গীতায় অবতারতত্ত্ব: ১৩



তবু, গীতা রূপ ও রূপাতীত—দুই পথকেই সমান সম্মানে গ্রহণ করেছে। যেমন নদী নানা দিক থেকে এসে এক সমুদ্রে মেশে, তেমনি প্রেমের পথ ও জ্ঞানের পথ—দুই-ই একই ব্রহ্মসাগরে মিলিত হয়। রূপময় ভক্তি যেখানে হৃদয়ের উষ্ণতা, নির্গুণ ধ্যান সেখানে চেতনার প্রশান্তি; প্রথমটি অনুভবের দিক থেকে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করায়, দ্বিতীয়টি অস্তিত্বের দিক থেকে তাঁকে চিনিয়ে দেয়।

অদ্বৈত দৃষ্টিতে দেখা যায়, এরা আলাদা নয়—রূপ ও রূপাতীত একই পরম চেতনার দুই ধারা। যেমন তরঙ্গ ও জল এক; তরঙ্গ উঠলে নাম হয় রূপ, তরঙ্গ থামলে নাম হয় অব্যক্ত, কিন্তু জল তো সর্বদা একই। তেমনি ঈশ্বর কখনো লীলাময় কৃষ্ণ, কখনো নিরাকার ব্রহ্ম। ছান্দোগ্য উপনিষদ (৬.২.১)-এ বলা হয়েছে—“একমেবাদ্বিতীয়ম্‌।”—“তিনি এক, দ্বিতীয় কেউ নেই।” এই উপলব্ধিই গীতার মূল সুর—দ্বৈত পথের মধ্য দিয়েই অদ্বৈত সত্যে পৌঁছানো।

এইজন্য কৃষ্ণের শিক্ষা অত্যন্ত বাস্তব ও মানবিক। তিনি জানেন, মানুষ শুরু করে দৃশ্যমান থেকে, কিন্তু তার লক্ষ্য অদৃশ্যের উপলব্ধি। তাই গীতা বলে—রূপ দিয়ে শুরু করো, কিন্তু রূপের সীমা অতিক্রম করো; নাম ও মূর্তির ভক্তি থেকে চেতনার প্রেমে পৌঁছো। যেমন প্রদীপে দৃষ্টি স্থির রেখে ধ্যান শুরু হয়, পরে আলোয় মন বিলীন হয়; তেমনি ভক্তি থেকে জ্ঞান, আর জ্ঞান থেকে একত্ববোধ—এই ধারাতেই ঈশ্বরসাক্ষাৎ সম্ভব।

শেষপর্যন্ত এই শিক্ষার সারমর্ম হলো—ঈশ্বর সর্বত্র, সব রূপেই, সব রূপাতীততায়ও। গীতা রূপের সাধনাকে নিন্দা করেনি, আবার রূপাতীত জ্ঞানকেও অস্বীকার করেনি। দুইয়ের সংমিশ্রণেই জন্ম নেয় “ব্রহ্মাত্মবোধ”—যেখানে মানুষ উপলব্ধি করে—“সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম” (ছান্দোগ্য উপনিষদ ৩.১৪.১)—এই সমস্তই ব্রহ্ম। কৃষ্ণ ও রাম, দেবী ও শিব, রূপ ও রূপাতীত—সবই সেই এক চিরন্তন চেতনার বহুরূপী দীপ্তি। যে-ভক্ত রূপে প্রেম খুঁজে পান, তিনি একদিন রূপের অন্তর্গত চেতনা উপলব্ধি করেন; আর যে-জ্ঞানী চেতনা খোঁজেন, তিনি শেষে প্রেমে মিশে যান। প্রেম ও জ্ঞানের এই ঐক্যই গীতার পরম দর্শন—যেখানে কর্ম ধ্যান হয়, ধ্যান ভক্তি হয়, আর ভক্তি পরিণত হয় জ্ঞানে, যা মুক্তির সমান।

