আমরা মনে করি, যার সঙ্গে রিলেশনশিপে ছিলাম, যাকে ভালোবাসি, যে আমাকে ভালোবাসে, ভালোবাসত, তাকে বিয়ে করতে না পারলে জীবনটা শেষ!
আমি বলি, আরে গাধা! তাকে বিয়ে করতে হবে কেন!? আপনি কাকে বিয়ে করবেন, কার সঙ্গে থাকবেন, কার সঙ্গে থাকবেন না---সকল কিছুই পূর্বনির্ধারিত। যদি তা-ই না হতো, মানে বলছিলাম কী, আমার তো মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমার ঐশ্বরিয়া রাইকে বিয়ে করা উচিত ছিল। আমি ঐশ্বরিয়া রাইয়ের মতো একটা মেয়ে ডিজার্ভ করি।...লাইফে “ডিজার্ভ করা” বলে কোনও কিছু নেই। লাইফে যেটা আছে, সেটা হচ্ছে, আর্ন করা, অ্যাচিভ করা। কোনটা আমি পেলাম এবং কোনটা আমি পেলাম না---দ্যাটস অল!
আমি তাকে ডিজার্ভ করি, আমি তাকে ভালোবাসতাম, সে আমাকে ভালোবাসত, তার সঙ্গে আমি অনেকটা সময় কাটিয়েছি, সে আমার সঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছে, ব্লা ব্লা ব্লা!। ফরগেট ইট! একদম...ফরগেট ইট! আপনি যাকে ভালোবাসতেন, তাকে আপনি এখনও ভালোবাসেন। ভালো না বাসলে তাকে আপনি পেতে চাইতেন না! তার কথা ভেবে আপনি মন খারাপ করতেন না, কান্নাকাটি করতেন না! তাকে আপনি ভালোবাসতেন, তা নয়! সত্যিটা হচ্ছে, তাকে আপনি এখনও ভালোবাসেন। সে আপনাকে এখন আর ভালোবাসতে পারছে না, আগে ভালোবাসত! ইটস হিজ অর হার প্রবলেম...নট ইয়োরস! কাউকে আমরা যখন ভালোবাসি, তখন সেটা আমাদের মনের মধ্যে একধরনের শক্তি তৈরি করে। সেই মানসিক শক্তি মনটাকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করে এবং সেই মনের শক্তি দিয়ে আমরা অনেক কিছু অ্যাচিভ করতে পারি।
আপনি মনে করে দেখুন, আপনি কাউকে ভালোবাসেন, এই অনুভূতিটা আপনাকে একটা ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করে। এই অনুভূতিটা আপনাকে আপনার কাজের প্রতি আন্তরিক হতে উৎসাহিত করে। সব থেকে বড়ো কথা, আপনি কিছু ভালো অনুভূতির অধিকারী হন। কীরকম? আপনি তাকে ভালোবাসেন তো? সে ভালো থাকলে আপনার ভালো লাগে! আমি জানি..লাগে! তার সঙ্গে কথা বলার সময়...সে যখন, খুশখুশ করে কাশে, তখন আপনার মনে হয়, ইস্! তার বোধ হয় ঠান্ডা লেগেছে। মনে হয় তো? হয় হয়...! তাকে যখন দেখেন, সে একটু শুকিয়ে গেছে, তখন আপনার মনে হয়, ইস্! খাওয়া-দাওয়া করে না বোধ হয় ঠিকমতো!
