গীতায় অবতারতত্ত্ব: ৫



শংকরাচার্য তাঁর ভাষ্যে এই অংশটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন যে “সর্বানন্তরঃ” মানে এমন এক আত্মসত্তা, যিনি সর্ববস্তুর অন্তরে থেকে সমস্ত ক্রিয়ার সম্ভাবনা দেন, কিন্তু নিজে কোনো ক্রিয়ায় জড়িত নন। তিনি ‘অকর্তা কর্তা’—যার দ্বারা সমস্ত ক্রিয়া ঘটে, কিন্তু যিনি নিজে কিছুই করেন না। যেমন বিদ্যুৎ অসংখ্য যন্ত্রকে চালায়, অথচ নিজে কোনো যন্ত্রের কাজ করে না, তেমনি আত্মাও দেহ, মন, ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি—সব কিছুকে কার্যক্ষম করে তোলে, অথচ নিজে নির্লিপ্ত থাকে।

শংকর স্পষ্ট বলেন—“কর্তৃত্বম্‌ উপাধিনিমিত্তম্‌”—কর্তৃত্ব কেবল উপাধি বা দেহ-মনের আরোপ। আত্মা নিজে কর্তা নয়, কিন্তু অজ্ঞানবশে যখন সে দেহ ও ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে আত্মপরিচয় স্থাপন করে, তখনই জন্ম নেয় ‘আমি কর্তা’ বা অহংকারবোধ। এই ভেদবুদ্ধিই সমস্ত বন্ধনের মূল। অদ্বৈতের ভাষায়, কর্তা-ভাব (kartṛtva) ও ভোক্তা-ভাব (bhoktṛtva) দুটোই মায়ার উৎপাদন; আত্মা আসলে সাক্ষীচেতনা (sākṣī-caitanya)—যিনি কেবল দেখেন, নিজে কখনও কিছু করেন না।

এই অবস্থাই গীতায় প্রকাশ পেয়েছে “প্রকৃতেঃ ক্রিয়মাণানি গুণৈঃ কর্মাণি সর্বশঃ। অহঙ্কারবিমূঢাত্মা কর্তাহমিতি মন্যতে।” (গীতা ৩.২৭)—অর্থাৎ, প্রকৃতির গুণগণই সব কাজ করছে; কিন্তু অজ্ঞান ব্যক্তি, অহংকারে মোহাচ্ছন্ন হয়ে ভাবে, ‘আমি কর্তা’। এখানেই গীতা ও উপনিষদের ঐক্য—উভয়েই বলছে, কর্তা মানুষ নয়, আত্মা নয়; কর্ম প্রকৃতিরই গতি, আত্মা তার অন্তঃসাক্ষী।

এই ধারণাকে আধুনিক অদ্বৈত বা নন-ডুয়াল দার্শনিকরাও গভীরভাবে গ্রহণ করেছেন। রামন মহর্ষি বার বার বলেছেন—“The ‘I’ that says ‘I do’ is the ego; the Self neither does nor refrains from doing.” তাঁর দৃষ্টিতে আত্মা কেবল উপস্থিতি; সে কাজের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করে না, বরং কাজ তার উপস্থিতিতেই ঘটে। যখন কেউ নিজের আসল সত্তাকে খুঁজে পায়, তখন দেখে—সব কর্ম ঘটছে, কিন্তু কর্তা নেই।

নিসর্গদত্ত মহারাজ বলেন—“You are not the doer; the deed happens when you identify with the doer.” তাঁর মতে, ‘আমি কর্তা’ ভাবই দুঃখ ও বন্ধনের মূল। যখন এই মিথ্যা সত্তার পরিচয় বিলুপ্ত হয়, তখন কর্ম অব্যাহত থাকে, কিন্তু তা আর ব্যক্তিগত হয় না; তা হয়ে ওঠে স্বয়ং চেতনার প্রবাহ—spontaneous functioning of the Absolute।

শ্রী অরবিন্দ এই তত্ত্বকে গতিশীল ব্যাখ্যায় রূপ দিয়েছিলেন: “The Divine works through us, not as an external force but as our highest Self.” তাঁর মতে, ঈশ্বর বাইরে কোনো আদেশদাতা নয়, বরং আমাদের চেতনার অন্তর্গত প্রেরণাশক্তি, যার সঙ্গে ঐক্য স্থাপন হলেই মানবজীবন পরিণত হয় যোগে।

ড. রাধাকৃষ্ণন এই শ্লোক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “The Self is the unseen controller, not through will but by its very being.” অর্থাৎ আত্মা আদেশ দেন না; তাঁর অস্তিত্বই সমস্ত ক্রিয়ার ভিত্তি। যেমন সূর্যের উপস্থিতিতেই জীবন সম্ভব, কিন্তু সূর্যকে কিছু করবার প্রয়োজন হয় না।

