যে বৃষ্টিটা ঝরে যেতে পারতো অথচ ঝরলো না, সেই বৃষ্টিটা হেঁয়ালি কান্নার মতোই, যা জমতে-জমতে বুকের ভেতরে নীরবে নিঃশব্দে নিশ্চুপ ধারায় অঝোরে ঝরতে থাকে; আকাশেরও নিশ্চয়ই মন আছে, নয়তো ও এরকম মন খারাপ করে থাকবে কেনো? এর দায়শোধ করার কথা ছিল যার, সে আড়ালেই হাসতে থাকে। সে হয়তো জানতেই পারবে না কখনওই কতোটা বেদনাবিধুর ধূপছায়ায় কান্না পর্যন্ত ঝরতে ভুলে যায়। ট্র্যাজেডি কি এর চেয়েও ট্র্যাজিক? হবেও বা হয়তো! এই পুরনো থুরথুরে অন্ধ প্যাঁচার বয়েসি বৃষ্টির বয়েসের তো আর কোনও গাছপাথর নেই; তাই এইরকমভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে-থাকা কষ্টরা ইদানীং বড্ডো বেশি ব্যক্তিগত হয়ে গেছে। হায়! কষ্টরা কষ্টে আছে! ট্র্যাজেডির নৈব্যর্ক্তিক রূপ দেখা যায় না; চুরি করে অনুভব করা যায় মাত্র। যে চুরি আড়াল করে রাখা যায় না, সেটাই কখনও-কখনও ব্যক্তিগত। কীসব এলোমেলো বলছি! কথাগুলো আমি যতোটা নই, তার চাইতেও বেশি এলোমেলো হয়ে গেলো। কী সৃষ্টিছাড়া সৃষ্টি! সৃষ্টির কাছে স্রষ্টার কী নির্মম পরাজয়! পুরনো বিরহের সুর এতোটা ছন্দহীন সুরহীন অতল স্বচ্ছন্দ তন্দ্রায় দেখা দিয়েছিল আরও আগেই। সে কথাই বলছি .......
ভালোই যদি বাসতে, তবে কখনও ছেড়ে যেতে না। আমি তো সবসময়ই ঠিক বলতাম না, তুমিও বলতে না, কেউ-ই বলে না। তোমাকে কতো কতোবার বকেছি, অনেকবেশিই বকেছি। মনে আছে তো? তোমাকেই তো বকবো, আর কাকে বকবো, বলো? কই, ছেড়ে যাওয়ার ভাবনা আমার কল্পনাতেও আসেনি কখনওই। যার জন্যে, যাকে নিয়ে প্রতিটি মুহূর্তে বেঁচে আছি, তাকে আবার ছেড়ে যাওয়া যায় কীভাবে! আমি তো আমাকে ছেড়ে যেতে পারি না। দিনের শেষে আমাকে, মানে, তোমাকে নিয়েই তো আমাকে বসতি। আমি তোমাকে আমি ভাবতাম। এবং ভাবতাম, তুমিও ওরকমই ভাবো। ভাবনার এই স্বাচ্ছন্দ্য তো পুরোপুরি আমার কৃতিত্ব কিংবা দায় নয়, তাই না? মনে করে দেখো তো একটু!
সেই দিনটাতে খুব রাগ হয়েছিল, না? আমি যে অ্যাতোটা স্টুপিড, এটা হঠাত্ করেই নতুন মনে হলো কেনো সেইদিন? ভালোবাসায় স্টুপিডিটি থাকবে না-ই বা কেনো? স্টুপিডিটির কত্তো কত্তো শাস্তি তোমার জানা ছিল; আদুরে গাল দুটো ফুলিয়ে অভিমান করে বসে থাকা, ফোন না করা, ফোন রিসিভ না করা, মুখে যা আসে তা-ই বলা, হাতের কাছে যা পাও তা দেয়ালে ছুঁড়ে মারা আর সেই শব্দ আমাকে ফোনে শোনানো, খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেয়া, আমি মুভি দেখার সময়ে আর বই পড়ার সময়ে ননস্টপ ফোন করতে থাকা, মিষ্টি গোলাপি ঠোঁট দুটো উল্টে ফুলিয়ে কাঁদতে থাকা, অন্য ছেলেদের খ্যাতখ্যাত ছবিতেও লাইক দেয়া, আমাকে একশোবার খারাপ লোক বলা, আরও কতো কী! সব তো এখন আর ঠিকমতো মনেও পড়ে না আমার। তোমার অভিমান ভাঙাতে তো কখনওই আমার ক্লান্তি আসেনি। কেনোই বা ভেবে নিয়েছিলে আমি ক্লান্ত? নাকি ভেবে নিতেই ভাল লেগেছিল? ভালোবাসার অনভ্যস্ততা মানুষকে কতোটা বিস্মৃত অসহায় করে দেয়, এখন তা খুব ভালভাবে বুঝি। ছেড়েই যদি দেবে, তবে কেনোই বা হাত ধরেছিলে? ছেড়ে-দেয়া হাত নতুন করে আর কাউকে ধরতে পারে না। কারওর কারওরটা পারে হয়তো, আমারটা পারে না। আমি জানি, এটা তুমি জানতে। তবুও . . . . . . .
এখন ভাবি, আসলে তুমি আমাকে সত্যি-সত্যি ভালোবাসতে না। ভালোবাসলে প্রয়োজনে বকতে, মারতে, দ্রোহ করতে, যা ইচ্ছে তা-ই করতে; তবুও ছেড়ে যেতে না। ছেড়ে গেলে তো সব শেষ! তোমার ওই অহংকারী ইগোটাতে ছুরি বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে খুউব। তোমার সব ছেলেমানুষি বোকামি তো আমি মেনে নিতে শিখে গিয়েছিলাম; এটা তুমি জানতে, আমিও জানতাম। অন্যকেউ তো আর জানতো না। তবে আমাদের জীবনের আয়োজনের ভার অন্য কারওর কাঁধে কেনো চাপাতে গেলে? জীবনের সব প্রশ্ন একটামাত্র উত্তরে কত সহজেই তুমি আমায় দিয়ে গেলে!