ভাবনা: নয়-শো ষাট ……………………………………………………… ১। ভালোবাসার সময় নাই। ভালোবাসার দরকার নাই। ভালোবাসা একটা দুর্ঘটনা। একটা দুর্ঘটনা... সারাজীবনের কান্না। দোহাই তোদের, একটুকু চুপ কর, ভালো না বাসিবারে দে আমারে অবসর। ২। নিরহংকার মানুষ দুই রকমের হয়: যার কোনো অহংকার নেই, অহংকার করার মতো যার কিছুই নেই। ৩। ধার্মিক মানুষ আর ধর্ম এক জিনিস নয়। অনেক ধার্মিক মানুষই অজ্ঞতা ও দম্ভের বশবর্তী হয়ে ধর্ম নিয়ে মনগড়া কথাবার্তা বলে। আমরা পাত্তা দিই বলেই ওরা বলতে পারে। শুনলে ধর্মের কথা শুনতে হবে, ধার্মিক লোকের কথা নয়। লোকের কথা শোনার আগে তা কষ্ট হলেও যাচাই করে নেওয়া জরুরি। ধর্মের কল আগে নড়ত বাতাসে, এখন নড়ে ফেইসবুকে। আমরাই তো নাড়াই, তাই না? কী দরকার? ধর্মীয় বিষয়ে মূর্খতার চাইতে নির্বিকারত্ব শ্রেয়। এতে আর যা-ই হোক, কারও কোনো ক্ষতি হয় না। মানুষের জন্য ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। ৪। বাঁচার জন্য পাঁচ জনের দরজায় হাত পাততে হয় যাকে, ষষ্ঠ জনের দরজাকে উপেক্ষা করবে সে কোন অভিমানে? না কি এ অভিমান নয়, এ কেবলই সপ্তম দরজায় ছোটার তাড়া? ৫। জানে না, কেউ জানে না, প্রতিমুহূর্তে এ বুকে কেন জাগে বেদনা। নির্ভাবনায় হাসিমুখে খেলত যে ছোট্ট পুতুল শান্তি-সুখে, কোন সে কুহকের নিমেষ ছলনা কেড়ে নিল সব, ডোবাল জীবন... পাপের মানে বোঝার আগেই কোন সে পাপের শাস্তি পেয়ে অমন করে বিদায় নিল...আহা, আমাদের সেই ছোট্ট পুতুল! ৬। কইতে গেলে নতুন কথা, গাইতে গেলে নতুন গান, খেলতে গেলে নতুন খেলা, খুলতে গেলে নতুন প্রাণ, চাইতে গেলে নতুন চোখে, হাসতে গেলে নতুন মুখে, মাততে গেলে নতুন সুধায়, ডুবতে গেলে নতুন স্বপ্নে... মন বলে বারবারই আজ পাশে কেন তুমি নেই? এমন দিনেও কেন থাকতে হলো দূরে? তোমায় হারিয়ে যদি পেলাম সবই, পেলাম কী তবে? ৭। কিছু মানুষ সমাজের হয়েও সমাজের কেউ নয়। কিছু মানুষ পরিবারের হয়েও পরিবারের কেউ নয়। ৮। নারায়ণ ঠাকুরের বিগ্রহকে কুয়োর জলে স্নান করালেও তা নারায়ণ ঠাকুরের বিগ্রহই থাকে, লোকে মাথা নত করে তাতে প্রণাম করে। একই ধাতুতে তৈরি বস্তুটি যদি নারায়ণ ঠাকুরের বিগ্রহ না হয়ে নিছকই একটি ধাতব গোলক হতো, তবে তা গঙ্গাজলে ধোয়ালেও কেউই তার ন্যূনতম কদরটুকুও করত না। কেবল গড়লেই হয় না, ঠিকভাবে গড়তে হয়। ৯। : কে কার? . . . যে যার? : যখন যার, তখন তার। ১০। When you're cheating some persons, you're a cheater; but when you're cheating the masses, you're a politician. ১১। তোমার সাথে পরিচয় হওয়াটা আমার জন্য অনেক বড়ো একটা আশীর্বাদ। তোমার বাবা-মা'য়ের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তুমি পৃথিবীতে না এলে আমি ভালোবাসতাম কাকে? এই আনন্দ, এই সুখ কোথায় পেতাম, বলো? হয়তোবা আমাকে তোমার আর মনেও পড়ে না। না পড়ুক। যা কিছু ঘটে ঘটুক, তুমি আমায় ভুলে গেলে যাও, তবু আমি তোমায় ভুলব না। তোমায় মনে না রাখলে এ মনে রাখব আর কাকে? আমি তোমাকে মনে রেখে বেঁচে থাকি। সেই তুমি আজও আছ। সেই স্মৃতি আজও আছে। আমাদের দেখা হবার সেই জায়গাগুলি আজও আছে। পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে সবকিছু মনে পড়ে যায়। তুমি চলে গেছ, এর চাইতে বড়ো সত্য... তুমি এসেছিলে। তুমি নেই, এর চাইতে বড়ো সত্য... তোমাকে নিয়েই আমি আছি। তোমাকে দেখার পর এ দুটি চোখ বদলে গেছে। তোমাকে ছোঁয়ার পর এ দুটি হাত বদলে গেছে। তোমাকে হারাবার পর আরও বেশি করে পেয়ে গেছি। এখন আমায় একা করে, এমন সাধ্য কার? ১২। এক ভদ্রলোক এসেছেন মাদার তেরেসার ইন্টারভিউ নিতে। : দিনের পর দিন এমন ধৈর্য ধরে এত অসহায় মানুষের সেবা করার শক্তি আপনি কোথায় পান? : প্রার্থনা থেকে পাই। আমি প্রতিদিন দীর্ঘসময় ধরে প্রার্থনা করি। : বাহ্ খুব ভালো! তো প্রার্থনায় আপনি ঈশ্বরকে কী বলেন? : কিছুই বলি না। আমি কেবল চুপচাপ শুনি। : আচ্ছা! তো ঈশ্বর কী বলেন আপনাকে? : তিনিও কিছু বলেন না; কেবল চুপচাপ শোনেন। আহা, প্রার্থনার কী চমৎকার সহজিয়া-প্যাথোস! এভাবেই নিভৃতে ঈশ্বরের সাথে আমাদের নিরবচ্ছিন্ন কথোপকথন চলে। এই আন্তরিক আলাপ একান্ত নিজস্ব, এই নিরিবিলি ঘরটি বড়ো শান্তির, এই চিরন্তন দর্শন নিতান্ত স্বতঃস্ফূর্ত। মনের মন্দিরেই ঈশ্বরের অধিষ্ঠান। সেখানে পৌঁছোতে এক নিজের আত্মা বাদে আর কোথাও পৌঁছোতে হয় না। আত্মার ঘরই ঈশ্বরের ঘর। সুফিসাধক মনসুর আল-হাল্লাজের একটি গভীর দার্শনিক উচ্চারণ প্রায়ই মনে আসে... আনাল হাক্ক (আমিই পরম সত্য), যে কথাটি বলার জন্য তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। তাঁর অপরাধ ছিল: ওদের কেউই তাঁর দর্শনের মর্ম সেদিন বুঝতে পারেনি। মানুষ কেবল মুখে মুখেই সত্যে বাঁচতে চায়; প্রকৃতপক্ষে সত্যে বাঁচতে মানুষ ভয় পায়। সত্যই ঈশ্বর, ঈশ্বরই সত্য। আত্মাই ঈশ্বর, ঈশ্বরই আত্মা। সত্য, আত্মা ও ঈশ্বর একমেবাদ্বিতীয়ম অভিন্ন সত্তা। ১৩। সহধর্মিণী ঘর টেকায়, সহঅধর্মিণী প্রাণ বাঁচায়। সহধর্মিণী যখন সহঅধর্মিণীও হয়ে উঠতে রাজি হয়, তখন তাকে বন্ধু বলে। আর