে এই একই নীতি রূপান্তরিত হয়েছে “জগদ্ধাত্রী” তত্ত্বে। শ্রীতত্ত্বচিন্তামণি, কাত্যায়নী তন্ত্র ও নিত্যশোড়শারণব তন্ত্র—এইসব গ্রন্থে তাঁকে বলা হয়েছে “স্থিতিদায়িনী”, “সত্ত্বগুণ-প্রধানা”, ও “ধারকশক্তি”—অর্থাৎ সেই চেতনা, যিনি সমগ্র বিশ্বকে নিজের অন্তর্নিহিত ভারসাম্যে ধারণ করেন। জগদ্ধাত্রী এখানে কেবল বিশ্ব-ধারক নন, তিনি “চিত্-শক্তি”র প্রকাশ—চেতনারই সেই অংশ, যা স্থিতির মধ্য দিয়ে কার্যকে ধারণ করে রাখে। তাই তন্ত্রে বলা হয়, “স্থিতি বিনা শক্তিঃ নাস্তি”—স্থিতি ছাড়া শক্তি নেই।
এইভাবে, বৌদ্ধ “ধারিণী”, জৈন “ধৃতি” ও শাক্ত “জগদ্ধাত্রী”—এই তিনটি ধারার অন্তর্লীন প্রবাহ একত্রে মিলিত হয় এক অভিন্ন দার্শনিক নীতিতে—“স্থিতি হি শক্তিঃ”, অর্থাৎ স্থিতিই শক্তি। স্থিতি মানে এখানে নিস্ক্রিয়তা নয়, বরং এমন এক সজাগ স্থিরতা, যেখানে প্রতিটি গতি, প্রতিটি ক্রিয়া তার সঠিক মাত্রায় ভারসাম্য পায়।
এই দর্শনের মর্মবাণী তাই সর্বজনীন—শক্তি ধ্বংসের নয়, রক্ষার শক্তি; স্থিতি মানে জীবনের সমন্বয়, অস্তিত্বের ছন্দ। জগদ্ধাত্রী সেই বিশ্বচেতনার রূপ, যিনি বৌদ্ধ করুণার গভীরতা, জৈন সংযমের মাধুর্য, এবং শাক্ত শক্তির দীপ্তি—এই তিনকে একত্রে ধারণ করেন। তিনি প্রাচীন ভারতের অন্তর্নিহিত ঐক্যচেতনার প্রতীক, সেই “ধারক-শক্তি” যিনি মানবতার অন্তর্গত শান্তি ও জ্ঞানের সুরকে ধারণ করেন। তাঁর পূজা তাই কেবল এক আচার নয়, বরং এক দার্শনিক স্মরণ—যে স্থিরতা-ই প্রকৃত শক্তি, আর ভারসাম্য-ই মুক্তির পথ।
জগদ্ধাত্রীর উপাসনার শেকড় বাংলার ইতিহাসে গভীরভাবে প্রোথিত। দেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত প্রাচীনতম পরিচিত মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম হল হুগলি জেলার সোমরার মহাবিদ্যা মন্দির, যা ১৬২১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত—এই মন্দিরকে জগদ্ধাত্রীর পূজার অন্যতম আদিম কেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হয়। এরপর নদিয়ার রাঘবেশ্বর মন্দির (১৬৬৫) ও জালেশ্বর মন্দির (১৬৬৯)-এর প্রতিমা ও লিপিতে দেবীর আরাধনার উল্লেখ পাওয়া যায়, যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, নদিয়া-হুগলি অঞ্চল মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আগেই জগদ্ধাত্রীর পূজাকেন্দ্র হিসেবে বিকশিত ছিল।
ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদের বালিগ্রাম গ্রামের জগদ্ধাত্রী পূজা প্রায় পাঁচ শতাব্দী ধরে চলছে, এবং কালনার মীরহাট বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার চার শত বছরেরও বেশি সময় ধরে একই ঐতিহ্য রক্ষা করছেন। এসব প্রমাণ করে যে, দেবী জগদ্ধাত্রী কেবল কোনো আঞ্চলিক দেবী নন—তিনি বাংলার তান্ত্রিক ও শাক্ত সংস্কৃতির প্রাচীন প্রবাহে গভীরভাবে প্রোথিত এক মহাশক্তি।
বাংলায় আধুনিক সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পূজা মূলত দুটি প্রধান কেন্দ্রকে ঘিরে বিকশিত হয়—নদিয়ার কৃষ্ণনগর ও হুগলির চন্দননগর। তবে এই জনউৎসবের ঐতিহ্য নিজেই অনেক পুরোনো, যার শেকড় তান্ত্রিক ও পারিবারিক আচার থেকে ক্রমে সমাজজীবনের বৃহত্তর পরিসরে বিস্তৃত হয়।
