সাইকোপ্যাথদের নিয়ে

একজন সাইকোপ্যাথ আপনাকে যতই ভালোবাসুক না কেন, আপনার যতই শুভাকাঙ্ক্ষী হোক না কেন, আপনার যতই যা-ই কিছু হোক না কেন, আপনার প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে তার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনা, যদি আপনি একবার বুঝতে পারেন, সে সাইকো প্রকৃতির। সে যা-ই বলুক না কেন, তার প্রত্যেকটা কথাকেই ইগনোর করতে হবে। সে যা আচরণই করুক না কেন, আপনার অবশ্যকর্তব্য হচ্ছে তাকে এড়িয়ে চলা, তার সকল বিষয়ে চুপ হয়ে যাওয়া। এখন কথা হচ্ছে, আপনি সাইকোপ্যাথ কীভাবে চিনবেন? সাইকোপ্যাথদের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, আমি কয়েকটা বলছি; ওদের খুব কমন কিছু স্বভাব আছে, মিলিয়ে নেবেন।




আমি আমার লাইফে এখন পর্যন্ত ৬ জন সাইকোপ্যাথের মুখোমুখি হয়েছি, ওদের সঙ্গে চলেছি…চলতে হয়েছে এবং নিজেকে ওদের হাত থেকে উদ্ধার করেছি। উদ্ধার করতে না পারলেও ওদের ইগনোর করতে পেরেছি। যারা সাইকোপ্যাথ, তাদের কিছু কমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যে বৈশিষ্ট্যগুলো মোটামুটি একই রকমের। তারা নিজের কোনও দোষ দেখবে না। নিজের সমস্ত দোষকে তারা অগ্রাহ্য করবে এবং আপনার দোষগুলোকে বার বার সামনে নিয়ে আসবে। তারা বার বারই আপনাকে খারাপ বলবে, বার বারই আপনার খারাপ দিকগুলো আপনার চোখের সামনে তুলে ধরবে এবং আপনি মুখে যা-ই বলুন না কেন, আপনার দোষগুলো নিয়ে বার বার কথা বলবে। এমনভাবেই বলতে থাকবে যে একটা সময় আপনার নিজেরই মনে হতে থাকবে, আপনি সত্যিই একজন খারাপ মানুষ। আপনি আসলেই কোনোকিছু করতে পারেন না, আপনি যা-ই করছেন সবই ভুল। এবং এসব ক্রমাগত বলার ক্ষেত্রে তার কোনও ক্লান্তি থাকবে না; সে একদম নিরলসভাবে, ক্লান্তিহীনভাবে এসব বলতে থাকবে।




আপনি ওদের কথা যত শুনবেন, ততই নিজেকে একটা অপদার্থ মনে হবে, খারাপ মানুষ মনে হবে। আপনি যা-ই বলুন না কেন, আপনি যে যুক্তিই দেখান না কেন---ওরা সেটার ধারেকাছেও যাবে না, নিজেকে সবসময় একটা নিরাপদ জায়গায় রেখে দিতে চেষ্টা করবে। আপনি তার দোষগুলো ধরিয়ে দিলেও সেগুলিকে অগ্রাহ্য করে আপনার খারাপ দিকগুলো বার বার সামনে নিয়ে আসবে। আপনি যে বিষয়টার জন্য সরি বলেছেন এক বার, এবং সেই বিষয়টাকে সে মেনে নিয়েছে এভাবে যে…ঠিক আছে, তুমি এবার ভুল করেছ, ভুলটা আর কখনও কোরো না…অথচ আপনার সেই ভুলটাকে সে মনে রেখে দেবে এবং প্রতিবারই যখন আপনার সঙ্গে কথা হবে বা ঝগড়া হবে, আপনার সেই ভুলটা নিয়ে বার বার কথা বলবে। এ ধরনের মানুষ কখনও ক্ষমা করতে জানে না অন্যকে। ওরা ভুলটা বার বার ধরিয়ে দেয়, ভুলটা নিয়ে বার বার কথা বলে। একই মুরগিকে বার বার জবাই করে, প্রতিমুহূর্তে জবাই করে, প্রতিদিন জবাই করে। এবং এ নিয়ে তারা কখনও ক্লান্ত অনুভব করে না।