রাজি না হলে তাকে বউ বলে। বধূ চায় বর, বর চায় বঁধু, ঘর করে পর ওরা মরে ধু-ধু। ছেলেরা সহধর্মিণী পাবার আশায় বিয়ে করে। তারপর একসময় আবিষ্কার করে, তার আসলে একজন সহঅধর্মিণী দরকার ছিল। কিন্তু তখন আর কিছুই করার থাকে না। মানুষ ভাবে এক, অথচ তার ভাবা উচিত ছিল আরেক। ১৪। যে বিপদটা এড়ানো যায় না, আবার বহন করতেও ভীষণ কষ্ট হয়, তার প্রাথমিক ধাক্কাটা কোনোমতে সামলে উঠতে পারলে মানুষ সেখান থেকেই বাঁচার নতুন শক্তি ও কারণ খুঁজে নেয়। তখন বিপদ আর বিপদ থাকে না, বদলে গিয়ে চলার অবলম্বন হয়ে যায়। বিপদ থেকে যে আশ্রয় মেলে, তার ভিত্তিটা বেশ মজবুত। ১৫। ইগো কমাও। তুমি যে আকাশে উড়ছ, সে আকাশটা অনেকেই ওড়ার উপযুক্ত বলেও গ্রাহ্য করেনি এবং এখনও করে না। এই কথাটা তোমার আমার সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ১৬। তোমাকে পেতে চাই না। আমার সবকিছু দিয়ে আমি তোমাকে ভালোবাসি, এই সত্যটা তুমি বুঝতে পারো কি না, শুধু এটুকু জানতে চাই। ১৭। বুঝি তো সবই; একটু দেরিতে বুঝি আর কি! হারিয়ে বুঝি... ১৮। Blue Label doesn't cost you character, it costs you money. ১৯। . . . as enjoying yourself is an expensive habit. ২০। সেই জয়ের গর্ব কীসের, জেতাই যখন বাধ্যতামূলক? সেই হারের লজ্জা কীসের, হারই যখন জিতের সমান? ভাবনা: নয়-শো একষট্টি ……………………………………………………… ১। মনের কথা খুব কষ্ট হলেও মনেই রাখি চেপে, ভালোবাসি যে... কিছু বলতে গেলেই কণ্ঠ ওঠে কেঁপে! ২। নিজের ভিক্ষের থালাটি নিজেকেই বহন করতে হয়। মানুষ অন্যের মৃতদেহ বহন করতে পারে, ভিক্ষের থালা নয়। ৩। চাঁদ উঠেছে, ফুল ফুটেছে, আমার তাতে কী? এই বয়সেও বাবার ঘাড়ে, বৃথাই জন্মেছি! ৪। মৃত্যুমুখরা পৃথিবী। ৫। মেয়েটি অনেক বড়ো হতে চেয়েছিল। তারপর . . . একদিন সে প্রেমে পড়ল। তার আজও মনে পড়ে একসময় সে অনেক বড়ো হতে চেয়েছিল। ৬। এ মনে আজও আমরা দু-জনে একজন; ভুলেছ তুমি, তবু ভোলেনি এ মন। ৭। রাত্রি নামলে আমাকে ঢেকে শোয় তোমার আকাশ। কেন আমার আকাশ ঢাকে না তোমাকে শোবার সময়? ৮। পুরান চাল ভাতে বাড়ে। পুরান প্রেম রাতে বাড়ে। ৯। প্রেম সময়কে অসময় করে দেয়, আর অসময়কে সময় করে দেয়। ১০। এ কেমন নির্দয় নির্লজ্জ রাত! তাকেও ভুলতে দিচ্ছে না, আর কাউকেও মনে আসতে দিচ্ছে না! ১১। উইকেন্ড...সলিটিউড... জেবিএল-ব্লু লেবেল-রাইটিং... ...লাইফ! ১২। সে-ই নতুনকে পুরাতনের চাইতে বেশি আদর করে, যার কাছে কোনো নতুনের আবেদনই দীর্ঘস্থায়ী নয়। এমন লোকের জীবনে নতুন হয়ে আনন্দের স্রোতে ভেসে গেলে দুঃখ পেতে বেশি সময় লাগে না। ১৩। লোকে বলে, মানুষ রূপের পাগল। আমি তো দেখলাম, মানুষ ব্যথার পাগল। নইলে কি আর কেউ বারবার প্রেমে পড়ত? ১৪। পৃথিবীতে যেদিন মানুষ ছিল না, সেদিন পথ বলেও কিছু ছিল না। পায়ে হেঁটে মানুষ পথ তৈরি করেছে। এখন চাইলেই কি আর পথকে অস্বীকার করা যায়? এ জীবনে যেদিন তুমি ছিলে না, সেদিন স্বপ্ন বলেও কিছু ছিল না। পাশে থেকে তুমি স্বপ্ন তৈরি করেছ। এখন চাইলেই কি আর স্বপ্নকে অস্বীকার করতে পারবে? যেতে চাও তো যাও। যে সত্য দেখতে পায় না, সে অন্ধ; আর যে সত্য দেখতে চায় না, সে ভণ্ড। আমি ভুল করে ভিখারির চোখে পুরো পৃথিবীর দৌলত দেখে ফেলেছিলাম। এক্ষুনি চলে যাও! ১৫। মালা গলায় পরার আগেই ছোটো করে নিতে হয়; বড়ো হলে ধুলায় লুটায়। যে মালা ধুলায় লুটায়, তা শ্রী নয়, বরং গ্লানিই বাড়ায়। ১৬। যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ বাঁশ। ১৭। পেটের দায়ে প্রেমের দায় শুকায়ে, ফুরায়ে নগদে পালায়! ১৮। মজা করতে সবাই পারে না। অনেকেই মজা করতে গিয়ে নিজের অজান্তে মন খারাপ করে দেয়। মজা করতেই সবাই মজা করে না। অনেকেই মজার ছদ্মবেশে ইচ্ছে করে মন খারাপ করে দেয়। প্রথম ধরনের মানুষকে বেআক্কেল বলে। দ্বিতীয় ধরনের মানুষকে বেআদব বলে। খুব ভালো হয়, যদি তৃতীয় ধরনের মানুষ হয়ে উঠতে পারেন, যে-মানুষ প্রথম দুই ধরনের মানুষকে সচেতনভাবে এড়িয়ে চলে। ১৯। মন খারাপ করে থেকে কোনো লাভ নেই। ঈশ্বর যাকে যে-কাজের জন্য পাঠিয়েছেন, তাকে সে-কাজ করেই সুখে থাকতে হয়। ২০। আপনি ভাবেন, কেন যে ক্যাটরিনার মতো একটা বউ পেলাম না! আপনার বউ ভাবেন, আমার বরটা কেন আমাকে ভালোবাসে না? ... অথচ তাঁর ভাবার কথা ছিল... কেন যে ঋত্বিকের মতো একটা বর পেলাম না! ছেলেদের প্রত্যাশার পারদ ওদের ভুঁড়ির দ্বিগুণ উঁচু। ২১। বিরাট হৃদয় তার... আকাশের মতো, বুকে তারার মেলা... নারী শত শত! ২২। প্রেম সবসময়ই মূল্যবান; দিনে দিনে তার দাম কেবল বাড়তেই থাকে... বাড়তে বাড়তে একসময় সে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। যে প্রেমে পড়ে, সে শুরু থেকেই মূল্যহীন; দিনে দিনে তার দাম কমতে কমতে একসময় সে ভিখারিরও অধম হয়ে যায়। ২৩। ঘরের ভেতর মানুষ থাকে, তার ভেতরে মন; মনের ভেতর ঠিকানা থাকে, ভিন্ন ঘরে বন্ধন। ২৪। যার যেটা অভাব, সেটা দূর করার ব্যর্থ প্রয়াস চালানোই হচ্ছে মানুষের চিরদিনের স্বভাব। যা পাওয়া যায় না, তার জন্যই মানুষ পাগল! আর যা হাতের