জনপ্রিয় ঐতিহ্য অনুযায়ী, নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় ১৮শ শতকের মাঝামাঝি, আনুমানিক ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে, সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পূজার প্রবর্তন করেন। কিংবদন্তি বলে, দুর্গাপূজার সময় নবাব আলিবর্দি খাঁর আদেশে বন্দিত্বের পর মুক্তি লাভ করে মহারাজা দেবীর স্বপ্নদর্শন পান—শুভ্রবর্ণা, সিংহবাহিনী এক দেবী তাঁকে নির্দেশ দেন, “কার্ত্তিক মাসের শুক্লা নবমীতে আমার পূজা করো।” সেই স্বপ্নাদেশ থেকেই কৃষ্ণনগরে রাজবাড়ির পূজার সূচনা হয়।
তবে ইতিহাসের একাংশ ইঙ্গিত করে যে, দেবী নদিয়া অঞ্চলে এই সময়ের আগেই পরিচিত ছিলেন। স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, আনুমানিক ১৬৬৫-১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে শান্তিপুরের চন্দ্রচূর তর্কামণি প্রথম বার দেবীর পূজা প্রচলন করেন। প্রথম দিকে কৃষ্ণনগরে কেবল “ঘটপূজা” অনুষ্ঠিত হতো; পরবর্তীকালে প্রতিমারূপে দেবীর আরাধনা শুরু হয়।
কৃষ্ণনগরের প্রতিমা-শিল্পে জগদ্ধাত্রী সাধারণত এক কুমারী রূপে চিত্রিত—১৩ বছরের বেশি বয়স নয়, এমন এক কিশোরী দেবী, শুভ্রবর্ণা, প্রশান্ত মুখমণ্ডল, চারভুজা, সিংহবাহিনী। দেবীর উচ্চতা ঐতিহ্যগতভাবে চার ফুটের নিচে রাখা হয়—যাতে মাতৃসুলভ কোমলতা ও আধ্যাত্মিক স্থিতি বজায় থাকে। অনেক সময় সিংহবাহনটিকে ঘোড়ার মতো গঠিত করা হয়, যা গতিময়তার প্রতীক। রাজবাড়ির দেবীকে বলা হয় “রাজরাজেশ্বরী”, যিনি রাজকীয় ধৃতি ও শাসনশক্তির প্রতিরূপ।
কৃষ্ণনগরের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ উদ্যাপন হলো চাষাপাড়ার “বুড়িমা জগদ্ধাত্রী পূজা”, যার সূচনা হয় ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে—রাজবাড়ির পূজার কিছু বছরের মধ্যেই। এটি বাংলার প্রথম দিকের বারোয়ারি পূজা হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। “বুড়িমা” প্রতিমা তাঁর বিস্তৃত সোনা ও রুপার অলঙ্কারের কারণে—প্রায় ১৫০ কেজি সোনা ও রুপা-মণ্ডিত বিধায় বিখ্যাত, যা তাঁকে কেবল ধর্মীয় নয়, নন্দনতাত্ত্বিক প্রতীকেও পরিণত করেছে।
এই পূজায় কোনো বাণিজ্যিক থিম বা প্রতিযোগিতা নেই—এখানে মূল আকর্ষণ ভক্তির আবেগ। চাঁদা তোলার প্রয়োজন হয় না; মানুষ নিজে থেকে দাঁড়িয়ে দান করেন, যেমন করতেন আঠারো শতকেও। বিসর্জনের দিন দেবীকে ভক্তদের কাঁধে বহন করে রাজবাড়ি প্রদক্ষিণ করানো হয় এবং তারপর জলঙ্গীর ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়—এই রীতি আজও অক্ষুণ্ণ।
সব মিলিয়ে, জগদ্ধাত্রীর পূজা কেবল এক দেবী-উপাসনার ইতিহাস নয়; এটি বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের দলিল। সোমরা থেকে কৃষ্ণনগর, বালিগ্রাম থেকে কালনা—সব স্থানে এই পূজা একই আধ্যাত্মিক সূত্রে বাঁধা: “ধারকশক্তি”, সেই দেবী যিনি বিশ্বে স্থিতি দেন, সমাজে সংহতি আনেন, এবং মানুষের অন্তরে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেন।
