চাইতে পারার সাহস



ভালোবাসলেই কি সবটা জানার অধিকার থাকে?
ভালো থাকতে কি তোকে আগলে রাখার ভীষণ প্রয়োজন পড়ে?
ভালোবাসা আর এই ভালোথাকার সবটা জুড়েই বুঝি তোর বসবাস?

হঠাৎই যদি তোর সামনে এসে দাঁড়াই, তুই বুঝি ফিরিয়ে দিবি আমায়?
না কি তোর বুকের মধ্যে তীব্র নিঃশ্বাসের ভিড়ে জড়িয়ে রাখবি আমায়?
বড়ো জানতে ইচ্ছে করছে।

ভাবছি, হুট করেই তোর সামনে চলে আসব—দেখি না কী হয়!
অতশত ভেবে কী হয়েছে কার কবে!
অমন করে কেন যে চেয়েছিলাম আমাদের সময়ের হিসেব রাখতে...

তোমাকে প্রথম ছুঁয়ে দেখার সেই ক্ষণে, ভুলের অজুহাতে ধরেছিলাম তোমার হাত।
সেই ভালোলাগার অনুভূতি আর কি ফিরিয়ে আনা যায়, বলো?
শতচেষ্টাতেও সেদিন আর ফিরে আসবে না।

যেদিন তোমার বুকের পাঁজরের সবটা জুড়ে আমায় থাকতে বলেছিলে—
পারিনি আমি।
এতটা ব্যর্থতা নিয়ে কীভাবে যাই বলো তোমার সামনে?

তবে যে আসবে বলছিলে?
হা হা... আমার কল্পনায় রোজ তোমার কাছে গিয়েছি আমি।
তোমার ভীষণ সুন্দর ইচ্ছেগুলো হয়তো বাস্তবে রাখতে পারিনি, ঠিক,
কিন্তু বিশ্বাস করো—হুট করেই যখন গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায়,
মনে হয়, তুমি আমার খুব কাছেই শুয়ে আছ।
তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছি বাকি সময়টুকু।
আচ্ছা, আমি কি তোমার খুব কাছে আসতে পারি না?

তুমি তো আমারই।
আচ্ছা, আমি তোমার সবটা জুড়ে নিজেকে রাখতে পারিনি, তাই না?
তুমি আমাকে ছুড়ে ফেলে দিতে চাইছ না কেন?
আমার জন্য তোমার বুঝি মায়া হয়?

আমার যদি ক্ষমতা থাকত—
আমার সবটা দিয়ে তোমায় ভালোবাসতাম।
তুমি কখনো ভেবেছ—অতটা দূরে থাকতে হয়েছে কেন আমায়?
সব প্রশ্নের উত্তর জানা আছে বুঝি তোমার?

আচ্ছা, তোমায় যদি কখনো আমার বুকের ভেতরটা দেখাতে পারতাম,
তবে কি তুমিও আমায় ভালোবাসতে?
ভালোবেসে তোমার যন্ত্রণাগুলো আমার করে দিতে পারতে?
তোমার মনের গভীরে ফেলে-আসা প্রত্যাশার এককোণে থেকে যেতে দিতে আমায়?
আরও একবার আমার অপেক্ষায় সময়ের কাঁটা যেতে দিতে দেবে, বলো?

তোমার কোনো কথাই রাখতে পারিনি আমি।
সেদিনই তো ফিরে আসতে চেয়েছিলাম—
তুমি কেন জড়িয়ে ধরেছিলে আমায়?
তোমার আলিঙ্গন উপেক্ষা করে কি আসতে পেরেছিলাম আমি কখনো?
পারিনি বোধ হয়।
ওসব নিয়ে অত না ভাবতে বলেছিলে—
কষ্ট নিয়েই তো আমরা সবাই বেঁচে আছি।

তোমাকে খুব করে চাইতে পারার সাহস আমার আর ছিল না, জানো?
ভেবেছিলাম, সব ব্যর্থতা আর যত যন্ত্রণা, তোমার কাছেই রেখে
অনেক দূরে হারিয়ে যাব।

তুমি বুঝি আমায় আর কখনো বুঝতে চাও না?
অতটা ভুল আমি ভেবেছিলাম কী করে?

আমি তোমাকে যতটা চিনেছি,
তা-ই যদি যথেষ্ট হতো,
তাহলে তুমি হতে খুব সাধারণ।
কিন্তু না—
তোমাকে ছুঁয়ে বুঝেছি তুমি অনেক বেশি অসাধারণ—
যা আমার কল্পনার বাইরে।

জানো, তোমার ভেতরটা অসম্ভব সুন্দর।

তুমি বুঝি ভেতরটা পড়তে পারো?

হুম, পারি তো।
তোমার বুকের মধ্যে কান পেতে শুনতে পেয়েছি—
তোমারও আছে বহু না-বলা অনুভূতির অগোছালো উপকথা।
তোমারও যে আছে লুকিয়ে-রাখা যন্ত্রণা,
হোক তা সবার কাছে অপ্রকাশিত,
তা-ও নিশ্চুপ থেকেও আমি ঠিক অনুভব করতে পেরেছি।

কেন জড়িয়ে ধরো আমায়?
জানো না, তোমার বুকের ভেতরে-থাকা অসীম কষ্টের আড়ালে...
আমি নিজেকেই খুঁজে পাই!

তোমাকে জড়িয়ে ধরে রাখতে ভীষণ শান্তি।
আমার অস্তিত্বে মিশে-থাকা যন্ত্রণাগুলো ছুঁয়ে দেখাতে
তুমি ব্যস্ত, ব্যাকুল।

তোমার চোখে রাখা আছে আমাদের ভালোবাসার পাওয়া, না-পাওয়া সব মুহূর্তের রেশ।
তোমাকে না দেখে থাকি কী করে, বলো?

হঠাৎ পুরোনো সব কথা মনে করিয়ে দিতে চাইছ কেন?

তোমার চোখে তাকিয়ে থাকার সময় এসে গেছে।
পারবে না আমার কল্পনা থেকে কিছু সময়ের জন্য সামনে এসে দাঁড়াতে?

পারব না কেন?

তবে এসো।
তোমাকে পুরোনো কথা মনে করিয়ে দিতেই আমার চেনা, অতএব নিরাপদ স্বস্তি।

আমাদের কথাগুলো নাহয় এভাবেই থেকে যাক তোমার ডাকবাক্সে—
যা ভীষণ অপ্রয়োজনীয়।

যদি আর কখনও তোমায় ছুঁয়ে দেখতে না-ও পারি,
না-বলা অনুভূতিগুলো বলে যেতে না পারার আফসোস থাকবে না।

তোমার চোখজুড়ে আমি নেই—
এমনটা ভাবতে ভালো লাগে না আমার।
আমার অসহায়ত্বজুড়ে তুমি থাকবে না—
তা-ও ভাবতে আজকাল দমবন্ধ লাগে ভীষণ।

যা-কিছু ভালো, তার সবটাই তোমার হোক।
আমার তো সবটাই মন্দ—
তাই তোমার কাছে যেতে বড্ড ভয় হয়।
Content Protection by DMCA.com