সাইকোপ্যাথের রোজনামচা

একজন সাইকোপ্যাথ আপনাকে যতই ভালোবাসুক না কেন, আপনার যতই শুভাকাঙ্ক্ষী হোক না কেন, আপনার যতই যা-ই কিছু হোক না কেন, আপনার প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে ওর কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনা—যদি আপনি কখনো কোনোভাবে বুঝতে পারেন যে, মানুষটা সাইকো প্রকৃতির। ও যা-ই বলুক না কেন, যেভাবেই বলুক না কেন, ওর প্রত্যেকটা কথাকেই ইগনোর করতে হবে। ও যেমন আচরণই করুক না কেন, আপনার অবশ্যকর্তব্য হচ্ছে ওকে এড়িয়ে চলা, ওর সকল বিষয়ে পুরোপুরি চুপ হয়ে যাওয়া—আরও ভালো হয়, যদি কৌশলে ওকে অন্য কারও (বা একাধিক জনের) সাথে ট্যাগ বা বিজি করে দিতে পারেন। ওর কাছ থেকে পালাতে হবে, যে করেই হোক। সাইকোপ্যাথরা রিপ্লাই পেলেই প্রশ্রয় পায়, না পেলে ধীরে ধীরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এখন কথা হচ্ছে, আপনি সাইকোপ্যাথ চিনবেন কীভাবে? আমি আমার লাইফে এখন পর্যন্ত ছয় জন সাইকোপ্যাথের মুখোমুখি হয়েছি, ওদের সাথে চলেছি কিংবা বলতে পারেন…চলতে হয়েছে এবং নিজেকে ওদের হাত থেকে উদ্ধার করেছি। উদ্ধার করতে না পারলেও ওদের ইগনোর করতে পেরেছি, এখনও খুব ভালোভাবেই পারছি। যারা সাইকোপ্যাথ, ওদের কিছু বৈশিষ্ট্য মোটামুটি একই রকমের। এ লেখায় বিস্তারিত বলার চেষ্টা করছি।


ওরা নিজের কোনো দোষ দেখবে না, বরং সমস্ত দোষকেই অগ্রাহ্য করবে, তবে আপনার দোষগুলোকে বার বার সামনে নিয়ে আসবে। ওদের ধারণা, ওরা এ পৃথিবীর সবচাইতে শুদ্ধ মানুষ। ওরা বার বারই আপনাকে খারাপ বলবে, বার বারই (ওদের চোখে) আপনার খারাপ দিকগুলো আপনারই চোখের সামনে তুলে ধরবে এবং আপনি মুখে যা-ই বলুন না কেন, আপনার দোষগুলো নিয়েই বার বার কথা বলবে। ওরা নিজের কথাই বলতে থাকে, আপনি কী বলছেন, তা শোনার বা তা নিয়ে ভাবার কোনো চেষ্টাই ওরা করে না। এমন কায়দায় অবিরত বানোয়াট কথাবার্তা বলতে থাকবে যে, একটা সময়ে আপনার নিজেরই মনে হবে, আপনি সত্যিই একজন খারাপ মানুষ; আপনি আসলেই ঠিকভাবে কোনো কিছু করতে পারেন না এবং আপনি যা-ই করছেন সব ভুল। এসব কথা ক্রমাগত বলার ক্ষেত্রে ওর কোনো ক্লান্তি থাকবে না; ও একদম নিরলসভাবে, ক্লান্তিহীনভাবে এসব বলতে থাকবে। নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক এবং আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বার বার বলবে।


আপনি ওদের কথা যত শুনবেন, ততই নিজেকে একটা অপদার্থ মনে হবে, খারাপ লোক মনে হবে। আপনি যা-ই বলুন না কেন, আপনি যে-যুক্তিই দেখান না কেন—ওরা সেটার ধারেকাছেও যাবে না, নিজেকে সবসময় একটা নিরাপদ জায়গায় রেখে দেবার চেষ্টা করবে। আপনি ওর দোষগুলো ধরিয়ে দিলেও সেগুলিকে অগ্রাহ্য করে আপনার খারাপ দিকগুলো বার বার সামনে নিয়ে আসবে; দোষ ধরিয়ে দিলে বরং উলটো খেপে যাবে। ও আপনাকে খারাপ বলবে, কিন্তু আপনি ওকে খারাপ বলতেই পারবেন না। আপনি যে-বিষয়টার জন্য সরি বলেছেন এক বার এবং সেই বিষয়টাকে ও মেনেও নিয়েছে এভাবে যে…ঠিক আছে, তুমি এবার ভুল করেছ, ভুলটা আর কখনও কোরো না…অথচ আপনার সেই ভুলটাকে ও মনে রেখে দেবে এবং প্রতিবারই যখন আপনার সঙ্গে কথা হবে বা ঝগড়া হবে, আপনার সেই ভুলটা নিয়েই বার বার কথা বলবে। এ ধরনের মানুষ কখনও কিছু ভোলে না এবং অন্যকে ক্ষমা করতে জানে না। ওরা ভুলটা বার বার ধরিয়ে দেয়, ভুলটা নিয়েই বার বার কথা বলে। একই মুরগিকে বার বার জবাই করে, প্রতিমুহূর্তে জবাই করে, পারলে প্রতিদিনই জবাই করে। এ নিয়ে কিন্তু ওরা কখনও ক্লান্তি অনুভব করে না।


