এই অবস্থায় মানুষ বোঝে—নিজের কর্ম, বুদ্ধি, দেহ, জীবন—সবই ঈশ্বরেরই উপকরণ। তাই সে নিজের ইচ্ছাকে ঈশ্বরের ইচ্ছায় বিলীন করে দেয়। তার সমস্ত প্রচেষ্টা তখন “ঈশ্বরার্পণ”—অর্থাৎ, নিজের কর্ম ও চিন্তা ঈশ্বরকে নিবেদন করা। গীতা (৯.২৭)-য় কৃষ্ণ এই নীতিটিই প্রকাশ করেন—“যত করো, যত খাও, যত অর্ঘ্য দাও, যত তপস্যা করো, সবই আমার উদ্দেশ্যে কোরো।”
এই দৃষ্টিভঙ্গিতে কর্ম আর বন্ধন নয়, মুক্তির পথ। কারণ এখানে কর্তা-ভাব নেই, আছে কেবল উৎসর্গ ও বোধ। যখন কর্ম ঈশ্বরের ইচ্ছার বাহন হয়ে যায়, তখন জীবন নিজেই ঈশ্বরসেবা হয়ে ওঠে—প্রত্যেক দায়িত্ব তখন উপাসনা, প্রত্যেক সম্পর্ক ভক্তি, প্রত্যেক দিন পূজা।
এই উপলব্ধিই ভগবদ্গীতার শেষবার্তা: “যে নিজের কর্তৃত্বকে ঈশ্বরের পরিকল্পনায় সমর্পণ করে, সে-ই জ্ঞানী, সে-ই ভক্ত, সে-ই মুক্ত।”
পরমেশ্বরের পরিকল্পনা বা ঈশ্বরের ইচ্ছা কখনোই কোনো অচেতন ভাগ্যবাদ নয়, যেখানে মানুষ কেবল এক পুতুলের মতো কাজ করে। বরং এটি এক সচেতন ঐশ্বরিক সংগীতের আয়োজন—এক divine orchestration—যেখানে প্রতিটি জীব, প্রতিটি ঘটনা, এমনকি প্রতিটি চিন্তাও ঈশ্বরের বৃহৎ ইচ্ছার অংশ। এখানে ঈশ্বর কেবল নিয়ামক নন, তিনিই সেই অন্তর্যামী সুরকার, যিনি সমস্ত জীবনের তারগুলিকে মিলিয়ে এক সুরে বেঁধে দেন।
গীতা (১৮.৭৩)-র শ্লোকে এই সত্যটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে—“নষ্টো মোহঃ স্মৃতির্লব্ধা ত্বত্প্রসাদান্ময়াচ্যুত। করিষ্যে বচনং তব।।” অর্থাৎ, “আমার মোহ দূর হয়েছে, তোমার কৃপায় স্মৃতি ফিরে পেয়েছি; এখন আমি তোমার বাণী অনুসারে কাজ করব।”
এই মুহূর্তে অর্জুনের ভেতরে ঘটে যায় এক বিশাল রূপান্তর। যুদ্ধক্ষেত্রে বিভ্রান্ত, ক্লান্ত, দুঃখী মানুষটি বুঝতে পারে—তার নিজের ইচ্ছাই আসলে বিভ্রান্তির উৎস; সত্যিকার শান্তি আসে তখনই, যখন নিজের ইচ্ছাকে ঈশ্বরের ইচ্ছায় সমর্পণ করা যায়। এই সমর্পণ কোনো পরাজয় নয়; এটি আত্মার জাগরণ। এখানেই মানুষ উপলব্ধি করে—“আমি কর্তা নই, ঈশ্বরই কর্তা, আমি তাঁরই নিমিত্ত।”
এই অবস্থায় মানুষ আর ভাগ্যের দাস নয়, বরং ঈশ্বরের সহকর্মী। সে জানে, তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়—সাফল্য বা ব্যর্থতা, সুখ বা দুঃখ—সবই সেই বৃহত্তর পরিকল্পনারই অংশ, যা শেষপর্যন্ত কল্যাণের দিকে নিয়ে যায়। যেমন ভগবদ্গীতার (৯.২২)-এ কৃষ্ণ আশ্বাস দেন—“যোগক্ষেমং বহাম্যহম্।” অর্থাৎ, “যারা একান্তভাবে আমার উপর নির্ভর করে, তাদের যা প্রয়োজন আমি নিজে পূর্ণ করি এবং যা তাদের আছে, তা আমি রক্ষা করি।”
