আত্মসমীপে অমৃতান্তর



: আপনার বিশেষায়িত অনুভূতি 'কষ্ট'-কে উপেক্ষা করার যে-ধৃষ্টতা, তা এ বিশ্বলোকের কোথাও অনুপস্থিত।
: আমার স্বরূপ-বিশ্লেষণে ব্যাকুল, আপনার হৃদয়ের অন্তরীক্ষ—যা কেবলই আপনাকে জানার এক নিঃসীম প্রয়াস।
: আপনার সেই বিশেষ অনুভূতিতে স্থান পেয়েছে আমার অনুরতির মোহিত ক্ষণ। তবে, 'কষ্ট' নামক সেই কঠোর হৃদয়ঙ্গমে, আমার বিশেষায়িত অনুভূতি 'ভালোবাসা'-র স্পর্শ যেন অসম্ভব।
: আশ্চর্য! তবে কী উপায়ে তা গ্রাহ্য হয়েছে?
: উৎকৃষ্টতর পরিক্রমায়, কোনোদিন তা আপনার অন্তরাত্মায় প্রকাশিত ছিল না, অথচ এই স্পর্শ আপনাকে গভীর আসক্তির বশবর্তী করেছে—যা ‘আবেগ’ নামক অনুভূতির শ্রেষ্ঠাংশ, যা এ বিশ্বলোককে বিচলিত করতেও সক্ষম।

: যেমন মিথ্যা ছায়া এ প্রাণে বর্তমান, তেমনই মিথ্যা প্রাণের অনুভব কেবলই সমর্পিত রূপে রয়েছে; যার সামান্যতম পীড়াতেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড স্বত্বত্যাগে উদ্‌গ্রীব। তবুও, আপনার আত্মাকে পরিশ্রুত করেছে কেবলই ‘কষ্ট’ নামক তীব্র অনুভূতির অনুরণন।
: হে আমার অঙ্কস্থিত ভাবনাসঙ্গী, আকস্মিকভাবেই আপনার বিশেষ উপাসনা-গুণে প্রাপ্ত ছায়ার ন্যায় মানসিক সংকল্প ও ইচ্ছাদিকৃত অনুনয়ের ক্ষমতায়, আমার লুক্কায়িত অনুভূতির একাংশ আপনার অন্তর্দৃষ্টিতে প্রতীয়মান।
: আমার অন্তরাত্মায় আপনার সেই আগমন দৃষ্টিগোচর হবার কোনো উপক্রম নেই; তবুও মনোপ্রবিষ্ট ইন্দ্রিয়গণের সাথে আপনার বিমোহিত চিত্তের সৌন্দর্যে পরাস্ত এ সত্তা—যেন জাগ্রত এক বিশেষায়িত ‘কষ্ট’-এর অনুরক্তি সঞ্চারণ।
: আপনার নিষ্কাম উপাসনা, যার আধ্যাত্মিক ও অধিদৈবিক রূপ আমার অন্তরাত্মায় অমরত্ব দান করেছে আপনার স্বরূপে।

: আসুন, প্রখর অন্তর্দৃষ্টি স্থাপন করে, একাগ্রতা লাভ করে, শুদ্ধচিত্তে অবলোকনে প্রস্তুত হই—এ অন্তরাত্মার নিস্পৃহ অনুভূতিসমূহের দিকে, যা ধীরে ধীরে এনে দিতে পারে মুখ্য অমরত্ব আমাদের অন্তর্দৃষ্টির ব্যাপ্তিতে।
: এ বিশ্বলোক তবে কি জাগরিতাবস্থার নিষ্পত্তি ঘটাতে সক্ষম?
: স্বপ্নাবস্থায় শরীর ও ইন্দ্রিয় শান্ত হলে, তবেই জাগ্রত অবসান সম্ভব। পুনশ্চ, স্বপ্ন ও জাগরণ—এই দুই প্রাণের ধর্ম; আত্মার নয়।
: স্বপ্নকালে বিষয়েন্দ্রিয় ও মন একত্রিত হয়। হে ভাবনাসঙ্গী, আমার বিশেষ ইন্দ্রিয়ে আজ আপনার মনোমুগ্ধকর প্রতিধ্বনির আলোড়ন, যা বিচ্ছুরিত হয় বিক্ষিপ্ত মোহনতায়।
: আপনার ‘ভালোবাসা’ নামক বিশেষ অনুভূতির সহচার্যে স্বপ্নকালে সুখকর এক অনুভবের অসামান্য রেশে আচ্ছন্ন এই অন্তঃকক্ষ।
: আপনি—জাগ্রতরূপী, আনন্দরূপী, তেজস্বী, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন।
: তৎপরবর্তী কক্ষে যেতে প্রস্তুত আমার এই বিশেষ অনুভূতি। আপনি প্রস্তুত তো?

“আমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার কতটা শান্তি লেগেছে?”
“তুমি বোধ হয় তা নিজেও জানো না।”, তা-ই তো?
“কে বলেছে, জানি না?”
“যদি বলি, তোমাকে জড়িয়ে ধরার পরেই শান্তির পিপাসা জেগে উঠেছে—তবে কি তুমি বুঝতে পারবে, আমি তোমাকে কতটা ভালোবেসেছি?”

“আজ তোমাকে ছুঁয়ে থাকতে খুব ইচ্ছা করছে। বলো তো, তোমার সঙ্গে আর কি কখনো দেখা হবে না?”
“অবশ্যই হবে।”
“কেন মিথ্যে বলো রোজ? আমাকে সান্ত্বনা দিতে তোমার স্বস্তি লাগে বুঝি?”
“ধুর পাগলি, সত্যিই বলছি।”
“তুমি আসবে না, আমি জানি সে কথা।”
“শোনো… আমি যে তোমার মধ্যেই আছি।”
“কী হয়েছে?”
“আমি খুব ক্লান্ত আজ। তোমাকে একবার ছুঁয়ে থাকতে যদি পারতাম!”
“আজ তোমার স্বপ্নে আমায় ডাকবে?”
“চলো না, সেই নির্জন কফিশপে মুখোমুখি বসি, তোমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকি।”
“এসো।”

“আমাদের স্মৃতিগুলো সেই কবেই হারিয়ে যেত, যদি না তোমার অনুভবেই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম।”
“ভালোবাসলে কি স্মৃতি হারায়?”
“আচ্ছা, আমি কি তোমার মনে রাখার মতো ছিলাম? একটা মুহূর্তেও কি নিজেকে বন্দি করতে পেরেছিলাম তোমার মনে?”
“আমার অনুপস্থিতি কি কখনও তোমায় ভাবায় না?”
“এইভাবে কল্পনায়, তোমার সঙ্গে আর কতদূর পথ চলতে পারব?”
“তোমার সঙ্গে যোগাযোগের আর কোনো পথ জানা নেই।”
“আরও অনেকদূর যেতে হবে; কথোপকথন থামিয়ে দিয়ো না।”
“তোমাকে যদি না পাই আর কখনও, তবে আমি অভিমানে হারিয়ে যাব।”
“তখন, খুঁজে পাবে তো আমায়?”
“আহ্, যেয়ো না। আমি নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি।”
“কী দিয়ে জুড়াই এই ব্যথা? তোমাকে কোথায় রাখি?”
“কত করে বলেছি, থেকে যাও, যেয়ো না! অমন করে আর কেউ কখনও বলবে না। এই চোখে আজও কেবল তোমাকেই রেখে দিতে পেরেছি।”

“চলে গিয়েও, আমি তোমাতে ফিরে এসেছি—বুঝতে পারোনি তা তুমি।”
“তোমার দৃষ্টির সীমার বাইরে আমি কখনও যাইনি, পারিনি যেতে।”
“আচ্ছা, তুমি হয়তো আমাকে আর কখনও ক্ষমা করতে পারবে না, তাই না?”
“জানো, আমি প্রায়ই ভাবি, তোমার হৃদয়ের এককোনায় তুমি যেন আমার জন্য একটু জায়গা রেখেই দিয়েছ।”
“ভাবতে ভালো লাগে।”
“ভাবনাগুলো যদি বাস্তবে রূপ নিত, তবে পৃথিবীতে কত মানুষ অভিনয় থেকে মুক্তি পেত!”

“তুমি ভালো নেই—শরীরজুড়ে বিষণ্নতার দীর্ঘশ্বাস। নিজেকে ভালো না রাখতে পারলে, ভিতরের মানুষটার সঙ্গে কথা বলবে কী করে?”
“আমার সঙ্গে এই পথে কথা না বললে, তোমার পুরোটা সময় স্তব্ধতায় ছেয়ে যায়।”
“তুমি জানো, আমি তোমার অনুভব ছাড়া কিছুই করতে পারি না?”
“জানি।”
“তুমি বুঝি অদৃষ্ট মেনে নিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চাইছ?”
“এসো, অদৃষ্টের কাছাকাছি নিজেদের অনুভূতিগুলোকে শেষবারের মতো জাগিয়ে রাখি।”
Content Protection by DMCA.com