মেয়ে, ভালোবাসো—নিজেকে বাঁচিয়ে!

 তুমি তাকে মেসেজ পাঠালে। সে রিপ্লাই করল। কথাবার্তা চলল, তোমরা বন্ধু হলে।
  
 একসময় তুমি তার প্রেমে পড়ে গেলে। তাকে প্রপোজ করলে। ভাবতে সে একটু সময় নিল। তুমি তার খুব যত্ন নেওয়া শুরু করলে। একসময় সে রাজি হলো।
  
 সময় গড়াল। ডেটে যাওয়া, জড়িয়ে ধরা, চুমু খাওয়া। দু-জনের চোখাচোখি, হাতে হাত রেখে হারিয়ে যাওয়া। আহা, সে এক নতুন পৃথিবী যেন! সে তোমার জন্য রীতিমতো পাগল হয়ে গেল! একদমই ওলট-পালট হয়ে গেল তার সব কিছু!
  
 সত্যিই সে তোমাকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলল। অনেক নিবিড়, অনেক শুদ্ধ সে প্রেম! সারাদিনই তোমাকে টেক্সট পাঠায়, তোমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। সারারাতই তোমরা দু-জন কথা বলো, দু-জন মিলে কোথায় যেন হারিয়ে যাও! সে সারাক্ষণই তোমাকে মিস করে। তোমার পিছু ছাড়েই না। সে চায়, তুমিও ঠিক তার মতো করে তাকে নিয়েই সারাক্ষণ থাকো। এক তুমি বাদে তার মনে এখন আর কিছুই নেই।
  
 প্রথম প্রথম তোমার এইসব খুব ভালো লাগত। এত যত্ন, এত প্রেম, এত শিহরন পৃথিবীতে থাকতে পারে, এটা আগে কখনও ভাবোইনি! কিছু দিন ভালোই কাটল।
  
 একদিন হঠাৎ করেই তোমার মাথায় এল, মেয়েটা পাগল-টাগল না তো? এরকম করছে কেন? কোনও সুস্থ মানুষ এরকম করে? ওর কি সত্যিই আর কোনও কাজ নেই? এভাবে সারাক্ষণই আঠার মতন পেছনে লেগে আছে কেন? আশ্চর্য! আমার আর কোনও কাজ নেই নাকি? কী সমস্যা?
  
 তোমার এখন শুধুই হাঁসফাঁস লাগে। খুবই বিরক্ত লাগে। কখনও কখনও হতাশা এসেও ভর করে। মনে হতে থাকে, কে যেন সারাক্ষণই তোমাকে অনুসরণ করছে। তোমার এখন আর কোনও স্বাধীনতা নেই, ব্যক্তিগত বলতে আর কিছুই নেই। তার ফোন কিংবা টেক্সট এলে এখন তুমি কেমন জানি ভয় পাও। তার কথা মাথায় এলেও কীরকম জানি বিরক্ত লাগে। তার প্রতি তোমার সমস্ত আকর্ষণ ও প্রেম ধীরে ধীরে উবে যেতে লাগল।
  
 একদিন মনটা শেষমেশ বিদ্রোহ করেই বসল। তুমি তাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলে। নো মেসেজ, নো ফোনকল, নো অ্যানিথিং!
  
 তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল, পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। সে পাগলের মতো কাঁদতে শুরু করল, আরও বেপরোয়া হয়ে উঠল। সে তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসে। এতটা অবহেলা মেনে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। বেচারি যেন অথ‌ই সমুদ্রে‌ পড়ে গেল।
  
 তুমি বুঝতে পারলে, ব্যাপারটা আরও ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। সামনেই সমূহ বিপদ! এখুনিই পালাতে হবে, নইলে আরও দেরি হয়ে যাবে। ভালোবাসাই সব কিছু নয়, তোমার এখন শান্তি লাগবে। তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে, আর নয়, অনেক হয়েছে! তোমাদের দু-জনের এখন আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো।
  