ওরা যে-কথাটা বলে, সেটা বলতেই থাকে; ওদের কথাবার্তায় বৈচিত্র্য কম। আপনি যদি কোনো সাইকোপ্যাথের সাথে দুই ঘণ্টা কথা বলেন, তাহলে দেখবেন, ওই দুই ঘণ্টা ও মোটামুটি একই কথা বার বার বলছে। এবং ওই কথাগুলোতে প্রকাশ পাবে, আপনি একটা খারাপ লোক, ও চাইলে আপনার অনেক ক্ষতি করতে পারে, আপনাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে। আপনি এতটাই খারাপ লোক যে, আপনার চেয়ে খারাপ লোক পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেনি; আর ও অনেক অনেক ভালো! ওর কোনো ভুল নেই, কেননা ও ভুল করতেই পারে না! ও ভালো, ওর ফ্যামিলি ভালো, ওর অনেক ক্ষমতা, ও চাইলে আপনার অনেক ক্ষতি করতে পারে; ওর ভাই অমুক, মামা অমুক, দুলাভাই অমুক! ওর ফ্যামিলি এ পৃথিবীর সেরা ফ্যামিলি। এরকম হাজারো কথাবার্তা বলবে আর নিরলসভাবে বলতেই থাকবে।


এই যে সাইকোপ্যাথরা, এ ধরনের বৈশিষ্ট্যের যে-মানুষগুলো, ওরা যে আমাদের জীবনে কতটা নেতিবাচক ভূমিকা রাখে, এটা তারাই বুঝতে পারবে, যারা ওদের সাথে মিশেছে বা যারা ওদের খপ্পরে পড়েছে। ‘খপ্পরে’ বললাম এজন্য যে, বাইরে থেকে বা উপর থেকে ওদের দেখলে কিছুই বোঝা যায় না। সাইকোরা আপনাকে অনেক ভালোবাসবে, ওরা আপনার জন্য জীবন দিয়ে দেবে, আপনি যা বলবেন, ওরা তা-ই করবে। ওরা এমন এমন ধরনের কাজ করতে পারে, যেটা সাধারণ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। ওরা রাতের পর রাত জেগে থেকে আপনার কাজগুলো করে দেবে, আপনি যা বলবেন, তা-ই করবে ভূতের মতো অবিশ্বাস্য রকমের পরিশ্রম করে। এমন আন্তরিকতা দেখে আপনি ওদের প্রেমে পড়ে যাবেন। তবে এর সাথে ওরা আপনার সব ধরনের কনফিডেন্স নষ্ট করে দেবে। ওরা আপনার জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারে; হ্যাঁ, এই ধরনের মানুষেরা আপনার জন্য জীবনও দিয়ে দিতে পারে, কেননা ওরা আপনাকে সত্যি সত্যিই পাগলের মতো ভালোবাসে। কিন্তু জীবনে বাচঁতে হলে তো শুধু ভালোবাসা দিয়ে হয় না, শান্তি এবং স্বস্তি খুব বেশিই দরকার। যে-মানুষটার কাছ থেকে আপনি শান্তি ও স্বস্তি পাবেন না, সেই মানুষটা যদি আপনাকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে, তারপরও, আমি মনে করি, ওর কাছ থেকে দূরে সরে আসা উচিত। এর কারণ, মানুষ ভালোবাসায় বাঁচে না, বরং শান্তিতে বাঁচে।


সাইকোপ্যাথরা কী করে? একই কথাই বার বার বলতে থাকবে। ওর যা যা কথা, সেগুলি থেকে ও ফিরে যাবে না বা ফিরে আসবে না। ওসব কথা আপনি গ্রহণ করছেন কি করছেন না, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং বার বার বলাটাই গুরুত্বপূর্ণ। ও বলবে, আপনি খারাপ, আপনার পরিবার খারাপ, আপনার বাবা খারাপ, আপনার মা খারাপ, আপনার ভাই-বোন খারাপ, আপনার পরিবারের সকল সদস্য খারাপ; আপনারা সবাই যেন ধ্বংস হয়ে যান—পারলে ও সবাইকে খুন করত এবং ওসব শুনতে শুনতে একসময় আপনারই নিজেকে খারাপ ভাবতে ইচ্ছে করবে। এ কারণে ওদের সাথে কথা না বলাই ভালো। ওরা একই কথা বার বার বলবে… ফোনে হোক কিংবা মেসেজেই হোক। এ কাজে ওদের কোনো ক্লান্তি নেই।


এক্ষেত্রে একটা সহজ বুদ্ধি হলো, আপনি ওকে মেসেজে ব্লক না করে ইগনোর-লিস্টে ফেলে রাখুন। আর ব্লক করলে হবে কী? ও তো তখন আপনাকে মেসেজ পাঠাতে পারবে না। তখন ও আরও খেপে যাবে, আরও অনেক বেশি বেপরোয়া ও ভয়ংকর হয়ে উঠবে। এজন্যই আপনি ওকে ইগনোর-লিস্টে দিয়ে রাখুন যাতে মনের সমস্ত কথা ও বলতে পারে। ওকে কথা বলতে না দিলে তার পরিণাম ভালো হবে না। ও যা ইচ্ছা বলুক, আপনি‌ ওসবের একটাও রিপ্লাই দেবেন না। অনেক সাইকোপ্যাথ ভয়াবহ রকমের ধার্মিক হয়; আপনি পছন্দ করুন না করুন, আপনাকে ধর্মীয় অসংখ্য টপিকে হাজার হাজার টেক্সট পাঠাবে—প্রতিদিনই পাঠাবে (যদি আপনার সাথে কথা বলার অন্য রাস্তা না থাকে আর কি)! ধার্মিক (উগ্র বা মারমুখী নয় কিন্তু) সাইকোপ্যাথরা খুবই বিরক্তিকর, ক্ষেত্রবিশেষে ভয়ংকরও! বিভ্রান্ত ধার্মিক সাইকোপ্যাথ ধর্মের নামে নিজের মাকেও খুন করতে পারে।


