এই অবস্থার মনকে বলা হয়েছে পোড়া দড়ির মতো—রূপ আছে, কিন্তু শক্তি নেই। যেমন পোড়া দড়ি আর কিছু বাঁধতে পারে না, তেমনি জ্ঞানপ্রাপ্ত সাধকের মনও আর কোনো বন্ধন রচনা করতে পারে না। সে জগতে চলাফেরা করে, কথা বলে, কাজ করে, কিন্তু তার অন্তরে কোনো কর্তা-ভাব, ফল-চিন্তা বা দ্বন্দ্ব থাকে না। এই নিস্পন্দ, প্রশান্ত, ত্রাণপ্রাপ্ত অবস্থাই জ্ঞানের পরিণতি—যেখানে আবরণ ও বিক্ষেপ উভয়েই নিবৃত, এবং আত্মা নিজের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত।
জ্ঞানীর কাছে তখন দেহ, ইন্দ্রিয় ও মন কেবল উপাধি—আত্মাকে আর স্পর্শ করে না। তিনি কর্ম করেন, কিন্তু কোনো কর্মফল আর সঞ্চিত হয় না; কারণ কর্তা-ভাব নিঃশেষ হয়েছে। কেবল প্রারব্ধ-কর্ম—যে-কর্মের ফল ইতিমধ্যেই চলমান—দেহের পতন না হওয়া পর্যন্ত টিকে থাকে। জীবন্মুক্ত সেই কর্মের ধারা চলতে থাকে, কিন্তু তার অভ্যন্তরে নেই অহং, নেই অধিকারবোধ।
এই অবস্থায় জ্ঞান ও করুণা একে অপরের প্রতিবিম্ব হয়ে ওঠে। জ্ঞান অন্ধকার গ্রাস করে, করুণা সেই আলোক থেকেই প্রস্ফুটিত হয়। মুক্ত ঋষি তখন জগতে থেকেও জগতের ঊর্ধ্বে—তাঁর মন ঈশ্বরের যন্ত্রের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে লোকসংগ্রহে নিযুক্ত, সবার কল্যাণে কাজ করে। বাহ্যত তিনি কথা বলেন, চলাফেরা করেন, শিক্ষা দেন; কিন্তু অন্তরে তিনি চির নীরব, চিরমুক্ত। তাঁর কর্মে আর কোনো উদ্দেশ্য নেই—শুধু ব্রহ্মের প্রকাশ, যা সব কিছুর মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করছে।
এইভাবে সাধনা থেকে পরিণতি পর্যন্ত সমগ্র পথটি একটাই গতিশীল উপলব্ধি—অবিদ্যা থেকে বিদ্যা, বিভ্রম থেকে দর্শন, বন্ধন থেকে স্বরূপে প্রত্যাবর্তন। মুক্তি কোনো গন্তব্য নয়, বরং জেগে ওঠা—যেখানে অনুসন্ধান শেষ হয় এবং জানা যায় যে, কখনও কেউ আবদ্ধই ছিল না।
যখন দেহ ঝরে পড়ে, মুক্ত সত্তা আর কোনো অবস্থার মধ্য দিয়ে যায় না—এই মুহূর্তেই বিদেহমুক্তি, যেখানে জীবিত অবস্থার অবশিষ্ট সীমাবদ্ধতাও বিলুপ্ত হয়। এটি কোনো স্থানান্তর বা যাত্রা নয়, কারণ ব্রহ্ম কখনও দূরে ছিল না—তিনি সেই মুক্ত আত্মার নিজস্ব সত্তা, চিরন্তন উপস্থিতি। মৃত্যুর পরে কিছু নতুন অর্জন হয় না, বরং কেবল অভিজ্ঞতামূলক আচ্ছাদনের সম্পূর্ণ অবসান ঘটে। যা টিকে থাকে, তা হলো তত্ত্ব-দৃষ্টি—সত্যের অবিচ্ছিন্ন ও স্থির দর্শন, নির্বিকল্প-সমাধি, যেখানে চেতনা নিজের মধ্যেই বিশ্রাম নেয়, কোনো চিন্তা, কোনো ইচ্ছা, কোনো সাক্ষ্যবোধ ছাড়াই। এটি কোনো নিস্তব্ধ অচেতন অবস্থা নয়, বরং চিদানন্দ-রূপ চেতনার স্বাভাবিক দীপ্তি, যা সমস্ত অনুভূতি ও ধারণার ঊর্ধ্বে থেকেও তাদের ভিত্তি রচনা করে।
