জানো, আমার কল্পনার একটা জগৎ আছে। সেই জগতে তোমাকে নিয়ে কল্পনা করতে করতেই প্রতিদিন রাতে আমার চোখে ঘুম আসে; নাহলে ঘুম খুব দুষ্টুমি করে। তাকে যখন তোমার কল্পনা দিয়ে প্রবোধ দিই, তখন সে সুন্দরমতো আমার চোখে এসে পড়ে। আমি যখন একা একা থাকি, তখন সমস্ত দৃষ্টি চোখে বেঁধে রাখি। আমি কল্পনায় তোমাকে নিয়ে শীতের কুয়াশাতে শীতের কাপড় পরে হাঁটি। হাঁটতে হাঁটতে হাতদুটো যখন ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন তোমার জ্যাকেটের ভেতরে ঢুকিয়ে গরম করে নিই; আর তুমিও পরম মমতায় তা-ই করতে দাও, যা আমি চাই।
কল্পনায় তুমি বড়ো ভালো মানুষ। কোনো কিছুতেই বাধা দাও না। বাস্তবে অমন হাঁটতে পারব না, তাই কল্পনাতেই সেই আকাঙ্ক্ষা পুষিয়ে নিই আর কি! হাঁটতে হাঁটতে আবার কোনো শিউলিগাছের তলায় দাঁড়িয়ে আমার প্রিয় ফুল শিউলি কুড়িয়ে নিই; আর তুমি তোমার নাকের সামনে ধরে ফুলের ঘ্রাণ তোমাকে নেওয়াতে দাও। রাতের বেলায় খোলা রিকশায় তোমার হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াই। রাতের বাতাস, রাস্তার আলো কী যে মোহনীয় লাগে আমার কাছে! সেইসব রাতে নীরব রাস্তায় আমরা দু-জন কল্পনাতে ঘুরে বেড়াই। বাতাস এসে তোমার আমার চুল উড়িয়ে দিয়ে যায়, আমাদেরকে অনাবিল শান্তির পরশ দিয়ে যায়। কখনো হাসতে হাসতে তোমার গায়ের উপর পড়ে যাই, আর তুমি ভেংচি কাটতে থাকো আমাকে খেপানোর জন্য… কী যে দারুণ লাগে!
আবার মাঝে মাঝে ভাবি, খোলা আকাশের নিচে কোনো নদীর পাড়ে বেঞ্চে বসে তুমি আমি চা খাচ্ছি। আশেপাশে কত্ত মানুষ! তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। কারণ আমার কল্পনায়, কেউ দেখে ফেলবে, এই ভয় আমাদের নেই। কোনো সামাজিকতার বেড়াজাল নেই, কোনো কটুকথা নেই, কোনো জাজমেন্ট নেই। জানো, বাস্তবের মতো কল্পনাতেও তোমাকে দেখা যেন আমার শেষ হয় না। যতবার দেখি, মনে হয়, প্রথম বার দেখছি। যতবার দেখি, ততবার নতুন করে প্রেমে পড়ি। সারাজীবন চোখের সামনে তোমাকে ধরে রাখলেও আমার দেখা শেষ হবে না। তোমার প্রতিটি মুভমেন্ট, এক্সপ্রেশনের মতো সুন্দর কোনো কিছু যেন পৃথিবীতে তৈরিই হয়নি!
