হোয়াটসঅ্যাপে আমার পিক দেখেছে, আমি পর্দা করি বলে এখনও আমার ফেইস দেখেনি। সে আরও কাছে আসা শুরু করল, একদিন আমাকে সম্পর্কের কথা বলল। আমি এখনও তাকে নিয়ে কনফিউজড, অস্থির লাগছে, হাঁপিয়ে উঠছি। এসব কী হচ্ছে! আমার কিন্তু এখন আগের জনের সাথে সম্পর্ক ঠিক নেই, আগের জন বিদেশ যাবার আগে আমি তাকে বলেছি, সম্পর্ক রাখতে পারব না। সে আমাকে বলেছে, সুইসাইড করবে, তাই সেই ভয়ে আমি চুপচাপ থাকতাম। যদি সে কিছু করে ফেলে নিজের! বিশ্ববিদ্যালয়ে অষ্টম সেমিস্টারে মক ট্রায়ালের দিন সেকেন্ড জন আমাকে দেখে, কিন্তু সেদিন সে আমার ফেইস দেখেনি। আমাকে কোট-পরা সেদিনের ছবি দিতে বলে। আমি দিই, কিন্তু মুখ দেখাইনি। আমার এখনও মনে আছে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে চুপচাপ এককোনায় গিয়ে বসে থাকতাম।
আল্লাহ! এসব আমার সাথে কী হচ্ছে! একদিকে আমার আগের সম্পর্ক, যেটা থেকে আমি এখনও নিস্তার পাইনি, তার মধ্যে তার জন্য আমার ফিলিংস তৈরি হয়ে গিয়েছে। আমি কী করি এখন! নিজের দু-চোখ অন্ধকার হয়ে আসছিল, ইচ্ছে করছিল, চিৎকার করে কান্না করি। আমার অবাক লাগত এটা ভেবে যে, আমার দ্বিতীয় জনের জন্য কেন অনুভূতি আসে! আর প্রথম জনের প্রতি সেটা কি অন্যায় হচ্ছে না! দ্বিতীয় জন যখন প্রপোজাল দেয়, আমি আমার কাছের ফ্রেন্ডকে বলি। তার কথা ছিল, সে তো সমবয়সি, প্রতিষ্ঠিত না। আর তাকে আমার ভালোও লাগছে না। তুই আগাস না। আমি ঠিক এই কথাটা দ্বিতীয় জনকে বলেছি। সে আমাকে উত্তরে বলেছে, তোমার ফ্রেন্ড না অনেক বাস্তববাদী। আমি আসলে তালগোল মেলাতে পারছিলাম না, কারণ একটা ছেলের সংসার চালাতে ইনকাম দরকার। আমি অতটা গভীরভাবে চিন্তা করতে পারছিলাম না। কারণ আমি কোনোদিন টাকা-পয়সার সমস্যা ওসব দেখিনি।
আমার এখনও মনে আছে, আমি আমাদের দোলনায় বসে তাকে বলছিলাম সব কথা। কিন্তু বরাবরের মতো সে আমাকে তার ফাঁদে ফেলতে চেয়েছে। সে আমাকে তখন বলত, সে এমপি হবে, বিচারক হবে। এ ধরনের অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেখাত। একটাও বড়ো কথা বলিনি। সে জামাত-শিবিরের সাথে জড়িত, যার জন্য সে চাইলেও কোনো সরকারি চাকরি পাবে না। সে ওই দলের সক্রিয় কর্মী বলে, যেমন সে ওই দলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে থেকে স্পিচ দিয়েছে, তেমনি তার কথার জন্য সে প্রশাসনের কাছে চিহ্নিতও হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এগুলোর জন্য অনেক অ্যালিগেশন আছে। সে বাসায় থাকতে পারে না, পুলিশ ধাওয়া করে। আমি এসব জানতে পারি সম্পর্কে জড়ানোর পর।