কাছে, তার দিকে মানুষ ফিরেও তাকায় না। তেমনি আপন বলতে যার কেউ নেই কিংবা থেকেও নেই, সে চায় পরকে নিবিড়ভাবে আপন করে বাঁধতে। . . . কিন্তু সে বন্ধনের শৈথিল্য যখন স্বাভাবিক নিয়মেই তার কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তখন সে হয়ে ওঠে দুর্বার বেপরোয়া, ক্রমেই অসহায় দুঃখী। মানুষ আরও ভালো থাকতে চেয়েই সব হারায়। যা পাবার কথা, তা পেলে মানুষ যতটা পায়, যা পাবার কথা নয়, তা-ও পেয়ে গেলে মানুষ ততোধিক হারায়। অন্যকে দেওয়া দুঃখ মূলত বিনিয়োগ, যা কয়েক গুণে ফেরত আসে। . . . হ্যাঁ, আসেই! ২৫। আমি ভালোই তো ছিলাম, তবু ভালো রাখতে কেন এলে? আমরা ভালোই তো ছিলাম, তবু ভালো থাকতে কেন গেলে? এ কেমন ভালোরাখা-ভালোথাকা... যার দ্বিতীয় জন্মই প্রথম মৃত্যুর জন্ম? ভালোবাসা নয়, লোভ। লোভ নয়, মৃত্যু। ২৬। বোধ ছাড়া জ্ঞান বৃথা, বোধ ছাড়া ধ্যান বৃথা! বোধ ছাড়া প্রাণ? সে যে আয়ুতেই মৃত্যুদান! ২৭। মা-ও প্রায়ই নিন্দা করে, বাবা কখনও না রাখে আদরে, ভাই ক্বচিৎ করে মায়ায় সম্ভাষণ; রাস্তার লোকেও তাকে না গোনে, সন্তানও তার বারণ না শোনে, স্ত্রীও না করে সোহাগে আলিঙ্গন; দেখা হলে চাইবে ধার, সে ভয়ে বন্ধু-পরিবার, যতনে এড়ায় দরিদ্র বেকারে; প্রিয়, এসব মাথায় রেখে, থেকো না দূরে অর্থ থেকে, উপার্জনেই শ্রীবৃদ্ধি সংসারে। ২৮। নিজের ধর্মটাকে যে যেমন বোঝে ও পালন করে বা এড়িয়ে চলে, সে ঠিক তেমন মানুষ। ২৯। আমি জানি, এই দু-একটা কথা লিখে তোমাকে পাঠানোর অবস্থানটি আমি নিজহাতেই নষ্ট করে ফেলেছি। অনেক দিন আগেই। মানুষ কষ্ট পেতেই নষ্ট করে। তবু লিখছি। খুব কান্না পাচ্ছে। আজ প্রতিটি মুহূর্তে তোমার কথা মনে পড়েছে। চোখ দিয়ে টপটপ জল পড়ছে, আর তোমার ও তোমার বরের জন্য প্রার্থনা ঝরছে হৃদয় থেকে। আবারও মেনে নিচ্ছি, সব ভুল আমার যেহেতু, তাই আমার এইসব অশ্রুপাত আমার প্রাপ্য। তুমি আমার কাছে ঈশ্বরের মতন একজন মানুষ। তোমাকে যে ভুল করে হারিয়েছে একদিন, সে শুধবে কী করে তোমাকে পাবার ঋণ? তুমি আজ নেই, এর চেয়ে বড়ো সত্য... তুমি এসেছিলে! তুমি এসেছিলে, এর চেয়ে বড়ো সত্য... তুমি আজও আছ! ভালো থেকো। পৃথিবীর যেখানেই থাকি, যতদিন বাঁচব, তোমার জন্য প্রার্থনা করেই বাঁচব। আমি প্রার্থনায় তোমাকে শুনতে পাই, তোমাকে দেখতে পাই, তোমাকে ছুঁতে পারি, তোমাকে বুঝতে পারি। নিজেকে চিনতে পারিনি বলে একদিন তোমাকে হারিয়ে যেতে দিয়েছিলাম। আজ মনে বলে মরে যেতে; হৃদয় বলে তোমাকে পেতে। ৩০। তুমি এসেছিলে কেবল চলে যাবার জন্যই--- শুধু এটুক ছিল বুঝতে বাকি! সন্দেহ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু শুধোতাম কাকে... মন যে তখন ছিল তোমাতেই! আমাদের মিলন হয়েছিল ...বিচ্ছেদের প্রয়োজনেই। ভাবনা: নয়-শো বাষট্টি ……………………………………………………… ১। যে বাঁধন জড়ালাম চিত্তে, কী করে মানব সে যে মিথ্যে! ... এই দু-লাইন যত বার শুনি, তত বারই চোখ ভিজে যায়। চোখ ভেজাতেই গানটা বারবার শুনি... বারবার শুনি...। কখনো কখনো নিজেকে কিছু সময়ের জন্য থামাতে অশ্রুর আশ্রয় ভালো লাগে। বাঁচার জন্য বুকের ভেতরে কিছু ব্যথার প্রয়োজন হয়; মাঝে মাঝে অনুশোচনায় পুড়তে বড়ো সুখ পাই। এমন কিছু গানই দিনশেষে আয়ুকে টেনে নেয়... প্রিয় পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, আপনি এই সত্য এত সহজে বলে ফেললেন!! ২। জীবনের চাইতে বড়ো বই আর নেই। নিজের জীবনের চেয়ে আদরের আর কী আছে? যার বই পড়ার সুযোগ অল্প, সে বরং প্রার্থনা করুক। প্রার্থনায় সব শোনা যায়, সব বোঝা যায়। প্রশ্নের উত্তর তো নিজের ভেতরেই, তা দেখার জন্য নিবিষ্ট মনে প্রার্থনা করতে হয়। প্রার্থনা কী? প্রার্থনা হলো সেই সাধনা, যা আনন্দ দেয়, হৃদয়কে জাগায়। যার হৃদয় ঘুমিয়ে থাকে, পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান মিলেও তাকে জাগাতে পারে না। ভক্তিসাধনার পথেই মানুষ ক্রমশ মানুষ হয়ে ওঠে। জীবনের চেয়ে বড়ো ধর্ম নেই, মানুষের চেয়ে বড়ো সত্য নেই। ৩। চুপচাপ দেখে যাও, ধরা দিয়ো না। ৪। মানুষ ভাবতে পছন্দ করে না, তাই বিশ্বাস করে। ভাবা কষ্টের কাজ, তার চাইতে বরং বিশ্বাস করে কাজ চালানো গেলে তা অনেক বেশি আরামের। "আমি তোমাকে ভালোবাসি।" জাতীয় কথাবার্তা সহজ-সরল মনে বিশ্বাস করে ফেললে তো বিপদে পড়ারই কথা। আবেগের সোদনের কাছে গরমের সোদন কিছুই না। ৫। 'পরিবারের মতন' আর 'পরিবার' এক জিনিস নয়। যদি হতো, তবে ইদ করার জন্য কেউই অফিস ছেড়ে ঘরে ছুটতে পারত না। (চাকরি করার প্রয়োজনে কত যে ভুগিচুগি বলতে ও শুনতে হয়!) 