এই গাছ তুই
আছিস কেমন?
তোর নাকি আজ মনটা খারাপ,
আমার মতন?
একটু বসি তোর পাশেতে? অল্পস্বল্প গল্প করি? এই ফাঁকেতে?
আচ্ছা রে শোন, কষ্ট পেলে
আমার মতন তুইও কাঁদিস?
রাত্রি হলেই লুকিয়ে ভীষণ বালিশ ভেজাস?
সত্যি করে বলতো দেখি,
তুই কখনো চুপি-চুপি...
ভালোবাসিস? প্রেমকে ডাকিস? কামের তাপে পুড়িস একা?
কোন সে দুঃখে তোর চোখেতে জল ঝরে যায় যখনতখন?
বুঝিস না ভুল, বলছি নাতো, কষ্ট কেবল
ভালোবাসাকেই করছে দখল!
হাজার রঙের হাজার ঢঙের কষ্ট থাকে,
কষ্ট কিছু কষ্টে থাকে, কষ্ট কিছু কষ্ট ঢাকে--
সবাই জানে, আমিও জানি।
বল না আমায় সত্যি করে,
মনটা কি তোর ইচ্ছে হলেই
আমার মতো চরকি ঘোরে?
এক লাফেতে আকাশটা ছোঁয়? নীলটা লোফে হাতের মুঠোয়?
সাগরটাকে পার করে দেয় এক ডুবেতেই?
ভাবলে এসব প্রায়বেলা তোর মনটা কাঁদে?
যাবি নাকি রে ওই সাগরে?
নিয়ে যাবো চল কাঁধে চড়িয়ে,
দূর পাহাড়ে হারিয়ে যাবো ওই ও দূরে...চল যাবি চল!
শোন না রে গাছ, তোর মনে কি অনেক কথা জমলে পরে
কাউকে ডেকে বসিয়ে কাছে বলতে ওসব ইচ্ছে করে?
তোর কথা তো শক্ত ভীষণ! বোঝে কে রে?
নাকি চুপটি থাকিস বোবার মতন?
তোর বাবাটা বোবা সেজে কাটিয়ে দিল দিব্যি জীবন!
নৈঃশব্দ্যের শক্তি কত, বুঝল না কেউ।
তোর মনে কি অনেক কথা লুকিয়ে আছে বাবার মতন?
বলবি আমায় সেসব কথা সময় করে?
তপস্যাতে কেমন করে
দাঁড়িয়ে থাকিস?
বছর ঘুরে বছর আসে, ছোট্ট হাতে জায়গা মাপিস তুই তখনো?
তোর চারিপাশ স্মৃতি গেঁথে,
মনের মধ্যে রাখিস বেঁধে,
দৃশ্য একই, ভিন্ন রূপে,
রোজ রেখে দিস নীরব বোধে...সন্তসাধু যেমনি রাখে।
সুখ কি হাসে তোর মনেতে?
দুঃখে কাঁদিস সবার মতো?
হলে অভিমান গালটা ফোলাস?
রাগ এলে খুব, শেকড় ছিঁড়িস তুই কখনো?
আমরা সবাই তোকে কাটি কিংবা ছিঁড়ি,
ইচ্ছেমতো নানান কাজে,
তোর শরীরে জীবন সাজে এই আমাদের--
নির্দয়তার তীব্র এ রঙ রাগায় তোকে?
হাঁটলে দারুণ দিব্যি তোরা,
সবকটাতে যুক্তি করে,
পালিয়ে যেতিস পৃথিবী ছেড়ে?
ভাবনা আসে, স্রষ্টা তোদের বুদ্ধি করে বাঁধল শেকল ভীষণ জোরে।
ভালোই হলো, পড়লি বাঁধা, থাকলি পাশে বন্ধুবেশে।
কোনো একদিন, যদি আমি তোর পাশেতে,
সারা দিনটা কাটাই হেসে ঠাঁই দাঁড়িয়ে তোরই মতন,
চুপটি করে, কেমন হবে?
বলবে লোকে, ওই যে দ্যাখো, পাগল দ্যাখো!
বলুক নারে! ইচ্ছেঘুড়ি উড়ছে কেন, কেউ কি বোঝে?
সারাদিন যে দাঁড়িয়ে থাকিস,
ক্লান্ত লাগে পায়ের গোড়ায়?
ইচ্ছে করে একটু বসে আধটু শুয়ে জিরিয়ে নিতে--
গা এলিয়ে, ক্লান্তি যাতে যায় মিলিয়ে?
একটা কথা, রাত হলে তুই করিস রে কী?
রাত নামলে এই এমনি, ঘুমিয়ে পড়িস ওই অমনি?
নাকি আমার মতোই থাকিস জেগে?
রাতটাকে তুই দিস পাহারা দিন ঠেকিয়ে?
চাঁদটা দেখিস উঁচিয়ে মাথা?
নীরব হাওয়ার গল্প শুনিস ঘুম তাড়িয়ে?
নাকি তোর ডালেতে জায়গানেয়া
পাখির ঘরের--
ভালোবাসায় পাতিস আড়ি?
বাসলে ভালো ওই পাখিরা কী বলে রে?
শীতকালটা যখন হেলে তোর শরীরে,
ঝরলে পাতা, ঝর্ণা চোখের যেমনি ঝরে,
তুই কি দারুণ ব্যথায় কাঁদিস?
শ্রাবণধারা সুর তুললে অঝোর ধারায়
তোর পায়েতে, কেমন লাগে?
রোদটা যখন উস্কে ওঠে, সূর্য্যিমামার রাগটা ফোঁসে,
পুড়িস ভীষণ?
গাছরে তোরা অনেক ভালো,
কতকিছু যে দিস বিলিয়ে স্বার্থ ভুলে,
হিসেব বেজায়, রাখল না কেউ।
বাঁচলে চলি তোদের দয়ায়,
মরলে ঘুমাই তোদের ছায়ায়,
তোদের গাথা বীরের কায়ায়,
তোদের গাঁথি প্রাণের মায়ায়।
গাছের মতো মানুষরা হোক--
এ প্রার্থনায়, আজকে আসি।