এই তিনটি স্তর—বহির্বস্তুবাদ (bahir-artha-vāda), চিত্তমাত্রবাদ (citta-mātra), এবং বোধমাত্রতা (vijñapti-mātratā)—বৌদ্ধ জ্ঞানতত্ত্বের এক ধারাবাহিক বিকাশরেখা, যেখানে চেতনার ভূমিকা ক্রমশই কেন্দ্রীভূত ও পরিশুদ্ধ হয়ে ওঠে। এগুলি পরস্পরবিরোধী নয়; বরং একটিকে অতিক্রম করে অন্যটি স্থিত হয়, যেন ধীরে ধীরে বহির্বস্তু থেকে অন্তর্জ্ঞানে, এবং শেষে অন্তর্জ্ঞান থেকেও অতিরিক্ত এক চেতনা-অন্তঃপ্রকাশে উত্তরণ।
প্রথম স্তর, বহির্বস্তুবাদ, হলো জ্ঞানতাত্ত্বিক বাস্তববাদের (epistemic realism) সমতুল্য একটি অবস্থান। এখানে ধারণা করা হয়—জ্ঞান ও জানা-বস্তুর মধ্যে স্পষ্ট একটি দ্বৈত সম্পর্ক রয়েছে: “বস্তু” (artha) বাইরে বিদ্যমান, এবং “জ্ঞান” (jñāna) তা কেবল প্রতিফলিত করে। এই মতে, জ্ঞান নির্ভরশীল, বস্তু নির্ভরকারী। বস্তু থেকে উদ্ভূত প্রতীতি (cognition) জ্ঞানের মধ্যে উৎপন্ন হয়—যেমন, গাছের অস্তিত্ব আমাদের চেতনার বাইরে স্বতন্ত্রভাবে আছে, এবং দেখা (দর্শন) কেবল তার প্রতিচ্ছবি। যোগাচার এই বাস্তববাদী অবস্থানকে সমালোচনা করে, কারণ এতে জ্ঞান সর্বদা এক নির্জীব আয়না মাত্র হয়ে থাকে, আর চেতনার নিজস্ব সৃজনশীলতা ও স্বতন্ত্রতা অগ্রাহ্য হয়।
দ্বিতীয় স্তর, চিত্তমাত্রবাদ, এই বাস্তববাদী দ্বৈততাকে ভেঙে দেয়। এখানে বলা হয়—যা “বস্তু” বলে ধরা হচ্ছে, সেটিও আসলে চেতনারই এক প্রতীতি। বাহ্যিক কোনো “অবজেক্ট” (object) নেই; যা-কিছু জানা যায়, তা চেতনার মধ্যেই উদ্ভাসিত। এই তত্ত্বে চেতনা (citta) কেবল প্রতিফলনকারী নয়, বরং সৃষ্টিশীল ও স্বপ্রকাশমান। তবে যোগাচার “চিত্ত” শব্দকে ব্যক্তিগত মানসিক প্রক্রিয়া হিসেবে গ্রহণ করে না; এটি সর্বজনীন বোধধারার (universal stream of cognition) এক রূপ, যা সমস্ত অভিজ্ঞতাকে ধারণ করে। এখানেই বৌদ্ধ দর্শনের মনস্তাত্ত্বিক দিকটি দার্শনিক মাত্রায় উত্তীর্ণ হয়—মন আর ব্যক্তিগত নয়, বরং মহাজাগতিক অভিজ্ঞতার মূলে থাকা এক অনন্ত বোধস্রোত।
তৃতীয় স্তর, বোধমাত্রতা (vijñapti-mātratā), চিত্তমাত্রবাদকেও অতিক্রম করে আরও সূক্ষ্ম এক অন্তর্দৃষ্টিতে পৌঁছায়। এখানে চেতনা (vijñāna) কেবল “অস্তিত্বমান” নয়; এটি ক্রমাগত নিজের মধ্যেই প্রতিফলিত ও স্বপ্রকাশমান (self-representational) এক গতিশীল বাস্তবতা। “বোধমাত্রতা” শব্দটি যোগাচারের নিজস্ব দার্শনিক পরিণতি, যেখানে চেতনা আর কোনও “বিষয়কে জানে” না, বরং নিজেকেই অভিজ্ঞতা করে। চেতনা নিজেকে দুই ভাগে প্রতিস্থাপিত করে—বিষয় (subject) ও বিষয়ী (object)—এবং এই দ্বৈততার অভিনয়ই অভিজ্ঞতা বা প্রতীতি (vijñapti)। এই প্রতীতি-প্রবাহই জগৎ। অর্থাৎ, জগৎ কোনো স্থির পদার্থ বা সত্তা নয়; এটি চেতনার অন্তর্লীন প্রতিফলনধারা—চেতনার স্বরূপগত “অভিজ্ঞতা হওয়া”-র প্রক্রিয়া।
এখানেই তিনটি স্তরের পার্থক্য ও গতি স্পষ্ট হয়। বহির্বস্তুবাদে চেতনা ও বস্তু পরস্পর-বিচ্ছিন্ন—চেতনা একটি জ্ঞাপক আয়না, বস্তু এক স্বতন্ত্র উপাদান। চিত্তমাত্রবাদে এই বিচ্ছিন্নতা বিলুপ্ত—বস্তু চেতনার প্রতিফলন, চেতনা সব কিছুর ভিত্তি। কিন্তু বোধমাত্রতা আরও এক ধাপ এগিয়ে চেতনার “অভিজ্ঞতা-স্বরূপ” প্রকৃতি প্রকাশ করে—চেতনা কেবল জানে না, নিজেকে জানে, নিজেকেই প্রতিফলিত করে, এবং সেই স্বপ্রতিফলনের প্রবাহই “বিশ্ব” নামে প্রতীয়মান হয়।