তারা যে কথাটা বলে, সেটা বলতেই থাকে। আপনি যদি কোনও সাইকোপ্যাথের সাথে দুই ঘণ্টা কথা বলেন, তাহলে আপনি দেখবেন, ওই দুই ঘণ্টা সে মোটামুটি একই কথা বার বার বলছে। এবং ওই কথাগুলোতে প্রকাশ পাবে, আপনি একটা খারাপ লোক, সে চাইলে আপনার অনেক ক্ষতি করতে পারে, আপনাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে। আপনি এতটাই খারাপ লোক যে আপনার চেয়ে খারাপ লোক পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেনি। এবং সে অনেক অনেক ভালো! তার কোনও ভুল নেই, কেননা সে ভুল করতেই পারে না! সে ভালো, তার ফ্যামিলি ভালো, তার অনেক ক্ষমতা, সে চাইলে আপনার অনেক কিছু করতে পারে, তার ভাই অমুক, মামা অমুক, দুলাভাই অমুক! তার ফ্যামিলি এ পৃথিবীর সেরা ফ্যামিলি। এইরকম হাজারো কথাবার্তা সে বলবে আর বলতেই থাকবে।




এই যে সাইকোপ্যাথ, এই ধরনের বৈশিষ্ট্যের যে মানুষগুলো, তারা যে আমাদের জীবনে কতটা নেতিবাচক ভূমিকা রাখে, এটা তারাই বুঝতে পারবে, যারা তাদের সাথে মিশেছে বা যারা তাদের খপ্পরে পড়েছে। সাইকোরা আপনাকে অনেক ভালোবাসবে, তারা আপনার জন্য জীবন দিয়ে দেবে, আপনি যা বলবেন, তারা তা-ই করবে। তারা এমন এমন ধরনের কাজ করতে পারে, যেটা সাধারণ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব না। তারা রাতের পর রাত জেগে থেকে আপনার কাজগুলো করে দেবে, আপনি যা বলবেন, তা-ই করবে ভূতের মতো অবিশ্বাস্য রকমের পরিশ্রম করে। এবং এর সাথে আপনার সব ধরনের কনফিডেন্স নষ্ট করে দেবে। তারা আপনার জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারে; হ্যাঁ এই ধরনের মানুষেরা আপনার জন্য জীবনও দিয়ে দিতে পারে এবং হ্যাঁ, তারা আপনাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে। কিন্তু আসলে জীবনে বাচঁতে হলে তো শুধু ভালোবাসা দিয়ে হয় না, শান্তি এবং স্বস্তি খুব বেশিই দরকার। যে মানুষটার কাছ থেকে আপনি শান্তি ও স্বস্তি পাবেন না, সে মানুষটা যদি আপনাকে নিজের জীবনের বিনিময়েও ভালোবাসে, তারপরও আমি মনে করি, তার কাছ থেকে দূরে সরে আসা উচিত। এর কারণ, মানুষ ভালোবাসায় বাঁচে না, বরং শান্তিতে বাঁচে।




সাইকোপ্যাথরা কী করবে? সে তার কথাটা বার বার বলতে থাকবে। তার যে কথাটা, সেটা থেকে সে ফিরে যাবে না বা ফিরে আসবে না। সে তা বার বারই বলতেই থাকবে। ওসব কথা আপনি গ্রহণ করছেন কি করছেন না, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং সে বার বার নিজেরটাই বলতে থাকবে। সে বলবে, আপনি খারাপ, আপনার পরিবার খারাপ, আপনার বাবা খারাপ, আপনার মা খারাপ, আপনার ভাই-বোন খারাপ, আপনার পরিবারের সকল সদস্য খারাপ এবং ওসব শুনতে শুনতে একসময় আপনার নিজেকে খারাপ ভাবতে ইচ্ছে করবে। এ কারণে তাদের সাথে কথা না বলাই ভালো। তারা একই কথা বার বার বলবে… ফোনে হোক কিংবা মেসেজেই হোক। এ কাজে ওদের কোনও ক্লান্তি নেই। এক্ষেত্রে একটা সহজ বুদ্ধি হলো, আপনি তাকে মেসেজে ব্লক না করে ইগনোর-লিস্টে দিয়ে রাখুন। আর ব্লক করলে হবে কী? সে তো আপনাকে মেসেজ পাঠাতে পারবে না। তখন সে আরও খেপে যাবে, সে আরও অনেক বেশি বেপরোয়া ও ভয়ংকর হয়ে উঠবে। এইজন্যই আপনি তাকে ইগনোর-লিস্টে দিয়ে রাখুন যাতে সে তার মনের সমস্ত কথা বলতে পারে। তখন সে তার কথাগুলো বলবে আর বলতেই থাকবে। তাকে কথা বলতে না দিলে তার পরিণাম ভালো হবে না। সে যা ইচ্ছা বলুক, আপনি‌ ওসবের একটাও রিপ্লাই দেবেন না।