অর্থাৎ, ঈশ্বরের পরিকল্পনা কোনো যান্ত্রিক নিয়তি নয়, বরং এক প্রেমময় আশ্বাস—তুমি যতই পথ হারাও, আমি তোমাকে পথ দেখাবো, যদি তুমি তোমার ইচ্ছাকে আমার ইচ্ছায় মিলিয়ে দাও।
এই উপলব্ধিই গীতার স্বর্গীয় বুদ্ধিমত্তার সারকথা। মানুষ যতক্ষণ নিজের বুদ্ধিকে চূড়ান্ত মনে করে, ততক্ষণ সে প্রকৃতির গুণে আবদ্ধ থাকে। কিন্তু যখন সে নিজের বুদ্ধিকে ঈশ্বরের চেতনার সঙ্গে মিলিয়ে দেয়—যাকে গীতা বলে “বুদ্ধিযোগ”—তখন সে ঈশ্বরের পরিকল্পনার সঙ্গে সুর মিলিয়ে চলে। তার কর্ম তখন আর ব্যক্তিগত নয়, ঈশ্বরীয় হয়ে ওঠে; তার জীবন তখন ঈশ্বরসেবায় রূপান্তরিত হয়।
এখানেই “ভক্তি” ও “জ্ঞান” একীভূত হয়। জ্ঞান বলে—“সব ঈশ্বরের ইচ্ছা,” ভক্তি বলে—“আমি সেই ইচ্ছায় আনন্দিত।” আর এই দুই মিলেই জন্ম নেয় শান্তি ও মুক্তি।
ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে উপলব্ধি করা মানে ভাগ্যের কাছে নতি স্বীকার নয়; বরং তা হলো ঈশ্বরের সঙ্গে সৃষ্টির নৃত্যে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রত্যেক জীব এক সুরে বাঁধা, আর ঈশ্বর সেই অদৃশ্য সংগীতের সঞ্চালক। যে এই সুর ধরতে পারে, তার জীবনই গীতার ভাষায় বাসুদেবস্বরূপ হয়ে ওঠে—ভক্তি, জ্ঞান ও কর্মের ঐক্যে পরিপূর্ণ।
সকল পুরাণকথার অন্তরালে যে দার্শনিক সত্য নিহিত, তা গভীরভাবে অদ্বৈত বেদান্ত ও উপনিষদীয় চেতনার সঙ্গে যুক্ত। “ষোলো কলা” বা “বারো কলা” কোনো বাহ্যিক অলৌকিক সংখ্যা নয়—এটি চেতনার পূর্ণতার স্তরবিন্যাসের প্রতীক। “কলা” (kalā) শব্দটি মূলত চেতনার প্রকাশশক্তিকে নির্দেশ করে। ছান্দোগ্য উপনিষদ (৭.২৬.২)-এ বলা হয়েছে—“অন্নময়ং হি সোম্য মনঃ, আপোময়ঃ প্রাজ্ঞঃ, তেজোময় আত্মা।” অর্থাৎ, চেতনার স্তর যত সূক্ষ্ম হয়, ততই তার প্রকাশ ‘পূর্ণ’ হয়ে ওঠে।