সাইকোপ্যাথদের আর-একটা বৈশিষ্ট্য আছে: আপনার ক্ষতি করার আগেই তা জানাবে; ওরা সাধারণত কখনও না জানিয়ে কারও ক্ষতি করে না। হ্যাঁ, ও আপনাকে বলে বলেই আপনার ক্ষতি করবে। এমনকী ও যদি আপনাকে খুনও করে, তা-ও আপনাকে বলে বলেই খুনটা করবে। এটা ওদের একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য! এবং ওই কথাটা ওরা এক বার না, বার বারই বলবে। ও বলবে, ও আপনার মাকে খুন করবে, আপনার বাবাকে খুন করবে; ও আপনার ভাইয়ের মৃত্যুকামনা করে, আপনার মৃত্যুকামনা করে। এসব নিয়ে মন খারাপ করবেন না। কারণ এটাই ওদের বৈশিষ্ট্য। বৃশ্চিক কামড়ায় ক্ষতি করার জন্য নয়; বৃশ্চিক কামড়ায়, কেননা কামড়ানোই ওর কাজ, অন্য কিছু ও করতেই পারে না। কামড়ানো ওর স্বভাব, ক্ষতিচেষ্টা নয়।


আপনাকে একটা ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতা বলি। ধরুন, আপনাকে একটা সাইকোপ্যাথ ফোন করল। আপনি যদি আপনার মোবাইল ফোনটা কানে ধরে রাখেন, তখন দেখবেন, ও যে কথাটা এখন বলছে, এখন থেকে এক বা দুই বা তিন ঘণ্টা পরও একই কথা আবার বলবে। ওদের কথাবার্তায় তেমন কোনো বৈচিত্র্য নেই, একই রেকর্ড বার বার বাজাতেই থাকে। ছয়টা সাইকোপ্যাথ ডিল করার পরও আমি এখনও বেঁচে আছি…হা হা হা! আমাকে আপনারা অভিনন্দন জানাতেই পারেন; কেননা এক জন সাইকোপ্যাথকেই মানুষ সামলাতে পারে না, আর আমি ছয় জনকে সামলেছি!


সাইকোপ্যাথরা যখন ফোন করে বা মেসেজ পাঠায়, তখন ওরা একই কথাই বার বার বলে। আপনি একটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। কোনো সাইকোপ্যাথ যখন আপনাকে ফোন করবে, তখন যদি আপনি ফোনটা কেটে দেন, তাহলে কিন্তু ও প্রচণ্ড খেপে যাবে…প্রচণ্ড মানে প্রচণ্ড! তখন টানা ফোন করতেই থাকবে, তাই ওর ফোনটা কাটার দরকার নেই। ধরুন, ও ভাবল, আপনাকে রাতে ঘুমোতে দেবে না; এরপর রাত একটা-দুইটা-তিনটা’য় ফোন করতে থাকল আর করতেই থাকল। ফোনটা আপনি বালিশের পাশে রেখে দিন। বালিশের পাশে আপনি যখন ওটা রেখেছেন, তা থেকে এক ঘণ্টা পর গিয়েও দেখবেন, ঘুরেফিরে সেই একই কথাই ও বার বার বলছে—যেমন আপনি খারাপ আর ও ভালো, ও আপনাকে শেষ করে ফেলবে, ও আপনাকে দেখে নেবে, অমুক অমুক বড়ো বড়ো জায়গায় ওর কে কে যেন আছে, ও চাইলেই অনেক কিছু করতে পারে, আপনাকে শেষ করে দেওয়া ওর কাছে নস্যি ডট ডট ডট।


মোটামুটি একই সুরেই ও বলতে থাকবে (কখনো সুর বদলালে ভুল করেও গলে যাবেন না যেন! আগের রূপে ফিরে আসতে ওর বেশি সময় লাগবে না।)…মেসেজে হোক বা আপনাকে ফোন করেই হোক, ওর কথা ও বলবেই! ওকে আপনি ফোনে ব্লক করলেও কোনো লাভ নেই। ও আবার আপনাকে হোয়াটসঅ্যাপে কল দেবে, মেসেঞ্জারে নক দেবে, মেসেজে নক দেবে। ওর কোনো লজ্জা নেই, আত্মসম্মানবোধ নেই। অসুবিধে নেই, ও বলেই যাবে যা ও বলতে চায়, কিছুতেই ও থামবে না। ওকে থামানোর চেষ্টা করেও কোনো কাজ হবে না। তাই এমন লোককে ইগনোর-লিস্টে রেখে দিন।


