এ-ই আমার শান্তিকুঞ্জ।
এখানে গত বছরচারেক আগে শীত এসে আটকে গিয়েছিল মরচে-ধরা লোহার গেইটের হাতলে। হাতল আলগা করতেই ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ আমার বাগান মাড়িয়ে গেল যেন...। বাগানে শিউলির আড়ালে লুকিয়ে-থাকা টুনটুনির ছানাটি ভয়ে কোথায় উড়ে গেল, আর রেখে গেল রোদের গন্ধমাখা একটুকরো ছেঁড়া পালক।
এখানে মরা পাতাগুলো ঝরে পড়ছে দেবদারুর পায়ের কাছে এসে। বাতাসে সেই পাতাঝরার শব্দ। বাতাসে বাতাসে প্রেতের মতো নাচে পাপড়ি-ঝরে-পড়া গোলাপের ডাঁট, পাতাহীন সজনের ডাল, শুকিয়ে-আসা অপরাজিতা।
বাড়ির সীমানার পলেস্তারা-খসে-পড়া দেয়াল আঁকড়ে বেড়ে-ওঠা অশ্বত্থ পাতার লুকোচুরি খেলার যে-বারান্দা, সেখানে কখনোবা শীতের বুকে ওম-ওম আদরে ঘুমিয়ে পড়ত অবিনিশ, মানে আমি—মানে আমার অতীত ‘আমি’টা!
আজ মহাকালের স্রোত বেয়ে অবিনিশ, মানে আমি জাগিয়ে তুলতে এসেছি অবিনিশকে, মানে আমাকেই। লক্ষাধিক শান্তিকে একসময় আলপিনের খোঁচায় সিঁটিয়ে রেখেছিল পুরোনো যে-অবিনিশের বুক, চোখ, অতঃপর…ঘুম… হ্যাঁ, হ্যাঁ! আমি...আমি...আমি সেই ‘আমি’র কথাই বলছি।
রক্তাক্ত চোখের পাতা টেনে খুলে রক্ত দিয়েই চোখ ধুয়ে নিই। আশ্চর্য! এতকাল ঘুম ভাঙাতে আসেনি কেউই! আজকাল যে আড়মোড়া দিচ্ছিলাম, কার...কার জাগানিতে তবে? আমি নিজেই, না কি এক অরুণিকাই আমায় জাগিয়ে তুলত রোজ...একটু একটু করে!
এ জেগে ওঠা হতে পারে পুরোনো অবিনিশের, মানে নতুন আমার মৃত্যু অথবা নতুন আমারই; মানে অবশেষে, যেমন করেই হোক, পুরোনো অবিনিশের জেগে ওঠা!
পুরোনো আমি কি সত্যিই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম…নতুন অবিনিশকে, মানে পুরোনো আমাকে জাগিয়ে তুলতে?