'বোনের মতন' আর 'বোন' এক জিনিস নয়। যদি হতো, তবে কেউই 'বোনের মতন'-এর সাথে 'শুতে' পারত না। (ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট উই মিন হোয়েন উই রাইট 'শুতে'।) আসুন, ভণ্ডামি ছেড়ে লাইনে আসি। একদিন তো মরেই যাব, এত কাহিনি করে কী লাভ? ৬। নিজের পথটা নিজেই হাঁটার চেষ্টা করুন। এমন কাউকে আপনার সে-পথ হেঁটে দিতে অনুরোধ করবেন না, যার পথ আপনি কখনও হেঁটে দেননি এবং দিচ্ছেন না। এ পৃথিবীতে কষ্ট সবারই আছে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ কষ্ট দূর করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাই আপনার কষ্ট, সমস্যা, অসুবিধে নিয়ে ভাববার জন্য সময় দেবে কে? কেনই-বা দেবে? আমি কখনও চাই না সময়; এ জীবনে এক বারই চেয়েছিলাম এইচএসসি পরীক্ষা দেবার পর। শিক্ষা হয়ে গেছে; বুঝেছিলাম, অপরিচিত কারও কাছে বিনা পরিচয়ে সময় চাওয়া যায়, তবে সবসময় তা পাওয়া যায় না। সময় বড়ো দামি জিনিস, কোনো কারণ ছাড়া তা চাওয়ার নাম বোকামি। প্রত্যাশা মনখারাপের জননী। নিজের পথটা নিজেই হাঁটার প্র্যাকটিস করুন। এটা স্বার্থপরতাকে প্রশ্রয় দেওয়া নয়, এটা হচ্ছে বড়ো হয়ে ওঠা। আজকাল মানুষ নিজেকেই সময় দিতে পারে না, অপরিচিত কাউকে সময় দেবে কীভাবে? মানুষ সংসারে সুখী হবার জন্য চেষ্টা করতে করতে একসময় আবিষ্কার করে, যে সংসারকে নিয়ে সুখী হবার জন্য সে লড়াই করছে, তাকে আগের মতোই বা তার চেয়েও বেশি দুঃখী রেখে দিয়ে সংসারটা সুখেই আছে। মানুষ ভালো নেই। আপনার কাছে ভালো থাকার প্রেসক্রিপশন চাইছে না যে লোকটা, তার কাছে ভালো থাকার প্রেসক্রিপশন চেয়ে বসবেন না। কীভাবে ভালো থাকতে হয়, তা জানলে তো সে নিজেই ভালো থাকতে পারত, তাই না? জানেন, তবু মনে করিয়ে দিই: পৃথিবীর অন্যতম সেরা মোটিভেশনাল রাইটার এবং স্পিকার ডেল কার্নেগি ব্যক্তিগত জীবনে খুব একটা সুখী মানুষ ছিলেন না। চেন্নাইয়ে আমার মা যখন অপারেশন থিয়েটারে, তখন রাস্তায় এক লোকের সাথে দেখা। তাঁর বাড়ি বাংলাদেশে। আমাকে দেখেই আবেগে আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরে করমর্দন করলেন এবং তাঁর ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলতে শুরু করলেন। তিনি এক বারও জিজ্ঞেস করেননি আমি কেমন আছি বা আমি তখন তাঁর সাথে কথা বলার মুডে আছি কি না। বার বারই বলছিলেন, ভাই, আমাকে বলুন এই অবস্থায় আমি কী করতে পারি, আমাকে কিছু পরামর্শ দিন, আমি আপনার অনেক বড়ো ফ্যান, ইত্যাদি ইত্যাদি। মানুষ মোটামুটি এরকমই; যাকে ভালোবাসে, তাকে পার্সোনাল প্রপার্টি বানিয়ে ফেলতে চায়। তাই আমাকে মানুষ ভালোবাসা ও সম্মান দেখালে আমি ভীত ও বিরক্ত হই; তার কাছ থেকে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করি। আধুনিক মানুষের সবচাইতে বড়ো ক্রাইসিস হচ্ছে: তার জ্ঞানের শেষ নেই, কিন্তু কমনসেন্সের শুরুটাই সে করতে পারে না বা চায় না। মানুষ আজ জ্ঞানের ভারে অপদার্থ। এক্ষেত্রে আপনার জন্য বড়ো আশ্রয় হতে পারে প্রার্থনা, যদি প্রার্থনায় বিশ্বাসী হন। প্রার্থনায় নিজের অন্তরস্থিত সৃষ্টিকর্তার সাথে নিভৃতে আলাপে বসুন, ধৈর্য ধরলে একে একে সব উত্তর পেয়ে যাবেন। এমনকি কিছু উত্তরের প্রশ্নও পাবেন, যদি আপনার আত্মার ভেতরে যে ঈশ্বর, তিনি কথা বলতে আরম্ভ করেন। নিজের বিশ্বাস বা অবিশ্বাস অনুসারে নির্জন প্রার্থনায় সময় দিন, সঠিক উত্তর মিলবেই। প্রার্থনা এমন একটি আশ্চর্য পরীক্ষা, যেখানে সব প্রশ্ন কমন পড়ে। পুনশ্চ। আমার আজব কিছু বৈশিষ্ট্য বলে দিই: কখনো আমাকে রাস্তাঘাটে দেখলে, সবচাইতে ভালো হয়: এড়িয়ে গেলে, আমাকে আমার মতো করে ছেড়ে দিলে। আর যদি কথা বলেনই, তবে অনুগ্রহ করে 'আমি আপনার বিরাট ফ্যান/এসি', 'আপনাকে অনেক ভালোবাসি/সম্মান করি', '(পাইসি তোরে!) আমার কিছু পরামর্শের দরকার ছিল' ইত্যাদি জাতীয় কথাবার্তা ভুলেও বলবেন না। 'আমি কোথায় থাকি, কী করি, কোথায় ও কেন এসেছি'-জাতীয় সকল ব্যক্তিগত আলাপও বাদ! ভাইয়া/দাদা ঠিক আছে, ওসব স্যার-ফার ডাকবেন না। সবচাইতে ভালো হয় সরাসরি নাম ধরে ডাকলে। আই লাইক বিয়িং কলড বাই মাই বিউটিফুল নেইম! সহজভাবে গল্প করবেন, ভালো লাগবে। না পারলে এড়িয়ে যাবেন। আমি বন্ধুত্ব পছন্দ করি; মুরিদগিরি আমার বিরক্ত লাগে। ৭। প্রাসাদ বলে গর্বে উঁচু করে শির, আছ আমার পাশে কেন দাঁড়িয়ে কুটির? গরিবের দল যত, মলিন বসন, তোমার ওই তুচ্ছ কক্ষে করে বিচরণ। ধনীর দুলাল শত, ঘিরছে আমায়, দেখো কত বেশভূষা, চমক লাগায়! কুটির বলে হেসে, সৌধ, আমার সন্তান, বেশভূষায় হীন বটে, তবু সৌম্য প্রাণ। সম্পদ তোমার ভেতর আনেই প্রমাদ, ভায়ে-ভায়ে, পিতায়-পুত্রে ঘটায় বিবাদ। ঐশ্বর্য-বিভব-শূন্য এ কুটিরছায়া ঘিরে, রাজাও প্রাসাদ ছেড়ে শান্তি খুঁজে ফিরে। ৮। যেমন আছ, তেমনই থাকো, বাঁচবে তাতে মান, সাজলে ময়ূর, দাঁড়কাকের ঠোকরই পরিণাম! ৯। রাহেলার ঘরে রবি বড়ো হয়ে উঠছে, যার জন্য আমার সমস্ত ব্যাকুলতা; যদিও সবাই জানে, মায়েরটা বাদ দিলে, রবির জন্য যা ব্যাকুলতা, তা কেবলই রবির বাবার। ১০। আমি বোবা নই, শুধু নির্বাক। ওরা নির্বাক নয়, যদিও বোবা। ১১। সাধের প্রেমে না মেটে সাধ। ১২। আমার চরিত্রের দুইটি অদ্ভুত দিক শেয়ার করছি: এক। আমি ঝাল সুস্বাদু কাঁচামরিচ খেতে ভীষণ পছন্দ করি। ভাতের সাথে কাঁচামরিচ না থাকলে আমার রীতিমতো মেজাজ খারাপ হয়। (কাঁচামরিচ চাইলে বাজারে ফার্মেরটা দিয়ে দেয়, যা একদমই ঝাল নয় এবং খেতে খুবই বাজে; ওটার কথা বলছি না।) দুই। আমি সাধারণত টিভি দেখি না এবং টিভির শব্দ সহ্যই করতে পারি না। যারা