: আর কত ঘুমোবে, তিথি?
: তুমি পাশে বসে থাকলে হয়তো একজীবন।
: আকাশে মেঘ জমেছে, বাড়ি যাবে না?
: তুমিই তো আমার ঘর, যেতে বোলো না।
: পাগলি!
: তুমি শুদ্ধতম আশ্রয়—
খালি পায়ে এসেছি,
কোনো পোশাকি আবরণ নিষ্প্রয়োজন।
: শুধু চলে যাবার জন্যই এসেছিলে? থেকে যাবার মতো একটুও কারণ খুঁজে নিতে পারলে না, নীড়?
: কে বলেছে কিছু পাইনি?
: পেয়েছ? সত্যি?
: তুমি এত বোকা কেন, তিথি?
তোমার কাছে একজীবন থাকার জন্য
তোমার অস্তিত্বই যথেষ্ট।
আলাদা করে কোনো কারণ লাগে না।
: কাছে ডেকো না, তোমার উষ্ণতার ভার বইতে পারব না আমি।
: কাছে আসো না কেন, তিথি?
: যদি বলি, তীব্রভাবেই তোমার ভেতরটা দেখতে পেয়েছি, তবে কি তুমি মেনে নেবে?
: আর কত দূরে রাখবে নিজেকে?
: দূরে কোথায়, পাগল!
আমি অভিমানে মুচকি হেসে জীবনটাকে চালিয়ে নিতে পারব,
তবু তোমার অনুভব ছাড়া বাঁচতে পারব না, নীড়।
: তবে আজ একটু ছুঁয়ে থাকতে দাও আমায়, বাধা দিয়ো না।
: বিদীর্ণ হৃদয় ঘুণে খেয়েছে,
বিপন্নতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ো না আমায়,
ছুঁয়ে কোনো লাভ হবে না।
: আজ মনটা ভীষণ অস্থির, কিছুতেই শান্তি নেই।
: কোথায় আছ, তিথি?
: দগ্ধ-হয়ে-যাওয়া বুকশেলফে সেই ডায়েরির পৃষ্ঠাগুলো খুঁজছি। সব পুড়ে গেছে।
: অহেতুক খুঁজে চলেছ, শেষ পৃষ্ঠাটা আমার কাছে, এসে নিয়ে যাও।
: সত্যি? আজ একবার দেখা করবে, নীড়?
তুমি বললেই আমি এখনই চলে আসব।
: এসো, অপেক্ষা করছি।
: মনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছি না।
(নিজেকে কেবলই যাযাবর মনে হয়)
আমাকে গ্রহণ করা তোমার পক্ষে কখনও সম্ভব নয়, তবে কেন মায়া বাড়িয়ে ডেকেছ?
- ইস্, কতটা হাত পুড়িয়ে ফেলেছ! এমন অমনোযোগী স্বভাব আর কতদিন, তিথি?
- তুমি আমার কল্পনায়ও আমাকে খুব যত্নে রাখো, আমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় তোমার চোখে থাকে প্রায়ই।
- আমি বাস্তববাদী মানুষ, তবু জানো, তিথি—
তোমার কল্পনার চোখে নিজেকে দেখতে বড় ভালো লাগে।
: আমি মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখি...
বিদেশের কোনো এক নিভৃত কফিশপে
মুখোমুখি বসে তোমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
এটা আমি প্রায়ই ভাবি, ভাবতে ভালো লাগে।
: তোমার স্বপ্নে আমাকে রোজ আসতে দিয়ো,
আমাদের নাহয় এভাবে দেখা হোক সহস্র বার।
: তুমি আমার স্বপ্নে প্রায়ই আসো, তিথি।
আর একদিন দেখেছি—
তোমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করছি।
এরপর তুমি আমাকে ঘুমন্ত রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছ, আর আমি মন খারাপ করছি।
এই স্বপ্নটা… বেশ আগের।
: আমাকে ভালোবাসলে না কেন, নীড়?
: তোমার মনে হয়, আমি তোমায় ভালোবাসি না?
: জানি না। তবে, আমায় যে ছুঁড়ে ফেলে আঘাতে জর্জরিত করো না—এটাই আমার কাছে অনেক।
: চোখ বন্ধ করো, তোমাকে আজ ক্ষণিকের একটি স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে চাই।
: তুমি শুনবে কিছুক্ষণ? তোমার সময় হবে?
: তুমি কিছু বলতে চেয়েছ, আর আমি না শুনেই চলে গিয়েছি— এমন কখনো হয়েছে?
আমি চোখ বুজলাম, তুমি বলো।
: তোমার সাথে শেষ দেখার, শেষ মুহূর্তটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না।
আমি যখন একরাশ যন্ত্রণায় তলিয়ে যাচ্ছিলাম, তুমি সামনে এসে দাঁড়িয়ে
আমার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে,
আমাকে তোমার বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে আদর করেছিলে।
মনে আছে?
ইস্, তোমার স্পর্শ যে আমার মনকে অগোচরেই সারিয়ে নেয়, প্রথম উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম।
সেই মুহূর্তটা আমি বারবার কল্পনা করে বেঁচে থাকি, নীড়।
তুমি বিশ্বাস করবে...?
: কিছু বোলো না, তোমার প্রত্যাখ্যান আমি মেনে নিতে পারব না।