অর্থাৎ গীতার ব্যাখ্যা অনুসারে, ঈশ্বরপ্রাপ্তির দুটি প্রধান পথ আছে—একটি রূপোপাসনা বা সগুণ ভক্তি, অন্যটি নির্গুণ ধ্যান বা অব্যক্ত ব্রহ্মোপাসনা। শ্রীকৃষ্ণ উভয়কেই সমানভাবে স্বীকার করেছেন, কিন্তু সতর্ক করে বলেছেন—অব্যক্ত ব্রহ্মোপাসনা তুলনায় অধিক কঠিন। কারণ রূপোপাসনা যেখানে প্রেম, অনুভূতি ও রূপের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছায়, সেখানে নির্গুণ ধ্যানের জন্য মন ও ইন্দ্রিয়ের সম্পূর্ণ স্থিরতা প্রয়োজন। এই ধ্যানের স্তরে পৌঁছাতে হলে চিত্তকে এমন নিঃশব্দ গভীরতায় স্থাপন করতে হয়, যেখানে কোনো কল্পনা, কোনো চিন্তা, এমনকি ‘আমি’ ও ‘তিনি’-র ভেদবোধও থাকে না।

অদ্বৈত দর্শনের ভাষায়, এটি হলো নির্বিশেষ ব্রহ্মসাক্ষাৎকারের পূর্বঅবস্থা—অর্থাৎ সেই অবস্থায় পৌঁছনোর প্রস্তুতি, যেখানে ব্রহ্মকে আর কোনো বিশেষণ বা গুণে বোঝানো যায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত মনে থাকে—“আমি ধ্যান করছি,” “তিনি ধ্যানের বিষয়,” বা “আমি ঈশ্বরকে পেতে চাই”—ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু-না-কিছু দ্বৈততা রয়ে যায়। এই দ্বৈততা-ই ‘উপাধি’ বা সীমাবদ্ধতা, যা অব্যক্ত ব্রহ্মের উপলব্ধিতে অন্তরায়।

এই অবস্থাটিকেই মাণ্ডুক্য উপনিষদ (৭)-এ ‘তুরীয়’ বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে—“ন প্রজ্ঞম্‌ ন চাপ্রজ্ঞম্‌, নোবয়ঃ প্রজ্ঞম্‌, ন প্রজ্ঞানঘনম্‌, ন প্রজ্ঞম্‌, ন প্রজ্ঞম্‌—শান্‌তম্‌, শিবম্‌, অদ্বৈতম্‌।”—অর্থাৎ, “যে-চেতনা না জাগরণে, না স্বপ্নে, না নিদ্রায় সীমাবদ্ধ, যা চিন্তার অতীত, যা শান্ত, মঙ্গলময় এবং অদ্বিতীয়—তা-ই তুরীয় অবস্থা।” এই তুরীয়ই অব্যক্ত ব্রহ্ম, যা না জ্ঞান, না অজ্ঞান; না কর্তা, না কর্ম; বরং সেই চিরস্থির চেতনা, যা সব অভিজ্ঞতার সাক্ষী।

এখানেই গীতার ‘অব্যক্ত উপাসনা’ ও উপনিষদের ‘তুরীয় অভিজ্ঞতা’ একই দর্শনে মিলিত হয়। রূপময় ভক্তি যেমন হৃদয়কে প্রস্তুত করে ঈশ্বরের প্রেমে নিবেদিত হতে, তেমনি নির্গুণ ধ্যান মনকে প্রস্তুত করে ঈশ্বরের ঐক্য উপলব্ধি করতে। কিন্তু অদ্বৈত দৃষ্টিকোণ থেকে শেষপর্যন্ত উভয় পথেই লক্ষ্য এক—দ্বৈত চেতনার অবসান। যতক্ষণ “আমি” ও “তিনি” আছে, ততক্ষণ সম্পর্ক আছে; কিন্তু যখন জানা যায়, “আমি-ই তিনি”—তখন সম্পর্ক বিলীন হয়ে যায়, কেবল থাকে অনন্ত একত্বের অনুভব।

যেমন সাগর ও তরঙ্গের উদাহরণ নেওয়া যায়—তরঙ্গ ভাবলে সাগরকে দেখা যায় না, আর সাগর দেখলে তরঙ্গ আলাদা থাকে না। তেমনি যতক্ষণ “আমি ভক্ত” আর “তিনি ঈশ্বর”, এই ভাব থাকে, ততক্ষণ ঈশ্বরোপাসনা দ্বৈত থাকে; কিন্তু যখন জানা যায়, “আমি সেই চেতনারই প্রকাশ,” তখন উপাসনা বিলীন হয়ে যায়—থাকে কেবল অভিন্নতা, যা মাণ্ডুক্য উপনিষদ ‘শিবম্‌’ বা চিরমঙ্গল বলে অভিহিত করেছে।