 তাকে এইসব বললে। খুব ঠান্ডামাথায়, শীতল কণ্ঠস্বরে।
  
 সব শুনে সে যেন মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গেল! তার হৃদয়টা ভেঙে চৌচির হয়ে গেল, সে একাকী চিলেকোঠার মেঝেতে বসে উন্মাদিনীর মতো কাঁদতে লাগল। সে ক্রমেই টুকরো টুকরো হয়ে গেল। আজ তার আর কিছুই নেই। তার পুরো পৃথিবী হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেছে। বেঁচে থাকার একটাও অর্থ তার সামনে আজ আর নেই। তার সাজানো জীবনটা বিনা অপরাধেই এমন ধ্বংস হয়ে গেল!
 তোমার ওই একটা সিদ্ধান্তে আজ তার সবই শেষ! বেঁচে থাকার মানে কোনোমতে মুহূর্তগুলি গুনে চলা। আজ তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, অনেকক্ষণ পর পর বুকভরে একটু একটু দম নিতে পারে সে। যার জন্য একদিন সে বেঁচে ছিল, আজ তার জন্যই তাকে গুনে গুনে দম নিতে হচ্ছে। আজ সে আলোহীন খাঁচায় আটকে-পড়া এক প্রাণহীন পাখি যেন!
  
 তুমি কিন্তু ভালোই আছ। তাকে সব জায়গা থেকে ব্লক করে রেখেছ, নতুন কোনও নম্বর থেকেও সে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না। আজ তার সমস্ত অস্তিত্বের মানেই তোমার ব্ল্যাকলিস্ট!
 আচ্ছা, একটু ভাবো তো তার অবস্থাটা? সে কি তোমার কাছে নিজ থেকে এসেছে, না কি তুমি নিজেই তাকে টেনে এনেছ? তোমাদের মধ্যে যা-কিছুই ছিল, সেখানে তো তোমারও পূর্ণ প্রশ্রয়-আশ্রয় ছিল, তাই না? একটু ভাবো তো, সে এখন কীসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে! একদিন তুমিই খোঁজ নিতে, সে খাচ্ছে কি না, তার কিছু লাগবে কি না, সে ভালো আছে কি না, তার মনটা ভালো আছে কি না, আরও কত কিছু! আর আজ? সে যে না খেয়ে থাকে, সে যে মৃত্যুর সঙ্গে প্রগাঢ় আলিঙ্গনে দিন কাটায়, সে যে তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসে, সে যে কিছুতেই এইসব মেনে নিতে পারছে না, এইসব তোমার মনে সত্যিই কি আসে না?
  
 ভাবনা কি সত্যিই আসে না তোমার মনে? তার কথা ভেবে কষ্ট হয় না? একটুও...না?
 না...বোধ হয়। সে আজ ধ্বংস হয়ে গেছে। এর জন্য তুমিই দায়ী। হ্যাঁ, তুমি তাকে নিজের হাতে হত্যা করেছ। ইচ্ছে করে, মনের খেয়ালে। কেন করলে এমন?
  
 কারও প্রতি নিছক আকর্ষণের কারণে তার জীবনটাকে এভাবে নষ্ট করে দিলে? তার ভবিষ্যৎ, তার বর্তমান, তার অতীত...সবই অর্থহীন করে দিলে? দিনের পর দিন তাকে স্বপ্নের সাগরে ভাসিয়ে আজ তার জীবনটা এতটা দুঃস্বপ্নে ডোবালে?
  
 যাকে বিয়ে করতে পারবে না, তাকে বউ ডাকতে কেন? যাকে একদিন আর সহ্য‌ই করতে পারবে না, তাকে অতটা প্রশ্রয় দিতে গেলে কেন? এত সহজ সব কিছু? মেয়েরা কি খেলার জিনিস যে, খেললাম আর খেলাশেষে ভাঙলাম? তোমার জন্য যা নিছকই খেলা, তার জন্য হয়তোবা তা-ই পুরোটা জীবন! মানুষ হিসেবে বাঁচতে গেলে এইসব ভাবতে হয়, সবার আগে মানবিক হতে হয়। ছেলেদের কি মানুষ হ‌ওয়া বারণ?
  
