বোধের গভীরে

জীবন এবং বৃত্ত, এ নিয়ে জীবনের জ্যামিতি! থাকে ত্রিকোণও, সেদিকে যাব না, ওটা জীবনের জ্যামিতি নয়!

ভাবছিলাম, জীবনের চক্রটাও সবসময়ই কেন বৃত্তাকার হয়? বিষয়টা বোধের বাইরেই থেকে গেল। ওসব আসলে ভাববার বিষয়ও নয়, ওগুলো ধ্রুব। জীবনের বৃত্তেও দেখি অনেকগুলো ভাগ—কিছু মানুষ বৃত্তের পরিধিতে থাকে, কিছু থাকে উপবৃত্তে, কিছু মানুষ আজীবন বৃত্তের বাইরেই থেকে যায়!

না, আমি একচেটিয়া পক্ষপাত করছি না। যারা আমাদের বৃত্তের বাইরে, তারা কোথাও-না-কোথাও অন্য কারও বৃত্তের কেন্দ্রে! সবার গল্পটা মোটামুটি এমনই।
আবার কিছু মানুষ থাকে, যারা বৃত্তের বাইরে থেকেও বিশেষ বিশেষ বিন্দুতে যুক্ত থাকে।

কিছু বৃত্তের পরিধির ভেতরে থাকে, তবে কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরেই তাদের চলাচল…
কিছু বৃত্তের কেন্দ্রের কাছাকাছি আসে, তবে কখনোই, কেন্দ্র অবধি দূরত্বটা, চাইলেও কিছুতেই অতিক্রম করতে পারে না।

খুব কাছে থেকেও দূরত্ব অনুভব করে যারা, তারাই পৃথিবীতে সবচাইতে অসহায়! এর কারণ হতে পারে ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কের ঘনত্ব। ভারসাম্য বজায় থাকে ঠিকই, তবে অস্বচ্ছ ঘনত্ব সবসময়ই একটা সীমানা বুঝতে পারে; এখানে ‘গভীরতা’ শব্দটা বলব না, ওটা ভিন্ন জিনিস!

তারপর কিছু মানুষ…’কিছু’ বলতে সংখ্যাটা খুব কম বা কখনোই তিনের ঘর পার করে না, এমন…এই মানুষগুলো প্রত্যেকটা ফেইজ পার করে ঠিক কেন্দ্রে এসে পৌঁছোয়। এই জার্নিটা হয় দীর্ঘ, এই জার্নিতে থাকে সময়, মুহূর্তের অংশীদারিত্ব, অনেক কথা। পথ পাড়ি দেবার কী ভীষণ ক্লান্তি, আরও থাকে স্বস্তি আর অপেক্ষা, থাকে ভাগাভাগি…আরও যে কত-কী!

কখনো কখনো কেন্দ্রে-থাকা মানুষগুলোও একটা সময় পর কেন্দ্রচ্যুত হয়ে পড়ে।
মজার ব্যাপার হলো, কেন্দ্রে-থাকা মানুষ কেন্দ্রচ্যুত হতে খুব বেশি কারণের দরকারই হয় না!

তিনের ঘর টপকে এবার দুই-একের ঘর, এই ঘর আবার স্থায়ী হয় আমৃত্যু!
বেশিরভাগ সময় বৃত্তকে ঘিরে ভুল মানুষের আনাগোনা!

মানুষ বিশুদ্ধ নয়—এ সম্ভবও নয়; তবে মানুষ চাইলে স্বচ্ছ মানুষ হতে পারে।

মানুষ জটিল, সময়ও জটিল—এই দুইয়ের মধ্যে সখ্যও দারুণ।

মানুষ এবং সময় দুটোই দ্রুত পরিবর্তনশীল! শুধু তফাতটা হলো: মানুষ অস্থির, অনুভূতিপ্রবণ; সময় নিশ্চল, কঠিন, অনুভূতিহীন…কী আশ্চর্য!

মাঝে মাঝে মনে হয়, মানুষ যদি ‘সময়’ হতে পারত...

মানুষ মাত্রেই পরাজিত, কেউ নিজের কাছে, কেউ নির্দিষ্ট কারও কাছে, কেউ সময়ের কাছে, কেউ পরিস্থিতির কাছে, কেউ আত্মজ মানুষের কাছে, কেউবা অনেকের কাছে এবং নিয়তিরও কাছে।

বোধের গভীরে জীবন বা জীবনের গভীরে বোধ।
তারপরও আরও অনেক অব্যক্ত উচ্চারণ থেকে যায়!
Content Protection by DMCA.com