সাইকোরা যে-কথা আজ বলছে, কালও একই কথা বলবে, পরশুও তা-ই। ওদের কোনো ধরনের ক্লান্তি নেই। ওরা ফোনটা কাটবে না, মেসেজ পাঠানো বন্ধ করবে না (বড়োজোর মাঝে মাঝে ব্রেক দেবে)...কন্টিনিউয়াসলি বলেই যাবে। দেখবেন, ওরা রাতে ঘুমোবে না, আপনাকে বিরক্ত করে যাবে আর করেই যাবে! এমনকী আপনি যদি ফোন না ধরেন, তাহলে আপনার এবং ওর পরিচিত যে-মানুষটা, তাকে ফোন করবে। তাকে ফোন করে আপনার সম্পর্কে এটা বলবে সেটা বলবে, অনেক আজেবাজে তথ্য দেবে, অভিযোগের বন্যা (কখনোবা, সমুদ্রও) বইয়ে দেবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন কাজ ওরা করেই থাকে। ওরা আপনাকে টানা হুমকি দিতেই থাকবে। ও আপনার এই ক্ষতি করবে ওই ক্ষতি করবে, আপনাকে শেষ করে দেবে। আপনার অফিসে গিয়ে আপনার আপনার বসকে সব বলে দেবে, আপনার জীবন শেষ করে দেবে, আপনার পুরো ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেবে। এরকম অনেক অনেক কথা বলবে। সাইকোপ্যাথদের ধৈর্য এপিক লেভেলের।


ওরা সাধারণত কখনও থেমে যায় না। ওদের একাগ্রতা সত্যিই বিস্ময়কর। ও আপনার জন্য কী কী করেছে, আপনার কী কী উপকার করেছে—ওসব করুক না করুক, ওসব নিয়ে বলতেই থাকবে। এবং আরও বলবে, আপনি অমুকের সঙ্গে চলেন তমুকের সঙ্গে চলেন; ওরা এমন খারাপ তেমন খারাপ, ওদের চেয়ে ও অনেক অনেক ভালো। ওরা আপনার জন্য কোনো কিছুই করেনি, ও আপনার জন্য অনেক কিছু করেছে। এবং আপনি ওর সম্পর্কে যা যা ভাবছেন, তার সবই ভুল। ও সবচাইতে ভালো মানুষ, ওর কোনো ভুলই নেই—এই ধরনের কথাও বলতে থাকবে। ও কখনোই নিজের দোষত্রুটি দেখতে পায় না। ও যা-ই ভুল করুক না কেন, যা-ই দোষ করুক না কেন, সেগুলোকে ইগনোর করবে। এবং ক্রমাগত বলতেই থাকবে, ও নিজে একজন নিখুঁত মানুষ।


সাইকোপ্যাথ বারে বারে আপনাকে আপনার অতীতের ভুলগুলো দেখিয়ে দেবে, আপনার চোখের সামনে সেগুলো নিয়ে আসবে এবং আপনাকে (অন্যদের সামনেও) ছোটো করবে। আপনার সম্পর্কে খুবই নেগেটিভ টাইপের কথাবার্তা বলবে এবং বোঝাতে চাইবে, আপনি খুবই খারাপ মানুষ। আপনি ওর সাথে অমুক অমুক অন্যায় করেছেন, জীবনে তমুক তমুক পাপ করেছেন। এসব কথা আপনাকে বিশ্বাস করানোর জন্য আপ্রাণ লড়াই করবে। এমনও করতে পারে, আপনি যে-অফিসে চাকরি করেন, সেই অফিসে এসে হাজির হবে। হাজির হয়ে সবাইকে বলবে, আপনি খারাপ; আপনাকে বলবে, এখনই ওকে সময় দিতে হবে, ওর কথামতো চলতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনার কলিগদের বলবে, আপনার পরিচিত মানুষদের বলবে—আপনি খুবই খারাপ ধরনের মানুষ, আপনি ওকে ঠকিয়েছেন, ও আপনার জন্য অনেক কিছু করেছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। ও কখনোই আপনার সম্পর্কে ভালো কিছু বলবে না। ও বিশ্বাস করে যে, আপনি কিছু ভুল মানুষের সঙ্গে চলছেন। এক ও বাদে আপনি যার সঙ্গেই চলুন না কেন, প্রত্যেকেই ভুল মানুষ, শুধু ও-ই আপনার জন্য সঠিক মানুষ।


তবে সাইকোপ্যাথরা খুব মেধাবী হয় অনেকসময়; এবং ওরা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি কাজ খুব অল্প সময়ে করতে পারে। আপনি যদি ওকে বলেন, আমার জন্য জীবন দিয়ে দাও, ও তা-ও করতে পারবে! এমন কোনো কাজ নেই, যা ও আপনার জন্য করতে পারবে না। তা সত্ত্বেও, আমি মনে করি, সাইকোপ্যাথদের কাছ থেকে আপনাকে মুক্ত হতে হবে, মুক্তি পেতে হবে। একজন সাইকোপ্যাথ আপনাকে যতই ভালোবাসুক না কেন, আপনাকে যতই সময় দিক না কেন, ওর কাছ থেকে মুক্ত হলেই আপনি ভালো থাকবেন, কেননা সাইকোপ্যাথরা আলটিমেটলি আপনার মানসিক সুখ-শান্তি নষ্ট করবে, আপনাকে মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ করে দেবে, আপনার মনটাকে পঙ্গু করে দেবে। ওদের কাছ থেকে সবসময়ই দূরে থাকুন। একজন সাইকোপ্যাথ আপনাকে যা-ই বলুক না কেন, কখনোই রিপ্লাই করবেন না। আপনি যত রিপ্লাই করবেন, ওতে ওরা ততই একধরনের বিজয় অনুভব করবে। ও ভাববে, ও জয়ী হয়ে গেছে, ও ওর জায়গায় থেকে জয়লাভ করেছে। তাই ওকে রিপ্লাই দেওয়াটা আপনার কিছুতেই উচিত হবে না। ওকে রিপ্লাই না দিয়ে বরং ইগনোর করুন। ও আপনাকে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মেসেজ পাঠাবে, কোটি কোটি কল করবে! আপনি ওকে ইগনোর করুন, চুপ থাকুন; দেখবেন, সাইকোপ্যাথ ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে গেছে। আপনি ওর দিকে একটু মনোযোগ দিলেই ও ভাববে, আপনি ওকে মন দিয়ে বসে আছেন!