গীতার এই শিক্ষা আমাদের শেখায়—অব্যক্ত উপলব্ধি কোনো ধারণা নয়, এটি চেতনার সর্বোচ্চ শুদ্ধি। সেখানে ঈশ্বর আর দূরের কেউ নন, বরং নিজ চেতনার অন্তরতম কেন্দ্রে বিরাজমান সেই এক ব্রহ্ম—যিনি শান্ত, অনাদি, অচল, এবং অদ্বিতীয়।

তবে গীতার শিক্ষা বাস্তববাদী—মানুষের জন্য রূপে শুরু করে রূপাতীতের দিকে এগোনোই সহজ পথ। যেমন ধ্যানের শুরুতে প্রদীপে মন স্থির হয়, পরে আলোকে মনে আনা যায়; তেমনি রূপময় উপাসনা ধীরে ধীরে অব্যক্ত ব্রহ্মে মনকে প্রস্তুত করে। তাই ১২.৫ শ্লোকের অর্থ হতাশা নয়, সতর্কতা—অব্যক্তের উপাসনা পরম, কিন্তু কঠিন; আর সেই উপলব্ধির প্রস্তুতি রূপময় ভক্তি ও কর্মযোগের মধ্য দিয়েই আসে।

শেষপর্যন্ত গীতার বার্তা এক—রূপ বা রূপাতীত, ঈশ্বর সর্বত্র; তাঁর দিকে যাত্রাই মুখ্য। তবে যাত্রার প্রথম ধাপ হলো দৃশ্যমান থেকে সূক্ষ্মে, সীমিত থেকে অসীমে, ব্যক্ত থেকে অব্যক্তে উত্তরণ। এই উত্তরণই মানুষের চেতনার প্রকৃত সাধনা—যেখানে রূপ ভেদ পেরিয়ে অনন্তের সঙ্গে মিলন ঘটে, এবং মানুষ অনুভব করে—“সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম”—এই সমস্তই সেই এক ব্রহ্ম।

এই অব্যক্ত-ভক্তির ক্লেশ আসলে মানসিক কারণেও গভীর—মানুষ ইন্দ্রিয়গোচর, প্রতিমূর্ত ও রূপনিষ্ঠ অভিজ্ঞতার দ্বারা শেখে, অনুভব করে, ভালোবাসে। তাই ঈশ্বরকে কেবল ‘নির্গুণ, নিরাকার, অব্যক্ত’ হিসেবে ভাবতে গেলে মন একধরনের শূন্যতার ভয় অনুভব করে। তাই গীতা নিজেই অব্যক্ত-ভক্তিকে সর্বোচ্চ জ্ঞানমার্গ বলে স্বীকার করলেও, সাধারণ মানুষের জন্য সাকার উপাসনাকেই অধিক সহজ ও স্বাভাবিক পথ হিসেবে গ্রহণ করেছে।

শ্রীকৃষ্ণ যখন বলেন—“মোহিতং নাভিজানাতি মম এব্যঃ পরমব্যয়ম্‌” (গীতা ৭.১৩)—অর্থাৎ, “মায়ার দ্বারা মোহিত জীবেরা আমাকে আমার পরম অবস্থায় চেনে না; তারা আমাকে দেহধারী মনে করে,” তখন তিনি আসলে চেতনার এক গভীর অন্তঃপ্রক্রিয়ার কথা প্রকাশ করছেন। এখানে “মায়া” শব্দটি কেবল কোনো বিভ্রম বা দৃষ্টিভ্রান্তি নয়; এটি চেতনার স্ব-আবৃতির বা আত্মগোপনের প্রক্রিয়া। একক, অবিভক্ত ব্রহ্ম নিজেকে যখন সীমারেখার ভেতর আনতে চায়, তখনই এই মায়ার জাল বোনা হয়—যেন অসীম স্বরূপ নিজেই নিজের অভিজ্ঞতাকে সীমিত করে দেহ, মন, ইন্দ্রিয় এবং কর্মের কাঠামো তৈরি করে। মায়ার পর্দা যত ঘন, ততই জীব নিজেকে দেহ ও মানসিক সত্তা বলে মনে করে; আর যখন এই পর্দা পাতলা হতে থাকে, তখন আত্মচেতনার স্বরূপ ধীরে ধীরে উদ্‌ভাসিত হয়।