আরে ভাই! এটা একটা পাওয়ার তো! এটা একটা এনার্জি তো! এটা একটা বিশাল এনার্জি! এই যে কাউকে ভালোবাসতে পারা, এরা চাইতে বড়ো সৌভাগ্য আর হয় না! কাউকে ভালোবাসতে না পারা, এর চাইতে বড়ো দুঃখ আর হয় না! পৃথিবীতে সেই মানুষটা সবচাইতে সৌভাগ্যবান, যে কাউকে ভালোবাসতে পারে। যাকে অনেকেই ভালোবাসে, কিন্তু সে কাউকে ভালোবাসতে পারে না, তার চাইতে দুঃখী মানুষ পৃথিবীতে আর দুইটি নেই।
হ্যাঁ, যা বলছিলাম! আপনি তাকে ভালোবাসেন, এখনও ভালোবাসেন এবং সেই ভালোবাসাটা আপনার মধ্যে একটা শুভকামনা জাগিয়ে রেখেছে, আপনাকে ভালো রাখছে। আপনি সেই ভালোটাই থাকুন না! কেন এত মন খারাপ করছেন?! ভালোবাসার সাথে প্রত্যাশার কোনও সম্পর্ক নেই। যদি আপনার মনে হয়, সে সবসময় আপনার পাশে থাকবে, তবে সেটা ভালোবাসা নয়, সেটা প্রেম! আপনি তাকে স্পর্শ করতে চান! আপনি তাকে পাশে পেতে চান! সে আপনাকে ফোন করুক, সেটা আপনি চান! সে আপনাকে সময় দিক, সেটা আপনি চান! সে সারাক্ষণই শুধু আপনার সাথে কথা বলবে! জানু, তুমি খাইছো! বাবু, তুমি খাইছো! এগুলো ভালোবাসা না! এগুলো প্রেম। এসব সম্পর্ক।
সম্পর্ক, প্রেম, ভালোবাসা তিনটি ভিন্ন স্টেজ। সেগুলোর মধ্যে সবচাইতে উপরের স্টেজটি হচ্ছে ভালোবাসা! আমি তাকে পাই বা না পাই, তাকে আমি ভালোবাসি। সে আমাকে ফোন করুক বা না করুক, তাকে আমি ভালোবাসি। তাকে আমি দেখি বা না দেখি, তাকে আমি ভালোবাসি। সে আমাকে রেসপন্স করুক বা না করুক, তাকে আমি ভালোবাসি। এর চাইতে বড়ো শক্তি আর হয় না। আপনি কেন সে শক্তিটার প্রতি অবহেলা করছেন?! আপনি কেন সে শক্তিটার প্রতি অবিচার করছেন?!
এত কষ্ট পাচ্ছেন কেন? ভালোবাসলে কি ভালোবাসার মানুষটিকে পেতেই হবে?! কে বলল আপনাকে? আমি তো পাইনি! কিন্তু আমি যাকে ভালোবেসেছি, সে ভালো থাকলে, আমার খুব ভালো লাগে। সে আমাকে ব্লক করেছে ফেইসবুকে; হোয়াটসঅ্যাপে করেছে, ভাইবারে ব্লক করেছে! ও মাই গড! ইমোতেও ব্লক করেছে! গাধা একটা! ব্লক করলে কি ভালোবাসা কমে, বলুন?! ব্লক করলে কি ভালোবাসাকে ব্লক করা যায়! হৃদয়কে কখনও ব্লক করা যায়! মনকে কখনও ব্লক করা যায়!
