আকর্ষণের সূত্র




রোন্ডা বায়ার্নের ‘দ্য সিক্রেট’ পড়ে প্রথম বার যখন “The Law of Attraction” সম্পর্কে জেনেছিলেন, তখন কেমন দৃশ্য মনে এসেছিল? একটি বিলাসবহুল গাড়ি? পাশে আকর্ষণীয় সঙ্গী? বাতাসে ওড়া টাকার সমুদ্র? জীবনের মহাসড়কে নিশ্চিন্ত ভ্রমণ? এরকম কিছু? না কি ভেবেছিলেন—আত্মিক জাগরণ, অন্তর্দহনের অবসান, সেই অস্পষ্ট অপূর্ণতা থেকে মুক্তি, যা কৈশোর থেকে বা তারও আগে থেকে মনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল?

যদি প্রথমটি হয়, তবে আপনি গড়পড়তা ভিড়ের সঙ্গেই আছেন। আপনার দৃঢ় বিশ্বাস—আরও কিছু অর্থ, গাড়ি, বাড়ি, সম্পর্ক বা খাবার পেলেই সব সমস্যার সমাধান হবে, জীবন হবে সুখী ও পরিপূর্ণ। তাই নতুন একটি “আকর্ষণ-সূত্রের ম্যাজিকবক্স” খুললেন, চোখ বন্ধ করলেন, আর নিখুঁতভাবে কল্পনা করলেন আপনার স্বপ্নের মার্সিডিজ আর সঙ্গীকে। হয়তো কিছু ফলও পেলেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এতে কি চিরন্তন সুখ এল? অপেক্ষা করুন আর দেখুন এক সপ্তাহ পর, এক মাস পর, কিংবা আরও কিছু সময় পর কী হয়।

আর যদি দ্বিতীয়টি হয়—অসাধারণ! তাহলে “The Secret”-এর অন্তর্ভাব আপনার ঈশ্বরসন্ধান, অন্তরের শান্তি আর আত্মিক আনন্দের অনুসন্ধানের সঙ্গে মিলেছে। তবে এখানেই গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য—যেমন গাড়ি বা শরীরকে নিখুঁতভাবে কল্পনা করা যায়, আত্মিক সত্যকে তেমন কল্পনা করা যায় না। কারণ আত্মিক স্তর মানুষের বুদ্ধি বা অহম্-এর অতীত।

কিছু দর্শন, কিছু আধ্যাত্মিক ধারা ইঙ্গিত দিয়েছে সেই অবর্ণনীয় স্তরের দিকে। কিন্তু প্রকৃত জাগরণের সাক্ষীরা একমত—জাগরণ, আলোকপ্রাপ্তি, স্বর্গরাজ্য—এসব কেবল সরাসরি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানা যায়। আগে থেকে কল্পনা বা পরিকল্পনা সম্ভব নয়।

এমনকি তাঁরা এটাও বলেন—কোনো খোঁজাখুঁজি, কল্পনা, আকর্ষণ বা সহ-সৃষ্টি করার প্রয়াস যতদিন চলবে, সেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ততদিন ঘটবে না। তা পেতে চাইলে সব থামিয়ে ফেলতে জানতে হয়। সব চিন্তা, সব প্রত্যাশা, সব সূত্র—সব কিছুকে সমর্পণ করতে হয় নীরবতায়। একেবারে সম্পূর্ণ, পরম নীরবতায়—মনহীন অবস্থায়। তা না হলে পূর্ণতার দিকে পা ফেলা অসম্ভব।

এখানে “মধ্যপথ”-এর কথাও উল্লেখ করা প্রয়োজন—যেখানে মানসিক শান্তি আর ভোগ্য সম্পদ সুন্দরভাবে ভারসাম্যে থাকে। কারও কাছে আছে বস্তুগত প্রাচুর্য, কিন্তু আত্মিক দারিদ্র্য। আবার কেউ জাগ্রত হলেও অর্থনৈতিক সংগ্রামে ব্যস্ত।

তাহলে বলা যায়—যাদের বস্তুগত স্বাচ্ছন্দ্য আছে, তারা হয়তো “আকর্ষণের সূত্র” ব্যবহার করে আত্মিক জলে ডুব দিতে পারে। আর যারা ইতিমধ্যেই আত্মিক স্তরে সাঁতার কাটছে, তারা হয়তো এটিকে কেবল অর্থনৈতিক ভারসাম্যের জন্য কাজে লাগাতে পারে। কিন্তু যদি আকর্ষণের সূত্র কেবল অর্থ, ভোগ ও আরামের জন্য ব্যবহৃত হয়—তাহলে সেটা নিছক আরেকটি বিভ্রান্তি ছাড়া কিছুই নয়।

সাধারণ মানুষের বেলায়, মধ্যপথের পথিক হওয়াই শ্রেয়।