অমেধাবী মানুষ বরাবরই মেধাবী মানুষের কাছে যায় এবং এটা বলে বলে বিরক্ত করে যে, আপনি আমাদের দলে আসুন, কেননা আপনি ভুল জায়গায় আছেন। ওদের লজ্জা, বোধ, কমনসেন্স কিচ্ছু নেই! এরকম মানুষ ভিখারিরও অধম! মেধাবী মানুষের অত সময় নেই। ওরা নিজেদের কাজ নিয়েই ব্যস্ত। এ কারণেই ওরা কাউকেই বিরক্ত ও বিব্রত করে না। কাজের লোক থাকে নিজের কাজ নিয়ে, আর অকাজের লোক থাকে অন্যের কাজ নিয়ে। ধর্মাচরণের চাইতে কর্মাচরণ জরুরি। আমি আজ পর্যন্ত কোনো মেধাবী মানুষকে গায়ে-পড়া স্বভাবের হতে দেখিনি। গায়ে পড়ে নিজের মত ও পথকে জাহির করতে আসা লোক সবসময়ই সন্দেহজনক ও থার্ডক্লাস। অন্যের অস্তিত্বের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে মাথা ঘামায় তারাই, যারা নিজে অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। নিজের ধান্দায় গায়ে পড়ে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়াত কেবলই ডেসটিনি'র লোকজন, আমাদের কিন্তু মনে আছে। ওসব লোকের ক্লাস কেমন ছিল, তা-ও আমাদের স্পষ্ট মনে আছে। "আমরা ধনী হচ্ছি; আপনার পায়ে পড়ি...প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ, আপনিও আমাদের সাথে ধনী হোন!"...ছো ছুইঠ! ভিখারি কোট-টাই পরলেও মনটা ভিখারিরই থেকে যায়। সম্প্রদায়গুলির এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়া উচিত। ফলোয়ারদের অমন বেআক্কেল, অশিক্ষিত করে ফেলে রেখে একটা সম্প্রদায় ধীরে ধীরে বিরক্তিকর ও হাস্যকর হয়ে ওঠে। মহৎ দর্শন দিয়েও কী হবে, যদি মলমবেচা ফলোয়ার দিয়ে কোনো সম্প্রদায় ভরপুর হয়ে থাকে? চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়েও ওরা বলে আর বলতেই থাকে, "আসুন আমাদের গাড়ির নিকট, দেখুন আমাদের মলমখানা। বেঁচে থেকে কী লাভ, যদি আমাদের কোম্পানির এই খাইজ্জানির মলমটা লজ্জাস্থানে না লাগান?" চুলকানিতে পূর্ণ যার জীবন, সে চোখে মানুষ আর দেখে না, খালি চুলকানিই দেখে। শুধু চেহারায় মানুষ হলেই হয় না, মাত্রাজ্ঞান ও কাণ্ডজ্ঞান লাগে। মার্জিত হতে চাইলে মানুষ বুঝে কথা বলতে জানতেই হবে। ধ্রুপদী নৃত্যের অপেক্ষায় আছে যে-লোকটা, তার সামনে গিয়ে খ্যামটা নাচ দিলে তো পাছায় লাথি খেতেই হবে, তাই না? যে যা চায়, তাকে দিয়ে নিজের চাওয়া পূরণ করতে চাইলে, তাকে তা দিতে হবে। কাঁঠালপাতার কারবারির ফ্যান হয় কেবলই ছাগলেরা; মানুষ পেতে চাইলে পাতার নয়, ফলের কারবার করতে হবে। অবশ্য তার আগে পাতা ও ফলের পার্থক্য বুঝতে হবে। আপনার কাছে যা অমূল্য ফল, আমার কাছে তা-ই তুচ্ছ পাতা হতে পারে। অঙ্কে হঠাৎ ৩৩ পেয়েই যে পাড়াসুদ্ধ মিষ্টি বিলোয়, সে যখন অঙ্কে প্রায়ই ৯৯-পাওয়া লোকটাকে অঙ্ক শেখাতে আসে, তখন স্বর্গের দেবতারা পুষ্পবৃষ্টি করেন কি না জানি না, তবে মর্ত্যের ছাগলেরা যে সবাই মিলে আনন্দে গুটিগুটি হাগতে শুরু করে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সহজ করে বলি। আমি যার ছাত্র হবারও যোগ্যতা রাখি না, গায়ে পড়ে তাকে শেখাতে চাইছি, তার পেছনে পেছনে ঘুরে তারই মাস্টার হতে চাইছি...আপনিই বলুন, আমি যে-সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, সেটির নাম যে 'চিড়িয়াখানা' নয়, তা মানুষ বুঝবে কী করে? আমি যে-ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পেরে আপনার সামনে এসে সমানে লাফাচ্ছি, সেখানে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া দূরে থাক, সেটিকে যে ভর্তি পরীক্ষার ফরম তোলার মতোও মনে করেননি আপনি, এই বিষয়টি তো আমাকে বুঝতে হবে! থাকুক না যে যার মতো! থাকি না নিজে নিজের মতো! ওর দরকার হলে ও নিজেই আমার ঘরে আসবে বা আসতে চাইবে, অত টানাটানির দরকার নেই তো! যে-ঘরে ধরে ধরে লোক আনতে হয়, সে ঘর যে পূর্ণ নয়, শূন্য—তা তো বোঝাই যায়! আবারও মনে করিয়ে দিই: ধর্মাচরণের চাইতে কর্মাচরণ জরুরি।