চন্দননগর (হুগলী) অঞ্চলে জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা নিয়ে ইতিহাসে দুটি প্রচলিত মত রয়েছে। এক মতে, এই উৎসবের প্রবর্তক ছিলেন ফরাসি শাসিত চন্দননগরের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী, যিনি কৃষ্ণনগরে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের দরবারে পূজা দেখে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজ শহরে এই পূজা শুরু করেন। অন্য মতে, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের আরেক দেওয়ান দাতারাম সুর ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে চন্দননগরে এই উৎসবের প্রবর্তন করেন। যে-ই হোন প্রতিষ্ঠাতা, পরবর্তীকালে এই পূজা চন্দননগরের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় জীবনের অন্যতম পরিচয় হয়ে ওঠে।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী প্রতিমা নিজস্ব শৈলীর জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। বিশাল আকারের এই প্রতিমাগুলি কখনো কখনো ৭৫ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় পৌঁছেছে। প্রতিমার মুখ সাধারণত দীর্ঘ, চোখ বড়ো ও গভীরভাবে বসানো, এবং দেবীর গলায় সাপ পৈতে হিসেবে ব্যবহৃত হয়—যা এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। দেবীর বাহন সিংহ প্রায়ই সাদা বর্ণের হয়, আর তার বিপরীতে প্রতীকীভাবে এক হাতির মূর্তি স্থাপন করা হয়। এই রূপশৈলী একদিকে যেমন সনাতন রীতি অনুসরণ করে, তেমনই স্থানীয় শিল্পরুচিরও প্রকাশ ঘটায়।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী উৎসবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার চমকপ্রদ আলোকসজ্জা ও বিশাল শোভাযাত্রা। ১৯শ শতাব্দীতে এই দিকটির বিকাশে ফরাসি ঔপনিবেশিক প্রশাসনের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ফরাসি কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতা ও অবকাঠামোগত সহায়তার ফলে চন্দননগরে এক অনন্য আলোকশিল্পের ঐতিহ্য গড়ে ওঠে—যা আজও বিশ্বজোড়া খ্যাতি লাভ করেছে। দেবীযাত্রার পূর্বে শহরজুড়ে আলোকসজ্জিত প্রদর্শনী, আলোর চলমান দৃশ্য ও বিষয়ভিত্তিক আলোকনকশা এই উৎসবকে রূপ দেয় এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টিনন্দন ও সাংস্কৃতিক মহোৎসবে।
জগদ্ধাত্রী পূজা মূলত কার্ত্তিক মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে পালিত হয়, যা সাধারণত নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে পড়ে। এই পূজাকে প্রায়ই “কার্ত্তিকের দুর্গাপূজা” বলা হয়, কারণ এর আচারে দুর্গাপূজার ছায়া স্পষ্ট। যদিও কিছু স্থানে দুর্গাপূজার মতো পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজন দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর উপাসনা একত্রিত করে একদিনেই পূজার মূল অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। পূজার আচারে তন্ত্রসিদ্ধ নিয়মাবলি অনুসৃত হয়, এবং এখানে ‘বন্ধন’ আচারটি ব্যতিক্রম হিসেবে বাদ দেওয়া হয়।
দেবী সাধারণত সকালে বা দুপুরে পূজিত হন এবং সন্ধ্যায় বিশেষ আলোকসজ্জার মাঝে আরতি, ভোগ ও ধুনুচি নৃত্যের মাধ্যমে ভক্তরা দেবীর আরাধনা করেন। মন্ত্র, যজ্ঞ ও চণ্ডীপাঠে পরিবেশ আধ্যাত্মিক হয়ে ওঠে। পূজার সমাপ্তির দিন বা পরের দিন অনুষ্ঠিত হয় বিসর্জন বা ভাসান, যা চন্দননগর ও কৃষ্ণনগর উভয় ক্ষেত্রেই উৎসবের চূড়ান্ত আকর্ষণ।