এই ক্রমবিকাশকে দার্শনিকভাবে ব্যাখ্যা করলে এটি একটি গভীর এবং অর্থপূর্ণ দার্শনিক যাত্রাকে নির্দেশ করে, যা বিভিন্ন জ্ঞানতাত্ত্বিক এবং অধিবিদ্যাগত মতবাদের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। প্রাথমিকভাবে, বহির্বস্তুবাদ (externalism) একটি দ্বৈতবাদী (dualism) দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে, যেখানে মন এবং বস্তু, জ্ঞাতা ও জ্ঞেয়, চেতনা ও বাস্তবতার মধ্যে একটি সুস্পষ্ট বিভেদ বিদ্যমান। এই ধারায়, বস্তুগত জগৎ মানুষের মন থেকে স্বাধীনভাবে অস্তিত্বশীল এবং জ্ঞান অর্জিত হয়, যখন মন এই বাহ্যিক বস্তুর সাথে মিথস্ক্রিয়া করে। এখানে পর্যবেক্ষক এবং পর্যবেক্ষণীয় বস্তুর মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য থাকে।
এরপর চিত্তমাত্রবাদ (idealism) এই দ্বৈতবাদকে অতিক্রম করে একটি অদ্বৈত মনবাদ/মনোদর্শন (non-dual idealism) বা একত্ববাদী মানসিকতার দিকে অগ্রসর হয়। এই মতবাদ অনুসারে, বাস্তবতা মূলত মানসিক বা চেতনাসৃষ্ট। বাহ্যিক বলে যা প্রতীয়মান হয়, তা আসলে মনেরই একটি প্রকাশ বা সৃষ্টি। এখানে বস্তুজগৎ আর মন থেকে স্বাধীন নয়, বরং মনের উপর নির্ভরশীল। এই দৃষ্টিভঙ্গি মনকে প্রাথমিক সত্তা হিসেবে স্থাপন করে এবং সকল অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে মানসিক প্রক্রিয়ার ফল হিসেবে দেখে। এখানে জ্ঞাতা ও জ্ঞেয়ের মধ্যেকার বিভেদ কমতে শুরু করে, কারণ জ্ঞেয় বস্তুও শেষপর্যন্ত মনেরই অংশ বলে বিবেচিত হয়।
সর্বোপরি, বোধমাত্রতা (pure consciousness) বা অভিজ্ঞতার বিশুদ্ধ চেতনা একটি গভীর অদ্বৈত ফেনোমেনোলজি বা প্রপঞ্চবিদ্যা বা অভিজ্ঞতার কাঠামোর বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়ন (non-dual phenomenology) উন্মোচন করে। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে জ্ঞান (knowledge), জানা (knowing) এবং জানা-বস্তু (known object)—এই তিনটি ক্রিয়া একীভূত হয়ে যায়। এই স্তরে, কোনো বিভেদ বা পৃথকীকরণ থাকে না। জ্ঞান অর্জনকারী, জ্ঞানের প্রক্রিয়া এবং জ্ঞানীয় বস্তু—এদের মধ্যকার সীমারেখা সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়।
এটি কেবল মন বা বস্তুর অদ্বৈত নয়, বরং অস্তিত্বের চূড়ান্ত একত্ব যেখানে কোনো দ্বৈততা অবশিষ্ট থাকে না। এখানে চেতনাকে আর শুধুমাত্র "জানার উপকরণ" হিসেবে দেখা হয় না, বরং এটি "অস্তিত্বের স্বরূপ" বা মূল প্রকৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়। চেতনা নিজেই অস্তিত্ব, এবং অস্তিত্ব নিজেই চেতনা। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে বিষয়ী (subject) এবং বিষয় (object) এক হয়ে যায়, এবং পরম সত্তার সাথে ব্যক্তির অস্তিত্ব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, যা গভীর আধ্যাত্মিক বা দার্শনিক উপলব্ধির চূড়ান্ত পর্যায়কে নির্দেশ করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে, সমগ্র মহাবিশ্ব এবং প্রতিটি অভিজ্ঞতাই চেতনার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেখানে প্রতিটি কণা থেকেই পরম সত্যের প্রকাশ ঘটে। ফলে যোগাচারের “বোধমাত্রতা” কেবল মনতত্ত্ব নয়; এটি এক সত্তাতাত্ত্বিক ঘোষণা—চেতনা নিজেই বাস্তব, আর জগৎ সেই চেতনার আত্মপ্রকাশ।
