একটা সময় পর, ভালোবাসা বোঝাতে ‘আই লাভ ইউ’ বলার প্রয়োজন আর পড়ে না। সম্পর্কের নির্দিষ্ট বয়সের পর দু-জন মানুষ ভালোবাসাবাসির কথা আর বলে না। ঘর তুলতে জরুরি শক্ত চারটে খুঁটির মতন সম্পর্ক শক্ত হয়ে গেলে ভালোবাসার কথা বলা না বলায় আর কিছু এসে যায় না। একটা সময় ‘ভালোবাসি’ শব্দটির আচরণগত পরিবর্তন ঘটে যায়—হোক সেটা প্রেম কিংবা বিয়ে। ফোনের ওপার থেকে নতুন প্রেমিক-প্রেমিকার মতন বলা হয় না ‘আই লাভ ইউ’। ‘আই লাভ ইউ’ বদলে যায় ‘ওষুধটা এখনও খাওনি কেন? কত বার বলতে হয়!’ ইত্যাদিতে। অ্যানিভার্সারিতে দামি গিফট কিংবা জন্মদিনে পার্টির বদলে বিকাশে কোনো চলমান কিস্তির টাকাটা পাঠিয়ে দিয়ে বলে দেয়: আগামীকাল কিস্তিটা দিয়ে দিয়ো। ‘তুমি না খেলে আমিও খাব না!’ টাইপের ছেলেমানুষিও আর করা হয় না। সারারাত জেগে বাচ্চাকাচ্চার নাম-ঠিক-করা জুটিটিও রাত জেগে ক্যারিয়ারের পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকে। ফুল কিংবা নূপুর-ঘড়ি-টাই কেনার বদলে দু-জনে মিলে ক্লাসের জরুরি বইটা কিনতে যায়। একটা সময় ‘ভালোবাসা’ শব্দটার অর্থই বদলে যায়। ‘তোমাকে ছাড়া বাঁচব না।’ বলা আর হয়ে ওঠে না। তার চেয়ে বরং দু-জন মানুষ বাসায় ফিরতে দেরি হলে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কপালের বলিরেখায় ফুটে ওঠে…তার বিপদ হয়নি তো কোনো? প্রথম দিককার দেখার মতন করে গাঢ় লিপস্টিক, কড়া পারফিউম কিংবা ব্র্যান্ডের স্যুট-টাই বা পাঞ্জাবি-জিনস পরা হয় না। কোনোমতে চুল বেঁধেই তেলা-মাথায় পুরোনো জামা আর ক্ষয়ে-যাওয়া স্যান্ডেল পরেই টঙের দোকানে বসে গভীর আলোচনা চলে ‘বাবার চিকিৎসাটা কোথায় করালে ভালো হয়, এ মাসের বেতনটা থেকে কয় টাকা বাঁচিয়ে সঞ্চয়ে রাখা যায়।’ এমন সব জরুরি বিষয় নিয়ে। ভালোবাসা একসময় আর শব্দের ব্যবহারে থাকে না, তা পরিবর্তিত হয়ে যায় যত্নে, আদরে। সংসার না হয়েও হয়ে যায় বেনামি ঘরকন্না। একই সুতোয় গাঁথা হয় দুটি ফুলের জোড়াতালি।