ছেঁড়া চিঠির মনোলগ



আমি যদি চিঠি দিই কিংবা ছবি পাঠাই, আপনি ইগনোর করে যাবেন, আপনাকে মানায়। কিছু বলতে হবে না। যতটা ইগনোর করা সম্ভব, তার সীমাও অতিক্রান্ত হয়ে গেছে অনেক আগে। এখন তো বলার কিছু নেই, দু-জনের চেহারা দেখারও আর কিছুই নেই। ইগনোর করার চেয়ে ভালো, কোনো কথাই যদি না বলেন আমার সাথে।

আমার অপেক্ষাও শেষ। এত স্থিরতা অনুভব করিনি আমি আগে কখনও। আপনার সময়, ছবি, কথা কিছুই চাই না। অন্য কোনো পৃথিবীতে এসে গেছি মনে হয়। কিছুই লাগে না এখানে। এমনকি ইগনোর করলেও কিছুই মনে হয় না। ভাগ্যে, এতখানি অবহেলা পাবো, লিখেই নিয়ে এসেছিলাম। আমি বুঝতে পারি, ওটা পাওয়াও এখন শেষ। আমার আপনার সব কথা বলা শেষ হয়ে গেছে। দু-জনেরই চুপ করে থাকার সময়।

প্লিজ, আমাকে, আমার সমগ্র অস্তিত্বকে আপনি ইগনোর করুন। ভাবুন, আমি বলে কেউ নেই কোথাও। কাল দুটো চিঠি লিখেছিলাম, মাত্রই ছিঁড়ে ফেললাম। আমার আত্মার মৃত্যু হয়েছে। আমি তো সেটা নিয়ে অভিযোগ করছি না। আমি সুস্থভাবেই বেঁচে থাকব। একটা মৃত মানুষকে না ঘাঁটালেও তো চলে। আমি তো কার‌ও ক্ষতি করিনি।

আমি লেখালেখি ছেড়ে দিয়েছি যেন আপনাকে ছাড়তে সুবিধে হয়। খুব লিখতে মন চায়, লিখি না। মন অন্যদিকে সরিয়ে রাখি। আর কী করতে বলেন? অবহেলা নিয়েও বেঁচেছি, কারণ আমার আর উপায় ছিল না। এখন অবহেলা গায়েই লাগে না। আমি এখন শুধুই নিঃশ্বাস নিই। আমি এতটাই নিঃশব্দে হাঁটব যে, আপনি বুঝতেই পারবেন না, কোথাও আমিও আছি।

কিন্তু প্লিজ, আপনি লিখুন। আপনি লিখুন, আমি পড়ব। এক জন যদি আপনার পাঠক হয়ে থাকে কিংবা একটাই মানুষ যদি পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকে, যে আপনার লেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকে, সে মানুষটা হচ্ছি আমি। আমি জানি, না লিখতে পারলে আপনার কষ্ট হয়। আপনার ছবি দেখলে আমার খুব কান্না পায়। অফিসে এত লোকের মধ্যে কান্না থামাতেই পারছিলাম না হুট করে ওয়ালেটে থাকা আপনার ছবিটা সামনে পড়ে যাওয়ায়।

আপনার সাথে আর দেখা হবে না, আমি তো মেনেই নিয়েছি। বার বার আমাকে এটা মনে করিয়ে দেবার দরকার নেই। কখনও দেখতে ইচ্ছে করলে আপনার ছবি দেখি, আর কাঁদি। আমার তো অভ্যেস হয়ে গেছে। অন্তত এ দিক থেকে বেঁচে গেছি, ছবি চাইলেই দেখতে পারি, আপনার সময়ের অভাব থাকলেও ছবির অভাব অন্তত নেই। হা হা হা...আমি ওতেই খুশি। কিছুই আমার এখন আর চাই না।