আয়নার ভেতরের আলো




লোহার মুখোশপরা বৃদ্ধ একদিন হাতে তুলে দিলেন চাবি। তিনি বললেন—তোমার হৃদয়ের তালা খোলার দায়িত্ব তোমারই।

হৃদয় আসলে একখানা কলম—অন্য কারও হাতে ধরা। সে লিখুক আনন্দ কিংবা দুঃখ, আমাদের জীবন তার আঁকা রঙেই ভরে ওঠে। তাই প্রার্থনা—আমাদের ভবিষ্যৎ যেন অতীতের চেয়ে উজ্জ্বল হয়।

কখনো আমাদের থেমে নীরব হতে হয়। তখন স্রষ্টাকেই কথা বলতে দিতে হয়। তিনিই দরজা বানিয়েছেন, তালা বানিয়েছেন, আর তিনিই চাবিও দিয়েছেন।

আমরা সবাই একেকটি তালা, আর চাবি হারায়নি—তা আমাদের হাতের মুঠোয়ই আছে। কেবল একজন প্রকৃত বন্ধু এসে আমাদের হাত খুলে দেয়, চোখে আনে সেই লুকানো চাবি।

সত্যকে জানতে হলে সরাসরি দেখতে হবে। ধোঁয়া দেখে আগুন অনুমান করলে হয় না। বাহ্যিক প্রমাণ বা অজুহাত কেবল অন্ধ মানুষের লাঠি—যা প্রমাণ করে তার নিজের অন্ধত্ব। সত্য জ্ঞানী সে-ই, যে আগুনকে চোখে দেখে।

হৃদয়ের গভীরে প্রেম ছাড়া আর কিছু রাখার জায়গা নেই। কিন্তু ভোগের লোভই আসল শত্রু। যে হৃদয়ের দরজা একবার প্রেমে খোলে, তা আর কোনোদিন বন্ধ হয় না।

আসলে মহাবিশ্ব বাইরে নেই—সব ভেতরে। যা-কিছু তুমি চাও, তুমি নিজেই তাই। বাইরের সৌন্দর্য কেবল ভেতরের প্রতিফলন।

এ কারণেই প্রেমই শ্রেষ্ঠ আলোচ্য বিষয়—আজ রাতের, আগামী রাতের, এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্তও।
আমরা নিজেরাই সেই শাশ্বত শক্তি, যা মহাবিশ্ব হয়ে প্রকাশ পায়। যেমন তরঙ্গ সমুদ্রেরই খেলা, তেমনি আমরা মহাবিশ্বের প্রকাশ ছাড়া আর কিছু নই।

তুমি হয়তো ভাবো তুমি ক্ষুদ্র, অথচ তোমার ভেতরে পুরো মহাবিশ্ব গুটিয়ে আছে। তুমি আসলে ঈশ্বরের লেখা এক পত্র, এক মহামূল্যবান আয়না, যেখানে প্রতিফলিত হয় তাঁরই মুখ।

তুমি যা খুঁজছ, সব উত্তর তোমার ভেতরেই আছে।
আর একদিন, যখন তুমি অন্য কারো মতো হওয়ার চেষ্টা থামাও, তখনই আসল তুমি প্রকাশ পাও। তখন বোঝা যায়—সব মুখোশের আড়ালে লুকানো তুমি আসলে অসীম।