আমি তাকে ঠিকই একটা ফেইক আইডি দিয়ে দেখি...কখনও কখনও! সে তার হাজব্যান্ডের সঙ্গে ছবি দেয়, আমার দেখতে খুব ভালো লাগে। সে শাড়ি পরলে, আমার দেখতে ভালো লাগে। তাকে শাড়িতে খুব মানায়! এখনও মানায়! আজ থেকে ত্রিশ বছর পরে, যখন সে থুড়থুড়ে বুড়ি হয়ে যাবে, তখনও মানাবে! এটাই হচ্ছে ভালোবাসা।
আজ থেকে ত্রিশ বছর পর যখন তার চামড়ায় ভাঁজ পড়বে, তখন আমার মনে হবে, পৃথিবীতে এত সুন্দর চামড়া আর কারও হয় না! আজ থেকে ত্রিশ বছর পর যখন সে হাসার সময় ক্লান্ত অনুভব করবে, তখন আমার মনে হবে, পৃথিবীতে এর চাইতে সুন্দর হাসি আর কেউ কখনও হাসতে পারেনি। আজ থেকে ত্রিশ বছর পর যখন সে আমার দিকে তাকাবে, তখন আমার কাছে মনে হবে, এতটা সুন্দর করে কেউ তাকাতে পারে না। (জানি, সে আমার দিকে হয়তো আর তাকাবে না, তবু অমন করে ভাবতে ভালো লাগল বলে লিখলাম।) হ্যাঁ, এটাই ভালোবাসা।
আরে ভাই! আমি হ্যাপি আছি। আমি এটা ভেবে বেঁচে আছি। আমি এটা থেকে রসদ নিচ্ছি। তাকে পেলাম না, কী এসে যায় বলুন?! তাকে আমার পাবার কথা ছিল না। কিন্তু তাকে আমার ভালোবাসবার কথা ছিল। সেটাই তো বেসে যাচ্ছি। সো...আমার সাথে কোনও অবিচার হয়নি। আমার সাথে এমন কিছু হয়নি, যেটা হবার কথা ছিল না। যা হচ্ছে, তা-ই হবার কথা ছিল। তাকে আমার পাবার কথা ছিল না, তাকে আমি পাইনি। তাকে ভালোবাসবার কথা ছিল, তাকে আমি ভালোবাসছি। দ্যাটস ইট! এতটা কষ্ট পেয়ে কী হবে?!
আমার পেইজে, যে মেসেজগুলো আসে, সেগুলোর মধ্যে ৯০%-ই হচ্ছে ভালোবাসা সংক্রান্ত, প্রেম সংক্রান্ত। ছ্যাঁকা খেয়েছে, জীবন শেষ! বলে কী, সুইসাইড করব! আমি শেষ! আমি শেষ! আমি শেষ! ও মাই গড!
আরে শুনুন! একজীবনে মানুষ অনেকগুলো প্রেমে পড়ে! প্রত্যেকটা প্রেমে পড়ার সময়ই মানুষের মনে হয়, তাকে ছাড়া বোধ হয় বাঁচব না! প্রত্যেক বারই মনে হয়! অথচ সে ঠিকই বেঁচে থাকে। একদম হেসে-খেলেই বেঁচে থাকে। আরে ভাই! লাইফ ইজ শর্ট! ভেরি শর্ট! লাইফটা ছোটো তো! এটাকে এনজয় করুন! কী-একটা ভালোবাসার পেছনে জীবনটা নষ্ট করে দিচ্ছেন। ভালোবাসা কি পালিয়ে যায় নাকি?! ভালোবাসা আছে তো! থাকুক না! কোনও সমস্যা নেই। একটা মানুষ একইসাথে একাধিক মানুষকে ভালোবাসতে পারে। এমনকী সাইকোলজিও তা-ই বলে।
আমি কিছুটা মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করার চেষ্টা করি। যতটুকু জেনেছি, একটা মানুষ একইসাথে একাধিক মানুষকে ভালোবাসতে পারে। আবার এমনও হতে পারে, আপনি যাকে বিয়ে করেছেন, তাকে আপনি সারাজীবনেও ভালোবাসতে পারেননি। হ্যাঁ, তা-ও হতে পারে। তার প্রতি আপনার যেটা কাজ করে, সেটা কোনও ভালোবাসা নয়; সেটা হচ্ছে মায়া। এই মায়ার ফলেই আপনি তাকে একটু একটু করে আঁকড়ে ধরতে শিখেছেন এবং সেই আঁকড়ে ধরেই আপনি একটা জীবন দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারবেন। এত ভাবছেন কেন, ভাই?! আপনি যাকে পেয়েছেন, সে-ও হয়তো কাউকে-না-কাউকে ভালোবাসে! আপনাকে ভয়ে বলতে পারে না। কখনও বন্ধুর মতো করে জিজ্ঞেস করে দেখবেন, জেনে যাবেন। এত ভয় পাবার কিছু নেই। এত টেনশন করবার কিছু নেই।