দীর্ঘসময় ধরে টিভি দেখতে পারে, তাদের ধৈর্য নিশ্চয়ই অনেক বেশি! আপনার চরিত্রের এমন অদ্ভুত দিক শেয়ার করতে পারেন। ১৩। বন্ধু, নিজের শব কাঁধে নিয়ে কখনো কি হেঁটেছ? তোমার সেই শব, যার বুকে ইচ্ছেরা ছিল লুকিয়ে, সেই শব কাঁধে ফেলে তুমি কি গেছ বর্ষায় দু-কূল হারানো নদীর তীরে, ধবধবে জ্যোৎস্নায় স্নান-করা নির্জন মাঠে? যদি গিয়ে থাকো---তবে নিশ্চয়ই তোমার শব তোমার সঙ্গে কথা বলেছে। বলেছে, এই নদীতে আমায় ভাসিয়ে দাও। এ-ও বলেছে, এই মাঠে আমায় কবর দাও। কী জবাব দিয়েছ তুমি তার কথার? বলেছ কি . . . মৃতদের কোনো ইচ্ছে থাকতে নেই! ভাবনা: নয়-শো তেষট্টি ……………………………………………………… ১। আমরা হারাম-হালাল বুঝি, অথচ মানুষকে (শারীরিক- ও মানসিকভাবে) কষ্ট দেওয়ার বিষয়টা বুঝি না। সূরা আল-আহযাব (৩৩:৫৮) স্মরণে রেখে চললে কারুরই এমন করার কথা নয়। ২। ইদের আগে মানুষের কষ্ট রক্ত হয়ে যখন ঝরে, পশুরা উল্লাস তবু করে? ৩। এ জগতে তিন ধরনের মানুষ আছেন: কেউ দূর থেকে আমগাছ দেখে আর গল্প করে। কেউ কাছে গিয়েও গাছের পাতা গোনে আর গল্প করে; কেউবা আম খায়, তাই গল্প করতে পারে না, বরং চুপচাপ খায়। আপনি কোন ধরনের মানুষ? যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তবে বলব, পরিস্থিতিভেদে আমি একেক সময় একেক ক্যাটাগরিতে পড়ি। ৪। সূর্য দেখাতে কেউ দেশলাই জ্বালে না। কেউ যদি জ্বালে, তবে বুঝে নিয়ো, সে যা দেখাতে চাইছে, তা নিশ্চিতভাবেই সূর্য নয়। ৫। জেতার অনেক রাস্তা আছে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, জেতার সবচাইতে ভালো রাস্তাটি হচ্ছে: আপনি যে জয়টা চান, সেটা পাবার জন্য যেখানে যেখানে জেতা জরুরি নয়, সেসব জায়গায় জেতার কোনো চেষ্টাই না করা। জিততে চাইলে সবার আগে জানতে হবে কোথায় কোথায় হাসিমুখে হারতে হবে। কিছু জায়গা অন্যদের জন্য ছেড়ে দিতে হয়। আপনি কখনোই সব জায়গায় জিততে পারবেন না। বড়ো জায়গায় জয়ের জন্য প্রস্তুতির প্রথম ধাপই হলো, ছোটো জায়গায় হারলেন কি জিতলেন, তা নিয়ে একদমই না ভাবা। মূল জয়টির জন্য যা-কিছু লাগে না, তার সবই অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয় হিসেবে ধরে নিতে হবে। বড়ো জয়ের স্বাদ সবাই পায় না কেবল এই কারণে যে, বেশিরভাগ মানুষই সব জায়গায়, বিশেষ করে সহজ জায়গাগুলিতে জিততে চায়। ৬। ঝর্না চেনো, অথচ তেষ্টা চেনো না? এ দুই তৃষ্ণার্ত ঠোঁট যত বারই কাছে গেছে, ফিরিয়ে দিয়েছ অবহেলায় ঝর্নার রাস্তা দেখিয়ে। মানুষও বুঝি এতটা গরিব হয়? না কি চিত্তের মাপেই মানুষ বিত্ত দেখায়? যদি মাড়িয়েই যাবে, তবে কেন শেখালে করতে আবাদ সবুজ তৃণভূমি? এ কেমন অহংকার তোমার, যার জন্ম ও মৃত্যু দুই-ই পায়ে! ৭। যার জ্ঞান কম, কিন্তু নিজেকে জ্ঞানী দেখায়, তার কোনো কথা ও আচরণ সংশোধন করার চেষ্টা কোরো না, বরং চুপচাপ তাকে এড়িয়ে চলো---যে-কোনো মূল্যে। যার জ্ঞান কম এবং তা সে নিজেই জানে ও আন্তরিকভাবে স্বীকার করে, তার সারল্যকে মূল্যায়ন করো; সুযোগ থাকলে তাকে জ্ঞান দেবার চেষ্টা করো, এতে তার উপকার হবে। যে ব্যক্তি আদতে জ্ঞানী, কিন্তু নিজেই এই সত্যটা বুঝতে পারে না এবং কথাবার্তায় ও আচরণে জ্ঞানকে কাজে লাগায় না, তাকে জাগাও; এতে তোমার নিজেরও লাভ হবে। যে ব্যক্তি জ্ঞানী এবং তা সে নিজেও জানে; তার কাজেকর্মে, কথাবার্তায়, আচারআচরণে, সিদ্ধান্তগ্রহণে জ্ঞানের প্রতিফলন স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, তাকে অনুসরণ করো, তার কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করো। চতুর্থ শ্রেণীর মানুষের দেখা পেতে চাইলে ফেইসবুক থেকে বেরোও। ফেইসবুক লাইক-কমেন্ট আহরণের জায়গা, জ্ঞান আহরণের নয়। ও আচ্ছা, আরেকটা কথা লিখতে ভুলে গেছি। যারা জ্ঞান দেবার জন্য আপনার কাছে নিজেই গিয়ে টানাটানি শুরু করে দেয়, তাদের জ্ঞান এবং মানসিক সুস্থতা নিয়ে সবসময়ই সন্দেহ রাখবেন। ৮। ভুল করা ভুল নয়, তবে ভুলটাকে আঁকড়ে বসে থাকাটা রীতিমতো অন্যায়! ৯। ভাব বেশি নিয়ো না। তুমি যেখানে পড়াশোনা করছ, অনেকেই সেখানে চান্স পেয়েও পড়েনি। তুমি যেখানে রাতদিন যুদ্ধ করে চান্স পেয়েছ, কেউ কেউ সেখানে সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করে ব্রেকফাস্ট সারার পর করার মতো হাতে অন্য কোনও কাজ ছিল না বলেই হাই তুলতে তুলতে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে মেরিট-লিস্টে প্রথম দিকে থেকেও ভর্তি হয়নি। (ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বললাম।) আবার অনেকেই তোমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় ভার্সিটিটাকে ভর্তি পরীক্ষার ফরম নেবার যোগ্যই মনে করেনি। ভার্সিটি নিয়ে ভাব নেওয়া একধরনের ইতরামি ছাড়া আর কিছু নয়। যেখানেই পড়ো না কেন, মনে রেখো, তুমি জন্মগতভাবেই ব্যাকবেঞ্চার। ব্যাকবেঞ্চাররা স্বর্গেও ব্যাকবেঞ্চার, নরকেও ব্যাকবেঞ্চার। স্বর্গীয় ব্যাকবেঞ্চার হবার সুখে অত লাফালাফি করে কী লাভ? একদিন তো মরেই যাবে! ১০। কেউ ভুল বুঝে বসে থাকলে তার ভুল ভাঙাতে একদমই মন