 মেয়ে, তোমাকেও বলি। নিজের সম্মানটা বুঝতে শেখো। একদিন তুমিও মা হবে। যার মায়ের আত্মসম্মানবোধ এত অল্প, সে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখবে কার কাছ থেকে? তুমি তো কারও বোন, তাই না? তোমাকে কষ্ট পেতে দেখলে তোমার ভাইয়ের কিংবা বোনের কেমন লাগে, ভেবেছ কখনও?
  
 তুমি যে পরিবারের সদস্য, যে পরিবারকে একদিন তুমি সবসময়ই তোমার প্রেমিকের পরে স্থান দিয়েছ মনের ভুলে, সে পরিবারের মানুষগুলি তোমাকে এমন কষ্ট পেতে দেখলে সত্যিই অনেক কষ্ট পায়। বিশ্বাস করো, আর কেউ না পেলেও ওরা...পায়! তোমার যে বন্ধুদের দিনের পর দিন সময় দাওনি শুধুই সেই ভুল মানুষটার জন্য, ওরাও তোমাকে ভালো থাকতে দেখলে খুব খুব খুশি হয়। বিশ্বাস না হলে খোঁজ নিয়েই দেখো!
  
 মেয়ে, এই ভুলটা আর কখনও কোরো না। প্রেমিকা হও, বেপরোয়া নয়। ছেলেরা অতটা নিতে পারে না। মুখে যা-ই বলুক, সত্যিই নিতে পারে না অতটা। সময়‌ই সব দেখিয়ে দেয়। সারাক্ষণই একটা মানুষের চোখের সামনে লটকে থাকলে সে তোমাকে মিসটা করবে কখন? চোখের সামনে সারাক্ষণই মৃত প্রিয়জনের ছবিও দেখতে দেখতে মানুষ একসময় সেই ছবি আর মনে দেখে না, শুধুই চোখে দেখে। মনে রেখো, ছেলেরা মেয়েদের মতো করে সত্যিই ভাবে না।
  
 একটু ভাবো, যাদের তখন অত অবহেলা করলে, আজ এই ঝড়ের দিনে তারাই তোমার পাশে আছে। যার জন্য তাদের অবহেলা করলে, তোমার এমন কষ্টের দিনে তোমার খোঁজ নেওয়া দূরে থাক, তোমাকে মনে করার সময়টুকুও তার নেই।
  
 নিজের প্রতি সুবিচার করো। জোর করে হলেও ভুলে যাও। ভাবছ, এ আবার কেমন কথা? জোর করে ভুলে যাওয়া যায়? যায় যায়, তার জন্য তীব্র ইচ্ছে থাকতে হয়। তার সব স্মৃতি সরিয়ে ফেলো, তার সব কিছুই পুড়িয়ে ফেলো। যা তোমাকে পোড়ায়, তুমিও তাকে পোড়াও। পোড়াতে জানে না যে, তাকে দিনরাত পুড়তেই হয়। নিয়ত বদলে ফেলো, নিয়তিও বদলে যাবে। সহজ হিসেব! নিয়তি আবার বদলায় কীভাবে!? ঠিক‌ই ভাবছ, বদলায় না; তবে যেটাকে নিয়তি ভাবছ, তা নিশ্চয়ই বদলায়, যদি নিয়ত বদলাতে পারো!
  
 যে মেয়ে পৃথিবীতে একটা নতুন মানুষকে নিয়ে আসার মতো অত অসহ্য যন্ত্রণার একটা কাজও করতে পারে, সে একটা পুরনো অপ্রয়োজনীয় মানুষকে তার পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার মতো সামান্য কাজটাও করতে পারবে না!?