তার জীবন যে রিস্কি, সে আমাকে আগে কিছু বলেনি। আমি ভালোমতো ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি, সে আমাকে কীভাবে যে কনভিন্স করেছে, আর আমি ভূতের মতো চুপচাপ থাকলাম। সত্যিই আমি সম্মতি দিইনি। আমি বলতাম ওকে, তুমি তো এখনও প্রতিষ্ঠিত না, তাহলে কীভাবে সম্ভব, বলো? সে আমাকে তার মনগড়া কাহিনি শুনিয়ে কনভিন্স করে নিত। আমি কিন্তু এখনও তার রাজনীতি বিষয়ে কিছু জানি না। সে যে আমাকে ফুঁসলিয়ে এগোচ্ছিল, আমি বার বার তাকে বলছিলাম, না, না, সম্ভব না। আমার কেমন জানি লাগছে, আমার অস্থির লাগছে, আমি সম্পর্ক করতে চাই না, আমাকে আর টেক্সট কোরো না, প্লিজ।
সে তার পরেও আমাকে টেক্সট করত। রাতে আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করত। আমি তাকে জাজ করতে পারছিলাম না। এই আমি কয়দিন আগেও তাকে কনফিডেন্টলি ফ্রেন্ড ভাবতাম, আজ আমি তাকে নিয়ে কনফিউশনে পড়ে গিয়েছি। খুব অস্বস্তি লাগছে, কাউকে কিছু বলতে পারছি না। সে এমন পরিস্থিতি করত, আমাকে এত কাছে টেনে কেমন জানি আবার এড়িয়েও চলত, আমার কষ্ট হতো।
আমি একপর্যায়ে তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি। ওদিকে মানুষটার সাথে আমার সম্পর্কের ফাটল, এদিকে এমন বাজে অবস্থা, কোনটা সইব? নিজেকেই বুঝতে পারছিলাম না যে, আমি কী চাই!
এমন চলতে চলতে একদিন বলল, সে আমার সাথে দেখা করবে। আগে থেকে কোনো প্ল্যান ছিল না। সন্ধ্যা হয়েছে, আমি চেরাগী পাহাড়ের ওখান থেকে কিছু ফুল নিয়ে একটা ব্যুকে করি। তার সাথে ফোনে আলাপ করে চেরাগী পাহাড়ের ওখানে অনেক কষ্টে এক হই। আমার কাছে যে ফুল ছিল, সে দেখেনি; তখন দু-জন হাঁটতে হাঁটতে যখন বাতিঘর-এর সামনে যাই, তাকে আমি ফুলগুলো দিই। সে এমন অবাক হয়েছে সারপ্রাইজটা পেয়ে! দু-জন তখন বাতিঘর-এর সামনে দাঁড়িয়ে। সে ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, অবাক হয়েছে অনেক, কী বলবে আমাকে, ভাষা খুঁজে পাচ্ছিল না। তখন আমাকে প্রথম বলেছিল, আমি কিছু-একটা থেকে বিদায় নিচ্ছি। আমি বলেছি, কীসের বিদায়? কী নিয়ে?
সে আমাকে জামাত-শিবিরের কথা বলল। বলল, এখন তেমন সক্রিয় থাকবে না ওখানে। আমি আর কিছু বলে ওঠার আগে চুপ করিয়ে দিল। তখন কিছু পুলিশ আসছিল…আমি পলিটিক্স লাইক করি না, তাই বলে তার সম্পৃক্ততা বা এত কিছু নিয়ে গভীরভাবে ভাবিনি বা প্রশ্ন করিনি। শুধু এটুকু মনে হয়েছে যে, মানুষ যেমন পছন্দ করে, সে-ও তেমন ওই দলটা লাইক করে আর কি!
