অবিদ্যা ও জ্ঞানের বিরোধ এমন এক নীতি, যা অদ্বৈত দর্শনের অন্তরাত্মাকে প্রকাশ করে। এখানে বলা হয়—যেখানে জ্ঞান উদিত হয়, সেখানে অবিদ্যা টিকে থাকতে পারে না। যেমন সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার বিলীন হয়, তেমনি ব্রহ্ম-জ্ঞান উদিত হলে অবিদ্যা—অজ্ঞানের ঘন ছায়া—সম্পূর্ণরূপে লুপ্ত হয়। এই বিরোধ কোনো আংশিক প্রক্রিয়া নয়; এটি সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত। কারণ জ্ঞান ও অজ্ঞান একই চেতনা-ক্ষেত্রে একসাথে থাকতে পারে না—একটি উপস্থিত হলে অন্যটির স্থান থাকে না।
তবুও, এই জ্ঞানের পরেও প্রারব্ধ-কর্মের ধারা অব্যাহত থাকে। জীবের পূর্বসঞ্চিত কর্ম, যা ইতিমধ্যেই ফলপ্রসূ হতে শুরু করেছে, তা দেহের বিলুপ্তি না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকে। এই কারণেই জীবন্মুক্ত—যিনি অন্তরে সম্পূর্ণভাবে ব্রহ্মে প্রতিষ্ঠিত—তাঁকে বাহ্যিকভাবে দেখা যায় কর্মরত, কথা বলছেন, চলছেন, সমাজে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁর এই অংশগ্রহণ একেবারেই অভ্যাসগত, মায়াময় ছায়ার মতো; তিনি জগতে আছেন, কিন্তু জগৎ তাঁর মধ্যে অবস্থান করে না। অন্তরে তিনি পারমার্থিক সত্তায় নিবিষ্ট, বাহিরে কেবল ব্যাবহারিক ভূমিকা পালন করছেন—যেন নাট্যমঞ্চে এক চরিত্র, যিনি জানেন যে তিনি কেবল চরিত্র নন, অভিনেতাও নন, বরং মঞ্চের নিস্তব্ধ সত্তা।
এই পর্বেই অবিদ্যা-ভঙ্গ—অজ্ঞানের পূর্ণ বিলোপ ঘটে। প্রথমে ঘটে আবরণ-নিবৃত্তি, অর্থাৎ, যা সত্যকে আচ্ছাদিত করেছিল, সেই পর্দার অপসারণ; তারপর ঘটে বিক্ষেপ-নিবৃত্তি, অর্থাৎ, যা বহুত্ব ও বিভ্রান্তির প্রক্ষেপণ ঘটিয়েছিল, তার সমাপ্তি। জগৎ তখনও দেখা যায়, কিন্তু তার রূপ পরিবর্তিত হয়ে যায়। সেটি আর আবদ্ধতার উৎস নয়, বরং ব্রহ্ম-স্বরূপের লীলা—চেতনার স্বতঃস্ফূর্ত খেলা। ঋষির চোখে বহুত্ব আর বিভেদ নয়; তা একই দ্যুতির বৈচিত্র্য, যেমন সূর্যের আলো অসংখ্য জলের ফোঁটায় বিচ্ছুরিত হয়ে নানা রঙে ঝলমল করে, অথচ সূর্য একটিই।
এই জ্ঞান পরিণত হয় ব্রহ্ম-সাক্ষাৎকারে—যেখানে আত্মা ও ব্রহ্মের মধ্যে কোনো ব্যবধান থাকে না। আত্মা তখন নিজের স্বরূপে দীপ্ত, স্বয়ং-উদ্ভাসিত, অন্য কোনো জ্ঞানের সহায়তা প্রয়োজন হয় না। এই অবস্থায় অবিদ্যা, মায়া, উপাধি ও অধ্যাস—অজ্ঞানের চার স্তরের আচ্ছাদন—সব নীরব হয়ে ভেঙে পড়ে। চিন্তা থেমে যায়, উপলব্ধি থেমে যায়, কিন্তু চেতনা থামে না। বরং এই চেতনা নিজেই সেই সাক্ষী, যে সাক্ষ্যের অনুপস্থিতিকেও উপলব্ধি করে।