এই আলোকে শ্রীরাম ও শ্রীকৃষ্ণ—এই দুই অবতাররূপকে দেখা যায় চেতনার পূর্ণতার দুই ভিন্ন প্রতীক হিসেবে। বারো কলার রাম মানে ন্যায়, ধর্ম ও নৈতিক আদর্শে পরিপূর্ণতা; তাঁর জীবনে শৃঙ্খলা, কর্তব্যবোধ ও আত্মসংযমের উজ্জ্বল প্রকাশ। কিন্তু জ্ঞান ও বৈরাগ্যের চরম মিলন তখনও অসম্পূর্ণ। অপরদিকে, ষোলো কলার কৃষ্ণ সেই চেতনার পূর্ণতা—যেখানে জ্ঞান, প্রেম, করুণা, শক্তি, নীতি, ত্যাগ ও আনন্দ সব এক হয়ে গেছে। কৃষ্ণের মধ্যে জ্ঞানই প্রেম, প্রেমই কর্ম, আর কর্মই লীলা। তাই কৃষ্ণ “পূর্ণ অবতার”—চেতনার সম্পূর্ণ জাগরণ, যেখানে জীবন ও ব্রহ্ম এক হয়ে যায়।
রামায়ণের বালকাণ্ডে (৭১-৭৬ সর্গে) এই চেতনার বিকাশের এক প্রতীকী কাহিনি রয়েছে—রাম ও পরশুরামের সাক্ষাৎ ও সংঘর্ষ। রাম যখন শিবের ধনু ভেঙে ফেলেন, তখন পরশুরাম ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানান। এই সংঘর্ষ বাস্তব যুদ্ধে রূপ নেয়নি; বরং এটি আত্মিক শক্তির পরীক্ষায় রূপান্তরিত হয়। পরশুরাম—যিনি তপস্যা, জ্ঞান ও দমনশক্তির প্রতীক—রামের নৈতিক বোধ, শান্ত আত্মসংযম ও ঈশ্বরস্মৃতিতে পরাজিত হন। রাম তাঁর ধনু হাতে নিয়েও কখনো অহংকার দেখান না; বরং বিনয়ের মধ্য দিয়ে পরশুরামের শক্তিকে স্বীকার করেন। তখন পরশুরাম উপলব্ধি করেন, রাম কেবল রাজপুত্র নন—তিনি পরম চেতনার অবতার।
এই ঘটনার গভীর তাৎপর্য হলো—পরশুরামের তপস্যা ও জ্ঞানের শক্তি রামের ধর্মবোধ ও ঈশ্বরস্মৃতির সঙ্গে একীভূত হয়ে তাঁর মধ্যে বাকি চার কলার পূর্ণতা যোগ করল। রাম তখন ন্যায় ও ভক্তির পাশাপাশি জ্ঞান ও বৈরাগ্যের শক্তিতেও পরিপূর্ণ হলেন।
পরশুরাম ‘কলাবিহীন’ হয়ে তপস্যায় গেলেন—এই কাহিনি দার্শনিকভাবে বোঝায়, তপস্যার ফল ঈশ্বরের মধ্যে বিলীন হয়, কারণ সব কলার উৎস সেই পরম ব্রহ্ম। ব্যক্তি যখন নিজের শক্তি, সাধনা বা জ্ঞান ঈশ্বরকে সমর্পণ করে, তখন সে ‘কলাবিহীন’ অর্থাৎ অহংকারহীন হয়ে যায়।
এই ব্যাখ্যা থেকে যে গভীর দর্শন উদ্ভাসিত হয়, তা হলো—প্রত্যেক জীবই ঈশ্বরের অবতার, কেবল মাত্রার পার্থক্যে। কেউ এক কলার, কেউ ষোলো কলার, কিন্তু প্রত্যেকের মধ্যেই ঈশ্বরের উপস্থিতি স্বরূপত সমান। বৃহদারণ্যক উপনিষদ (১.৪.১০)-এর বাণী—“অহং ব্রহ্মাস্মি”—“আমি ব্রহ্ম”—এই সত্যই ঘোষণা করে যে, ঈশ্বর থেকে কোনো কিছু আলাদা নয়।
মানুষের জীবনে এই কলার বিকাশই আধ্যাত্মিক সাধনার লক্ষ্য। কর্ম, জ্ঞান, ভক্তি, ত্যাগ, করুণা—এই প্রতিটি সাধনাই আসলে চেতনার এক-একটি কলাকে জাগিয়ে তোলে। মানুষ তার চরিত্র, মনোযোগ ও কর্মের বিশুদ্ধতার দ্বারা সেই কলাগুলিকে বৃদ্ধি করতে পারে, আবার অহংকার, লোভ ও অজ্ঞতার দ্বারা তা হারিয়েও ফেলতে পারে।
