ভাবনার বনসাই: ছত্রিশ

১. তোমাকে আমি পছন্দ করি না।
কারও জন্য যে পছন্দ করি না, তা নয়।
তোমাকেই আমি পছন্দ করি না!


২. সমুদ্র কখনওবা নিজেই তৃষ্ণার্তের কাছে আসে,
রাস্তা কখনওবা নিজেই পথিকের পায়ে ঘেঁষে।
সমুদ্রেরও দরকার হয় তৃষ্ণার্তকে,
রাস্তারও দরকার হয় পথিককে।


৩. এতটা কষ্ট দিয়ো না,
পারলে আমার দোষটা জানাও।


একদিন নিজের নিঃশ্বাসটাও বিশ্বাসঘাতকতা করবে,
আমার কষ্টটা সেদিন ঠিকই বুঝবে।


৪. যদি জানতে চাও, সন্ধ্যার অন্ধকার কতটা কালো,
তবে ওদেরই জিজ্ঞেস করো, যাদের ঘর নেই।


৫. এক ইচ্ছে থেকেও হাজারো ইচ্ছে বেরিয়ে আসে।
আমারই-বা কী দোষ, বলো! আমার যে কেবল একটাই ইচ্ছে!


৬. কেন জানতে চাইলে,
ভাগ্য আজ কার হাতে উঠবে?
জানোই তো, যাদের হাতই নেই, ওদেরও ভাগ্য থাকে!


৭. এতটা তাচ্ছিল্য কোরো না!
আমরা আজ ভাগ্যের দোষে গরিব হলেও
দু-একটা শায়েরি আমরাও লিখতে জানি,
যেগুলি অমরত্বের দাবি রাখে!


যার শায়েরি আছে, তার আর ভয় কীসের!
সময় থাকতেই শায়েরকে ভয় পেতে শেখো!


৮. হাসতে সুখী হতে হয় না।
হাসতে অভ্যস্ত হতে হয়।
আমি অনেক সুখী মানুষকে কাঁদতে দেখেছি।
হাসিতে কি কান্নায়, মানুষ চেনা বড়ো দায়!


৯. আজকের সন্ধে কী যে দারুণ কাটল!
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছিল,
এলোমেলো হাওয়া ছিল,
সঙ্গে তুমি ছিলে।


হাওয়ায়, জলে, তোমাতে…পুড়ে একেবারে ছারখার হয়ে গেলাম!


১০. আমি এজন্য কাঁদি না যে,
আমি বৃদ্ধ হচ্ছি।
বরং এজন্যই কাঁদি যে,
আমাকে বৃদ্ধ হতে হচ্ছে…একা একা।


১১. ভালো সময়ের আশায়,
আজ আমরা আমাদের সেরা সময়গুলিকে হারিয়ে ফেলেছি।


১২. পৃথিবী যখন নিজের চেহারায় ফেরে,
তখনও কেন অমন শায়েরি লিখো?
তখন বরং কলম বাঁচাতে কলম ছুড়ে ছোরা হাতে নাও!


১৩. আমি কী খুঁজে চলেছি,
যখন আমার হারায়নি কিছুই!
নিজের ঘরে পরকে রেখে
কেন আমি নিজেই ঘরের দরোজা খুঁজি!


১৪. হে যন্ত্রণা!
আমার শরীরে নয়, মনে এসো!
আমার শরীরটা এখনও তোমার সমঝদার হয়ে ওঠেনি!


১৫. বাবাকে ঘরে ফিরে কাঁদতে দেখেছি যত বার,
তত বারই বুঝেছি, বাবা মেলা থেকে ফিরেছেন।


ঈশ্বর আমার বাবাকে চোখেই শুধু অশ্রু দিয়েছিলেন, পকেটে পয়সা দেননি।


১৬. যে শায়েরের কলমে রক্ত ঝরে না,
তার চোখে একসমুদ্র জল জমলেও কী লাভ হবে,
শায়েরি তো আর বেরোবে না!


১৭. যার সঙ্গে তার নিজের হৃদয়ের আলাপ হয়,
তার সঙ্গে আলাপ করতে আসে যে,
তার না থাকে প্রাণের মায়া, না থাকে মৃত্যুর ভান।


১৮. কেন আজও অপেক্ষায় আছ তারই মুখ থেকে কিছু শোনার,
যে অপেক্ষা করে করেও কারও মুখ থেকেই কিছু শুনতে পারেনি!


১৯. যে সময়টা তোমায় শিখিয়ে দেয়, কী করে বাঁচতে হবে,
তার চাইতেও কি ক্ষমতাধর তোমার দুঃখ!?


২০. আমি জানি, আমার কথা শুনতে কারও ভালো লাগে না!
আমি এ-ও জানি, আমার কথা না শুনলে কেউ ভালো থাকে না!