সে সেদিন প্রথম সিএনজি নিয়ে আমাকে আমার বাসায় ছাড়ে আর নামার সময় আমার দিকে তাকিয়ে বলে, তোমাকে না ছাড়তে ইচ্ছে করছে না! আমিও খুব আবেগ-আপ্লুত হয়েছিলাম কথাটা শুনে, তখনও তেমন সিরিয়াস না আমি। আমার কাছে সারপ্রাইজ দেওয়া ব্যাপারটা খুব ভালো লাগে, সেই সুবাদে আমি তাকে বিভিন্ন সময়ে সারপ্রাইজড করি। এমন করতে করতে সম্পর্ক গড়ায়। মাঝেমধ্যে কেমন জানি সে এড়িয়ে চলে, তখন ভেতরটা কেমন যে লেগে ওঠে! এমনি করে প্রায়ই বের হওয়া হতো। সে কিন্তু এখনও আমার ফেইস দেখেনি, ফাজলামো করত সে, গান শোনাত। তার এই ছোটো ছোটো জিনিস আমার কাছে অনেক ভালো লাগত। এমন করে কথা বলত যেন তার থেকে নিষ্পাপ মানুষ দ্বিতীয়টি আর নেই।
আমরা রিকশায় বা সিএনজি নিয়ে ঘুরতাম। আমি রাগ করলে সে আমাকে তার ওখানে নিয়ে গিয়ে ওয়েট করাত। আমি সবসময় যেতাম আর ভাবতাম, তার সাথে আমি এবার একটা বোঝাপড়া করব। যখন যেতাম, সে আমাকে দেখে মুগ্ধ হতো, কেননা আমি এখন আগের মতো বোরকা পরি না। সে কী করত, আমি কিছু বলার আগে হুট করে একটা রিকশা বা সিএনজি ডেকে সেখানে উঠে অন্য প্রসঙ্গ এনে আমার মুখ বন্ধ করে দিত। আমিও তেমন কিছু বলতে পারতাম না—মানে যেটার জন্য ঝগড়া করব বলে গিয়েছি।
একদিন আমরা এয়ারপোর্ট যাই, আমি কীভাবে যে সাহস করে গিয়েছিলাম, নিজেই অবাক হয়েছি, সে অবাক হয়েছে; আমাকে তখন বলেছিল, ধন্যবাদ, আমাকে বিশ্বাস করার জন্য। সে অনেক তর্ক করত, আমি হেরে যেতাম তার সামনে। কেমন জানি নিজের মধ্যে পরিবর্তন এসে গেছে, কিছু নিজের জন্য নেবার আগে তার আছে কি না ভাবতাম। আরেকটা কথা বলে রাখি। যেদিন বের হতাম, আমিই ঘোরাঘুরির জন্য সব টাকা বের করতাম। একদিন ঘুরলে ৭০০/৮০০ টাকা যেত। তাকে আমি কোনোদিনই মানিব্যাগ বের করতে দেখিনি।
একদিন সারাদিন আমার সাথে ঘুরেছে, তারপর সে বাসায় চলে যায়, আমি শপিংমলে যাই। আমার একটা টাই খুব পছন্দ হয়, ওটা কিনি। এখন কথা হলো, সে ক্লান্ত হয়ে বাসায় গিয়েছে, আবার আসবে নাকি! আমি তাকে ফোন দিয়ে বলি, আমার কিছু টাকা লাগবে, তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আসার পর সারপ্রাইজ দিয়েছি টাই দিয়ে। বেচারা অবাক হয়ে বলে, মিথ্যে কেন বলেছ?
যখন সম্পর্কটা স্ট্রং হয়, সে তার সমস্যা বলা শুরু করল। বলল, আমি পরিবারের বড়ো ছেলে, আমাকে সব দেখতে হয়। আমাকে বলত সবসময়, আমি প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত যদি তুমি অপেক্ষা করতে পারো, তাহলে প্রথম প্রপোজাল তোমাকেই পাঠাব। আমার ব্যাপারটা কেমন জানি লাগত! প্রথম প্রপোজালের কথা কেন আসবে? সে কি বলতে পারে না, আমার শেষ তুমি, আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দেবো নিজেদের এক করতে? কিছু স্ট্রং শব্দ আমি আশা করতাম, যা সে আমাকে বলত না।
আর এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে মনোমালিন্য হতো। আমরা ঠিক করি, ল্যান্ডসার্ভে কোচিং করব। যেহেতু আমাদের অনার্স কমপ্লিট আর আইডিয়াটা তারই ছিল, তাই আমরা একসাথে ভর্তি হই। প্রথম দিনেই অ্যাডমিশনের সময় এক হাজার দিই। মাত্র দু-তিনটা ক্লাস করতে না করতেই সে আমাকে চাপ দেয় স্যারকে টাকা দিতে। স্যার তার পরিচিত ছিল। সে আমাকে যেখানে কোচিং করাতে নিয়ে যায়, জায়গাটা ছিল নিরিবিলি, চার তলায়। কোনো সমস্যা হলে একদম কেউই শুনবে সে না। এই মানুষটাকে ভরসা