তুরীয় অবস্থা এই উপলব্ধির চূড়ান্ত প্রকাশ। এখানে বাধ, মিথ্যা ও অবিদ্যা—সব ধারণা নিজেই অতিক্রমিত হয়ে যায়। মন, যা এতদিন দর্পণের মতো প্রতিফলন করছিল, এখন স্থির হয়ে যায়, আর প্রতিফলিত নয়, বিকিরণ করে। জ্ঞান তখন আর কোনো জ্ঞানীর অন্তর্গত থাকে না—কারণ “জ্ঞাতা” নামের পৃথক সত্তা আর থাকে না। যা থাকে তা কেবল জ্ঞানই, যা নিজের স্বরূপে অবস্থান করে—অদ্বিতীয়, কালহীন, অনন্ত, অপরিবর্তনীয়।
এই অবস্থায় জীব আর মুক্তি কামনা করে না, কারণ মুক্তি এখন কোনো অর্জন নয়, বরং স্বরূপের স্বীকৃতি। চেতনা নিজেকে চিনেছে এবং সেই স্বীকৃতির মধ্যেই সব দ্বন্দ্ব—অবিদ্যা ও জ্ঞান, জগৎ ও ব্রহ্ম, জানা ও জানার প্রক্রিয়া—সব এক হয়ে বিলীন হয়েছে। অবশিষ্ট থাকে কেবল এক নিরব দীপ্তি, যাকে কোনো নাম দেওয়া যায় না, তবুও যার থেকেই সমস্ত নাম, সমস্ত বোধ, সমস্ত অস্তিত্ব উদ্ভূত হয়—সেই শুদ্ধ, চির-আলোকিত ব্রহ্ম।
মুক্তি কখনও কোনো ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নয়; এটি ইতিমধ্যেই বর্তমান, কেবল অজ্ঞানের পর্দা সরলে তার স্বরূপ উন্মোচিত হয়। মুক্তি মানে কিছু পাওয়া নয়, বরং, যা সর্বদা ছিল, সেই মুক্ত সত্তাকে চিনে নেওয়া। অবিদ্যা—যা অনাদি, অর্থাৎ, যার কোনো সূচনা নেই—তবুও অন্তহীন নয়, কারণ তা জ্ঞানের আলোয় বিলুপ্ত হয়। অজ্ঞানের কোনো স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই; এটি চেতনারই এক অস্থায়ী আচ্ছাদন, যেন সূর্যের সামনে ভেসে-থাকা মেঘ। সূর্যকে মেঘ ঢেকে রাখে না, কেবল দর্শনকে আচ্ছন্ন করে। তেমনি অবিদ্যা কখনও আত্মাকে আচ্ছাদিত করতে পারে না; এটি কেবল মনের বিভ্রমমাত্র।
যখন ব্রহ্ম-জ্ঞান উদিত হয়, তখন এই অবিদ্যা-নিবৃত্তি ঘটে—অজ্ঞানের সমস্ত গঠন ভেঙে পড়ে এবং, যা প্রকাশ পায়, তা হলো নিজস্ব স্বরূপ, চিরমুক্ত চেতনা। তখন জীব, যিনি একসময় ঘোষণা করেছিলেন, “আমিই কর্তা”—অর্থাৎ, কাজ, সিদ্ধান্ত, ইচ্ছা ও ফলের দাবিদার—এখন উপলব্ধি করেন “অহম্ ব্রহ্মাস্মি”—আমি কোনো কর্মকার নই, আমি সেই ব্রহ্ম, যে নিষ্ক্রিয়, অচল, স্বয়ং-আলোকিত। অহংকার, যা এতদিন অবিদ্যা-র কেন্দ্রীয় গ্রন্থি ছিল, সেই মুহূর্তে দ্রবীভূত হয়। মন, বুদ্ধি, চিত্ত, অহং—এই অনাত্মীয় উপাদানগুলি তখন কেবল ক্রিয়ার যন্ত্র হিসেবেই প্রতীয়মান হয়, কিন্তু আত্মা আর তাদের সঙ্গে নিজেকে অভিন্ন করে না।