অদ্বৈত বেদান্ত এই উপনিষদবাক্যে বলে—আত্মা কোনো কর্তা নয়, কিন্তু সব কর্ম তাঁর দ্বারাই সম্ভব। মানুষ ভুলবশত নিজের দেহ-মনকেই কর্তা ভাবে এবং এই মায়াময় ‘আমি কর্তা’ ভাবেই জন্ম নেয় অহং, বন্ধন, এবং কর্মফলের আসক্তি। কিন্তু যখন জ্ঞান উদয় হয়, তখন মানুষ বোঝে যে, আত্মা নিজেই ‘সর্বানন্তরঃ’—অন্তর্গত, সর্বব্যাপী, নিত্য ও অক্রিয়। তখন কর্ম চলতে থাকে, কিন্তু কর্তার অহং লীন হয়ে যায়; জীবন তখন ব্রহ্মেরই লীলা হয়ে ওঠে—যেখানে কর্ম ঈশ্বরের প্রকাশ, আর মানুষ তাঁর নিঃস্পৃহ সাক্ষীমাত্র।

যে-মুহূর্তে মানুষ ভাবে—“আমার ইচ্ছায় কাজটি হয়েছে,” সেই মুহূর্তে সে ফলের মালিকানাও নিজের করে নেয়। ফলত, কর্মফল তাকে বেঁধে ফেলে সুখ-দুঃখ, সাফল্য-বিফলতার চক্রে। কিন্তু যদি সে বোঝে—“আমি কেবল নিমিত্তমাত্র,” তবে সেই কর্মই মুক্তির পথ হয়। ২.৪৭ শ্লোকটি ভগবদ্‌গীতার অন্যতম মৌলিক উপদেশ, যা কর্মযোগের সারমর্ম প্রকাশ করে। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে এখানে এমন এক জীবনদর্শন শিখিয়েছেন, যা মানুষকে সক্রিয় রেখেই আধ্যাত্মিকভাবে মুক্ত রাখে।

“কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন”—এর অর্থ, তোমার অধিকার শুধু কর্মে, অর্থাৎ তোমার কর্তব্য হলো কাজ করা; কিন্তু সেই কাজের ফল তোমার নিয়ন্ত্রণে নয়। ফলের প্রতি আসক্তি জন্মালে মন দাসত্বে পড়ে যায়, কারণ তখন কাজ আর কর্তব্য থাকে না—তা হয়ে ওঠে লোভ, ভয় বা প্রত্যাশার ফল। কৃষ্ণ এখানে মানুষকে শেখাচ্ছেন: কাজ করো, কিন্তু কাজের উদ্দেশ্য যেন ফল না হয়; উদ্দেশ্য হোক কর্তব্য, দায়িত্ব, আর ভগবানের প্রতি নিবেদন।

“মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোস্ত্বকর্মণি”—এর অর্থ, কাজের ফলই যেন তোমার প্রেরণা না হয়, কিন্তু এই ভেবে যে, ফলের প্রতি আসক্তি ভালো নয়, কর্মবিমুখও হয়ো না। অর্থাৎ, কর্ম থেকে পালানোও ভুল। গীতা স্পষ্ট করে দিচ্ছে, সত্যিকারের ‘অকর্তৃত্ব’ মানে কর্মহীনতা নয়; বরং কাজ করতে থাকা, কিন্তু কর্তার অহংবোধ থেকে মুক্ত থাকা।

এই “অহংকার-বর্জিত কর্ম”-ই প্রকৃত যোগ। যোগসূত্রে পতঞ্জলি বলেছেন—“যোগশ্চিত্তবৃত্তি নিরোধঃ”—অর্থাৎ যোগ হলো মনোপ্রবাহের স্থিতি। যখন আমি ফলের চিন্তা করি না, সাফল্য-ব্যর্থতা আমার মনকে নাড়াতে পারে না; তখন মন স্থির থাকে, শান্ত থাকে—সেটিই যোগের অবস্থা। গীতার এই উপদেশ তাই শুধু আধ্যাত্মিক নয়, মনস্তাত্ত্বিকও: এটি মানুষের মনকে উদ্বেগ, প্রতিযোগিতা ও হতাশা থেকে মুক্ত করে কর্মে মনোযোগী করে তোলে।

আধুনিক মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে, এটি “flow state”—যেখানে ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে কাজে নিমগ্ন, কিন্তু ব্যক্তিগত লাভ বা ফলাফলের চিন্তা নেই। এই অবস্থায় কর্ম নিজেই সাধনা হয়ে ওঠে, কাজের মধ্যেই আনন্দ থাকে।