ও আপনার সম্পর্কে বাইরে যেখানে যা-ই কিছু বলুক না কেন, আপনি ওর সম্পর্কে কক্ষনো কিছুই বলবেন না। ওর সম্পর্কে বলার মানেই ওকে জিতিয়ে দেওয়া, ওর মনোবল বাড়িয়ে দেওয়া। মনে রাখবেন, সাইকোপ্যাথ সামলানোর সবচাইতে ভালো উপায় হচ্ছে ওদের কোনো অ্যাটেনশন‌ই না দেওয়া, পুরোপুরি ইগনোর করা। আপনি যতই নেগেটিভলি রিপ্লাই করুন, যতই ওকে বিশ্রী বিশ্রী গালিগালি করুন, এমনকী আপনি যদি চরম ধরনের খারাপ আচরণ‌ও করেন, আজেবাজে কথা বলেন ওকে নিয়ে, ওকে থামিয়ে দেবার চেষ্টা করেন, তা-ও ও কখনও থামবে না। থামলেও সেটা এক দিন কি দুই দিন, তারপর ঠিক‌ই ও আবার আগের রূপে ফিরে যাবে। মনে রাখবেন, সাইকোপ্যাথরা কোনো ব্যাকরণ মেনে চলে না, সাইকোপ্যাথদের আসলে কোনো ব্যাকরণ‌ই নেই। অন্যান্য মানুষ যে-রকম আচরণ করে, সাইকোপ্যাথরা একইরকম আচরণ করে না। এবং সাইকোপ্যাথদের সামলানোর জন্য যতগুলো পদ্ধতি আপনি গুগলে সার্চ করে পড়বেন, ওসবের প্রত্যেকটাই ব্যর্থ হবে। সাইকোপ্যাথদের একটাই ব্যাকরণ: ওদের কোনো ব্যাকরণ নেই। (হয়তো আমার এই লেখাটাও আপনার কোনো কাজে লাগবে না; আমি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি মাত্র।)


ওকে ইগনোর করুন, ওকে লাইফ থেকে ডিলিট করুন। ও যদি আপনার চরম ক্ষতি করার চেষ্টাও করে, তারপরও আপনি সেই হুমকিগুলি শুনবেন আর চুপচাপ থাকবেন। কিছুই করার নেই। নিজের জেদ রক্ষার জন্য ও নিজের বন্ধু কিংবা প্রিয় মানুষটাকে খুনও করতে পারে। ওর কাছে অন্যের জীবনের চেয়ে নিজের জেদের মূল্য বেশি। প্রিয় মানুষটা ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, অসুস্থ, অবসাদগ্রস্ত কিংবা যা-ই হোক, ওতে ওর কিছুই এসে যায় না, জেদ মেটাতে ও খারাপ আচরণ করতেই থাকবে। ও শুধুই জিততে চায়। ওকে জিতিয়ে দিলেও ও কিন্তু থেমে যায় না, অন্য কোনো ইস্যু তুলে আবারও মানসিক নির্যাতন করা শুরু করে দেয়। খুবই বাজে জিনিস এই সাইকোপ্যাথ!


সাইকোপ্যাথরা সাধারণ মানুষ নয়, চরম মাত্রায় অস্বাভাবিক মানুষ। ওদের হাত থেকে নিজের লাইফটাকে বাঁচান। দেরি হয়ে যাবার আগেই ওদের কাছ থেকে দূরে সরে আসুন। ওরা যদি আপনাকে সবচাইতে কাছের মানুষও মনে করে, সবচাইতে বেশি ভালোও বাসে, তবু ওদের কাছ থেকে দূরে সরে আসুন। লাইফটা তো অনেক ছোটো; ভালো থাকতে হবে, হাসি-আনন্দ নিয়ে থাকতে হবে। এরকম সাইকোপ্যাথের পেছনে লাইফটাকে ধ্বংস করে দেবার কোনো মানে হয় না। ওদের ভালোবাসা খুবই বিষাক্ত ধরনের ভালোবাসা। এরকম টক্সিক লোকের কথায় ভুলেও কখনও কনভিন্সড হবেন না। একবার কনভিন্সড হয়েছেন তো আপনার লাইফই শেষ! সময় থাকতে ওদের কাছ থেকে দূরে সরে আসুন। সাইকোপ্যাথ যদি আপনার সাথে এক সপ্তাহ, এক মাস ভালো আচরণও করে, তারপরও ওকে বিশ্বাস করবেন না। এর কারণ, ও আগের জায়গায় ঠিকই ফিরে যাবে, ও আগের আচরণগুলোই করবে এবং ও কখনোই কারও বন্ধু হবে না। একজন সাইকোপ্যাথ কখনোই সুস্থ মানুষের বন্ধু হতে পারে না। আপনাকে সর্বোচ্চ পরিমাণে ভালোবাসলেও ওকে জীবনে জায়গা দেবার কিছুই নেই। আপনার সমস্ত সুখ-স্বস্তি-শান্তি নষ্ট করে আপনাকে তিলে তিলে শেষ করে দেবার জন্য ও একাই যথেষ্ট। ওর কাছ থেকে আপনার যা-ই প্রাপ্তি থাকুক না কেন, যা-ই পাবার আশা থাকুক না কেন, সব কিছুকেই ইগনোর করুন।