তত্ত্ব-জ্ঞান-প্রকাশ মতবাদ বলে যে, এই জ্ঞান স্বয়ং-প্রকাশক—আত্মা নিজেকে আলোকিত করে, কোনো বাহ্যিক আলোর প্রয়োজন হয় না। সূর্যকে দেখার জন্য যেমন প্রদীপের দরকার নেই, তেমনি আত্মাকে জানার জন্য কোনো প্রমাণের প্রয়োজন নেই। কারণ আত্মা নিজেই প্রমাণ, প্রমেয় ও প্রমাতৃ—জানার যন্ত্র, জানা বস্তু এবং জাননকারী সব এক হয়ে যায়। এই উপলব্ধিতে অনুসন্ধান নিজেই শেষ হয়; “জানার” বা “চাওয়ার” কোনো অবশিষ্ট গতি থাকে না। অবিদ্যা-ভঙ্গ তখন পরিপূর্ণ—জ্ঞানীর মধ্যে অজ্ঞানতার ধারণাটিও বিলীন হয়, কারণ কোনো অবিদ্যা আর চেতনার সামনে দাঁড়াতে পারে না।
এই আত্মা-দর্শন কোনো অভিজ্ঞতা নয়, কোনো “ঘটনা” নয়; এটি চেতনার নিজের মধ্যে নিজেকে প্রত্যক্ষ করার চিরন্তন স্থিতি। সময় এখানে কোনো ভূমিকা রাখে না, কারণ কাল নিজেই চেতনার এক প্রতিফলনমাত্র। যখন এই কালহীন স্বীকৃতি উদিত হয়—যে কখনও কোনো বন্ধন ছিল না, মুক্তিও কোনো অর্জন নয়—তখন দার্শনিক ভাষা, যুক্তি এবং অন্বেষণের সমগ্র খেলা নীরবতায় বিলীন হয়।
এই নীরবতার মধ্যে প্রমাণ, প্রমাতা এবং প্রমেয়ের চক্র সম্পূর্ণ হয় ও থেমে যায়। মায়া-শক্তির খেলার মঞ্চে আর কোনো দর্শক নেই—কারণ দর্শক ও নাটক একীভূত। যা অবশিষ্ট থাকে, তা হলো একমাত্র শুদ্ধ-ব্রহ্ম—নির্গুণ, নির্বিকার, অদ্বৈত, অকারণ, সকল নাম-রূপের ভিত্তি ও তাদের বিলুপ্তির সাক্ষী। এটি সেই নিত্য দ্যুতি, যা নিজেকে জানে নিজেই এবং জানার জন্য আর কোনো দ্বিতীয় কিছু অবশিষ্ট রাখে না।
বহুত্বের স্বপ্ন শেষ হয়েছে—জাগ্রত, স্বপ্ন, সুষুপ্তি সবই চির-আলোয় বিলীন। সসীম চেতনা অসীমে মিশে গেছে, আর “অজ্ঞান” শব্দটিরও কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই, কারণ যেখানে শুধু এক আছে, সেখানে নাম দেওয়ার মতো দ্বিতীয় কেউ থাকে না। সেখানে নেই প্রশ্ন, নেই উত্তর, নেই অন্বেষণ—শুধু চেতনার অচল দীপ্তি, যা নীরবতাকেও আলোকিত করে।