তাই গীতা আমাদের শেখায়—কর্ম করো, কিন্তু কর্তার অহং ত্যাগ করো। ফল আসবে, কিন্তু ফলের উপর নির্ভর করো না। কারণ ফলের কর্তা ঈশ্বর; কর্মের কর্তা তুমি। এই উপলব্ধিতেই মুক্তি নিহিত—যেখানে কাজ বন্ধন নয়, বরং মুক্তির পথ।

মানুষ ভাবতে ভালোবাসে যে, সে নিজেই তার জীবনের কর্তা, তার সিদ্ধান্তই সমস্ত কিছু নির্ধারণ করে। কিন্তু গীতা শেখায়, আসল নিয়ন্ত্রক মানুষ নয়, বরং সেই সর্বব্যাপী চেতনা—যাকে ঈশ্বর, ব্রহ্ম বা পরম শক্তি বলা হয়।

যখন মানুষ নিজের বুদ্ধি, শক্তি বা পরিকল্পনার দ্বারা সব ফল স্থির করতে চায়, তখন সে একরকম সেই বৃহত্তর ঈশ্বরীয় পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। সে ভাবে, “আমি করবো, আমিই ফল আনব”—এই অহংবোধই আসলে বন্ধনের মূল। কারণ তখন কাজ ঈশ্বরার্পণ হয় না, তা হয়ে যায় “আমার সাফল্য” বা “আমার অর্জন”-এর খেলা।

ভগবান কৃষ্ণ অর্জুনকে যখন কুরুশেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে বলছেন—“ময়ৈবৈতে নিহতাঃ পূর্বমেব। নিমিত্তমাত্রং ভব সব্যসাচিন্‌।” (গীতা ১১.৩৩)—তখন তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন যে, সমস্ত ঘটনাই ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের চেতনায় স্থির। ঈশ্বরই সমস্ত জীবনের, সমস্ত ঘটনার অন্তর্যামী নিয়ন্ত্রক। মানুষ কেবল তাঁর ইচ্ছার প্রকাশের মাধ্যম বা “নিমিত্তমাত্র”।

এর মানে এ নয় যে, মানুষের কোনো স্বাধীনতা নেই; বরং মানুষ স্বাধীন তার অংশগ্রহণে—সে ঈশ্বরের পরিকল্পনার সঙ্গে নিজেকে একীভূত করতে পারে, অথবা অহংবোধে তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহের মূল নকশা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারেই ঘটে।

উদাহরণ হিসেবে—একটি নদী সাগরের দিকে বয়ে চলেছে। মানুষ তার তীরে নৌকা বেয়ে যেতে পারে, স্রোতের সঙ্গে বা বিপরীতে চলার চেষ্টা করতে পারে; কিন্তু নদীর মূল প্রবাহ সে বদলাতে পারবে না। তেমনি, ঈশ্বরীয় পরিকল্পনা বা “দিব্য লীলা”-র স্রোত চলছে চিরকাল; মানুষ সেই স্রোতে সহযোগী হলে আনন্দ পায়, বিরোধিতা করলে দুঃখ পায়।

এই উপলব্ধিই “নিমিত্তমাত্রতা”—আমি কর্তা নই, ঈশ্বরই কর্তা; আমি শুধু তাঁর হাতের যন্ত্র, তাঁর ইচ্ছার মাধ্যম। কিন্তু এই স্বীকারোক্তি কোনো হীনতা নয়; বরং এক শান্ত, বিনয়ী আত্মসমর্পণ, যেখানে মানুষ নিজের অহং ত্যাগ করে মহাজীবনের অংশ হয়ে ওঠে।

আধুনিক মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও, এই ভাবনা মানুষের মানসিক চাপ কমায়। যখন কেউ বিশ্বাস করে যে তার ওপর সব দায়িত্ব নেই, যে সে এক বৃহত্তর প্রক্রিয়ার অংশ, তখন তার মন শান্ত হয়, আত্মবিশ্বাস বাড়ে ও কাজের মধ্যে একধরনের “flow” বা প্রবাহ অনুভব করে।

ফলের কর্তা ঈশ্বর। আমরা কেবল তাঁর ইচ্ছার নিমিত্তমাত্র। আর এই উপলব্ধিই মুক্তির প্রথম ধাপ; কারণ, যে বুঝে গেছে, “আমি কর্তা নই,” সে আর ভয় বা অহংকারে বাঁধা থাকে না। এই উপলব্ধিই মানুষকে এনে দেয় সমত্ববোধ—যা গীতার অন্যতম মহান শিক্ষা।