এই অবস্থায় চেতনা হয়ে ওঠে নিখুঁত সাক্ষী—যে শুধু দেখে, কিন্তু কোনো কিছুতে অংশগ্রহণ করে না। এই সাক্ষী চৈতন্য অভিন্নতা ছাড়াই সমস্ত কার্য পর্যবেক্ষণ করে, কিন্তু কোনো কর্মে জড়ায় না। জীবন্মুক্তের এই অবস্থাই এক প্রকার অন্তঃস্থিত আনন্দ—এক প্রশান্ত জ্বলন, যেখানে কর্ম এখনও ঘটে, কিন্তু তার মধ্যে আর কর্তা বা আকাঙ্ক্ষা নেই। তিনি চলেন, কথা বলেন, শিক্ষা দেন, দেহের স্বাভাবিক ক্রিয়া সম্পাদন করেন, কিন্তু অন্তরে থাকেন সম্পূর্ণ নিস্পৃহ।
এই জীবন্মুক্ত অবস্থাকে স্বপ্নের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যেমন কেউ স্বপ্নে হাঁটে, দেখে, কথা বলে, কিন্তু জেগে ওঠার পর জানে যে, সেটি ছিল এক স্বপ্ন; তেমনি জীবন্মুক্ত জগতে কাজ করেন, অথচ জানেন—এটি কেবল ব্যাবহারিক স্তরে, পারমার্থিক নয়। জগৎ তখনও আছে, কিন্তু এর বন্ধনশক্তি নেই। কর্ম চলতে থাকে, কিন্তু তার ভেতরে ‘আমি করছি’, এই অনুভূতি বিলুপ্ত।
অদ্বৈত বেদান্ত কর্মকে তিন ভাগে বিভক্ত করে—সঞ্চিত, প্রারব্ধ এবং আগামী। সঞ্চিত কর্ম হলো সেই জমা কর্মফল, যা বহু জন্মের স্মৃতি বহন করে; জ্ঞান-অগ্নি একে সম্পূর্ণরূপে পুড়িয়ে ফেলে, কারণ জ্ঞানের আলোয় সেই বীজ আর অঙ্কুরিত হতে পারে না। আগামী কর্ম—যা ভবিষ্যতে জন্ম নিত—তা আর জন্ম নেয় না, কারণ এখন আর কোনো কর্তা অবশিষ্ট নেই, যিনি নতুন কর্ম সৃষ্টি করতে পারেন। কেবল প্রারব্ধ কর্ম, অর্থাৎ যা ইতিমধ্যেই গতিশীল, দেহের স্বাভাবিক ক্ষয় না হওয়া পর্যন্ত প্রবাহিত থাকে। যেমন একটি তীর একবার ছোড়া হলে তার গতিপথ সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত থামে না, তেমনি প্রারব্ধের ধারা শেষ হলে তবেই দেহ পতিত হয়।
এই প্রক্রিয়ার পরিণতিই বিদেহমুক্তি—দেহবিহীন মুক্তি। এটি কোনো স্থানান্তর নয়, কোনো যাত্রাও নয়; এটি সমস্ত উপাধির বিলোপ—মন, দেহ, কারণ সব কিছুর অন্তিম নিবৃত্তি। তখন আত্মা আর কোনো আচ্ছাদনের অধীন নয়; সে নিজের মধ্যেই প্রতিষ্ঠিত থাকে, শুদ্ধ-ব্রহ্মরূপে।