এই তিনটি স্তর যোগাচার দর্শনে বাস্তবতার প্রকৃতির একটি ক্রমিক এবং গভীরতর বিশ্লেষণ প্রদান করে, যা বস্তুর বাহ্যিকতা থেকে শুরু করে চেতনার নিরাকার অভিজ্ঞতা পর্যন্ত বিস্তৃত।
বোধমাত্রতা বোঝায় যে, “বিষয়” (object) ও “বিষয়ী” (subject) এই দুই-ভাগ আসলে এক অভিন্ন চেতনার দুই দিক। চেতনা নিজের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং নিজেকে “আমি” ও “ওটা” রূপে উপলব্ধি করে। ফলে যখন আমরা বলি, “আমি এই গাছটি দেখছি”, আসলে সেই দেখা, দেখা-যাওয়া, আর গাছ—সবই চেতনার এক অভ্যন্তরীণ বিন্যাস। এই বোধের মধ্যেই দর্শক ও দর্শন মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে।
এই তত্ত্বই পরবর্তীকালে বৌদ্ধ শূন্যবাদ (নাগার্জুনীয় মধ্যমক) ও কাশ্মীর শৈবের “চৈতন্যময় আভাস”-এর মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে। পার্থক্য শুধু এই যে, যোগাচারে বোধমাত্রতা জগৎকে “নিরবয়ব বোধ” হিসেবে দেখে, যেখানে কোনো ব্যক্তিগত আত্মা নেই, আর কাশ্মীর শৈবে সেই বোধই “চেতনা-আনন্দ-শক্তি” হয়ে লীলায় পরিণত হয়—অর্থাৎ, সেখানে চেতনা স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দে নিজের রূপ প্রকাশ করে।
বোধমাত্রতা মানে, এই যে জগৎ, চিন্তা, সময়, আমি, আপনি—সবই এক বোধের প্রতিফলন। চেতনা ছাড়া কিছুই স্বাধীনভাবে নেই, আর যা-কিছু আছে, তা চেতনারই অন্তরঙ্গ উদ্ভাস। এই তত্ত্বের মাধ্যমে যোগাচার বৌদ্ধ দর্শন বলে দেয় যে, মুক্তি মানে কোনো নতুন কিছু অর্জন নয়, বরং এই সত্য উপলব্ধি করা—সবই চেতনারই খেলা, এক অনন্ত আত্মদর্শনের স্পন্দন।
যোগাচারের বোধমাত্রতা (বিজ্ঞানমাত্রতা, Vijñapti-mātratā), নাগার্জুনের শূন্যবাদ (Śūnyavāda), এবং কাশ্মীর শৈব দর্শনের চৈতন্যময় আভাস (Caitanyamaya Ābhāsa)—এই তিনটি তত্ত্বই আপাতদৃষ্টিতে অদ্বৈত (non-dualistic), চেতনা-কেন্দ্রিক ও মুক্তিমুখী দর্শন হিসেবে প্রতীয়মান হলেও, তাদের বাস্তবতাতত্ত্ব (ontology), জ্ঞানতত্ত্ব (epistemology) ও মুক্তিতত্ত্ব (soteriology)-এর দৃষ্টিভঙ্গি গভীরভাবে আলাদা। তিনটিই অভিজ্ঞতার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করে, কিন্তু “বাস্তব” কী এবং “চেতনা”-র ভূমিকা কী—এই প্রশ্নে প্রত্যেকেই নিজস্ব স্বর সৃষ্টি করেছে।
যোগাচার বা “বোধমাত্রবাদ” (Vijñapti-mātratā-vāda) বৌদ্ধ দর্শনের মনবাদী শাখা, যা অসঙ্গ (Asaṅga) ও বসুবন্ধু (Vasubandhu) প্রবর্তন করেন। এর মূল বক্তব্য হলো—যা-কিছু আমরা জানি বা দেখি, তা কেবল চেতনার প্রতিফলন; চেতনার বাইরে কোনো স্বতন্ত্র বাস্তবতা নেই। এই “বোধমাত্রতা” শব্দের অর্থই হলো “শুধু চেতনা”—অর্থাৎ, দেখা, শোনা, চিন্তা, অনুভব—সবই চেতনার অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন (representation)। যেমন কেউ স্বপ্নে আগুন দেখে তাপ অনুভব করে, অথচ বাস্তবে আগুন নেই—তেমনি আমাদের জাগতিক অভিজ্ঞতাও চেতনার ভেতরে উদ্ভাসিত প্রতীতি (cognitive appearance)।
