কবিতার মতো সত্য: ৮

৭১. তোমাকে খুব চুমু খাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি, তোমার ঠোঁটজোড়া আমার কাছে গচ্ছিত রেখে তুমি কোথায় যেন চলে যাচ্ছ!




৭২. একেকটা ঘর। একেকটা মিথ্যে।




৭৩. চুমু চাইলাম, পালালে! চুমু চাইলে, পালালাম! তার পরে আর ফিরতে পারলে না! পথ দেখিয়ে পথ হারালে, আর এখন কিনা আমাকে অভিশাপ দিচ্ছ!




৭৪. ভেবেছিলাম, তুমি বুঝি স্বপ্নের মানুষ! কাছে গেলাম, আর অমনিই স্বপ্নরা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে গেল! এরপর আবারও হাতড়ে হাতড়ে দু-একটা স্বপ্ন বহুকষ্টে বুকে টেনে আনলাম। এনে দেখি, স্বপ্ন থেকে অবিরত রক্ত ঝরছে!




৭৫. কাছে গেলাম। নিজের সমস্ত মুগ্ধতা তোমার দু-চোখে ছড়াতে যাব, হঠাৎ দেখি, তুমিই মুগ্ধ হয়ে বসে আছ! হাঁটু গেড়ে প্রেম নিবেদন করব ভেবেছিলাম; দেখি, তুমিই বসে গেছ হাঁটু গেড়ে! প্রেম উবে গিয়ে কাম এল! দু-জন দু-জনের মধ্যে ডুবলাম, দ্রুত! ওটাই প্রথম, ওটাই শেষ!




৭৬. ছুঁতে গেলেই পালিয়ে যাও! ছুটে পালালে ছুঁতে চাও! এ কী জ্বালা! ভাবলাম, ছুঁতে যাবই না আর, ছুঁয়েই দেবো! দিলাম। যেই ছুঁলাম, অমনিই হারালাম!




৭৭. তীর সম্পর্কে একটুও না জেনেও নৌকোয় বসে বসে তীর খোঁজা সহজ, যদি নৌকোর হালটা নিজেকে ধরতে না হয়! অন্ধদের ঘাড়ে চেপে এমন আলোর দর্শন আওড়ে যাওয়া…আর কত!




৭৮. আমাকে মেরে ফেলবার জন্য খুনি ভাড়া করলে। আমার কাছে আসতেই খুনির দু-চোখ খুন হারাল, প্রেমে ডুবল। তখন তুমি কেমন জানি মরিয়া হলে নিজের খুনেই খুনিকে লুকোতে! আর এদিকে আমি বেচারা দুই-ই হারালাম---খুনিকেও, তোমাকেও!




৭৯. এসেছ তবে...! এসো, বোসো, গল্প করি। কী খাবে, বলো? চা, না কফি? ওমা…উঠে যাচ্ছ কোথায়? ভুল চেয়ারে বসে পড়েছিলে? না কি আগের চেয়ারটার জন্য মন খারাপ হলো?




৮০. কাছে এলে, ঘর বাঁধলে। সন্তান এল, দূরত্ব এল। ধীরে ধীরে এই দূরত্ব বাড়ল আরও; সন্তানকে ভুল বুঝিয়ে কাছে টানলে, আর আমায় দূরে ঠেললে। আমাদের সন্তান তোমার একার ছায়ায় বড়ো হতে হতে আমাদের দু-জনকেই হঠাৎ তার জীবন থেকে সরিয়ে দিল! যার জন্য আমায় সরালে দূরে, একদিন সে-ই আমাদের এক করল! যে বিচ্ছেদ সরাল দূরে, সে বিচ্ছেদই টানল কাছে!




৮১. একদিন যে দু-চোখের প্রেমে পড়েছিলাম, আজ সে দু-চোখেরই ভয়ে পালিয়ে বেড়াই!




৮২. অতটা নরম মনের মানুষ কিন্তু আমি নই,
ছেলেমানুষ তো নই-ই!
তোমাকে ভালোবাসি বলেই
আমাকে অত সহজে কাঁদাতে পারো।




৮৩. যার ফেইসভ্যালু অল্প,
তার বেলায়,
ফেইসবুক আর ফেইসভ্যালু
সাধারণত একইসঙ্গে বাড়ে না।




৮৪. কেন আমরা তাদের কুকুর বলে গালি দিই, কুকুরের গু-ও যাদের থেকে ভালো?