অবিদ্যার অবসান মানে কোনো শূন্যতার উদয় নয়—এটি বরং পূর্ণতার (পূর্ণতা) জাগরণ। যা এতকাল বহুত্ব বলে মনে হচ্ছিল—দেবতা, আত্মা, জগৎ, কাল, স্থান—সবই এখন এক সীমাহীন সত্তার প্রকাশ, সেই সৎ-চিৎ-আনন্দ ব্রহ্ম। অভিজ্ঞতায় যে-ঋষি এই সত্য উপলব্ধি করেন, তিনি বহুত্বকে নস্যাৎ করেন না; বরং জানেন যে, এ বহুত্ব কেবল নাম ও রূপের খেলা, একক চেতনার উপর আরোপিত আলোকছায়া। যেমন সমুদ্র নিজের তরঙ্গে বিভক্ত নয়, তেমনি ব্রহ্ম নিজের প্রকাশে কখনও বিচ্ছিন্ন হয় না।
এই জগতের ধারাবাহিকতা ব্যাবহারিক স্তরে টিকে থাকে; কিন্তু তার অস্তিত্ব কেবল উপাধির (সীমাবদ্ধকারী সংযুক্তি) মাধ্যমে। জ্ঞানী সেই উপাধিগুলির অন্তর্বর্তী এই সত্যটি দেখতে পান যে, তারা সবই একই চেতনার স্বচ্ছ পর্দায় প্রতিফলন। তাঁর কাছে জীবন আর কর্মবন্ধন নয়, বরং এক স্বতঃস্ফূর্ত লীলা। তিনি কথা বলেন, চলেন, কাজ করেন, তবুও সবই নীরব স্থিরতার ভিতর থেকে প্রবাহিত হয়—যেমন বাতাস নিজে দিক নির্ধারণ না করেই আকাশের মধ্য দিয়ে বয়ে যায়।
তাঁর মধ্যে অবিদ্যার শক্তিদ্বয়—আবরণ ও বিক্ষেপ—অর্থ হারিয়ে ফেলেছে। দর্পণ এখন আর কিছু প্রতিফলিত করে না, কারণ আলো নিজেকে দর্পণহীন আলো হিসাবে চিনেছে। এটাই চেতনার পরম স্বীকৃতি—চিদানন্দের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ, যেখানে অভিজ্ঞতার সমস্ত স্তর এক সত্তায় লীন।
ঘট-আকাশ-মহাকাশের সেই প্রাচীন উপমাটি এখানে জীবন্ত হয়ে ওঠে। ঘট, অর্থাৎ, পাত্র, যতদিন থাকে ততদিন “ভেতরের” ও “বাইরের” স্থান বিভক্ত মনে হয়। কিন্তু যখন পাত্র ভেঙে যায়, দেখা যায় যে, কোনো বিভাজন ছিলই না—অভ্যন্তর ও বহির কেবল এক অবিভক্ত বিস্তৃতি। দেহ, মন, অহং—এই উপাধিগুলোও তেমনি। যখন তারা ঝরে পড়ে, আত্মা সেই অস্পর্শিত মহাকাশের মতো প্রকাশিত হয়—চিরমুক্ত, চিরসম্পূর্ণ।
অনুসন্ধানীর কাছে তখন মুক্তি কোনো অর্জন নয়, বরং একটি ভুল ধারণার অবসান। যা এতকাল “লক্ষ্য” বলে মনে হচ্ছিল, তা আসলে নিজের মধ্যেই বর্তমান। উপাধি-নিবৃত্তির মুহূর্তে দেখা যায়, মুক্তি কখনও ঘটেনি—শুধু অজ্ঞতার আঁধার সরে গেছে। আত্মা সেই পূর্ণতার মধ্যে নিজেকে চিনেছে এবং সেখানে অর্জন, ত্যাগ ও উপলব্ধি—সবই এক হয়ে গেছে, নীরব দীপ্তিতে বিলীন।