আপনি যাকে ভালোবাসেন, তার জন্য যদি আপনার ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যায়...তাকে পেলেন না বলে, তবে সেটা কোনও ভালোবাসা নয়। প্রকৃত ভালোবাসা মানুষকে শক্তিশালী হতে শেখায়। আরে ভাই! সে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে তো? খুব ঠিক আছে! খুব ভালো হয়েছে! আপনি এমন কিছু করে দেখান, যাতে সে ভাবে, এই ছেলেটাকে বা এই মেয়েটাকে ছেড়ে যাওয়া আমার ঠিক হয়নি। সে নিজের জীবনটাকে গোছাতে পেরেছে। দ্যাট ইজ দ্য সুইট রিভেঞ্জ! দ্যাট ইজ দ্য সুইট রিপ্লাই! দ্যাট ইজ দ্য বেস্ট থিং ইউ ক্যান ডু ফর ইয়োরসেলফ! ডু ইট! জাস্ট ডু ইট!
একটা মেয়েকে পছন্দ করতাম। ভালোবাসতাম! সে বলেছিল, সুশান্ত জীবনে কিছু করতে পারবে না! সে বলেছিল, সুশান্তর কোনও অ্যামবিশন নেই! যে মানুষের কোনও অ্যামবিশন নেই, সে লাইফে কিছু করতে পারে না।...বাকিটা ইতিহাস!!! সে আমাকে কখনও বলবে না, কিন্তু আমি জানি, মনে মনে সে আফসোস করবে! আরে ভাই! আমার শুধু একটাই দুঃখ, আমি মেয়েটাকে ভালো রাখতে পারলাম না! মেয়েটাকে ভালো রাখতে খুব ইচ্ছে করত আমার, এখনও ইচ্ছে করে। আমি সেই মানুষটাকে ভালো রাখার দায়িত্বটা নিতে পারিনি! আমার এই একটা আফসোস!
সে তার হাজব্যান্ডের সঙ্গে ভালো আছে! সে তার হাজব্যান্ডের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে! সে তার হাজব্যান্ডের সঙ্গে ছবি দিচ্ছে! বিশ্বাস করুন, আমি এটা পছন্দ করি। আমি চাই, তার হাজব্যান্ড সুস্থ থাকুক! আমি চাই, সে সুস্থ থাকুক! আমি চাই, তার সন্তান সুস্থ থাকুক! ওরা সবাই ভালো থাকুক। কিন্তু, ওই যে ভালোটা আমি রাখতে পারিনি, এইটা আমার কাছে সবচাইতে বড়ো ব্যর্থতা মনে হয়। কিন্তু ভালোবাসাটা আমার কাছে কখনও ব্যর্থতা মনে হয় না। ভালোবাসা ব্যাপারটা অলওয়েজ সাফল্য। এটা কোনও ব্যর্থতা নয়। তাকে ভালো রাখতে পারছি না, সেটা হচ্ছে আমার ব্যর্থতা।
এত টেনশন নেবেন না তো, ভাই! ছোট্ট একটা জীবন! কান্নাকাটি করে কী হবে! কালকে মরলে পরশু দুইদিন হবে! বাদ দিন এসব! এত পেইন নিয়ে কী হবে! এত প্যারা নিয়ে কী হবে! ঠিকঠাকমতো বাঁচুন। ঠিকঠাকমতো নিজেকে ভালো রাখুন। আপনার আশেপাশের মানুষকে ভালো রাখুন। তাকে ভালোবাসতেন, এখনও ভালোবাসুন! নো প্রবলেম! সারাজীবন ভালোবাসুন। কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু নিজেকে শেষ করে দেবেন না ভুলেও! প্লিজ!