সাইকোপ্যাথদের একটা বৈশিষ্ট্য আছে: আপনার ক্ষতি করার আগে সে তা জানাবে; সে কখনও আপনাকে না জানিয়ে ক্ষতি করবে না। সে আপনাকে বলে বলেই আপনার ক্ষতি করবে। এমনকী সে যদি আপনাকে খুনও করে, তা-ও আপনাকে বলে বলেই খুনটা করবে। এটা ওদের একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য! এবং ওই কথাটা তারা একবার না, বার বারই বলবে। সে বলবে, সে আপনার মাকে খুন করবে, আপনার বাবাকে খুন করবে; সে আপনার ভাইয়ের মৃত্যুকামনা করে, আপনার মৃত্যুকামনা করে। এসব নিয়ে মন খারাপ করবেন না। কারণ এটাই তাদের বৈশিষ্ট্য। বৃশ্চিক কামড়ায় ক্ষতি করার জন্য নয়; বৃশ্চিক কামড়ায়, কেননা কামড়ানোই তার কাজ, অন্য কিছু সে করতেই পারে না। কামড়ানো তার স্বভাব, ক্ষতিচেষ্টা নয়।




আপনাকে একটা ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতা বলি। সাইকোপ্যাথরা একই কথা বার বার বলে তো, এখন আপনি যদি আপনার মোবাইল ফোনটা কানে ধরে রাখেন, যখন আপনাকে একটা সাইকোপ্যাথ ফোন করল, তখন আপনি দেখবেন, সে যে কথাটা এখন বলছে, এখন থেকে এক বা দুই বা তিন ঘণ্টা পরেও একই কথা সে আবার বলবে। ওদের কথাবার্তায় তেমন কোনও বৈচিত্র্য নেই, একই রেকর্ড বার বার বাজাতেই থাকে। আমার লাইফে আমি ছয়টা সাইকোপ্যাথ ডিল করেছি…ছয় জন সাইকোপ্যাথ ডিল করা অনেক বড়ো একটা অভিজ্ঞতা। এবং আমি এখনও বেঁচে আছি…হা হা হা! আমাকে আপনারা অভিনন্দন জানাতেই পারেন। একজন সাইকোপ্যাথকেই মানুষ সামলাতে পারে না, আর আমি ছয় জন সাইকোপ্যাথকে সামলেছি!




সাইকোপ্যাথরা যখন ফোন করে বা মেসেজ পাঠায়, তখন তারা একই কথাই বার বার বলে। আপনি একটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। একটা সাইকোপ্যাথ যখন আপনাকে ফোন করবে, তখন যদি আপনি ফোনটা কেটে দেন, তাহলে সে কিন্তু ভীষণ খেপে যাবে। সে প্রচণ্ড খেপে যাবে…প্রচণ্ড মানে প্রচণ্ড! সে টানা ফোন করতেই থাকবে। তাই তার ফোনটা কাটার দরকার নেই। সে আপনাকে রাত একটা-দুইটা-তিনটা’য় ফোন করতেই থাকবে আর করতেই থাকবে। ফোনটা আপনি বালিশের পাশে রেখে দিন। বালিশের পাশে আপনি যখন ওটা রেখেছেন, তার থেকে এক ঘণ্টা পর গিয়েও দেখবেন, সে ঘুরেফিরে একই কথাই বার বার বলছে। সে বলছে, আপনি খারাপ আর সে ভালো, সে আপনাকে শেষ করে ফেলবে, সে আপনাকে দেখে নেবে, অমুক অমুক বড়ো বড়ো জায়গায় তার কে কে যেন আছে, সে চাইলেই অনেক কিছু করতে পারে, আপনাকে শেষ করে দেওয়া তার কাছে নস্যি।