যোগ-বাশিষ্ঠ এই দুই অবস্থার সুন্দর তুলনা দেয়। জীবন্মুক্তি হলো সেই আগুন, যা জ্বালানি ফুরিয়ে গেলেও কিছুক্ষণ ধরে আলোক ও তাপ বিকিরণ করে; বিদেহমুক্তি হলো সেই অবস্থা, যখন এমনকি অঙ্গারও নিঃশেষ হয়ে যায়, কিন্তু তাপের উৎস—অস্তিত্বের নিজস্ব দীপ্তি—অবিকৃত থেকে যায়। তখন দেহ, মন, কারণ—মূল অবিদ্যার সমস্ত কার্য—অপ্রকাশিত অবস্থায় বিলীন হয় এবং চেতনা কেবল নিজের মধ্যে, নিজের স্বরূপে স্থির হয়ে থাকে।
এই চূড়ান্ত অবস্থায় কোনো বন্ধন নেই, কোনো মুক্তির আকাঙ্ক্ষাও নেই, কারণ মুক্তি আর কোনো “অবস্থা” নয়—এটি সত্তার নিজস্ব প্রকৃতি। ব্রহ্ম তখন আর উপলব্ধির বস্তু নয়; সেটি নিজেই উপলব্ধি, আলো, অস্তিত্ব—যা কখনও জন্মায় না, কখনও মরে না, কেবল থাকে—শাশ্বত, নীরব, অনন্ত।
উপনিষদ এই চূড়ান্ত অবস্থাকে এমন এক মহিমান্বিত চিত্রে প্রকাশ করে, যা মানবহৃদয়ের গভীরতম অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচন করে—“যদা সর্বে প্রমুচ্যন্তে কামা যেহস্য হৃদি শ্রিতাঃ। অথ মত্যোৎমৃতো ভবত্যত্র ব্রহ্ম সমম্মুতে।।” (কঠোপনিষদ ২.৩.১৪) অর্থাৎ, যখন মানুষের হৃদয়ে সকল বাসনার নাশ হয়, তখনই সে অমরত্ব লাভকরে এবং এই জীবনেই সে ব্রহ্মের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়।
জীবনের লক্ষ্য অমরত্ব লাভ—একথা কঠ উপনিষদ বার বার ঘোষণা করছেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্যে পৌঁছব কী করে? পথে অনেক বাধা আর আমাদের বাসনাই এই বাধা। কামনা-বাসনা মানুষকে সবসময় তাড়া করে বেড়ায়। এই বাসনার পাশ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মানুষ নির্বাসনা হলে আত্মা আপনিই নিজেকে তার কাছে প্রকাশ করেন।
এ যেন আয়নার ওপর থেকে ধুলো-ময়লা মুছে ফেলার মতো। ময়লা দূর হলে স্বচ্ছ আয়নায় মানুষের মুখ স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। তেমনি যখন সকল বাসনা নির্মূল হয়, তখন মানুষ নিজের স্বরূপ জানতে পারে। সে তখন পরমাত্মার সঙ্গে এক হয়ে যায়। 'আমিই ব্রহ্ম'-এই জ্ঞান লাভ করে সে অমর হয়।
এই আশ্চর্য অভিজ্ঞতা এই জীবনেই লাভ করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন বিবেক-বৈরাগ্য। বিবেকের সাহায্যে মানুষ নিত্য-অনিত্য বিচার করে অনিত্যকে ত্যাগ করে। এইভাবে যখন চিত্তশুদ্ধি হয়, সেই শুদ্ধ মনে আত্মা আপনাআপনি নিজেকে প্রকাশ করেন।
