মায়াসুর

আমি তো জেনেছি, এই পৃথিবীতে
এই সুর, এই ব্যথা, গান— অপরূপ—
সবই শুধু মায়া।
নিঃশেষে জীবনের সব স্বাদ
কোথায় হায় মিলিয়ে যায়।




উদ্‌ভ্রান্তের মতো শ্রান্তিহীন বিস্মৃতি নিয়ে
আকাশের সিঁড়ি বেয়ে দূরে বহুদূরে,
অশ্রান্ত সন্ধানীর মতো, নিশিদিন
বিরামবিহীন ঘুরেছি
কল্পনার সারারাজ্যজুড়ে।




অশান্ত অনেক বাঁক ঘুরে
জীবনের কুঞ্জ হতে দূরে—বহুদূরে
একান্ত নিরালায় অন্য কোনোখানে
মানুষের, শুধু মানুষের
সোনালি স্বপন রচি অন্য এক পথে…
এ শুধু নকল স্বপ্ন। মিথ্যা অভিলাষ,
অনন্তের অন্তর হতে ব্যথাহত সুরে
জানায় সে শুধু, যেন নাই, কিছু নাই—
একটু আশ্রয় নাই,
শুধু সংশয়, আকাশের কিনারায়
দিগন্তের কোণে, বিষবাষ্পে-ভরা
ঘন মেঘের চাপা গর্জনে, মেতে ওঠে
বিদ্রোহের সুর।




অন্ধ মনের তলে, রুদ্ধ হয়ে গেছে
আকাশের দুয়ার। সুর ফিরে গেছে ওই
বেদনার হিমালয়ে; স্তব্ধ-বদ্ধ পথে
মরছে গুমরে, তাই বুঝি সে সুর ফিরে এল
কান্নায় অপরূপ স্বপ্নময় চোখে।




কী আশ্চর্য এই মানুষের মন!
মনের অতলে তার তীক্ষ্ণ অনুভূতি
কম্পিত শিখায় শুধু নেভে আর জ্বলে
কামনার বহ্নিশিখা জ্বালি নিশিদিন।




কেন সে আবার আসে রুদ্ধ বাতায়নে;
প্রিয়ার চোখের মতো সাগরের নীলে
কুসুম-মাস কোথায় নিরুদ্দেশ; তবুও
কি ব্যথা আজ‌ও আছে জেগে
মর্ত্যের ঘাসে? শান্ত পৃথিবী, স্তব্ধ আকাশ
বিস্মিত চোখে থাকে চেয়ে।




শতাব্দীর পুঞ্জীভূত বেদনার শিখা
জ্বলে ওঠে সহসা যে মনের অতলে
সমাকুল অরণ্যের দিগন্তপ্রাঙ্গণে
ব্যথা হানে।




প্রকাশের ব্যাকুলতায় বেদনা-বিস্ময় চোখে
ফুটে ওঠে চাপাস্বরে প্রচ্ছন্ন আভাষে
তাই একদিন। মনে পড়ে সেই বিগত
গোধূলিকে। পূরবী সন্ধেয় ক্লান্ত সুরের
রেশ,
মর্মর-মুখরিত সে মৌন সাঁঝে
সুরভি তো ঘাসে, ফুলে জমেছিল বেশ। তবুও
সেদিন রূপহীন সৌন্দর্যের অতলে,
সহসা কখন ভুলে সব, ক্ষমাহীন চোখের
চাওয়ায়
যেতে হয়েছিল চলে।
Content Protection by DMCA.com