এই কারণেই গীতা জাগরণের পথে ধৈর্য ও সহানুভূতির শিক্ষা দেয়। গীতায় কৃষ্ণ ৩.২৬ শ্লোকে বলেন—“ন বুধাঃ শ্রদ্ধা-ভেদং জনয়েত্‌ অজ্ঞানাম্‌ কর্মসংগিনাম্‌”—অর্থাৎ, জ্ঞানী যেন অজ্ঞের বিশ্বাস ভঙ্গ না করে। অজ্ঞের ভক্তি যতই সীমাবদ্ধ হোক না কেন, সেটিই তার প্রথম সিঁড়ি, তার অন্তর্গত উন্মেষ। এই সীমিত বিশ্বাসই চেতনার অঙ্কুর; তা ভেঙে দিলে অন্তঃপ্রবাহ স্তব্ধ হয়ে যায়। যেমন একটি শিশুর প্রথম টলমল পদক্ষেপই ভবিষ্যতের গতি ও চলনের প্রতিশ্রুতি, তেমনি মূর্ত ও রূপনির্ভর ভক্তিও পরম অরূপের পথে প্রাথমিক সঞ্চার।

অদ্বৈত বেদান্ত ও কাশ্মীর শৈব দর্শন উভয়েই এই সত্য ঘোষণা করে—ব্রহ্ম বা চিত্‌ স্বরূপ নিজেকে সীমাবদ্ধ রূপে প্রকাশ করেই জগৎকে উপলব্ধ করে। শঙ্করাচার্য বলেন, “অবিদ্যা”-র পর্দা পড়লে ব্রহ্ম যেন নিজের অসীমতা ভুলে যায়, কিন্তু সেই ভুল স্থায়ী নয়; জ্ঞানই সেই পর্দা সরিয়ে দেয়। অভিনবগুপ্ত বলেন, চেতনা নিজেকে সীমিত করে বহু রূপে প্রকাশ করে—এটাই “স্পন্দ” বা “লীলা”—যেখানে একক চেতনা বহুরূপী হয়ে নিজেরই আনন্দ উপভোগ করে। ফলে জ্ঞান ও ভক্তি এখানে দ্বন্দ্ব নয়, বরং পরিপূরক—জ্ঞানের শুষ্ক বুদ্ধি ভক্তিতে প্রাণ পায়, আর ভক্তির উচ্ছ্বাস জ্ঞানে স্থিতি খুঁজে পায়।

বৌদ্ধ যোগাচার মতে, অবিদ্যা মানে মন নিজের প্রতিচ্ছবি নির্মাণের প্রবণতা। মন এক অনন্ত আয়না, যেখানে প্রতিটি ভাবই তার প্রতিবিম্ব। যখন মন সেই প্রতিবিম্বগুলিকে বাস্তব মনে করে, তখন জগৎ নামে এক অনিত্য স্বপ্ন তৈরি হয়। কিন্তু চেতনা যখন নিজের প্রকৃত রূপ চিনে ফেলে, তখন এই মায়া বিলীন হয়, যেমন জাগরণের সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্ন মিলিয়ে যায়। জৈন অনেকান্তবাদও এই সত্যকে স্বীকার করে—প্রত্যেক দৃষ্টি আংশিক, আর সমস্ত দৃষ্টির সমন্বয়েই সত্যের পূর্ণতা গঠিত। তাই অজ্ঞের সীমিত দৃষ্টি ত্যাজ্য নয়; সেটিই জ্ঞানের পথে প্রয়োজনীয় মধ্যবর্তী ধাপ।