একই কথাই সে বার বার বলতে থাকবে…সেটা মেসেজে হোক বা আপনাকে ফোন করেই হোক, সে তা বার বার বলবেই বলবে। তাকে আপনি ফোনে ব্লক করলেও তার শিক্ষা হবে না। সে আবার আপনাকে হোয়াটসঅ্যাপে কল দেবে, মেসেঞ্জারে নক দেবে, মেসেজে নক দেবে। অসুবিধা নেই, সে বলেই যাবে যা সে বলতে চায়, সে কিছুতেই থামবে না। তাকে থামানোর চেষ্টা করেও কোনও লাভ নেই। তাই এমন লোককে ইগনোর-লিস্টে রেখে দিন।




সাইকোরা আজকে যে কথা বলছে, কালকেও একই কথা বলবে, পরশুও তা-ই। তাদের কোনও ধরনের ক্লান্তি নেই। তারা ফোনটা কাটবে না, কন্টিনিউয়াসলি বলেই যাবে। এবং তাদের কথায় তেমন কোনও বৈচিত্র্য আপনি পাবেন না। দেখবেন, তারা রাতে ঘুমাবে না, আপনাকে বিরক্ত করেই যাবে, করেই যাবে! এমনকী আপনি যদি ফোন না ধরেন, তাহলে আপনার ও তার পরিচিত যে মানুষটা, তাকে ফোন করবে। তাকে ফোন করে আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু বলবে। আপনার সম্পর্কে এটা বলবে সেটা বলবে, অনেক আজেবাজে কথা বলবে, অভিযোগের বন্যা বইয়ে দেবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এই কাজটা তারা করেই থাকে। তারা আপনাকে কন্টিনিউয়াসলি হুমকি দিতেই থাকবে। তারা আপনার এই ক্ষতি করবে ওই ক্ষতি করবে, আপনাকে শেষ করে দেবে। আপনার অফিসে গিয়ে আপনার আপনার বসকে সব বলে দেবে, আপনার জীবন শেষ করে দেবে, আপনার পুরো ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেবে। এরকম অনেক অনেক কথা বলবে।




সাইকোপ্যাথরা সাধারণত কখনও থেমে যায় না। ওদের ধৈর্য বিস্ময়কর। সে আপনার জন্য কী কী করেছে, আপনার কী কী উপকার করেছে---ওসব করুক বা না করুক, ওসব নিয়ে সে বলতেই থাকবে। এবং সে বলতেই থাকবে, আপনি অমুকের সঙ্গে চলেন তমুকের সঙ্গে চলেন; তারা এই খারাপ সেই খারাপ, তাদের থেকে সে অনেক অনেক ভালো। তারা আপনার জন্য কোনও কিছুই করেনি, সে আপনার জন্য অনেক কিছু করেছে। এবং আপনি তার সম্পর্কে যা যা ভাবছেন, তার প্রত্যেকটাই ভুল। সে সবচাইতে ভালো মানুষ, তার কোনও ভুলই নেই, এই ধরনের কথা সে বলতে থাকবে। সে কখনোই নিজের দোষত্রুটি দেখতে পায় না। সে যা-ই ভুল করুক না কেন, যা-ই দোষ করুক না কেন, সেগুলোকে ইগনোর করবে। এবং সে বলতেই থাকবে, সে নিজে একজন ভালো মানুষ।