যখন কোনো আনন্দ-আয়োজন থাকে, যেমন ধরো, ইদ বা বড়োদিন, তখনও বাস্তবের মতো তোমার কাছে যাবার বাধা একটুও থাকে না আমার ভাবনাজগতে। তখন আমি কল্পনায় কত-কী আয়োজন করি! যেমন ধরো, তোমার বড়োদিন। আমরা একসাথে কেক কাটছি, একজন আরেকজনের সাথে জীবনের স্পেশাল দিনটা উদ্যাপন করছি।
এবার ইদের দিনে একসাথে ইদ করেছি। রান্না করেছি, খাচ্ছি; সকালে গোসল করে এসে তোমার পা ছুঁয়ে সালাম করে সালামি নিয়ে মজা করেছি…কত্ত কিছুই-না করি আমার কল্পনায়! অথচ দেখো, বাস্তবে কোনো ইদ তোমার সাথে আমার কখনও হবে না। কল্পনায় এই আশা আমি ঠিকই পূরণ করে নিই। কল্পনার যে বাস্তবের মতো কোনো সীমাবদ্ধতা নেই! অবশ্য তোমার সাথে আমার যেদিন দেখা হয়, সেদিনই আমার জন্য ইদ। অথবা কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে যাব দাওয়াতে একসাথে, আমরা গল্প করতে করতে অনেক হাসব, সবার সাথে আড্ডা দেবো; সবার সামনে আমার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। এগুলি নিছকই আমার কল্পনা। আমি জানি, বাস্তবে এই গ্রহণযোগ্যতা আমি কখনোই পাবো না।
তবুও জানো, আমার এগুলির জন্য আফসোস নেই। আমি যে কল্পনাতেই তোমার মন-সহ সব কিছুর রানি! জানো, তোমার ভালোবাসা আমি কান দিয়ে শুনে নয়, হৃদয় দিয়ে অনুভব করে বুঝতে পারি। আমি জানি, আমার এই মানুষটা মুখে বলার চাইতে বরং অনুভব করিয়ে বোঝাতে বেশি ভালোবাসে। যার অনুভব করার ক্ষমতাই নেই, সে কীভাবে বুঝবে তোমার ভালোবাসার মাহাত্ম্য? আমাদের দীর্ঘদিন কথা না হলেও তোমাকে যে আমি টের পাই হৃদয়ের গভীরে, এটাই আমার সবচেয়ে বড়ো সাফল্য। বাদবাকি জিনিস আমার আর দরকার নেই। তুমি যা খুশি তা করে যাও, ঘরে-বাইরে যে মেয়েই তোমার যত কাছেই আসুক না কেন, আমি তো জানি, আমি তোমার হৃদয়ে থাকি আর তুমি আমার হৃদয়ে থাকো। সামাজিকতায়, বাহ্যিকতায় কীই-বা এসে যায়?
তুমি জানো, শুধুই তোমার জন্য, আর তোমার সন্তানকে পৃথিবীতে আনার জন্যই আমার সকল প্রচেষ্টা, সব ছুটেচলা। তোমার ভালোবাসার শক্তি ততটাই বেশি যে, আমি ভাবি, যখন পৃথিবীতে কোনো প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হবে, তখন তোমার ভালোবাসার শক্তি দিয়ে আমি সব মোকাবিলা করতে পারব। এই একটা শক্তিই আমার আছে। আমার বাবুটা যখন দুনিয়াতে আসবে, তখন আশেপাশের সব নেগেটিভিটি এই ভালোবাসার শক্তির কাছে বিলীন হয়ে যাবে। আমার বাচ্চাটারও খুব বোধবুদ্ধি হবে, জানো! কারণ বাবা-মা’য়ের অনেক ভালোবাসা, সচেতনতা, ধৈর্য, ত্যাগ, তিতিক্ষার সন্তান তো সে! তাই সে-ও সব অনুভব করতে পারবে একদম ঠিকমতো। কখনোই বাবা-মা’য়ের প্রতি অবমাননা আসবে না তার মধ্যে। দুনিয়াতে যারা গতানুগতিক নিয়মের বাইরে গিয়ে ভেবেছে, অদ্ভুতভাবে পৃথিবীকে অনুভব করেছে, তাদেরই সন্তান সে। তাই সে-ও জন্মসূত্রে সেই অনুভব করার গুণ নিয়েই পৃথিবীতে আসবে।
যদি এই গুণ না থাকে, তবেও সমস্যা নেই। কারণ আমি ওকে আমার নিজহাতে গড়ে নেবো। খুব লক্ষ্মী একটা সোনাবাচ্চা হবে আমাদের, দেখো! কল্পনায় কত কিছু যে বোঝাই আমি ওকে! অনেক বুঝ তার, জানো! অনেক বছর পর যখন তোমার সাথে দেখা হবে, তখন তুমি বুঝতে পারবে, কত লক্ষ্মী বাচ্চা হয়েছে তোমার! তুমি কোনো চিন্তা কোরো না, ভেবো না। আমার বাচ্চাকে নিয়ে আমি অনেক দূরে চলে যাব। তোমার ওর জন্য কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না। খুব লক্ষ্মী সন্তান হবে আমাদের। সে-ও বুঝে যাবে সব কিছুর কারণ। কিন্তু কোনো অভিযোগ সে করবে না, কথা দিলাম।
দেখো না, কত কিছু করে ফেললাম আমি কল্পনাতে তোমার সাথে! আমার মতো সুখী আর কেউ আছে? মানুষ বাহ্যিকভাবে তোমাকে কাছে পেয়েও তোমার মনের সন্ধান কেউ পায় না। আমি মনে মনে মন দিয়ে কত দূরে থেকেও তোমার মনের সন্ধান পেয়ে গেছি। আমি তোমার ভালোবাসা পেয়েছি। এর থেকে বড়ো সত্য আমার কাছে আর কিছু নেই। আমার দুনিয়ার বাকি কিছু দেখার দরকার নেই। যখনই কষ্টে দুঃখী হব, কল্পনায় তোমার আদর নিয়ে আবার নতুন করে পথচলা শুরু করব। কল্পনায় সবই সম্ভব!