সুফি দর্শনের ‘ওয়াহদতুল উজূদ’—অর্থাৎ “অস্তিত্বের ঐক্য”—এই অদ্বৈত উপলব্ধিরই আরেক রূপ। সকল কিছুই আল্লাহরই প্রকাশ, যদিও অজ্ঞ সেই ঐক্য দেখতে পায় না। রুমি সুন্দরভাবে বলেন, “তুমি যা দেখছ, তা আসলে ঈশ্বরেরই মুখ।” এই উপলব্ধি যখন হৃদয়ে জাগে, তখন মোহ বিলুপ্ত হয়, আর প্রেমই হয়ে ওঠে জ্ঞান। প্রেম এখানে আবেগ নয়, বরং চেতনার সেই জ্বালাময় পরিপূর্ণতা, যা জানার সব সীমা অতিক্রম করে পরম ঐক্যে স্থিত হয়।

গীতা (১২.২)-য় কৃষ্ণ বলেন—“ময়্যাবেশ্য মনো যে মা নিত্যযুক্তা উপাসতে”—যারা রূপময় রূপে মন নিবিষ্ট করে, তারাই শ্রেষ্ঠ; কিন্তু (১২.৩-৪)-এ তিনি আবার বলেন, “যারা অব্যক্ত, সর্বত্রব্যাপ্ত, অনাদি ব্রহ্মের উপাসনা করে, তারাও শেষে আমাকেই লাভ করে।” এই দুই অবস্থাই এক অভিন্ন চেতনার দুটি তরঙ্গ—রূপ ও অরূপ, ভাব ও জ্ঞান, ভক্তি ও বেদান্ত একই স্রোতে মিলিত।

আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শনের ভাষায় চেতনার অদ্বৈত তত্ত্বকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করার যে-প্রচেষ্টা চলছে, তার মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী দুটি ধারণা হল Predictive Processing এবং 4E Cognition। এই দুটি শব্দই মূলত স্নায়ুবিজ্ঞান ও জ্ঞানতত্ত্ব (Cognitive Science)-এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু তাদের ভেতরে নিহিত অর্থ গভীরভাবে বেদান্তীয়।

Predictive Processing (পূর্বানুমানমূলক প্রক্রিয়াকরণ): এই তত্ত্বে বলা হয়, মস্তিষ্ক কখনও কেবল বাহ্য জগতের তথ্য গ্রহণ করে না; বরং সে নিজেই একটানা “পূর্বানুমান” বা prediction করে, এবং তার সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের আসল তথ্যের তুলনা চালিয়ে যায়। মস্তিষ্ক মূলত একটি “prediction loop” বা পূর্বানুমান-চক্র-এর মধ্যে বাস্তবতার এক ধারণাগত মডেল তৈরি করে। এই মডেলই আমরা “বাস্তব জগৎ” বলে মনে করি। যখন এই মডেল আর বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্যে ব্যবধান থাকে—তখন আমরা ভুল দেখি, ভয় পাই, রাগ করি বা আসক্ত হই। আর যখন সেই পার্থক্য বা prediction error দূর হয়—যখন অভ্যন্তর ও বাইরের ভেদ বিলুপ্ত হয়ে যায়—তখনই চিত্‌ নিজের প্রকৃত রূপে জেগে ওঠে। অদ্বৈত বেদান্ত একে বলে “ব্রহ্মাভেদ”, অর্থাৎ জানার, জানার বিষয় ও জ্ঞান—এই তিনটি এক হয়ে যাওয়া।

4E Cognition (চার ‘E’-এর জ্ঞানতত্ত্ব): এখানে “4E” মানে চারটি ইংরেজি শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ—Embodied, Embedded, Enactive, ও Extended—যেগুলি একসঙ্গে মানবচেতনার পূর্ণ ব্যাখ্যা দেয়।

১. Embodied (এম্বডিড / দেহাভিনিষ্ঠ): চেতনা বা জ্ঞান কেবল মস্তিষ্কে সীমাবদ্ধ নয়; আমাদের দেহ, ইন্দ্রিয়, স্নায়ুতন্ত্র—সব মিলেই চিন্তার অংশ। হাত দিয়ে স্পর্শ করা, চোখে দেখা, হাঁটা—এসবই চিন্তার সক্রিয় প্রক্রিয়া। শরীরই চেতনার প্রকাশমাধ্যম।