ওদের মতে ও পথে না চললে ওরা তেমন একটা সহানুভূতিশীল হয় না, ওরা যা চায়, অবিলম্বেই তা পেতে এমনকী সহিংসতামূলক যে-কোনো উপায়ও ব্যবহার করে—শোষণ করে, অবাধ্যতা দেখায়, জিম্মি করার চেষ্টা করে। ওদের অভিধানে ‘ক্ষমা’ বলে কোনো শব্দ নেই; ওরা কথায় কথায় আত্ম*হত্যার হুমকি দেয়, চিৎকার করে, গায়ে হাত তোলে, সবার সামনে অসম্মান করে, নিজের শান্তির জন্য যা মন চায় করে। অন্যকে ছোটো করে হলেও নিজে জয়ী হতে চায়। নিজে ভুল করার পরও এমন একটা ভাব নিয়ে থাকে যেন ও কিছুই করেনি। ওদের যখন রাগ হয়, কারণে হোক অকারণে হোক, তখন কার সাথে কী কথা বলছে কিছুই মাথায় থাকে না। ওরা সরি বলতেই জানে না; সুযোগ পেলেই নিজেকে জাহির করার জন্য বড়ো বড়ো কথা বলে। ওরা যা বলে, তার অধিকাংশই মিথ্যে, ওরা মিথ্যেকে সত্যি বলে জাহির করতে অভ্যস্ত। ওরা মুখে বলে এক, বাস্তবে করে আরেক; লোকসমাজে নিজেকে (গায়ের জোরে হলেও) স্পেশাল কেউ প্রমাণ করতে সবসময় লেগে থাকে। ওরা নিজে যেমন চিন্তা করে, ঠিক তেমনিভাবে অন্যের জীবনটাকে পরিচালনা করতে চায়; কারও দুঃখ বা অবস্থান বুঝতে চায় না এবং পারেও না। মানুষকে সাহায্য করলেও পরবর্তীতে ঠিকই খোঁটা দেয়। নিজের এমন কিছু-একটা নিয়ে অহংকার করে, যেটার অস্তিত্বই নেই। ওরা মানুষকে সাধারণত সম্মান করে না, তুচ্ছতাচ্ছিল্যের চোখে দেখে, অন্যের সমস্ত মনোবলকে ভেঙে দেয়। আসল বিপদ তখনই ঘটে, যখন এমন মানুষ রক্তের সম্পর্কের কেউ হয়, কেননা সেক্ষেত্রে সরে আসাটা সহজ হয় না; অগত্যা মনে হতে থাকে, ক্রমশ গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছেন, নিজেকে হারিয়ে ফেলছেন—একসময় পুরো জীবনটাই যেন শেষ হয়ে যায়!


ওদের কথায় চুপ করে থাকুন—শুধু শুনুন, কিন্তু কোনো গুরুত্ব দেবেন না, মাথায়ও নেবেন না এবং ওদেরকে বুঝতেই দেবেন না যে, আপনি ইগনোর করছেন। ওদের জিতিয়ে দিন নীরবে মৌনসম্মতি দিয়ে, তবে আপনি নিজে সেই কাজটাই করে যান—যেটাকে আপনার বিবেক সঠিক বলে। ওরা মারাত্মক লেভেলের বাজে এবং ভয়ংকর মানুষ হয়, যা কল্পনারও বাইরে। ওদের সাথে একই ছাদের নিচে কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে থাকা খুবই কঠিন। ওদের ভয়ানক কীর্তিকলাপ, আচার-আচরণ যেন বলে শেষ করা যায় না। ওরা অসম্ভব রকমের বেইমান, অকৃতজ্ঞ ও স্বার্থপর হয়। এমন মানুষের সাথে থাকা মানে দিন দিন একজন মানসিক রোগীতে পরিণত হওয়া। তাই চরম মূল্য দিয়ে হলেও এসব ঠান্ডা মাথার খুনির হাত থেকে পালাতে পারলে ভালো।