একটা কথা মনে রেখো, আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা তুমি আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলে। ভালো আমি আর কাউকেই বাসতে পারব না। ভালোবাসার জায়গাটা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তোমার একটু ছায়া আমাকে অনেক কিছু দিতে পারত…কোনো কারণে যদি বিয়ে করে কারও কাছে যেতে হয়, ওই লোকের সত্যিই খুব বাজে একটা ভাগ্য হবে—অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আমি কখনও কাউকে ভালোবাসতে পারব না। আমি অনেক সেনসিটিভ, তুমি জানো। প্রথম কাছেআসা, প্রথম ভালোবাসা সবই তো তোমার সাথে। বাধ্য হই যদি স্বামীর ঘরে যেতে, বিশ্বাস করো, একান্ত মুহূর্তেও আমি তোমাকেই কল্পনা করব। কত ভয়ংকর একটা কষ্টের জীবন হবে আমার!
তোমার জন্য সব যুদ্ধ করা সম্ভব ছিল। যেখানে তুমিই ফেলে রেখে চলে গেলে, এত কিছুর সাথে যুদ্ধ করা হয়তো আমার আর সম্ভব হবে না। মনে রেখো, এক মহাসাগর দুঃখের জীবন তুমি আমাকে দান করে গেলে। এটাই আমার ভবিষ্যৎ, আর এটাই আমার এত ভালোবাসার অর্জন। আমি অনেক সেনসিটিভ, তাই একসাথে এত যন্ত্রণাকে মনে জায়গা দিতে পারব না। ধন্যবাদ তোমাকে। নিজের শান্তি খুঁজে নিয়ো। ভালো থেকো।
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। এমনটা কোরো না আমার সাথে। আমি সরি। অনেক সরি। কোনো ভুল হবে না। তবুও, প্লিজ, একটু রেসপন্স করো। আমার ঘরসংসার কিচ্ছু লাগবে না। আমি সারাজীবন মানুষের ঘরে কাজ করেও হ্যাপি থাকতে পারব, কিন্তু তুমি আমার না, এটা মানতে পারব না আমি। আমার পক্ষে আর কোথাও ইনভলভড হওয়া সম্ভব নয়।
এত সহজে হার মেনে নেওয়া মানায় না আমাকে। আমি কষ্টে ফেটে চৌচির হব, আবার সব মেনে নিয়ে নতুন করে প্রতিবারই শুধুই তোমাকে ভালোবাসব। তুমি যার সাথে যত ইচ্ছে থাকো, বিশ্বাস করো, আমার সব সহ্য হবে। আমি সব মানতে পারব। শুধু একটু ভালোবাসতে দিয়ো আমাকে। আমার ভালোবাসা তোমার একটা কথায় বা আচরণে আটকে থাকবে না। এতটা ভঙ্গুর ভালোবাসা আমি ধারণ করি না। আমার জন্য তোমার কিছুই করতে হবে না। শুধু মন খুলে আমাকে ভালোবাসতে দাও। আমার ভালোবাসা হারিয়ে যেতে পারে না; এত সহজে বিলীন হতে দেবো না আমি সব কিছুকে। আমি আর আমার ভালোবাসা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন কোরো না। আজীবন আমার মাঝে এটা লালন করব। অনুগ্রহ করে আমার সাথে একটু স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করো। সহজ হয়ে আমার সাথে মিলে যাও, অনুরোধ করছি। লক্ষ্মী বাবু আমার, আর কষ্ট দিয়ো না। অনেক দূরে থাকব, তবু আমার কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন কোরো না। ভয় নেই, আমি দূরেই আছি, তবু আমাকে দূরে ঠেলে দিয়ো না।