আপনি যে ভুলটা একবার করেছেন, তার জন্য যদি আপনি সরিও বলে থাকেন, তবুও আপনি তার হাত থেকে মুক্তি পাবেন না। সে বারে বারে আপনাকে ভুলগুলো দেখিয়ে দেবে, আপনার চোখের সামনে ভুলগুলো নিয়ে আসবে। সে বার বার আপনাকে ছোটো করবে। আপনার সম্পর্কে খুব নেগেটিভ কথা বলবে এবং আরও বলবে, আপনি খুবই খারাপ মানুষ। আপনি তার সাথে অমুক অন্যায় করেছেন, তমুক পাপ করেছেন। এসব কথা আপনাকে বিশ্বাস করানোর আপ্রাণ চেষ্টা করবে। এরপর সে এমনও করতে পারে, আপনি যে অফিসে চাকরি করেন, সেই অফিসে এসে সে হাজির হবে। হাজির হয়ে বলবে, আপনি খারাপ, এখনই তাকে সময় দিতে হবে, তার কথামতো চলতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনার কলিগদের বলবে, আপনার পরিচিত মানুষদের বলবে, আপনি খুবই খারাপ ধরনের মানুষ, সে আপনার জন্য অনেক কিছু করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সে কখনোই আপনার সম্পর্কে ভালো কিছু বলবে না। সে বিশ্বাস করবে যে আপনি কিছু ভুল মানুষের সঙ্গে চলছেন। এক সে বাদে আপনি যার সঙ্গেই চলুন না কেন, প্রত্যেকেই ভুল মানুষ, সে-ই শুধু আপনার জন্য সঠিক মানুষ।




তবে সাইকোপ্যাথরা খুব মেধাবি হয় অনেকসময়। এবং তারা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি কাজ খুব অল্প সময়ে করতে পারে। আপনি যদি তাকে বলেন, আমার জন্য জীবন দিয়ে দাও, সে তা-ও করতে পারবে! এমন কোনও কাজ নেই, যা সে আপনার জন্য করতে পারবে না। তা সত্ত্বেও আমি মনে করি, সাইকোপ্যাথদের কাছ থেকে আপনাকে মুক্ত হতে হবে, মুক্তি পেতে হবে। একজন সাইকোপ্যাথ আপনাকে যতই ভালোবাসুক না কেন, আপনাকে যতই সময় দিক না কেন, তার কাছ থেকে মুক্ত হলেই আপনি ভালো থাকবেন, কেননা সাইকোপ্যাথরা আলটিমেটলি আপনার মানসিক শান্তি নষ্ট করবে, আপনাকে মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ করে দেবে, আপনার মনটাকে পঙ্গু করে দেবে। তাদের কাছ থেকে সবসময়ই দূরে থাকুন। এবং একজন সাইকোপ্যাথ আপনাকে যা-ই বলুক না কেন, কখনোই রিপ্লাই করবেন না। আপনি যত রিপ্লাই করবেন, ওতে তারা ততই একধরনের বিজয় অনুভব করবে। সে ভাববে, সে জয়ী হয়ে গেছে, সে তার জায়গায় থেকে জয়লাভ করেছে। তাই তাকে রিপ্লাই দেওয়াটা আপনার কিছুতেই উচিত হবে না। সে যা-ই বলুক না কেন, তাকে রিপ্লাই না করে ইগনোর করুন। সে আপনাকে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মেসেজ পাঠাবে, কোটি কোটি কল করবে! আপনি তাকে ইগনোর করুন, চুপ থাকুন; দেখবেন, সাইকোপ্যাথ ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে গেছে।