কামনা বা বাসনা এখানে কেবল বাহ্যিক আকাঙ্ক্ষা নয়; এটি সেই সূক্ষ্ম সংস্কার—অচেতন প্রবণতা—যা চেতনার দিকনির্দেশকে বাইরের দিকে টানে। বাসনা-ক্ষয় মানে তাই শুধু ইচ্ছার নিবৃত্তি নয়, বরং মনের সূক্ষ্মতম ছায়ার বিলুপ্তি, যা আত্মাকে তার নিজস্ব আলো থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। যখন সেই শেষ সূক্ষ্ম আসক্তিও দ্রবীভূত হয়, তখন মন আর কোনো দিকে আকৃষ্ট হয় না—সচেতনতা নিজেই নিজের পূর্ণতায় স্থিত হয়—অনায়াসে, যেমন নদী ফিরে মিশে যায় সাগরে।
এই অবস্থা কোনো শূন্যতা নয়; এটি পরিপূর্ণতা—পূর্ণতা। এখানে আনন্দ কোনো প্রতিক্রিয়া নয়, বরং অস্তিত্বের মৌলিক গঠন। আনন্দ-ময়-কোষ, যা আনন্দের ছায়া মাত্র, অতিক্রান্ত হয়ে যায় এবং আত্মার আনন্দ-স্বরূপ প্রকৃতি প্রকাশিত হয়—যা সুখ বা দুঃখের কোনো বিপরীতে নয়, বরং উভয়ের ঊর্ধ্বে এক অখণ্ড দীপ্তি। তিনটি অবস্থার (জাগ্রত, স্বপ্ন, সুষুপ্তি) তরঙ্গ এখন তুরীয়ের উপর নরমভাবে দোল খায়; কিন্তু তুরীয় নিজেই থাকে অবিচল, নীরব, স্বয়ং-উজ্জ্বল। ঋষি এই অবস্থায় আর কোনো ওঠানামায় আবদ্ধ থাকেন না; তাঁর চেতনা চিদানন্দ-রূপ—চেতনা নিজেই আনন্দ, আনন্দ নিজেই চেতনা।
এই স্তরে এসে এমনকি শ্রুতি—যে এতদিন পর্যন্ত ছিল প্রমাণ, দিশারী, আলো—তা-ও নীরব হয়ে যায়। কারণ ব্রহ্ম-জ্ঞান কোনো প্রস্তাবনা নয়, কোনো ভাব নয়; এটি অপরোক্ষ-অনুভূতি, তাৎক্ষণিক স্বচেতনা। মহাবাক্য-গুলি—তৎ ত্বম্ অসি, প্রজ্ঞানম্ ব্রহ্ম, অয়ম্ আত্মা ব্রহ্ম—এখানে আর শিক্ষার উপকরণ নয়; তারা নিঃশ্বাসের মতো স্বতঃস্ফূর্ত অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। মন, যা এতদিন বিক্ষিপ্ত ছিল, এখন শান্ত, স্বচ্ছ দর্পণ। এর প্রতিফলন আর বিকৃত নয়; অবিদ্যা-উপাধি সম্পূর্ণ বিলীন এবং, যা অবশিষ্ট থাকে তা আত্মা-প্রকাশ—চেতনা নিজের দীপ্তিতে স্বয়ং উদ্ভাসিত। এটি এমন জ্ঞান, যার কোনো প্রমাণ প্রয়োজন নেই, এমন সত্য যার কোনো বিপরীত নেই।
অদ্বৈতী এই উপলব্ধিকে “অর্জন” বলে না—এটি “প্রত্যভিজ্ঞা”—নিজেকে চিনে নেওয়া। কারণ আত্মা কখনও আবদ্ধ ছিল না, কখনও বিভ্রান্ত হয়নি, কখনও মুক্তও হতে হয়নি। অবিদ্যা ছিল এক স্বপ্ন এবং জ্ঞান হলো জেগে ওঠা। জগৎ, যা এতদিন বহিরাগত অন্যতা হিসাবে প্রতীয়মান ছিল, এখন দেখা যায় ব্রহ্মের অন্তরঙ্গ বিকিরণ হিসেবে। ঋষি মায়ার খেলাকে উপভোগ করেন, যেমন কেউ মরুভূমিতে মরীচিকা দেখে—জানেন, এটি জল নয়, তবুও তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। এটি তত্ত্ব-জ্ঞান-প্রকাশ—বাস্তবতার নিজস্ব আলোকসজ্জা, যেখানে জানা এবং জানার পার্থক্য মুছে যায়।