প্রথম বার যখন তোর সাথে কথা বলেছিলাম, তার পরে আমার মধ্যে তেমন কোনো অনুভূতি কাজ করত না। কথাগুলো ছিল স্রেফ শব্দ, নির্ভার, একদম সাধারণ। কিন্তু ধীরে ধীরে, তোকে কাছ থেকে দেখতে দেখতে, তোকে অনুভব করতে করতে—অজান্তেই ভালোবেসে ফেললাম। অথচ জানতাম, থাকা সম্ভব নয়; সেই উপলব্ধিটা যেন হৃদয়ের এক অব্যক্ত কষ্ট হয়ে রয়ে গেল। কখনো নির্ভরতার, কখনোবা একটুখানি সুখের, আবার কখনো নিদারুণ যন্ত্রণার।
সেই অনুভূতি থেকেই তোকে একদিন একটা চিঠি লিখেছিলাম। ভেবেছিলাম, আমাদের আর কখনও দেখা হবে না। কিন্তু সেই লেখা পড়ার পর তুই আমায় অনুপ্রেরণা দিয়েছিলি, এমনভাবে, যেন আমার সমস্ত ভাবনা নতুনভাবে বেঁচে উঠল। তারপর থেকে তোর কথা মাথা থেকে সরত না—সারাদিন শুধু তোর কথাই ভাবতাম, কল্পনায় তোর অস্তিত্ব আঁকতাম, প্রতিটি মুহূর্তের অনুরণন যেন আমার ভেতরে তোকে আরও গভীর করে বসিয়ে দিচ্ছিল।
আমি তখন নোট করতে শুরু করলাম, ফোনের স্ক্রিনে শব্দরা জমা হতে থাকল। সাহস করে প্রথম বার তোকে পাঠিয়েছিলাম, আর তুই বলেছিলি, "ভালো লেগেছে।" সে কথাটা যেন আমাকে আরও বেশি লেখার দিকে ঠেলে দিল। তারপর থেকে, যখনই কিছু মনে আসত, যদি তখনই লিখতে না পারতাম, মাথা থেকে সব হারিয়ে যেত। যতক্ষণ না সেটা লিখে ফেলতাম, মনের মধ্যে তীব্র অস্থিরতা কাজ করত।
তুই কি জানিস, আমি তোকে যতগুলো লেখা পাঠিয়েছি, হয়তো ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই লিখে ফেলেছি! তারপর বার বার সম্পাদনা করেছি, প্রতিটি শব্দকে নিখুঁতভাবে সাজাতে সময় নিয়েছি। বেশিরভাগ সময় গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যেত, তখন তোকে নিয়ে লিখতে শুরু করতাম। এমনও হয়েছে, তোকে এতটা অনুভব করে লিখতে গিয়ে আমার শরীর ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ত, মাঝে মাঝে জ্বর চলে আসত। আমি জানি না কেন!
এইটাই আমার গোপন সত্য, আমার লেখার রহস্য। তুই কি বুঝিস, আমি তোকে কতটা ভালোবাসি?
কিন্তু তোকে নিয়ে লিখতে হলে তোকে অনুভব করতে হয়, তোকে বুঝতে হয়, তোকে দেখতে হয়। কারণ, সত্যি বলতে, আমার প্রতিটি লেখার শিরোনাম তুই, প্রতিটি লাইনের মাঝে তুই লুকিয়ে থাকিস। আমি প্রতিবারই ভাবি—এই লেখাটাই হয়তো শেষ, এবার আর লিখতে পারব না, আর তোকে পাঠাতে পারব না। কিন্তু তোর ছোট্ট একটা বার্তা, যেখানে তুই বলিস, ‘ভালো লেগেছে’—সেটাই আমাকে আবার লিখতে বাধ্য করে, তোকে আরও গভীরভাবে কল্পনায় আঁকতে বলে।
এখন তো তোর সাথে ঠিকমতো যোগাযোগও হয় না। তুই কি খেয়াল করেছিস, আমি তোকে একটা লেখা পাঠিয়ে সবসময় জানতে চাই—"কেমন হয়েছে?" আসলে, এই প্রশ্নটা শুধুই লেখার মান যাচাই করার জন্য নয়, এটা আমাকে তোর আরও কাছাকাছি টেনে আনে।
আমি তোর জন্য এতটাই অনুভব করি, এতটাই বাধ্য হয়ে লিখি! এত বছর ধরে তোর পাশে থেকেও কেউ কি তোকে নিয়ে এমনভাবে লিখতে পারবে? জানি না। হয়তো পারবে, হয়তো পারবে না। কিন্তু আমার সন্দেহ হয়—সত্যিকারের ভালোবাসা তো এমনই হয়, তাই না?
জানিস! আমি যখন তোর লেখা শুনছিলাম, মনে হচ্ছিল তুই লিখছিস, আর আমি চুপচাপ তোর সামনে বসে আছি, তোকে দেখছি। আমি তোর দিকে অপলক তাকিয়ে আছি, অথচ তুই আমার দিকে তাকাচ্ছিস না...
কাল মনে হচ্ছিল, তুই আমার খুব কাছে চলে এসেছিস। অনেক দিন পর বুকের গভীরে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করছিলাম। কখন যে তোর বুকের ভেতর লুকিয়ে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি...
জানিস, আমি মাঝে মাঝে হঠাৎ তোর গায়ের গন্ধ পাই। ঘুম আসতে থাকে, যেন তুই আমার চারপাশে আছিস, ঠিক আগের মতো।
এটা কি সত্যি? না কি শুধুই হ্যালুসিনেশন?