৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল : সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি + গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা (প্রথম আলো)

‘ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স’ দিয়ে, অর্থাৎ সিভিল সার্ভিসে জয়েন করার প্রচণ্ড ইচ্ছে আর আবেগের সাথে একটু বুদ্ধিশুদ্ধি যোগ করে সামনের কয়টা দিনকে খুবই ভালভাবে কাজে লাগান। পাবলিক লাইব্রেরির সামনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকলেন, খুশি হয়ে গেলেন অনেককিছু পড়ে ফেললেন ভেবে, কিন্তু যা যা দরকার তা তা পড়লেন না, এর চাইতে বাসায় ১২ ঘণ্টা ঠিকভাবে পড়ে বাকি সময়টা বিশ্রাম নেয়াও অনেক ভালো। আমি মনে করি, সাকসেস ইজ অ্যা সেলফিশ গেম! ‘টুগেদার উই বিল্ড আওয়ার ড্রিমস’ এটা জীবনের সব ক্ষেত্রে খাটে না।

সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে :

মাথায় রাখুন, আপনার বিজ্ঞানের বেসিক আপনাকে তেমন কোনও বাড়তি সুবিধা দেবে না।

যত বেশি সংখ্যক প্রশ্ন পড়বেন, ততই লাভ।

অন্তত ৩টা গাইড বইয়ের/ ডাইজেস্টের সব প্রশ্ন পড়ে ফেলুন।

এ সময়ে রেফারেন্স বই না পড়লেই বরং ভাল।

বুঝে পড়ার কিছু নেই, বারবার পড়ুন। একটা বিষয় একবার বেশি রিভিশন দেয়া মানেই অন্তত ৫ মার্কস বাড়ানো।

পেপারের কম্পিউটার ও প্রযুক্তি অংশটাতে নিয়মিত চোখ রাখুন।

ম্যাথস্ নিয়ে :

প্র্যাকটিস করার সময় কোন বাড়তি কাগজে নয়, গাইডে প্রশ্নের পাশের ছোট জায়গাটিতে সলভ করুন।

কিছু প্রশ্ন, অংকটি করে নয়, বরং যে ৪টা অপশন দেয়া থাকে, সেগুলি থেকে ২টি বাদ দিয়ে বাকি ২টা থেকে ভাবলে অনেক কম সময়ে সলভ করতে পারবেন।

শর্টকাট ফর্মুলা মনে রাখতে বেশি বেশি সমজাতীয় ম্যাথস প্র্যাকটিস করুন।

ম্যাথস প্র্যাকটিস করবেন একটানা। ‘কাগজকলমে নয়, মাথায়’—এই নীতিটি যত বেশি মানবেন, ততই লাভ!

আপনি প্রিলিতে কোন অংশে কত সময় দেবেন, এটা আগে থেকে ঠিক করে নেবেন। মডেল টেস্ট দেয়ার সময় হাতের ঘড়ি দেখে মিলিয়ে নিন, আপনি কত সময়ের মধ্যে সব ম্যাথস সলভ করতে পারেন। সময়টি ধীরে-ধীরে কমান।

কোন টেক্সট বই নয়, বরং অন্তত ২টা ভাল গাইড বইয়ের সব ম্যাথস শর্টকাটে সলভ করে ফেলুন।

মানসিক দক্ষতা নিয়ে :

দুএকটি কনফিউজিং প্রশ্নের উত্তর ছেড়ে দিয়ে আসবেন।

প্রস্তুতি নয়, মাথা ঠাণ্ডা রাখা আর দ্রুত চিন্তা করার ক্ষমতার উপর এ অংশের মার্কস নির্ভরশীল।

৪ সেট গাইড বই আর সম্ভব হলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং এমবিএ ভর্তি পরীক্ষার অ্যানালাইটিক্যাল পার্টের প্রশ্নগুলি সলভ করে ফেলুন।

প্রতিদিনই মডেল টেস্ট দেবেন—-গাইড থেকে আর সময় পেলে, ইন্টারনেটে বিভিন্ন ইন্ডিয়ান সাইট থেকে।

প্রশ্ন সহজ হবে, আর আপনি বোকামি করে ভুল করবেন, এটি আগেই মেনে নিন।

প্রিলির জন্য পড়বেন আর ভুলবেন, এরপর আবারও পড়বেন আর বারবার পড়েই যাবেন; এতে প্রশ্নোত্তরগুলির একটা ছবি মাথায় ‘সেট হয়ে যাবে’। সবকিছু পড়ার সহজাত লোভ সামলান। ধরুন, আপনি আম খাবেন। আম খাওয়ার আগে আমের বৈজ্ঞানিক নাম জেনেও আপনি আম খেতে পারেন। কোনো সমস্যা নাই। তবে আমি মনে করি, আগে আমটা খেয়ে নিয়ে পরে আমের বৈজ্ঞানিক নাম জানার ইচ্ছেটা পূরণ করা ভালো। যদি আমের চৌদ্দগুষ্ঠির খবর নিতে গিয়ে আম খাওয়াটাই না হয়, তাহলে তো আর হল না। যা যা পড়া দরকার, সেগুলিতে একবার চোখ বুলিয়ে যাওয়াটাই কঠিন হয়ে পড়ে, আজাইরা ফালতু জিনিসপত্র পড়ার টাইম কোথায়? একটু বুদ্ধি করে পড়াশোনা করুন। যেমন, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও রাজধানীর নাম কিংবা পুরো সংবিধান মুখস্থ করে ফেললে হয়তো ২-৩ মার্কস পাবেন, কিন্তু ওই একই এফর্ট অন্যকিছুতে দিলে আপনি অন্তত ২০ মার্কস বাড়াতে পারবেন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলিতে আত্মতুষ্টির চাইতে মার্কসপ্রাপ্তি বেশি জরুরি। এই মুহূর্তে রিটেনের জন্য পড়াটা একেবারেই কমিয়ে দিন। চাইলে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকীয়কে বাংলা থেকে ইংরেজিতে আর ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করার কাজটি শুধু করে যেতে পারেন।

লেখাটি গত ২৭/১১/২০১৫ তারিখ শুক্রবার প্রথম আলো’র চাকরিবাকরি পাতায় ছাপা হয়েছিল। লিংকটা নিচে দিলাম :

http://www.prothom-alo.com/life-style/article/695761/%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%AA%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%AD-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A8