করে আমি ওখানে তার সাথে গিয়েছিলাম। টাকার বিষয়ে সে যখন চাপ দিচ্ছিল আমাকে, তার কাছে তখন টাকা নেই, এটাই আমাকে বোঝাচ্ছিল। তখন আমি দশ হাজার টাকা বাসা থেকে আনি, ইদের মৌসুম ছিল। সে যেহেতু টাকা ইনকাম করে না, তার আব্বু দেশের বাইরে থেকে চলে এসেছে, তার আব্বু এখন বেকার, তাই নিজের আব্বু-আম্মু’র মতো মনে করে তাকে বললাম, তুমি আমার পক্ষ থেকে চার হাজার টাকা দিয়ে ওঁদের কিছু উপহার দিয়ো আর বাকি ছয় হাজার টাকা স্যারকে দিয়ে দিয়ো। টাকাগুলো যখন দিয়েছিলাম, তখন সে একটা শয়তানের হাসি ছুড়ে দিয়েছিল। তখন আমার কেমন জানি খটকা লেগেছে।
আচ্ছা, যা-ই হোক, এবার স্যারের কথা বলি, স্যার আমাকে মানসিকভাবে অনেক অনেক হ্যারাস করত। যেহেতু ল্যান্ড সার্ভে কোচিংয়ে সে ম্যাথ করাত, আমি যেহেতু চার বছর কোনো টিউশনি করাইনি বা ম্যাথ সাবজেক্ট টাচও করিনি, আমার ম্যাথে প্রবলেম হচ্ছিল। কেউ যদি হুট করে ২৯-এর নামতা জিজ্ঞেস করত, তাহলে কীভাবে পারব! আমাকে কেমন কেমন করে স্যার কথা শোনাত, আর সে হাসত। আমার চোখে জল চলে আসত। আর সে দেখেও না দেখার ভান করত। কোচিং থেকে বের হবার পর আমাকে বলত সে, এমন হলে কি চলবে! কিছু না পারলে কীভাবে কী!
আমার মন তো এ কথা শুনতে চায় না। বলতাম, আমি তোমার সাপোর্ট আশা করেছিলাম। যা-ই হোক, দিন দিন যন্ত্রণা বাড়ছিল। যখনই দেখা হতো, লাঞ্চটা আমি করাতাম এবং অনেক দামি মিলটাই খাওয়াতাম। আমি অনেক দূর থেকে তার সাথে দেখা করতে যেতাম। আমার এমন ক্ষুধা যে লাগত, এত দূর থেকে গিয়ে রেস্টুরেন্টে বসতাম, তাকে দেখাতাম, আমার ক্ষুধা নেই একদম। আমি বাসা থেকে খেয়ে বের হয়েছি। আর ওদিকে সে আরামে খাচ্ছে, আমাকে খাবার অফার পর্যন্ত করছে না। এমন যে কতদিন গেছে! আমার প্রতি তার শুরু থেকেই মমত্ববোধ ছিল না, যা আমি ওভাবে করে কখনও ভাবিনি।
আমি ফেইস না দেখানোর পেছনে একটা কারণ ছিল। আমার একটা ছোটো আঁচিল ছিল ফেইসে। চিন্তা করতাম, সে কি আমাকে এটার জন্য অপছন্দ করবে? আমার এমনিতে এটাতে বিরক্ত লাগত, তাই অনেক আগে সিদ্ধান্ত নিই, এটা ফেলে দেবো। সে সুবাদে অপেক্ষা করছিলাম। একটা মজার বিষয় হলো, ওরও আঁচিল আছে ফেইসে। কই, আমি তো তাকে ওভাবেই গ্রহণ করেছি। আমার জন্য, সে সব অবস্থাতেই সুন্দর।
অনেক মাস সে আমাকে দেখে না, এখন সে খুবই বিরক্ত। আমি সাহস করে একা গিয়ে ফেইস ঠিক করে আসি তার জন্য। এখন আমি সব করতে পারি। কোনো বাধাই আর বাধা না। সে আমাকে চাপ দিচ্ছে দেখার জন্য। আমি সারপ্রাইজ ঠিক করি, একটা কনফিডেন্স ছিল নিজের মধ্যে যে, আমি তার থেকেও সুন্দর। সো, সে আমাকে অপছন্দ করবে না। আমাকে সে প্রথম দেখবে যখন, তাই ভাবলাম, এটা স্মরণীয় করে রাখি। আমি একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছি, তখন টাকা একটু কম ছিল। তা-ও অনেক কষ্টে এটা প্ল্যান করি। নিজে নিজে অনেক কষ্ট করে একটা রুফটপ রেস্টুরেন্ট খোঁজ করে বের করি এবং বুকিং দিই। তাকে বললাম, তুমি না আজকে কোট পরে এসো, প্লিজ! যেদিন সারপ্রাইজ দেবো, সেদিন যেখানে বুক করেছি, জায়গাটা সাজানোর জন্য ওরা লাল বেলুন পাচ্ছিল না। মনটা খুব খারাপ হয়। ওরা তারপর কোনোমতে অ্যারেঞ্জ করে। কয়েক দিন আগে থেকে ঘুম হচ্ছিল না এটা ভেবে ভেবে যে, কেমন হবে দিনটা! এটা পরব ওটা পরব, আরও কত-কী! কত যে টেনশন! যদি বৃষ্টি হয়! যদি কোনো প্রবলেমের কারণে এক হতে না পারি!
