সত্যমিথ্যার অন্দরবাহির


১. সুন্দর মাত্রই সত্য, কিন্তু সত্য মাত্রই সুন্দর না-ও হতে পারে। সত্য এবং সুন্দরের মাঝে মূল তফাতটা হচ্ছে, সুন্দর ব্যাপারটা আপেক্ষিক, কিন্তু সত্য সর্বদাই পরম।


২. সারা দিন শেষে, সারাবছর শেষে সবাই মিলে একটা সত্যকে মিথ্যা বানাতে চাইলেও সত্য নিজগুণে তার শুদ্ধতার সমস্ত প্রমাণ দিয়ে সবার সামনে বেরিয়ে আসে।


৩. একটা সত্যকে ঢাকতে যেমন দশটা মিথ্যে বলতে হয়, তেমনি শ-দেড়শ মিথ্যেকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে মাত্র একটা সত্যকথার একমিনিটের চেয়েও কম সময় লাগে।


৪. দু-চারটে মিথ্যের মধ্যে একটা সত্যকে মিলিয়ে দিলে ছোটোখাটো একটা ঝামেলা হয়তো বাধে, কিন্তু কয়েকটি সত্যের সাথে দু-একটা মিথ্যে মিলিয়ে দেওয়াটা রীতিমতো বিরাট একটা অপরাধ!


৫. একই মিথ্যে বারবার বলতে বলতে তা একসময় সত্যের মতনই শোনায়।


৬. সত্যে সত্যে কখনও বিবাদ হয় না, সব বিবাদই হয় মিথ্যের সাথে মিথ্যের যোগফলে কিংবা গুণফলে।


৭. কথা কাটাকাটি হয় মিথ্যুকে মিথ্যুকে, আর ওদিকে, সত্যবাদী যারা, ওদের তো বাড়তি কথা বলারই প্রয়োজন পড়ে না।


৮. আজকের সত্যবাদী কাল মিথ্যুক হলেও হতে পারে, তবে আজকের মিথ্যেবাদীর আগামীকাল হুট করে সত্যবাদী হয়ে যাওয়াটা বিরাট এক অসম্ভব ব্যাপার।


৯. সত্য বলা যেমনি কঠিন, তেমনি সত্য লুকিয়ে রাখা আরও বেশি কঠিন।


১০. একজন মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বড়োজোর মিথ্যে নিয়ে নানান রকম স্বপ্ন দেখতে পারে, যেগুলো সারাজীবনেও কখনও পূরণ হবে না। আর ওরকম মিথ্যে স্বপ্ন দেখতে দেখতেই হয়তো সে একদিন মারা যাবে। সেই মানুষকে ঘুম থেকে তোলার কিংবা মৃত্যুপথ থেকে ফেরানোর একটাই রাস্তা---শত কষ্ট হলেও, বাস্তব সত্যটা তাকে জানানো।


১১. যা দেখা যায়, তা সত্য না-ও হতে পারে। তবে যা সত্য, তা একদিন-না-একদিন দেখা যাবেই যাবে।


১২. যে মানুষ সারাক্ষণই মিথ্যে বলে, সে একসময় নিজেই আর নিজেকে বিশ্বাস করতে পারে না। তাই সে তখন তার নিজের হৃদয়ের সাথে কথা বলা ছেড়ে দেয়। তবে যে সত্য কথা বলে, সে বিশ্বাস করার জন্য কাউকে না পেলেও নিজেকে বিশ্বাস করে নিজেই নিজের সাথে কথা বলে যায়।


১৩. কিছু কিছু সময়, কিছু কিছু জায়গায় সত্য গোপন করাটাই শ্রেয়। কেউ কেউ সত্য গ্রহণ করতে পারে না, আর কেউ কেউ সত্য গ্রহণ করতে চায় না।


১৪. একজন সত্যবাদী যদি ভুলেও মুখ দিয়ে কোনও কথা বের করে ফেলে, আর সবাই তা বলতেই থাকে, তবে সেই কথাই একসময় সত্যে পরিণত হয়।