এভাবেই পুরাণের বর্ণিত কাহিনি আসলে এক মনস্তাত্ত্বিক ও অস্তিত্বতাত্ত্বিক রূপক। ঈশ্বরই একমাত্র বাস্তব, কিন্তু তিনি নিজেকে নানা রূপে, নানা কলায় প্রকাশ করেন। ছান্দোগ্য উপনিষদ (৬.২.১)-এ বলা হয়েছে—“একমেবাদ্বিতীয়ম্।” অর্থাৎ, “তিনি এক, দ্বিতীয় কেউ নেই।”
এই একত্ববোধই সমস্ত কলার সংহতি। বৈচিত্র্য, নাম, রূপ—সবই সেই এক পরব্রহ্মের বহুরূপী প্রকাশমাত্র। তাই ষোলো কলার কৃষ্ণ, বারো কলার রাম, কিংবা এক কলার মানুষ—সবই একই চেতনার বিভিন্ন দীপ্তি। যে-ব্যক্তি এই সত্য উপলব্ধি করতে পারে, সে বুঝতে শেখে—অপরের মধ্যেও নিজের মতোই ঈশ্বর বাস করছেন। এই উপলব্ধিই আধ্যাত্মিক জীবনের সারকথা: “যে নিজেকে জানে, সে-ই ব্রহ্মকে জানে।” (ছান্দোগ্য ৮.৭.১)
এমনকি চিন্তা, অনুভূতি, ও কর্ম—সবই সেই এক চেতনারই ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গ। এই চেতনা জড় ও জীবের, জাগ্রত ও স্বপ্ন, স্থূল ও সূক্ষ্ম—সব স্তরে একইভাবে প্রবাহিত। মানুষ যদি এ কথা সত্যভাবে উপলব্ধি করে যে, “আমি ঈশ্বরেরই এক প্রকাশ, তাঁরই নিমিত্ত”—তবে তার জীবন ও কর্ম উভয়ই পবিত্র হয়ে ওঠে।
“ষোলোকলায় পূর্ণ অবতার” বা “আংশিক অবতার”—এই ভাষাগুলি প্রকৃতপক্ষে চেতনার ঘনত্বের রূপক। সকল প্রাণীই সেই এক পরব্রহ্মের বহিঃপ্রকাশ; কেউ সূক্ষ্মভাবে, কেউ সুস্পষ্টভাবে। জীবনের উদ্দেশ্য এই কলাগুলির জাগরণ, যার চূড়ান্ত পরিণতি একেই প্রতিফলিত করে—“সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম।” (ছান্দোগ্য উপনিষদ ৩.১৪.১)—“এই সমগ্র জগৎই ব্রহ্ম।”
এবং এই উপলব্ধিই শেষ পর্যন্ত বলে দেয়—অবতারত্ব কোনো ‘অন্যের’ গুণ নয়; এটি প্রতিটি জীবের স্বরূপের অমোঘ প্রতিফলন।
ভগবদ্গীতার এই শ্লোক—“ব্রহ্মার্পণং ব্রহ্ম হবির্ব্রহ্মাগ্নৌ ব্রহ্মণা হুতম্। ব্রহ্মৈব তেন গন্তব্যং ব্রহ্মকর্মসমাধিনা।।” (৪.২৪)—অদ্বৈত জ্ঞানের এমন এক শিখর, যেখানে কর্ম, জ্ঞান ও উপাসনা একত্রে একাত্ম হয়ে যায়। এখানে “যজ্ঞ” বলতে কোনো নির্দিষ্ট বৈদিক আচার বোঝানো হয়নি; বরং এটি এক সর্বজনীন তত্ত্ব, যেখানে—প্রতিটি কর্মই যদি ঈশ্বরকে অর্পিত হয়, তবে সেটিই যজ্ঞে পরিণত হয়, আর সেই যজ্ঞই মানুষকে কর্মের বন্ধন থেকে মুক্তি দেয়। শ্লোকটির আক্ষরিক ব্যাখ্যায় দেখা যায়—“ব্রহ্মার্পণম্” মানে, যজ্ঞে