চন্দননগরে বিসর্জনকে কেন্দ্র করে আয়োজন হয় এক বিশাল আলোকিত শোভাযাত্রার, যেখানে দেবীর প্রতিমাগুলি সযত্নে সাজানো ট্রাক বা প্ল্যাটফর্মে শহর প্রদক্ষিণ করে। এই শোভাযাত্রা তার আলোকচিত্র, নকশা ও থিম্যাটিক দৃশ্যের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে। চন্দননগরের একটি বিশেষ প্রথা হলো প্রতিমার ভিত্তিকে (base বা কাঠামোকে) সম্পূর্ণভাবে জলে বিলীন না করে এমনভাবে নিমজ্জিত করা, যাতে পরবর্তী বছরে সেটি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য থাকে—একটি পরিবেশবান্ধব ও সাংস্কৃতিকভাবে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কৃষ্ণনগরে, ঐতিহ্যগতভাবে রাজবাড়ির সামনে ‘চোখের মোড়’-এ প্রতিমা আনা হয় এবং পরে তা জলঙ্গী নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়।
জগদ্ধাত্রী পূজা কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি বৃহৎ সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিসরের প্রতীক। বিশেষ করে চন্দননগরে এর আলোকসজ্জা শিল্প আজ এক পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার কারিগর, বিদ্যুৎশিল্পী, সেট ডিজাইনার এবং রংকর্মী এই উৎসবের প্রস্তুতিতে মাসের পর মাস কাজ করেন। এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতি যেমন সমৃদ্ধ হয়, তেমনই শিল্পকলা, প্রযুক্তি ও নকশার ক্ষেত্রে চন্দননগর একটি স্বতন্ত্র পরিচয় অর্জন করেছে।
আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে জগদ্ধাত্রী পূজা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়—এটি ভক্তি, আত্মশুদ্ধি ও সামাজিক ঐক্যের এক গভীর প্রতীক। শাস্ত্রানুসারে, জগদ্ধাত্রী মূলত দুর্গার এক শান্ত, সাত্ত্বিক রূপ, যিনি “স্থিতি” বা ধৃতিশক্তির মূর্ত প্রতীক। তিনি ত্রিগুণের (সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ) মধ্যে সত্ত্বগুণের প্রতিনিধিত্ব করেন, অর্থাৎ সেই গুণ, যা জ্ঞান, স্থিরতা, স্বচ্ছতা ও সহমর্মিতার প্রকাশ ঘটায়।
তবে লোকবিশ্বাসে দেবীকে প্রায়শই লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কালী—এই তিন শক্তির সম্মিলনরূপে মানা হয়, যা যথাক্রমে ধন, জ্ঞান ও শক্তির প্রতীক। এই ধারণা সরাসরি কোনো বেদান্ত বা পুরাণগ্রন্থে উল্লেখিত না হলেও, এটি বাঙালি শাক্ত ভক্তির এক জনপ্রিয় ব্যাখ্যা—যেখানে জগদ্ধাত্রীকে দেখা হয় ত্রিশক্তির সুষমা, যিনি তিন গুণের ভারসাম্য রক্ষা করে জগৎকে স্থিতি দেন।
তাঁর উপাসনার আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য হলো—অহং, লোভ, ঈর্ষা, ভয় প্রভৃতি তামসিক ও রাজসিক বিকারকে অতিক্রম করে চিত্তে সত্ত্বের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করা। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, তাঁর আরাধনা মানুষকে আত্মসংযম, সহমর্মিতা ও অন্তর্গত শক্তির পথে পরিচালিত করে।
জগদ্ধাত্রী পূজা কেবল দেবীর আরাধনা নয়, বরং এক সাত্ত্বিক সাধনা—যেখানে চেতনা, মন ও সমাজ একত্রে পরিশুদ্ধ ও সংহত হয়। তাঁর শান্ত শুভ্রবর্ণা রূপ স্মরণ করায়—সত্যিকার শক্তি কখনও আক্রমণে নয়, বরং স্থিতিতে নিহিত; এবং প্রকৃত ভক্তি মানে নিজের অন্তরেই সেই ভারসাম্যের আলো খুঁজে পাওয়া।