শেষমেশ সেই সময়টা এল।
সন্ধ্যা ৭টা, আমি জামাল খান বাতিঘর-এর সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। আজকে আমার ফেইস কাভার করা নেই। খুব সুন্দর করে সেজেছি। সে ফোন দিচ্ছে। আমার হার্টবিট কমছে বাড়ছে। একসময় দেখলাম, সে এসে গেছে। ফুল নিয়ে আমি তার সামনে দাঁড়িয়ে। সে হাঁ করে রইল, সত্যিই অবাক হচ্ছে খুব! এত সুন্দর সারপ্রাইজ!
আমি তো ওদিকে অ্যারেঞ্জ করে রেখেছি, তাকে বলছি, চলো, কোথাও যাই। সে বলল, কোথায় যাবে চলো। আমি বললাম, যেদিকে দু-চোখ যায়। একটা সিএনজিতে উঠি। ফাইনাল মিশনে পৌঁছাই। সিএনজি থেকে নেমে তার চোখ বন্ধ করে হাত ধরে তুলি উপরে। ওখানে কী যে সুন্দর করে ওরা ডেকোরেট করেছে! তারপর দু-জনই ক্যান্ডেললাইট ডিনারে বসি। সে তো খুশিতে আত্মহারা, তার দাঁত একটু বাঁকা, আমার দাঁত আর ফেইসের প্রশংসা করছিল বার বার। আমিও তার মন্তব্য শুনে খুশিতে আত্মহারা।
অনেক দিন ধরে দেখছি, তার ওয়ালেটটা কেমন জানি ফ্যাকাশে, ছিঁড়ে গেছে। আমি বললাম, এখন যা চাই, তা দিতে পারবে তো? বলে, হ্যাঁ, পারব। বললাম, আমার না তোমার ওয়ালেটটা একদম ভালো লাগছে না। এটা ফেলে দাও। তৎক্ষণাৎ সে সব বের করে ফেলল। আর আমি একটা ওয়ালেটে তার সব কিছু সেট করে দিই। সাথে আরও একটা সারপ্রাইজ দিই। একটা ফুডবক্স দিই, ওয়ালেটে আমার একটা ছোটো ছবি দিই। সেদিন উত্তেজনায় ওটার কথা তাকে বলতে ভুলে যাই। পরের দিন বলি, ওয়ালেটে একটা ছবি আছে আমার। বলে, কী! আর কত সারপ্রাইজ দেবে!
এর মধ্যে ইদ আসে। এখন দেখি, সে নিজের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর কথা খুব বেশি বলা শুরু করেছে। বলছে, তার এটা সমস্যা, ওটা সমস্যা। বাসায় এটা-ওটা দিতে হয়। ইদে আমার সেমিস্টার ফি রাখা ছিল বাসায়, ওখান থেকে অনেক টাকা কাউকে না বলে নিয়ে নিই, তাকে শপিং করিয়ে দিই ৭৫০০ টাকা দিয়ে। এবার সে এমনভাবে বলছে…বাসার বাজার করবে, তার বোন চবিতে পড়ে, বিবাহিত। সে তাকে কিছু বাজার করে দেবে, তারপর সে নিজের জন্য আরও কিছু করবে। আমি বলেছি, শোনো, যেদিন যাবে, আমাকে বোলো, আমি আসব, আমিও কিছু করে দেবো। ইদের ৪ দিন আগে গিয়ে গ্রোসারি শপ থেকে তাকে অনেকগুলো বাজার করে দিই, একদম যা যা লাগে, সব।