চায় না, যদি সেখানে আমার কোনও ভুল না থাকে। যে মানুষ লোকের কথায় প্ররোচিত হয়ে আমাকে ভুল বোঝে, তার কাছে নিজেকে বোঝানোর সত্যিই কি কোনও প্রয়োজন আছে? আর যদি এমন হয়, সেই মানুষটি হয় এমন কেউ, যার জন্য আমি দিনের পর দিন অনেক ব্যর্থতা ও দুঃখ মেনে নিয়েছি, অথচ তাকে মাত্র দু-দিনের পরিচয়ে তৃতীয় কোনও ব্যক্তি এসে খুব সহজেই আমার সম্পর্কে ভুল বোঝাতে সক্ষম হয়েছে, তখন সত্যিই ক্রোধ, অভিমান ও অসহায়ত্ব সবই একসাথে কাজ করে। যাকে আমি কাছের ভেবে আসছি, হঠাৎ করেই সে আমাকে আর কাছের ভাবতে না-ও পারে, এটা মেনে নেওয়া শিখতে হবে। এর কারণ খুঁজে খুঁজে কিংবা তাকে সত্যটা বোঝানোর চেষ্টা করে করে মাথা নষ্ট করে কোনও লাভ নেই। জীবন থেকে কিছু মানুষ হারিয়ে যায়, কেননা ওরা পুরোনো মানুষ হারাতে ভালোবাসে। ১১। এইখানে আয়নায় আমি, তুমি অথবা অন্য কেউ; কিংবা মুহূর্তের ধরে-রাখা ছবি। মুখোমুখি বসে খুব কাছাকাছি আসা, ভালোবাসা; আর হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া। ১২। যেখানে আশ্রয় পাওয়া যায়, তা-ই আশ্রম। মন যার দ্বারস্থ হয়, তা-ই মন্দির। তাই বাবা-মা আশ্রম, আর সংসার হচ্ছে মন্দির। ধর্মকে ধ্যানে রাখলে তা কেবলই ধর্ম থাকে; আর যখন ধর্মকে চিন্তায় রাখা যায়, তখন তার নাম সেবা। ১৩। যার যেমন চশমা, সে তেমনই দেখে। ১৪। এ কী অপূর্ব অনুভব! অপূর্ব, তবে একেবারে অভিনব নয়; আরও কয়েক বার এসব জানিয়েছ, কিন্তু ধরে রাখতে পারিনে। আজ যেন একটু বিশেষভাবে জানিয়েছ। আমাকে ছেড়ে তোমায় ভাবতে যাই। ভাবতে যাই, আমাকে ছেড়েও তুমি থাকতে পারো। আমি যেন তোমার পক্ষে অপরিহার্য নই। আমাকে ছেড়ে তোমার কাছে ছুটতে গেলেই বারে বারে হোঁচট খেয়ে পড়ি। তুমি বলছ, এ ভুল। আমায় ছেড়ে তোমার ভালোবাসা হতে পারে না। আরও বলছ, তোমার কাছে আমার মূল্য অনন্ত। এ কথাও আগে শুনেছি। কিন্তু আমি এরকম কোনও কথাই ধরে রাখতে পারিনে। আমার মনে হয়, তোমার কত সন্তান আছে, আমাকে না হলেও তোমার চলে। এই ভাবতে গিয়ে তোমাকে মানুষের মতো করে ফেলি। মানুষ এক সন্তান হারিয়ে অন্য সন্তান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। মানুষ সন্তানে সন্তানে তারতম্য করে। তুমি বলছ, তোমাতে এই তারতম্য নেই। প্রত্যেক সন্তান তোমার কাছে সমান। প্রত্যেকের মূল্য অনন্ত, প্রত্যেকটিকে তুমি এমন করে ভালোবাসো যেন সেটি ছাড়া তোমার আর সন্তান নেই৷ তোমার কাছে আমার মূল্য অনন্ত, আমাকে না তুলে তোমার চলে না। তোমার সৃষ্টির সমস্ত উদ্দেশ্য আমাতে কেন্দ্রীভূত। আমার না থাকা আর সৃষ্টি না থাকা একই। এ কী অনুভব! আমি ভালো করে এটা অনুভব করি। এ যে একেবারে সকল সমস্যার পূরণ। এ যে প্রেমসাধনের অচল ভিত্তি। এ যে প্রেমস্রোতের উৎস। আমাকে এই অনুভব উজ্জ্বলরূপে দাও। আমার চক্ষু ভালো করে ফোটাও। এই সংসারের ধুল এসে আমার চোখে পড়ছে, তা বারণ কর। আমি এ-ই বললাম। আমি তোমার প্রেমমুখপানে তাকিয়ে থাকব, চোখ ফেরাব না। তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। আর অন্ধকারে ফেলে না রেখে আমাকে আলোকরাজ্যে নিয়ে যাও। আমাকে দীনদরিদ্র সেবক করে তোমার ঘরের এককোণে রাখো, কিন্তু ঘর থেকে তাড়িয়ো না, অন্ধকারে পড়তে দিয়ো না। ভাবনা: নয়-শো চৌষট্টি ……………………………………………………… ১। আপনার দুঃখের সময়ে এমনকী মনে মনেও কাউকেই পাশে চাইবেন না; কোনও সহানুভূতি বা প্রার্থনাও চাইবেন না। এইসব প্রত্যাশা আপনাকে দুর্বল করে দেবে। আপনি খুব তাড়াতাড়িই আশাহত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন। মানুষ খুব একটা সুবিধার প্রাণী নয়। আপনার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লে কেবলই আপনার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে, আর কারুর মাথায় নয়। সবচাইতে ভালো হয়, দুঃখ-কষ্ট পাবলিকলি শেয়ার না করলে। সবাইকে দেখান, আপনি খুব মজায় আছেন। আরও ভালো হয় বিপদের সময়টাতে ফেইসবুকেই না এলে। বিপদ কেটে গেলে আবার আসবেন। দেখবেন, আপনি যে এই কয়দিন ছিলেন না, সেটা তেমন কেউ খেয়ালই করেনি। আপনার দুঃখে যাদের সত্যিই কিছু এসে যায়, তাদের আপনি ফেইসবুকে নয়, পাশে পাবেন। ফেইসবুকের 'পাশে আছি'র চাইতে একটা ঘোড়ার ডিমেরও দাম বেশি। ফেইসবুকে বেশিরভাগ মানুষ মজা নিতে ও দিতে আসে। আপনার দুঃখের কাহিনি পড়ে অনেকেই আপনাকে মনে মনে অ্যাটেনশন-সিকার ভাবে। কী দরকার! নিজের দুঃখ নিজের হাতেই সামলান; অন্য কাউকে ওতে হাত দিতে দিলে দুঃখ প্রায়ই উলটো বেড়ে যায়। ২। অনেক দিন থেকে ইচ্ছে, মনে যা আসে, তা-ই তোমায় বলি অতশত না ভেবে। তোমার সাথে কথা এত দিন যা বলেছি, তাতে তৃপ্তি হয়নি। তৃপ্তি হবার কথাও তো ছিল না। সেসব কথা কেবল এ সকল কথা বলবার আয়োজন। আয়োজন তো একরকম হয়েছে, এখন কেবলই মনে হচ্ছে, তোমায় প্রেমের কথা বলি। না বলে যদি মরি, তবে আদত কথা, যার জন্যে এত দিন আয়োজন করলাম, তা-ই না-বলা রইল। আমি তবে বলবার লোভ সামলাই কী করে? আমি বলবার জন্যে তত ব্যস্ত নই, যত শুনবার জন্যে। আমি যে বলতে চাই, তা-ও অনেকটা শুনবার জন্যেই। আমি বলতে গিয়ে তো তোমার কাছে