যদি না বোঝাও ভালোবাসো কতটা, বুঝতে দিয়ো না। জানতে না দাও যদি তোমার ক্ষত, জানতে চাইবও না। প্রতিরাতে যদি এ দুচোখে বৃষ্টি ঝরে, তবুও জানব না সেধে তোমারও কখনও এমন হয় কি না। তবে যদি কখনও বুঝে ফেলি, যদি সত্যি মনে হয়, আমায় বাসো না ভালো, বাসোনি কখনও, সেদিন যেন বলতে এসো না…আমি ভুল ছিলাম! কতবার ভাবি, ছেড়ে দিই…আর না লিখি চিঠি…না-লিখলে কীই-বা এসে যাবে? এরপর ভাবি… না…আমি তো তার অবয়ব কিংবা অর্জনকে ভালোবাসিনি, আমি যখনই তার মন ছুঁয়েছি, তাকে ভালোবাসতে বাধ্য হয়েছি। তাকে ভালো না বেসে থাকতে পারিনি বলেই তো ভালোবেসেছি! বারে বারে আমি তার ওই মনটার পেছনেই ছুটেছি, যা আমায় আটকে রেখেছে হাজারো মায়ার বাঁধনে। দূরে থাকতে চেয়েছি সরে যতই আমি, ততই যেন মন ছুটেছে বেশি তার পেছনেই, তাকে হারানোর ভয় হয়েছে মনে গভীর ততই! ভেবেছি যখন, চলে যাব, চলে গেলে কী আর হবে… তখনই আরও কিছুটা যেন এসেছি কাছে! ভালোবাসা কি বড়ো অসময়েই আসে তবে? যখন চারিদিকে শুধু শুকনো পাতার খেলা…ছড়ায় হাওয়ায় হাওয়ায় রুক্ষ প্রাণের দায়, তখনই কি বড়ো বেখেয়ালে মন নিয়ে ভালোবাসা খেলে চুপটি করে? আমার এ ক্ষতবিক্ষত মনের আর কী দেবো আমি? হায়, এতটা নিঃস্ব হয়ে এসেছি তার কাছে! শুধু যে নিয়েই গেছি…তাই মনে হয়, আমি বুঝি তাকে ঠকিয়েছি খুব! আমার যে কিছু নেই দেবার, তবু সে কি ধরবে আমার হাত? নেবে কাছে ডেকে? যদি হাঁটু গেড়ে বসি, নতজানু হয়ে এই হাতদুটি তুলে তাকে চাই…পাবো? সব কিছুর পর মনে আসে…আমি হয়তো স্বার্থপরই! নিজেরটা তো ঠিকই বুঝি, আর যাকে কখনও দিইনি কিছুই, তার কাছেই কিনা তাকেই চেয়ে বসে থাকি! কেন এল সে আমার জীবনে? এলই যদি, কেন এল এ অসময়েই? তাকে কিছুই দিতে পারি না বলে আমার যে ভীষণ কষ্ট হয়ে, বোঝে সে? আমি যে খুব করে চাই, সে পাখিদের মতো ডানা মেলে ওড়াওড়ি করুক, সুখী হয়ে থাকুক, ভালো থাকুক---তার নিজের নিয়মেই… আমার বড়ো ইচ্ছে হয়, মানুষটাকে ভালো থাকতে দেখি। তাকে ভালো রাখব, এমন স্বপ্ন দেখি…কতদিন হয়ে গেল! অথচ পারছিই-বা কই! নিজেই তো তার কাছে ভিখিরি হয়ে বসে আছি! তাকে কোথায় রাখি…মাথায়? বুকে? চোখে? মাঝে মাঝে মনে হয়, বুকটা কেন যায় না চেরা? যেত যদি, দেখে নিতাম তাকে! কেন যে ভালো তাকেই বাসি সবচে’ বেশি, কিছুই যাকে পারি না দিতে? কিছুই চায় না সে, কোনও আবদারই নেই তার; আশা নেই, প্রত্যাশা নেই… এ যে ভীষণ লজ্জার! এ যে নিজেরই কাছে ছোটো হয়ে থাকা! কেন তাকে কিছুই পারি না দিতে? তাহলে কেন বলছি এত...‘ভালোবাসি’? সে হয়তো নেয় বুঝেও, তাকে যে দেবো, সে বিত্তই আমার নেই। সে-জন্যই হয়তো চাইতেও তার এত সংকোচ! কিন্তু আমি যে চাই অনেক কিছুই তার কাছে! আমি চাই, সে তার ইচ্ছে-খুশিমতো আমায় সাজাক, আমায় গ্রহণ করুক। আমার কাছে, সুখ না হোক, অন্তত দুঃখটুকু রাখুক! আমি তার প্রয়োজন হয়ে উঠতে চাই, তার যোগ্য হতে চাই। সে বলুক, তার যোগ্য হতে চাইলে আমাকে কী করতে হবে! আমি তাকে এনে দেবো তার প্রিয় সব কিছুই… আমি তার হাতঘড়ি হব, আমি তার কলম হব, আমি তার কিবোর্ডের শরীর হব, আমি তার আয়না হব, আমি তার সবচেয়ে প্রিয় বইটা হব। কেন সে চায় না কিছুই আমার কাছে? প্রতিদিন এ মুঠোফোনটা যখনই হাতে নিই, আমার খুব ইচ্ছে হয়, তাকে একটি বার্তা পাঠাই… সে কী করছে, খেয়েছে কি না, সুস্থ আছে কি না… তবু এসব জানতে চেয়ে পাঠাই না কিছুই, যদি সে বিরক্ত হয়, সে ভয়ে। এই দূর থেকে আমি আর কীই-বা করতে পারি তার জন্যে? এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব তো নয়… আমি যে তার কোনও কাজেই আসি না, তবু কী করে তাকে ভালোবাসি বলি? আজকাল আমার ভালোবাসি বলতেও লজ্জা হয়…সে এক ভীষণ লজ্জা! আমি যে তাকে কোথায় রাখি… যদি তাকে রেখে দিই এ দুচোখেই…কার কী তাতে? তাকে দেখি, তাকে ভাবি, আর মনে মনে বলি… ওভাবে বোলো না ‘ভালোবাসি’, ওভাবে নিয়ো না কাছে, না-পেয়েই কিছু...ভালোবাসা কি অত দিতে আছে, বলো?