যখন দেহরূপী উপাধি খসে যায়—অর্থাৎ শরীর নামক যন্ত্রটি তার স্বাভাবিক সীমা অতিক্রম করে, তখন যে-আত্মা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় মুক্ত আত্মা। এই আত্মা আর কোনো ইন্দ্রিয়, মন বা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিজেকে জানে না; সে নিজেই নিজেকে জানে—কারণ চেতনা ছাড়া অন্য কোনো জানন মাধ্যম তখন থাকে না। এই অবস্থাকেই বলা হয় বিদেহমুক্তি—যেখানে শরীর, মন, প্রাণ সব কার্যকারণ-সম্পর্ক থেকে ছিন্ন, এবং আত্মা তার নিজস্ব স্বরূপে বিশ্রাম পায়।
এখানে কোনো পথ নেই, কোনো গন্তব্য নেই—কারণ মুক্তি কোনো নতুন অবস্থা নয়, বরং চিরকাল বিদ্যমান আত্মার স্বাভাবিক অবস্থা। দেহ-অভিমান ও অভিজ্ঞতার প্রতিবন্ধকতা যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ মুক্তি যেন এক লক্ষ্যবস্তু বলে মনে হয়; কিন্তু দেহ খসে গেলে সেই বিভ্রমও মুছে যায়। ব্রহ্ম তখন কোনো “অন্য” সত্তা নয়, বরং সেই আত্মারই নিজস্ব সত্তা—যেমন ঢেউ বুঝতে পারে, সে আসলে সাগরেরই অংশ, আলাদা কোনো সত্তা নয়।
এই অবস্থায় আর কিছু ঘটে না—কারণ ঘটনার জন্য প্রয়োজন সময়, কারণ, কর্ম, আর সেই কর্তার অনুভূতি। কিন্তু এখানে সময়ও নেই, কারণও নেই, কর্তার ভাবও নেই। কেবল এক তত্ত্বদৃষ্টি, এক নির্বিকল্প-সমাধি—যেখানে জ্ঞান ও জানন, দর্শন ও দ্রষ্টা, ব্রহ্ম ও আত্মা—সব একাকার হয়ে যায়। এই সমাধি কোনো অচেতন ঘুম নয়; বরং তা চেতনার সর্বোচ্চ উজ্জ্বলতা—স্বয়ং-আলোকিত চিদানন্দ, যা আনন্দময় প্রশান্তি। শাস্ত্রে একে বলা হয় “চিদানন্দরূপঃ শিবোহম্”—অর্থাৎ আমি সেই চেতনা ও আনন্দের অবিচ্ছিন্ন ঐক্য।
যোগবাশিষ্ঠ এই অবস্থাকে নাম দিয়েছে শান্তদৃষ্টি—অর্থাৎ এমন এক দর্শন, যেখানে কোনো স্পন্দন নেই, কোনো বিকার নেই। বাইরে জীবন চলতে থাকে; শরীর কথা বলে, হাঁটে, খায়, নিঃশ্বাস নেয়; কিন্তু ভেতরে এক অবিচল নীরবতা বিরাজ করে, যেমন বাতাসহীন স্থানে একটি প্রদীপ অনির্বাণ জ্বলতে থাকে। এই নীরবতা কোনো নিষ্ক্রিয়তা নয়—এটি সেই চেতনার প্রশান্ত দীপ্তি, যা আর কোনো দ্বন্দ্ব বা আকাঙ্ক্ষায় বিচলিত হয় না।
ঋষিরা এই অবস্থায় থেকেও কর্মে নিযুক্ত হন, তবে তাদের কর্ম আর পার্থিব উদ্দেশ্যে নয়। এটি এক অন্তর্জাগতিক যজ্ঞ—যেখানে অগ্নিকুণ্ড কোনো বাহ্য উপাচার নয়, বরং নিজের অহং। সেই অহংকে জ্ঞানের অগ্নিতে নিবেদন করাই প্রকৃত যজ্ঞ। তখন প্রতিটি কর্মই হয়ে ওঠে ব্রহ্মার্পণ—ব্রহ্মকেই ব্রহ্মে নিবেদন করা। এই কর্মে আর কোনো ব্যক্তিগত কর্তা থাকে না, তাই কোনো ফলের বন্ধনও থাকে না।