শুনেই বলব। বলবার সময়টাতে একটু 'আমি'র ভাব থাকবে, বলা হয়ে গেলে আর সে ভাব আর থাকবে না। এরপর যখন ওই সকল কথা শুনব, তখন মনে হবে, অন্যের কথাই শুনছি, আমার কথা নয়। আগে তোমার প্রেমে কথা যা বলা হয়েছে, তা তো অনেক শুনলাম। শুনে তো তৃপ্তি হচ্ছে না। তোমার প্রেমোন্মত্ততার কথা কিন্তু যা শুনেছিলাম, সেটা ভুলিনি। সে কথাটাই মনকে এই ক-বছর মাতিয়ে রেখেছে। সে কথাটাই এখন ভালো করে বলো, তা-ই চাই। আমি অনেক সন্দেহ করেও তোমার ওসব কথা থেকে নিজেকে কোনও রকমেই ছাড়াতে পারলাম না। আমার তার্কিক মন তোমার শেখান তর্কে পরাস্ত হয়েছে। দেখা দিতেও ছাড়োনি। কথা বলতেও ছাড়োনি। আমি দেখেশুনে পরাস্ত হয়েছি। তবু দেখো, আমি তোমার হাতে একেবারে ধরা দিইনি। তোমার প্রেমে ডুবিনি, মজিনি। অথচ মনে সাধ, তোমায় প্রেমের কথা বলি। না ডোবালে, না মজালে, কেমন করে বলব? তাই এত দিন বলিনি। মনে হয়, আগে ডুবি, আগে মজি, তারপর বলব। আবার মনে হয়, যেটুকু দেখেছি, যেটুকু শুনেছি, তার কথা বলি। বলতে বলতে ডুবব, মজব, বলতে গিয়ে শুনব, শুনে শুনে ডুব, মজব আর আমার ডোবা-মজা দেখে অন্য লোকেও ডুববে, মজবে। অন্য লোকের ভাবনাটা কিন্তু আমার ভালো লাগছে না। অন্যের ভাবনা থাক বরং। তোমাতে আমাতে কথা চলুক। তুমি বলো, আমি শুনি; আমি বলি, তুমি শোনো। আমার বলাটা তোমারই বলা হবে, আমি তোমার কাছ থেকে না শুনে যেন একটাও কথা না বলি। শুনি, শুনি, শুনি, কেবলই শুনি, আমার শোনার আশটা পূর্ণ হোক। বলো, বলো, বলো, কেবলই বলো, তোমার বাণীসুধা-সাগরে আমি ডুবি, ডুবি, ডুবি, সাঁতার ভুলে ডুবি, গভীর থেকে আরও গভীরে ডুবি, ডুবেই থাকি, ডুববার আশ পূর্ণ হোক। জানি, আশ পূর্ণ হবে না, পিপাসা ক্রমশই বাড়বে, কিন্তু আশ যেমন বাড়বে, তেমনি মিটবেও; পিপাসা আর জল দুই-ই যে তোমার হাত! ৩। আমার প্রাণের যাতনাটা তো তুমি দেখছ। যাতনা এই ক-দিন খুব বেশি হচ্ছে। ক্রমশ যেন বাড়ছে। বাইরের দুঃখ তো আসবেই। সে কথা তো তুমি আগেই শুনিয়ে রেখেছ। বেশিদিন সংসারে থাকলে সুখও আছে, দুঃখও আছে। আমি তার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম, এখনও আছি। কিন্তু আমার যাতনা তো এ সকল বাইরের ঘটনার জন্যে নয়। তুমি আমাকে সকল দুঃখের যে ওষুধ শিখিয়েছিলে, সে ওষুধ আমি প্রাণে লাগাতে পারছিনে, এ-ই আমার যাতনার কারণ। তোমার ভালোবাসা যদি আমি প্রাণ দিয়ে ধরতে পারি, তবে আমি কোনও দুঃখকেই দুঃখ মনে করিনে। তোমার ভালোবাসা আমি ধরতে পারছিনে কেন? আমার প্রাণের ভেতর যা, তা কেবলই ভালোবাসা। প্রাণের ভেতর বলছি বটে, কিন্তু আমি স্থির হয়ে সেই ভালোবাসা দেখছিনে, আস্বাদ করছিনে। তাতে ডুবছিনে, মজছিনে। আমার মন এখনও খুব চঞ্চল; ক্ষণে ক্ষণেই তোমায় ছেড়ে বাইরে চলে যায়। আমার হৃদয়টা শিশুর হৃদয়ের মতো, বালিকাবধূর হৃদয়ের মতো। ভালোবাসতে জানে, কিন্তু তাতে ডুবতে জানে না। না ডুবলে আর চলছে না। আজ আমি ভালো করে তোমার ভালোবাসাটা দেখব, এমন করে দেখব যে, চোখে সে ঝাঁজ লেগে থাকবে। এমন করে গিলব যে মাছের গলায় বড়শির মতো তা আমার হৃদয়ে লেগে থাকবে, তোমাকে ছাড়া আর আমি 'আমি' হতে পারব না। ৪। সকল কথায় আমার অহংকার রয়েছে, নিজের শক্তির উপর নির্ভরতা রয়েছে। এতে হবে না। আমার দেখা, ডোবা, মজা, এসবও তো তোমার হাতেই হবে। সবই তোমার কৃপা। এই কৃপার উপর আমাকে নির্ভর করতে হবে। তোমার কৃপা যখন হবে, তখনই আমি তোমার প্রেমে ডুবব। কিন্তু আমার বুদ্ধি বলে, তোমার কৃপা তো রয়েইছে। তোমার তো ইচ্ছে, আমি এখনই তোমাতে ডুবি। কেবল আমি ইচ্ছে করলেই ডুবতে পারি। কিন্তু ইচ্ছে তো করছিলাম, তবু তো ডুবতে পারলাম না। এর রহস্য আমি ভেদ করতে পারছিনে। আমার তো কিছু নেই, জানি; সবই তোমার, আর তোমার ইচ্ছে, আমি তোমাতে এখনই ডুবি। তবে আর ডোবা হচ্ছে না কেন? তবে কি তোমার ইচ্ছে নেই যে আমি তোমাতে ডুবি? তা-ও তো বিশ্বাস হয় না। একটা পথ আছে, যার ভেতর দিয়ে তুমি আমাকে নিয়ে যাবে। সে পথটা না ফুরোলে বুঝি পুরো মিলনটা হবে না? আমার আত্মা শিশু। আমি সংসারে বুড়ো। লোকে চায়ই না আমার মধ্যে বুড়োর প্রেমটুক। আমিও ভাবি, আমি বুড়ো আর কোথায়? হলাম যদিও বুড়ো, তবু শিশুর মতন চঞ্চল লঘু প্রেম কেন এত? কিন্তু তুমি তো জানো, আমি অতি ক্ষুদ্র শিশু। শিশুকে মানুষ করতে হবে। তোমার বিধানে আমার আপত্তি করাতে কী লাভ? আমার শৈশবটা তুমি আমায় ভালো করে বুঝতে দাও। আর এ-ও বুঝতে দাও যে আমি যখন নিজের কথা ভাবিনে, তখনও তোমার অবিশ্রান্ত যত্ন চলছে, তুমি আমাকে অজ্ঞাতসারে মানুষ করছ। 