৮৫. আমায় তুমি যতটা খারাপ ভাবো, ততটা খারাপ আমি ন‌ই। আমায় তুমি যতটা ভালো ভাবতে, ততটা ভালো আমি ছিলাম না।




বিচ্ছেদ ও ভালোবাসা, দুই-ই খুব বাজে বিচারক।




৮৬. ইদানীং তোমার কথা যতটা ভাবি,
তার চাইতে অনেক বেশি ভাবি
তোমাকে নিয়ে আমার সীমাবদ্ধতাগুলির কথা।
ভাবলে মনে হয়,
আমার কাছে সেগুলির চাইতে
তুমিই যে জরুরি!




৮৭. তোমার জন্য
শব্দ রেখে যাচ্ছি।
আমার জন্য
সাদা ফুল রেখো।




৮৮. কবিতা আমার,
কবিতার তুমি।




চাও যদি
জানতে তোমায়,
আমায় না দেখে
কবিতা দ্যাখো!




৮৯. তোমার পেছনে
ছিল যারা,
ওরাও
এগিয়ে গেছে।




ঘুম কি কেবল
তোমারই
পৈতৃক সম্পত্তি?




৯০. চোখের ইশারায়
বাঁ-দিকে দেখিয়ে
সে মুখে বলেছিল,
ডানে যাও।




আমি ডানে গিয়ে দেখি,
সে বাঁয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।




৯১. এ জীবনে
তাকিয়ে হাসার মতো
আর কাউকেই
পেলাম না,
এক আয়না বাদে।




এ জীবনে
ক্ষমা করার মতো
আর কাউকেই
পেলাম না,
এক আয়না বাদে।




এ জীবনে
দুঃখ দেবার মতো
আর কাউকেই
পেলাম না,
এক আয়না বাদে।




এমন বন্ধুভাগ্য
ক'জনেরই-বা হয়!




৯২. যে আমায়
ক্ষমাই করতে পারেনি,
তাকেই কিনা আজও
আপনজন ভাবি!




ভুল করার অধিকারটুকুও
যার কাছে
পেলাম না,
তাকেই কিনা আজও
আপনজন ভাবি!




৯৩. যে লোকটা
সবসময়ই বলত,
'আরে ভাই!
কালকের দিনটা
দেখার জন্য হলেও
বেঁচে থাকো!',
সে লোকটা
গতরাতে
মারা গেছে।




৯৪. সত্য ছোঁয়ার আগে
হাতে দস্তানা পরে নিয়ো।
নইলে ছুঁতেই পারবে না,
মিথ্যের ভারে
হাত কাঁপবে।




৯৫. মানুষ তারই সামনে
সহজে কান্না থামায় না,
যে তার কান্নার দাম দেয়।




৯৬. তুমি আমার জীবনের
সেই ভুল অধ্যায়,
যা আর
শোধরানো যায় না,
যা শুধুই
কাঁদায়।




৯৭. ভালোবাসি বলেই
যেতে দিয়েছি
তারই কাছে,
যাকে তুমি
ভালোবাসতে!




আজ তবু
ভালো কেন নেই?
কেন জানতে চাও,
সত্যিই ভালোবাসি কি না?




৯৮. সেদিন
শীত তাড়াতে
তোমার চিঠিগুলি
একটা একটা করে
পোড়াচ্ছিলাম।




দেখি,
শীত আরও বাড়ছে!




৯৯. তুমি আমার আগেই
মরে যেয়ো।
আমি আগে গেলে
কে তোমাকে দেখে রাখবে?




১০০. যদি এক বার
তোমায় হারিয়ে ফেলতে পারতাম,
যেমনি করে
তুমি আমায় হারিয়ে ফেলেছ
বার বার,
তবে জানতে অন্তত পারতাম,
বাঁচতে ঠিক কেমন লাগে!




১০১. অন্ধকার নামলেই
নিজের দুঃখগুলির
দিকে তাকাই।




দেখি,
সেখানে এক তুমি বাদে
আর কেউই নেই।




তুমি আমার সঙ্গেই থেকো,
দুঃখ যেমন থাকে।




১০২. যা ভালোবাসি,
যাকে ভালোবাসি---
তা ভালো না বাসলে,
তাকে ভালো না বাসলে---
এই পৃথিবীর
কেউই কি আমায়
সুন্দর দেখত আদৌ?




১০৩. নিশ্চিত হও,
কিংবা নীরব থাকো।




অনুমান কোরো না;
করোও যদি,
মন্তব্য কোরো না;
করোও যদি,
সিদ্ধান্তে এসো না।




১০৪. সবই তো ঘুরলে,
তীর্থে যাবে কবে?




সব তীর্থই তো ঘুরলে,
হৃদয়ে যাবে কবে?




১০৫. যে যা জানে না,
সে তা-ই নিয়ে যখন
কারও ভুল ধরতে যায়,
দেখলে বেচারার জন্য করুণা হয়।