যে-অর্পণ-পাত্র ব্যবহার করা হয়, সেটিও ব্রহ্ম; “ব্রহ্ম হবি”—যা অর্পিত হচ্ছে, সেই হব্য পদার্থও ব্রহ্ম; “ব্রহ্মাগ্নৌ”—যে-অগ্নিতে দান করা হচ্ছে, সেই অগ্নিও ব্রহ্ম; “ব্রহ্মণা হুতম্”—যে-যজমান আহুতি দিচ্ছেন, তিনিও ব্রহ্ম; আর “ব্রহ্মৈব তেন গন্তব্যম্”—যিনি এইভাবে ব্রহ্মরূপ কর্মে নিমগ্ন, তাঁর প্রাপ্ত ফলও ব্রহ্মস্বরূপ। অর্থাৎ, কর্তা, কর্ম, উপাদান ও ফল—এই চারটি বিভাজন লুপ্ত হয়ে যায়, এবং যা থাকে তা এক অনন্ত চেতনার ধারাবাহিকতা। তখন কর্ম আর কোনো অহংকেন্দ্রিক কার্য থাকে না, বরং চেতনারই আত্মপ্রকাশ হয়ে ওঠে।
এই যজ্ঞের ধারণা আচার থেকে চেতনার স্তরে উন্নীত হয়েছে। বৈদিক যুগে যজ্ঞ ছিল অগ্নিতে আহুতি দেওয়ার বাহ্যিক প্রক্রিয়া; কিন্তু গীতার দৃষ্টিতে যজ্ঞ হল অন্তর্যাগ—অন্তরের উৎসর্গ। যখন মানুষ নিজের চিন্তা, অনুভূতি ও কর্মকে ঈশ্বরকে সমর্পণ করে, তখন প্রতিটি কাজই ব্রহ্মার্পণ হয়ে ওঠে। এমনকি আহারের কাজও তখন যজ্ঞ—যেমন গীতা (৩.১৩)-য় বলা হয়েছে, “যজ্ঞশিষ্টাশিনঃ সন্তো মুচ্যন্তে সর্বকিল্বিষৈঃ”—"যজ্ঞের অবশিষ্ট ভোজনকারী সাধুগণ সর্বপ্রকারের পাপ বা বন্ধন থেকে মুক্ত হন।" সুতরাং যখন কেউ অন্যের কল্যাণে কাজ করে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে, তখন সেই কাজই যজ্ঞ, আর কর্মই পূজা।
এই শ্লোকটিতে (৩.১৩) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্মবন্ধন এবং নিরাসক্ত কর্মের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন।
এখানে 'যজ্ঞ' বলতে শুধুমাত্র অগ্নিতে আহুতি দেওয়া অনুষ্ঠান নয়, বরং কর্তব্যপরায়ণতা বা আত্ম-ত্যাগপূর্বক কর্ম বোঝানো হয়েছে। জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় যে-কোনো কাজকেই যখন নিরাসক্তভাবে (ফলের আশা না করে) এবং অন্যের উপকারের জন্য করা হয়, তখন তা 'যজ্ঞ' হয়। ‘যজ্ঞাবশিষ্ট ভোজন’-এর অর্থ হলো, কর্তব্য বা ত্যাগের অংশটুকু সম্পন্ন করার পর যা অবশিষ্ট থাকে, শুধু সেটুকুই নিজের জন্য গ্রহণ করা। যিনি এই নীতির অনুসরণ করেন, তিনিই বন্ধনমুক্ত হন। শ্লোকের দ্বিতীয়ার্ধে বলা হয়েছে, "যে-পাপাত্মারা কেবল নিজেদের জন্য রন্ধন করে (ভোগ করে), তারা পাপই ভোজন করে।" অর্থাৎ, যিনি কেবল নিজের ভোগসুখের জন্য কর্ম বা ভোগ করেন, তিনি কর্মের বন্ধনে (পাপে) জড়িয়ে পড়েন।