এই চেতনা বা বোধকে যোগাচার দর্শনে বলা হয় আলয়বিজ্ঞান (Ālaya-vijñāna)—অর্থাৎ “চেতনার ভাণ্ডার” বা store-consciousness, যেখানে পূর্বজ অভিজ্ঞতা ও কর্মফল বীজরূপে সঞ্চিত থাকে এবং সেগুলো থেকেই নতুন প্রতীতি জন্ম নেয়। এর ফলে জগৎ ও অভিজ্ঞতা চেতনার এক ধারাবাহিক অভ্যন্তরীণ প্রকাশ হয়ে ওঠে। এখানে “মন” ব্যক্তিগত নয়, বরং সমষ্টিগত চেতনা-প্রবাহ। তাই যোগাচার দর্শনকে বলা যায় জ্ঞানতাত্ত্বিক আদর্শবাদ (Epistemic Idealism)—যেখানে যা-কিছু জানা যায়, তা চেতনার ভেতরেই গঠিত হয়, এবং মুক্তি (Mokṣa/Nirvāṇa) মানে বোধের বিশুদ্ধি—যখন জানা যায় যে, কোনো বাহ্যিক বস্তু নেই, সবই নিজের চেতনার প্রতিফলন।
নাগার্জুনের মধ্যমক শূন্যবাদ (Mādhyamika Śūnyavāda) যোগাচারের এই “চেতনা-মাত্র” দৃষ্টিকোণকেও একপ্রকার অতিক্রম করে যায়। মূলমধ্যমককারিকা (Mūlamadhyamakakārikā)-য় নাগার্জুন বলেন—সব ধর্মই শূন্য (Śūnya), অর্থাৎ কোনো বস্তুর নিজস্ব, স্বতন্ত্র প্রকৃতি (Svabhāva) নেই। কিন্তু এখানে “শূন্যতা (Śūnyatā)” মানে অস্তিত্বহীনতা নয়; বরং “পারস্পরিক নির্ভরতা” (Pratītya-samutpāda)—যা-কিছু আছে, তা অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে বিদ্যমান। এর মানে হলো, কোনো বস্তু বা চেতনা নিজের মধ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, উভয়ই পরস্পরনির্ভর।
যোগাচার যেমন বলে, “চেতনা সত্য, বস্তু নেই,” নাগার্জুন তার বিপরীতে বলেন—চেতনা ও বস্তু উভয়ই অস্বভাবসম্পন্ন (Niḥsvabhāva), উভয়ই শূন্য। অর্থাৎ, কোনো কিছুকেই “পরম সত্য” বলা যায় না। চেতনা, বস্তু, মন, চিন্তা—সবই আপেক্ষিক সম্পর্কের পরিসরে বিদ্যমান; তাই সত্য মানে কোনো স্থির অস্তিত্ব নয়, বরং relational emptiness। এই দর্শনকে বলা যায় অস্তিত্বতাত্ত্বিক অ-বাস্তববাদ (Ontological Non-essentialism)। নাগার্জুনের মতে মুক্তি (Nirvāṇa) মানে চেতনার বিশুদ্ধি নয়, বরং এই উপলব্ধি যে—সব কিছুই নির্ভরশীল, আপেক্ষিক, ও অবাস্তবের মধ্য দিয়ে প্রতীয়মান। যখন এই দ্বৈত চিন্তা—“আমি” ও “জগৎ”, “চেতনা” ও “বস্তু”—সব মুছে যায়, তখনই জ্ঞানী নির্বাণ লাভ করে।
Relational Emptiness (সম্পর্কগত শূন্যতা)—এই ধারণাটি মূলত নাগার্জুনের মধ্যমক শূন্যবাদ-এর কেন্দ্রীয় তত্ত্ব, যেখানে বলা হয় যে, কোনো বস্তু, ভাবনা বা অভিজ্ঞতা নিজের মধ্যে স্বতন্ত্র, স্বয়ংসম্পূর্ণ বা অপরিবর্তনীয় “সত্তা” (Svabhāva) নিয়ে বিদ্যমান নয়; বরং সব কিছুই সম্পর্কের মধ্যে, নির্ভরতার মাধ্যমে, এবং পারস্পরিক অবস্থানের কারণে বিদ্যমান। অর্থাৎ, কোনো কিছুর অস্তিত্ব “নিজের কারণে” নয়, বরং “অন্য কিছুর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণেই” তার অস্তিত্ব প্রতীয়মান।