সে আপনার সম্পর্কে বাইরে যা-ই কিছু বলুক না কেন, আপনি তার সম্পর্কে কিছুই বলবেন না। তার সম্পর্কে বলার মানেই তাকে জিতিয়ে দেওয়া, তার মনোবল বাড়িয়ে দেওয়া। মনে রাখবেন, সাইকোপ্যাথ সামলানোর সবচাইতে ভালো উপায় হচ্ছে তাদের ইগনোর করা। আপনি যতই রিপ্লাই করুন, যতই তাকে বিশ্রী বিশ্রী গালিগালি করুন, এমনকী আপনি যদি চরম ধরনের খারাপ কথাও বলেন, নেগেটিভ কথা বলেন তাকে নিয়ে, তাকে থামিয়ে দেবার চেষ্টা করেন, তা-ও সে কখনও থামবে না। এক দিন কি দুই দিন, সে আবার আগের রূপে ফিরে যাবে। মনে রাখবেন, সাইকোপ্যাথরা কোনও ব্যাকরণ মেনে চলে না, সাইকোপ্যাথদের কোনও ব্যাকরণ নেই। অন্যান্য মানুষ যে-রকম আচরণ করে, সাইকোপ্যাথরা একইরকম আচরণ করে না। এবং সাইকোপ্যাথদের সামলানোর জন্য যতগুলো পদ্ধতি আপনি গুগলে সার্চ করে পড়বেন, তার প্রত্যেকটাই ব্যর্থ হবে। সাইকোপ্যাথদের একটাই ব্যাকরণ: ওদের কোনও ব্যাকরণ নেই। তাকে ইগনোর করুন, তাকে লাইফ থেকে ডিলিট করুন। সে যদি আপনার চরম ক্ষতি করার চেষ্টাও করে, তারপরও আপনি সেই হুমকিগুলি শুনবেন আর চুপচাপ থাকবেন। কিছুই করার নেই। নিজের জেদ রক্ষার জন্য সে তার বন্ধু কিংবা প্রিয় মানুষটাকে খুনও করতে পারে। প্রিয় মানুষটা ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, অসুস্থ, অবসাদগ্রস্ত কিংবা যা-ই হোক, ওতে তার কিছুই এসে যায় না, সে খারাপ আচরণ করতেই থাকবে। সে শুধুই জিততে চায়। তাকে জিতিয়ে দিলেও সে কিন্তু থেমে যায় না। অন্য কোনও ইস্যু তুলে সে আবারও মানসিক নির্যাতন করা শুরু করে দেয়।




সাইকোপ্যাথরা সাধারণ মানুষ না। তারা চরম মাত্রায় অস্বাভাবিক মানুষ। তাদের হাত থেকে নিজের লাইফটাকে বাঁচান। দেরি হয়ে যাবার আগেই তাদের কাছ থেকে দূরে সরে আসুন। তারা যদি আপনাকে সবচাইতে কাছের মানুষটাও মনে করেন, সবচাইতে বেশি ভালোবাসে, তারপরও তাদের কাছ থেকে দূরে সরে আসুন। লাইফটা তো অনেক ছোটো; ভালো থাকতে হবে, হাসি-আনন্দ নিয়ে থাকতে হবে। এইরকম সাইকোপ্যাথের পেছনে লাইফটাকে ধ্বংস করে দেবার কোনও মানে হয় না। ওদের ভালোবাসা খুবই বিষাক্ত ধরনের ভালোবাসা। এরকম টক্সিক লোকের কথায় ভুলেও কখনও কনভিন্সড হবেন না। একবার কনভিন্সড হয়েছেন তো আপনার লাইফই শেষ! তাদের কাছ থেকে দূরে সরে আসুন। সাইকোপ্যাথ যদি আপনার সাথে এক সপ্তাহ, এক মাস ভালো আচরণও করে, তারপরও তাকে বিশ্বাস করবেন না। এর কারণ, সে আগের জায়গায় ঠিকই ফিরে যাবে, সে আগের আচরণগুলোই করবে এবং সে কখনোই কারও বন্ধু হবে না। একজন সাইকোপ্যাথ কখনোই সুস্থ মানুষের বন্ধু হতে পারে না। একজন সাইকোপ্যাথ আপনাকে সর্বোচ্চ পরিমাণে ভালোবাসলেও তাকে জীবনে জায়গা দেবার কিছুই নেই। আপনার সমস্ত সুখ-স্বস্তি-শান্তি নষ্ট করে আপনাকে তিলে তিলে শেষ করে দেবার জন্য সে একাই যথেষ্ট। তার কাছ থেকে আপনার যা-ই প্রাপ্তি থাকুক না কেন, যা-ই পাবার আশা থাকুক না কেন, সব কিছুকেই ইগনোর করুন। আপনি যদি এটা করতে পারেন, তাহলে আপনি লাইফে ভালো থাকবেন। আমি এটাই মনে করি।