সাইকোপ্যাথ মাঝে মাঝে খুব ভালো আচরণ করবে, তার কাজের জন্য আপনার কাছে খুব নমনীয়ভাবে ক্ষমা চাইবে। আপনি তার বিপদের দিনে পাশে ছিলেন, তার অনেক উপকার করেছেন, এসব কথাও বলবে। আবার এটাও বলবে যে, যা হবার, তা-ই হয়েছে; এখানে ওর কোনো হাত নেই। পরক্ষণেই ইনিয়ে-বিনিয়ে ওর দুর্ভাগ্য বা অসুস্থতার কথা বলবে। ওর জীবনে শান্তি নেই বলেই ও আপনাকে শান্তি দিতে পারে না, এ ধরনের দাবি করবে, যদিও তার অশান্তির জন্য আপনি দায়ী নন। সুস্থ মানুষ আলোচনা করে, অসুস্থ মানুষ অভিযোগ করে। ভালোবাসার অজুহাতে আপনার জীবনকে নরক বানিয়ে দেওয়াটাকে ও অধিকার ভাববে। ও নিজে ভালো নেই বলে ও কাউকে ভালো রাখতেও জানে না; নিজের নিয়তির প্রতি কষ্টের সকল দহন ও চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে চায়। অতীতের দুঃসহ স্মৃতি কাউকে মহাত্মা বানায়, কাউকেবা বানায় সাইকোপ্যাথ। ওরা সচেতনভাবে কিন্তু অন্যকে আহত-রক্তাক্ত করে না, মাথায় অস্থিরতা চেপে বসলে অবচেতনভাবেই অমন করে। বোঝার‌ই চেষ্টা করে না যে, এতে পাশের মানুষটা কষ্ট পায়। ওদের মাথায় যা এসেছে, তা নিয়েই বাঁচে এবং সমস্ত ভাবনা সাজায়। ওরা আপনার সব কথাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে, আপনাকে খুশি রাখতে সব কিছুই করবে, খেয়ে না খেয়ে শত প্রতিকূলতা সহ্য করে নিজেকে বদলাবে, আপনার জন্য নিজেকে শেষ‌ও করে দিতে পারবে, কিন্তু দুইদিন পর পর ঠিক‌ই খারাপ ব্যবহার করবে। ওরা আসলে সবার সাথেই এমন খারাপ ব্যবহার করে; এর কারণ হিসেবে ওরা ভাবে, ওরা নিজেরাই তো মানসিকভাবে খুব খারাপ আছে। ওরা যেমন থাকার স্বপ্ন দেখে, তেমন আছে যারা, তাদেরকে ওরা নিজের অজান্তেই সহ্য করতে পারে না। ওদের সবচাইতে বড়ো ভুলটা হচ্ছে, ওরা ভুল মানুষের পেছনে ওদের জীবনের সোনালী সময়টা দিনের পর দিন নষ্ট করে। এই কাজটা না করলে ওরাও হয়তো অনেক ভালো থাকত, নিজের অদৃষ্টকে এভাবে সারাক্ষণই অভিশাপ দিতে হতো না।


ওরা যখন কাউকে ভালোবাসে, মন দিয়েই বাসে; আর আপনি যখন ওর প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে চলে যেতে চাইবেন এবং সে-ও বার বার একই ধরনের কথা বলবে যে—আপনি খারাপ, আপনাকে ওর আর দরকার নেই লাইফে, ইত্যাদি ইত্যাদি…শেষমেশ যখন চলে যাবেন, তখন আবার আঁকড়ে ধরবে, যাতে আপনি অন্য কারও হয়ে না যান। ওরা আপনাকে ধরেও রাখবে না, ছেড়ে যেতেও দেবে না; নিজের সাথেও সুখী হতে দেবে না, অন্যের সাথেও সুখী হতে দেবে না। আপনি কিছুতেই স্বস্তি পাবেন না, অসুস্থবোধ করবেন। ওরা সাধারণত ইতর প্রকৃতির হয়; অন্যের সম্পদের প্রতি ওদের লোভ থাকে এবং সেটা কখনো কখনো এতটাই বেশি হয়ে যায় যে, অন্যের সম্পদ বা অর্থ ভোগ করতে পারাটাকে ওরা অনেকটা নিজের অধিকার ভাবে। আপনার সাথে সবার সম্পর্ক খারাপ করে দিতে এরকম একজন সাইকোপ্যাথই যথেষ্ট। ওরা ভয়ংকর রকমের সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত হয়, শোনাকথায় বিশ্বাস করে—বিপরীত লিঙ্গের দূরে থাক, সমলিঙ্গের কারও সাথেও ওরা আপনাকে মিশতে দেবে না; মতের মিল না হলে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করবে। একসময় দেখবেন, আপনি বাকি জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন, আপনার কোনো বন্ধুবান্ধব নেই, ক্যারিয়ারও ধ্বংসের পথে। ওরা পিছু ছাড়তে চায় না। দীর্ঘদিন পর কথা বললেও একই কথা আপনাকে শোনাতে চাইবে; বলবে ও তো অনেক ভালো, আপনি কেন ওকে ইগনোর করছেন, এ ধরনের হাজারো কথা।


সাইকোপ্যাথ আপনার ভালো কাজে চুপ থাকবে, দেখেও দেখবে না, প্রশংসা তো করবেই না…বরং মেজাজ-খারাপ-করা মন্তব্য করবে; কিন্তু যখনই আপনি এমন কিছু করবেন বা বলবেন, যা তার পছন্দ হয়নি, সাথে সাথেই সে সমালোচনা ও নিন্দা করার জন্য এমনভাবে হামলে পড়বে যেন আপনার চাইতে খারাপ কাজ পৃথিবীতে আর কেউ কখনোই করেনি। এ ধরনের মানুষ খুবই গায়ে-পড়া আর জাজমেন্টাল হয়, পেছনে-লেগে-থাকা টাইপের হয়। আপনার সব কাজেই খবরদারি করার চেষ্টা করবে, ওর মনের মতো করে আপনাকে চালাতে চাইবে। ওর মতই ঠিক, ওর পথই ঠিক—এর বাইরে সবাই ভুল, সবই ভুল। ওদের রিড করা খুবই কঠিন—ওরা এই ভালো তো এই খারাপ। তবে বাইরে থেকে দেখে ওদের ভয়ংকর চেহারাটা কিছুতেই ধরা যায় না; ওদের সাথে না চললে বা না মিশলে ওদের আসল রূপ বোঝা কঠিন।

