: এই যে, শুনছ?
: হুঁ…
: ঘুমুচ্ছ?
: না। বলো, কী হয়েছে?
: বলছি, ওঠো! সকাল হয়ে গেছে তো!
: উঁহু, এখনই না!
: ওই যে শোনো, পাখি ডাকছে, শুনতে পাচ্ছ? আলো ফুটছে, দেখতে পাচ্ছ?
: হুঁউউ…
: তা হলে? উঠবে না? বলি, ওঠোই না এবার! অনেক তো ঘুমোলে। এত ঘুমুতে আছে, বলো? এবার ওঠো! চলো, দুজন মিলে চোখভরে ভোরটা দেখি।
: ভোর দেখবে তো যাও না, জানালা খুলে দাও! হেঁটে হেঁটে ভোর দেখার অত কী আছে! বরং এ-ই তো ভালো…জানালা খুলে দাও, ঘরের ভেতর একটু পরেই বেশ আলো এসে যাবে।
: না না! বলছি, তুমি ওঠো! আজ হাঁটব তোমায় নিয়ে। ভোরের শিশির ছোঁয়াব পায়ে, সারাগায়ে মাখব হিমেল হাওয়া, দেখব সূর্যের ভেলকি কেমন, শুনব কিচিরমিচির পাখির কলতান, দিনের ব্যস্ততা শুরুর আগে একটু জিরিয়ে নেব সবুজের কোলে দুজন মিলে। এই শোনো না, তুমি কতকালই তো ঘুমিয়ে ছিলে, অনেক অনেক সকাল তুমি দেখোই তো নি, শুধু জানালার ওই আলোটুকুই রাজ্য তোমার! যাও…ওঠো তো এবার! আর বাহানা এত ভালো লাগে না! এবার আমি তোমায় ভোর দেখাব…ছাড়ব দেখিয়েই!
: তুমি রাখো তো ওসব আদিখ্যেতা! আমাকে দিয়ে ওসব বলছি কিচ্ছু হবে না। বলি, উঠব কী করে? হাঁটব কী করে? এক যুগ হয়েই গেল…আমি যে হাঁটতে সত্যি ভুলে গেছি! পা ফেলে ফেলে হাঁটব যে…পড়ে গেলে তখন ধরবেটা কে?
: আরে বোকা, পড়বেই যদি, আমি আছি কী করতে তবে! আছি তো আমি, খপ্ করে ধরে ফেলব ঠিকই! ভয় নেই, তুমি পড়বেই না! দেখোই না একটু হেঁটে আমার সাথে! তার পর দেখবে, তোমাকে আমার ধরতেই হবে না। এতকাল হাঁটোনি, ঠিক আছে; তাই বলে যে পা-টা অকেজো হয়েই গেছে, কে বলল? পা তো আছে! এতটা কাল হাঁটোনি যে, ঘুমিয়ে শুধুই আর শুয়ে বসেই কাটিয়েছ বেলা…বলি, সে দায় বুঝি ওই দুপায়ের?
: না, তা আমি বলছিও না…তবু, মুখথুবড়ে যদি পড়ে যাই…গায়ে কাদা ভরে যায় আবারও যদি অথবা শরীরে যদি খুব ব্যথা পাই…তখন কী হবে? তুমি যদি ধরতে না পারো, অন্যমনা হয়ে যাও যদি অথবা হাঁটতে গিয়ে যদি চলে যাও কিছুটা সময় কেটে গেলেই…তখন…?
: যাব না গো! এটুক তো বিশ্বাস আছে নিজের মনের উপর, ভালোবাসার উপর! না কি নেই তাও? তবে আর বেসেছিলে কেন ভালো? এসেছিলে কেন কাছে? বিশ্বাস যদি না-ইবা থাকে, তবে আর ভালোবাসার কী-ইবা আছে?
: আচ্ছা আচ্ছা…যাও, উঠে বসছি! হাঁটতে কিন্তু পারবই না, বলে দিচ্ছি!
: আরেএএএ…এত দেখছি, মহাঝামেলায় পড়া গেল! হাঁটবে না কেন? যাও তা হলে…কোলে তুলে নিয়ে মাঝপথে ফেলে আসব রেখে! দেখব তখন কী করে উঠে না দাঁড়াও তুমি! কী করে থাকো তখন একটু না হেঁটে!