এই অবস্থায় কর্ম অকর্মে পরিণত হয়—অর্থাৎ বাহ্যভাবে কাজ আছে, কিন্তু অন্তরে কোনো কর্তা বা ভোগী নেই। যেমন জ্ঞানী আগুনে দগ্ধ বীজ আর অঙ্কুরিত হয় না, তেমনি মুক্ত আত্মার কর্ম আর ফল সৃষ্টি করে না। জীবন তখন এক মুক্ত প্রবাহ—অচল, অথচ সচল; নীরব, অথচ চিরজাগ্রত। এ-ই বিদেহমুক্তি—চেতনার পরিপূর্ণ বিশ্রাম, যেখানে আত্মা ও ব্রহ্ম এক অভিন্ন শান্তিতে উদ্ভাসিত।
“ন নিরোধো ন চোত্পত্তিঃ”—এই সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর উক্তিটি মাণ্ডূক্য উপনিষদ কারিকা বা গৌড়পাদ কারিকা-র এক ঐতিহাসিক শ্লোক, যা অদ্বৈত বেদান্তের অজাতবাদ তত্ত্বের সারসংক্ষেপ। এই শ্লোকটি গৌড়পাদাচার্যের রচনা, যিনি আদি শংকরাচার্যের পরমগুরু হিসেবে পরিচিত। এটি পাওয়া যায় দ্বিতীয় প্রকরণে (বৈতথ্য প্রকরণ), ৩২তম শ্লোকে (২.৩২)।
শ্লোকটি হলো—“ন নিরোধো ন চোত্পত্তিঃ, ন বদ্ধো ন চ সাধকঃ। ন মুমুক্ষুর্ন বৈ মুক্তঃ, ইত্যেষা পরমার্থতা।।” এই কয়েকটি পঙ্ক্তিতে গৌড়পাদ এক অনুপম দার্শনিক ঘোষণা করেছেন—যেখানে সমগ্র সৃষ্টি, বন্ধন ও মুক্তি, সাধনা ও সিদ্ধি—সব কিছুকে এক স্বপ্নময় ভ্রম বলে উন্মোচন করা হয়েছে।
“ন নিরোধো ন চোত্পত্তিঃ”—অর্থাৎ, এই জগতে কোনো বিনাশ নেই, কোনো উৎপত্তিও নেই। ব্রহ্মের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছুই জন্মায় না, কিছুই লয়প্রাপ্ত হয় না। সৃষ্টি ও প্রলয়—এ দুটি অভিজ্ঞতার মাত্রা মনের প্রক্ষেপণ; পরম সত্যে সেখানে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। যেমন স্বপ্নে শহর দেখা যায় এবং জাগরণে তা মিলিয়ে যায়—কিন্তু জাগ্রত চেতনার দিক থেকে সেই শহরের কোনো জন্মই হয়নি, তেমনি ব্রহ্মচেতনার দৃষ্টিতে জগৎ কখনও উৎপন্নই হয়নি।
“ন বদ্ধো ন চ সাধকঃ”—কেউ আসলে বদ্ধ নয়, কেউ সাধনাও করছে না। কারণ ‘বদ্ধ’ বলে যাকে ধরা হচ্ছে, সে আত্মার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; বন্ধন কেবল মানসিক ধারণা। আত্মা চিরমুক্ত, অচল, অভেদ। তাই সাধনা মানে এই মিথ্যা বন্ধনের উপলব্ধি মুছে ফেলা—নতুন কোনো অবস্থা অর্জন নয়।
“ন মুমুক্ষুর্ন বৈ মুক্তঃ”—এখানে বলা হয়েছে, না কেউ মুক্তির আকাঙ্ক্ষী, না কেউ মুক্ত। কারণ মুক্তি অর্জনের বস্তু নয়; আত্মা সর্বদাই মুক্ত। “মুমুক্ষু” ভাবটিও এক মানসিক আরোপ—যে চায়, সে-ই সীমিত, আর ব্রহ্মের কোনো চাওয়া নেই। তাই মুক্তিলাভও এক উপলব্ধির নাম—অর্জনের নয়, অনাবরণের।