সাইকোপ্যাথ টাইপের মানুষগুলো আসলে ডিপ্রেশন নিতে পারে না। ওরা ওদের টার্গেট পূরণ করতে চায় যে-কোনো উপায়ে। আর করতে না পারলে তখন খুবই বেপরোয়া হয়ে পড়ে। তখন কাছের মানুষগুলোকে দোষারোপ করতে থাকে, মানসিকভাবে টর্চার করে। ওরা যেহেতু স্বাভাবিক মানুষ নয়, তাই ওদের ইগনোর করাটাই একমাত্র সমাধান। ইগনোর করতে না পারলে জীবনটা নরক হয়ে যায়, কারণ ওদের কৃতজ্ঞতাবোধ বা বিবেক বলতে কিছু নেই। আপনি ওদের জন্য যত যা-ই করেন না কেন, প্রয়োজন ফুরোলেই ওরা স্বরূপে ফিরে আসবে। আপনাকে ওর নিজের এমন সব দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী করবে, যে-সব ব্যাপারে আপনি কিছুই জানেন না—ওরা এভাবেই নিজের জীবনে ঘটা সব বাজে বিষয়ের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপায়। এমন একটা মানুষ পুরো ফ্যামিলিকেই তিলে তিলে শেষ করে দেয়; শুধু মুখের ভাষায় নয়, কথায় কথায় যে কারও গায়ে হাত তুলতে ওরা একটুও দ্বিধাবোধ করে না। ওদের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য বলে লেখাটা শেষ করছি।


ওরা অন্যের সকল যুক্তিকে অগ্রাহ্য করে, অজুহাত মনে করে; কিন্তু নিজের বেলায় ঠিকই যুক্তি দেখায়, সেগুলোকে কেউ অজুহাত বললেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। ওরা সত্য বা বাস্তবতা মানতে চায় না; নিজে যা বলবে, ভাববে, তা-ই ঠিক, তা-ই প্রতিষ্ঠিত করতে চায়; নিজের ভুল কিছুতেই বুঝতে চায় না। কারও সাথে মতের মিল না হলে তার এবং তার বলয়ের সকলের নেগেটিভ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে এবং কখনো কখনো ছড়ায়‌ও। সাইকোরা যতক্ষণ নিজে জিততে না পারে, ততক্ষণ রাগ-ক্ষোভ-ঘৃণা থেকে সহজে বের হয়ে আসতে পারে না। ওরা নিজে অন্যায় করলেও, যার সাথে অন্যায়টা করেছে, উলটো সে এসে মাফ চাক, সরি বলুক—এটা চায়। ওদের নমনীয়তা নেই বললেই চলে, অন্যকে ছাড় দেবার মানসিকতা খুব কম। ওরা সবাইকে বোঝাতে চায় যে, সবার চেয়ে বাস্তবতা ও-ই বেশি বোঝে। ওরা নিজের রক্তের সম্পর্কের বাইরের কাউকে তো বটেই, এমনকী স্বামী-স্ত্রী বা যে-কোনো প্রিয়জনকেও সহজেই ছেড়ে যেতে পারে। অন্যকে অপবাদ দিয়ে অপমান-অসম্মান করে দাবি করে যে, ও নিজেই অপমানিত-অসম্মানিত হয়েছে। অন্যের যা-ই কিছু হয় হোক, সব বিষয়েই নিজেকে সেইফ রাখাটা ওরা খুব ভালো করেই জানে। নিজেকে এবং নিজের আত্মীয়স্বজনকে বড়ো দেখিয়ে এমনভাবে বড়াই করে যেন অন্য কেউ তেমন কিছুই নয়। ওরা উচ্চাভিলাষী মনোভাব পোষণ করে, অথচ ভাব ধরে সাধারণ মনোভাবের। নিজের ভুল স্বীকার না করেও ওরা নিজে নিজের কাছে স্বচ্ছ থাকার দাবি করে এবং কোনো-না-কোনো উপায়ে অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারলে আনন্দ পায়। সাইকোপ্যাথরা প্রায়ই প্রতারণা করতে এবং নিজের স্বার্থে অন্যদের ব্যবহার করতে পারদর্শী; ওরা যে অন্যদের এত ক্ষতি করে, তার জন্য ওদের মধ্যে কোনো ধরনের অনুশোচনা বা অপরাধবোধ কাজ করে না। সাইকোপ্যাথরা ওভারথিংকিংয়ে অভ্যস্ত। যা নিয়ে ভুল করেও কেউই কখনও ভাববে না, তা নিয়েও ওরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকী দিনের পর দিন ভাবতে পারে। তুচ্ছাতিতুচ্ছ কোনো বিষয় নিয়েও একটা সাইকোপ্যাথ আপনার মাথা নষ্ট করে দেবে।

Content Protection by DMCA.com