অপ্রয়োজনীয় কত কিছুই তো কেনেন। দিনে কয়েক-শো টাকার সিগারেট, ক্ষতিকর অ্যালকোহল কিংবা পরবেন না জেনেও কত দামি জামাকাপড় কিনে ড্রয়ারে রেখে দেন বছরের পর বছর। কখনোই পড়া হবে না বুঝেও মনের তৃষ্ণা মেটাতে শেলফের পর শেলফ বই সাজিয়ে রাখেন। কাজে আসে না, তবুও তো কয়েক জোড়া জুতা; ব্যবহার করেন না, তবুও তো কত বেডশিট, পর্দা কিংবা ঘর সাজানোর কত-কী কিনে রেখে দেন। মাঝে মাঝে এইসব লোকেদের কাছ থেকেও কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনুন। দারিদ্র্যের ভার কাঁধে বয়ে-চলা এই মানুষগুলো হয়তো এই জিনিসপত্র বিক্রি করে দু-এক কেজি চাল কিনবে, আধসের তেল-নুন কিংবা এক আঁটি শাক কিনবে। খুব ভাগ্যে থাকলে এক কেজি আলু আর দুইটা ডিম কিনতে পারবে এইটুক বিক্রি করে। যদি এটুকুও বিক্রি না হয়, তাহলে মানুষটা হয়তো আজ রাতে শুধু জল খেয়ে ঘুমোতে যাবে। ভাবুন, আপনার একটুখানি হৃদ্যতাই আরেকজনের পাতে দু-মুঠো ভাতের জোগান দেবে। এই চাইতে বড়ো ইবাদত আর কী আছে! হয়তো এইটুক জিনিসপত্র আপনার এক দিনের ট্যুরের খরচ কিংবা এক দিনের বিড়ি-সিগারেটের বা আড্ডার কিংবা রেস্টুরেন্টে-খাওয়া এক দিনের বিলের সমান। এক দিন নাহয় রেস্তোরাঁয় না খেলেন কিংবা অপ্রয়োজনীয় জামাকাপড় না কিনলেন; এক দিন নাহয় ট্যুরটা ক্যানসেল করলেন—সে টাকায় কিছু জিনিস কিনলেন এইসব মানুষের কাছ থেকে। এতে আর কিছু মিলুক না মিলুক, অসীম শান্তি মিলবে। এই মানুষগুলো ভিক্ষা করতে পারত, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই করতে পারত। তা না করে সৎ উপায়ে একটু বাঁচতে চাইছে। আমি আপনি ওঁদের কাছ থেকে কিছু না কিনলে, ওঁরা হয়তো চুরি কিংবা ভিক্ষা করতে বাধ্য হবে… নয়তো গলায় ফাঁস লাগিয়ে অথবা দু-চারদিন না খেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় ঘরে মরে পড়ে থাকবে, যা আমি আপনি কখনও জানতেই পারব না। একটু ভাবুন তো, এই মরণ কিংবা আত্মহত্যার দায় যে আমাদের কাঁধেও বর্তাবে, তা কি অস্বীকার করা যায়? কেউ খেতে পাচ্ছে বলেই কিন্তু অন্য কেউ খেতে পাচ্ছে না। আসুন, মায়াবী হই, ওঁদের বাঁচতে সাহায্য করি। পৃথিবীটা একা আমার আপনার নয়, ওঁদেরও তো! বস্তুত, ওঁদের অ-সুখের দামেই আমরা সুখে আছি। একবার কল্পনা করে দেখুন তো, ভাগ্যের ফেরে এই লোকটিই আপনার বাবা কিংবা ভাই!