১৫. প্রেমে সত্যতা না-ও থাকতে পারে, তবে সত্য ছাড়া ভালোবাসা হয় না।


১৬. পুরুষমানুষ ভয় পায় সত্য বলতে, আর নারীর ভয় হচ্ছে সত্য গ্রহণ করাতে।


১৭. আমরা মিথ্যা গ্রহণ করতেই বেশি ভালোবাসি বলে আমাদের সামনে মশলা আর রং মাখিয়ে মিথ্যাকেই উপস্থাপন করা হয়। আমরা আয়োজন করে সিনেমাহলে সিনেমা দেখতে যাই এটা জেনেও যে, একটা বানানো গল্পকেই আরোপিত রূপ দিয়ে সিনেমা বানানো হয়। অথচ সত্যিকারের সিনেমা হচ্ছে আমাদের যার যার জীবন। আমরা জীবনকে উপলব্ধি করতে চাই না বলেই জীবন নামক সত্যকে দূরে সরিয়ে রেখে পর্দার মিথ্যেতেই সত্যকে অনুমান করে নিই।


১৮. আমরা অন্ধভাবে বিশ্বাস করি এমন কিছু মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানকে যাদের মূলমন্ত্রই হচ্ছে: যাহা বলিব মিথ্যা বলিব, মিথ্যা বই এক বর্ণও সত্য বলিব না!


১৯. চাকরি করে হোক, ব্যবসা করে হোক, অর্থাৎ সৎভাবে পয়সা কামানোর চেয়ে বড়ো সত্য মধ্যবিত্ত আর আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন কোনও মানুষের জীবনে নেই। ঠিক তেমনি জীবনে ভালোবাসার মতন একইসাথে সত্য ও সুন্দর জিনিস পৃথিবীতে আর একটিও নেই।


২০. সত্য বলে কেউ যদি সারাজীবন ধরে এক বা একাধিক মানুষকে সুখী করতে না-ও পারে, সেই মানুষটার মৃত্যুর পরে বাকিরা ঠিকই বুঝতে পারবে সেই সত্যবাদিতার মর্মটা। ঠিক একইভাবে, মিথ্যেবাদী কেউ মারা গেলে তার কাছের মানুষজন বুঝতে পারে, এতদিন কী যে একটা ভুল হয়ে আসছিল!


২১. ওষুধ যেমন তেতো, সত্যকথাও ঠিক একই রকমেরই তেতো। যদি ওষুধ=তেতো=সত্য হয়, তাহলে, সত্য=ওষুধ; হ্যাঁ, এটাই প্রমাণিত। হিসেবটা ঠিক আছে তো?


২২. সুখী হবার সহজ রাস্তা হলো, হাতেগোনা দু-একটা জায়গা বাদে সব জায়গায় সত্যটাই বলে দেওয়া।


২৩. আপনাকে সত্য গ্রহণ করতেই হবে, দেরিতে হলেও করতে হবে। যে যত জলদি সত্য গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে পারবে, দুনিয়াটা কেবলই সেই মানুষটার জন্য অপেক্ষা করে আছে।


২৪. মানুষ শুরুর দিকে সত্যবাদী প্রেমিক বা প্রেমিকাকে পছন্দ করলেও, বেশিরভাগ মানুষই, পরবর্তীতে ওই ব্যাপারটাকে আর পছন্দ করতে চায় না। সেজন্য হয় তারা পার্টনার চেইঞ্জ করে, নয়তো পার্টনারকে মিথ্যে বলতে বাধ্য করে। পার্টনার মিথ্যে বলছে জেনেও তখন সে একধরনের আরোপিত সুখ লাভ করে। কারও কারও নাকি বিরক্তও লাগে সারাক্ষণ সত্য শুনতে। আরও একটা ব্যাপার আছে। সত্যবাদী প্রেমিক বা প্রেমিকা নিয়ে অনেকেই সাধারণত ভয়ে থাকে। সত্যবাদীর শক্তিটা এখানেই!