ভগবদ্‌গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের আটত্রিশ নম্বর শ্লোক—“সুখদুঃখে সমে কৃত্বা লাভালাভৌ জয়াজয়ৌ। ততো যুদ্ধায় যুজ্যস্ব নৈবং পাপমবাপ্স্যসি।।”—মানুষের জীবনের ভারসাম্য বা সমদর্শিতার এক গভীর নীতিকে প্রকাশ করে। এই শ্লোক কেবল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য নয়; এটি প্রতিটি মানুষের অন্তর্জগতের যুদ্ধের নির্দেশ। এখানে কৃষ্ণ অর্জুনকে বোঝাচ্ছেন, জীবনের সব বিপরীত অভিজ্ঞতা—সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, জয়-পরাজয়—সমভাবে গ্রহণ করা শিখতে হবে। কারণ এই জোড়া-দ্বন্দ্বই জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ, প্রকৃতির অনিবার্য ওঠানামা।

অর্জুনের মন তখন গভীর দ্বন্দ্বে আক্রান্ত। তাঁর একদিকে কর্তব্যের আহ্বান, অন্যদিকে সম্পর্কের বন্ধন। তিনি ভাবছেন, যুদ্ধ করলে পাপ হবে; আর যুদ্ধ না করলে ধর্মচ্যুতি হবে। এই মানসিক বিভ্রান্তির মুহূর্তে কৃষ্ণ তাঁকে যে-শিক্ষা দেন, সেটিই যোগের মূল—সমত্ব বা সমবুদ্ধি। তিনি বলেন, “যে-ব্যক্তি সুখে উচ্ছ্বসিত হয় না, দুঃখে ভেঙে পড়ে না, যে লাভ ও ক্ষতিকে এক দৃষ্টিতে দেখে, সাফল্য ও ব্যর্থতায় স্থির থাকে, তিনিই প্রকৃত যোগী।”

এখানে কৃষ্ণের “সুখদুঃখে সমে কৃত্বা” কথাটি আসলে মনোবৃত্তির প্রশিক্ষণ। মানুষ সাধারণত নিজের সুখকে আঁকড়ে ধরে এবং দুঃখকে ঠেলে দেয়। কিন্তু গীতা শেখায়—উভয়ই ক্ষণস্থায়ী; আজ যা সুখ, কাল তা দুঃখে পরিণত হতে পারে। যেমন দিন-রাত, বৃষ্টি-রোদ, গরম-ঠান্ডা—প্রকৃতির মতোই এদের আগমন ও প্রস্থান অনিবার্য। এই ওঠানামার মাঝে যে স্থির থাকতে পারে, তিনিই সমবুদ্ধ।

গীতার অন্যত্র (২.৪৮) কৃষ্ণ বলেন—“সমত্বং যোগ উচ্যতে”—সমতা বা সাম্যই যোগ। যোগ মানে শুধু ধ্যান বা আসন নয়; এটি সেই মানসিক স্থিতি, যেখানে মন আর বাহ্য ঘটনার দ্বারা আন্দোলিত হয় না। পতঞ্জলির “যোগশ্চিত্তবৃত্তি নিরোধঃ” শ্লোকের সঙ্গে এর অন্তর্নিহিত সাদৃশ্য রয়েছে। চিত্তের তরঙ্গ যখন স্থিত হয়, তখন জ্ঞান স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদ্‌ভাসিত হয়।

আধুনিক মনোবিজ্ঞানও এই অবস্থার কথা বলে। আজকের ভাষায় একে বলা যায় emotional regulation—অর্থাৎ নিজের আবেগকে চিনে নেওয়া, কিন্তু তাতে ভেসে না যাওয়া। যে ব্যক্তি প্রশংসায় গর্বিত হয় না, নিন্দায় আহত হয় না, সাফল্যে অহংকারে ভোগে না, ব্যর্থতায় নিজেকে ঘৃণা করে না—তার মন স্থির, মনন প্রসারিত। স্নায়ুবিজ্ঞানের আলোয় দেখা যায়, এমন মানসিক স্থিতি প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সকে সক্রিয় করে তোলে, যা আবেগ ও সিদ্ধান্তের ভারসাম্য রক্ষা করে, ফলে মন শান্ত হয়।

কৃষ্ণ এরপর বলেন—“ততো যুদ্ধায় যুজ্যস্ব নৈবং পাপমবাপ্স্যসি।”—অর্থাৎ, এই সমবুদ্ধি নিয়ে কর্তব্য করো; তবেই তুমি পাপে জড়াবে না। এখানে ‘পাপ’ মানে কোনো ধর্মীয় অপরাধ নয়; এটি মানসিক ভার, অনুশোচনা, বা অন্তর্দ্বন্দ্বের যন্ত্রণা। যখন কেউ স্বার্থ, ভয়, বা আকাঙ্ক্ষা থেকে কাজ করে, তখন সেই কর্ম তাকে বেঁধে ফেলে; কিন্তু যখন কেউ কর্তব্যবোধ ও নিবেদনের মানসিকতা নিয়ে কাজ করে, তখন সেই কর্মই মুক্তির পথ হয়ে ওঠে।