'মানুষ করছ'... এই ভাবনাতেই কত সুখ! কষ্ট যে দিচ্ছ, তা-ও তো এই মানুষ করার জন্যেই। কিন্তু আমার মন ক্ষণে ক্ষণে অস্থির হয়ে উঠছে। আমার প্রেমদৃষ্টি স্থির করো, আমার বাহুর আলিঙ্গন দৃঢ় করো। ৫। যার কাছে তুমি একপৃথিবী ভালোবাসা পেতে পারতে, যার কাছে তুমি একসমুদ্র মায়া পেতে পারতে, যার ছায়ায় তোমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত, সেই মানুষটাকে তুমি এতটাই বিরক্ত করে ফেলেছ যে, তোমার উপস্থিতিটুকুও সে এখন আর সহ্য করতে পারে না! ভালোবাসার মানুষকে কখনও এমনভাবে ব্যবহার করতে নেই, যেটা দিনশেষে তোমাকেই নিঃস্ব করে দেয়, যার না ফেরার ধাক্কাটা তোমাকেই সবার আগে আঘাত করে। ভাবনা: নয়-শো পঁয়ষট্টি ……………………………………………………… ১। আফ্রিকার ক্ষুধার্ত জাতিসমূহের মুখে খাবার তুলে দেবার জন্য দিনের পর দিন বিভিন্ন কনসার্টে লক্ষ লক্ষ মানুষকে লক্ষ লক্ষ পাউন্ড দানের জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলছিলেন আইরিশ রকস্টার বব গেলডফ। ঠিক একইভাবে, দুঃস্থ-অসহায় মানুষের জন্যই কাজ করে যাচ্ছিলেন মাদার তেরেসা, তবে ওঁদের দু-জনের চলার পথ ছিল ভিন্ন। মাদার তেরেসার সাথে দেখা করতে কলকাতায় গেলেন বব গেলডফ। একটু ভাবুন, একদমই ভিন্ন পথের দু-জন পথিককে কাছে নিয়ে এসেছিল এক আশ্চর্য জাদু, যার নাম মানবতা। একজন চোখ ধাঁধানো পপস্টার, যিনি বৈশ্বিক ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যবহার করে চলেছেন নিজের শিখরস্পর্শী জনপ্রিয়তাকে; আরেকজন জীর্ণশীর্ণ দেহের ছোটোখাটো মহিলা, যিনি দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন কলকাতার বস্তিতে বস্তিতে... মুমূর্ষু রোগীদের একটু শুশ্রূষা দিতে। তবে এঁদের দু-জনই দু-জনের মহৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানতেন। বব গেলডফ মাদার তেরেসাকে বর্ণনা করেছেন 'একজন ক্ষুদ্রকায় দৈত্য' হিসেবে এবং দেখা হবার পর মাদার তেরেসা তাঁর সম্পর্কে কী বলেছেন, তা-ও বব গেলডফ জানিয়েছেন নানান সময়ে: আমি এমন কিছু কাজ করছি, যা আপনি করতে পারছেন না। আপনি এমন কিছু কাজ করছেন, যা আমি করতে পারছি না। তবে কাজগুলি আমাদের অবশ্যই করতে হবে। কাজ যত ছোটোই হোক না কেন, নিয়ত ঠিক থাকলে কাজের ফলাফল সুন্দর কিছুই হয়। ২। 'ফাইভ টু টেন' নামে বিবিসি'র একটি জনপ্রিয় রেডিয়ো সিরিজে বলা এক গল্পে ফেরা যাক। ওয়েভারলি স্টেশনের কাছে একটি ছোট্ট ছেলে দাঁড়িয়ে ছিল। ছেলেটির দুই পায়েই স্টিলের ফ্রেম বসানো, ফ্রেমে ভর করেই ওকে চলাফেরা করতে হয়। একটু দূর থেকে এডিনবার্গ শহরের মিস্টার ম্যাককে হাসিখুশি ছেলেটিকে চুপচাপ খেয়াল করছিলেন। ওকে দেখে তাঁর মনে হচ্ছিল, এই শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে যেন ওর মনে একটুও দুঃখ নেই। কিছু মানুষ কষ্ট নিয়েই সুখী। ঘণ্টাখানেক পর, মিস্টার ম্যাককে খাড়া এবড়োখেবড়ো পাথুরে পথ বেয়ে পাহাড়ের উপর অবস্থিত একটি দুর্গ দেখতে উঠছিলেন। হঠাৎ অবাক হয়ে দেখলেন, সেই ছেলেটি তাঁকে পেছনে ফেলে খাড়া পথ বেয়ে উঠে যাচ্ছে। ওই পথ দিয়ে উঠতে ছেলেটির খুব কষ্ট হচ্ছিল এবং সে বড়ো বড়ো ঘননিঃশ্বাস নিচ্ছিল। পেছন থেকে ছেলেটিকে ডেকে মিস্টার ম্যাককে তাকে সাহায্য করতে চাইলেন। পেছন ফিরে তাকিয়ে ছেলেটি দাঁত বের করে মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে বলল, আপনি জানেন, এত উঁচুতে এর আগে আমি কখনোই উঠিনি! আজ আমি আমার জীবনের সবচাইতে বড়ো অ্যাডভেঞ্চারটি কমপ্লিট করতে যাচ্ছি! ছেলেটির কথা শুনে মিস্টার ম্যাককে বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে "বেস্ট অব লাক, চ্যাম্প!" বলে ওর উঠে যাওয়া দেখতে দেখতে নিজেও আবার উঠতে লাগলেন। মাঝে মাঝে, মানুষকে নিজের জোরে চলতে দেবার নামই তার পাশে দাঁড়ানো। ৩। আমেরিকার গৃহযুদ্ধ শেষ হবার পর জেনারেল রবার্ট ই লী একটা বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। সেই বাড়ির সামনের বাগানটিতে একটি বড়ো গাছের বিকৃত অবয়ব শত্রুদের নিষ্ঠুরতার সাক্ষ্য দিয়ে চলেছে। জেনারেলকে দেখে বাড়ির মালিক কাঁদতে কাঁদতে বললেন, এই গাছ আমার বাবা লাগিয়েছিলেন। আমার চেয়ে মাত্র দুই বছরের ছোটো এই গাছ। এই গাছের সাথে আমার শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন... বলতে পারেন, আমার পুরো জীবনটাই গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। এই গাছ আমার মৃত বাবার সমস্ত স্মৃতি বহন করে চলেছে। আপনিই বলুন, এখন আমি কী করব! প্রবীণ ভদ্রমহিলাটির কাঁধে হাত রেখে জেনারেল লী শান্তকণ্ঠে বললেন, গাছটি আজকেই কেটে ফেলুন। মায়াকে চোখের সামনে রেখে দেবেন না। ধরে রেখে দিলেও কোনও লাভ নেই যখন, তখন মায়াকে চলে যেতে না দিলে কেবল দুঃখই বাড়ে। জেনারেল লী সেদিন যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা ছিল একটি যুদ্ধপীড়িত জাতির গভীর ক্ষত সারানোর জন্য একমাত্র ওষুধ। অতীতের কষ্টকে সারাক্ষণই চোখের সামনে টাঙিয়ে রেখে কিছুতেই ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির দিকে এগোনো যায় না। অতীতকে ভেবে ভেবে দিনরাত শোকে মুহ্যমান হয়ে থেকে বৃথাই আয়ু ফুরোলে ক্রমেই আমাদের দেখার ইচ্ছে ও শক্তি দুই-ই ক্ষীণ হতে থাকে এবং একসময় তা নষ্ট হয়ে যায়। তাই যা রেখে লাভ নেই, তা ফেলে দেওয়াই বাঁচার উপায়। বাঁচতে চাইলে তো সামনের দিকে তাকাতে হয়, বার বারই পেছনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখলে মানুষ বাঁচবে তবে কীভাবে? ৪। অনেক দিন আগের কথা। দিনটি ছিল ১৭ মার্চ ১৯০৮। পৃথিবীতে নতুন ধরনের একটা বইয়ের জন্ম হলো সেদিন। শিশুদের বিশ্বকোষ। না, শিশুদের জন্য বিশ্বকোষ লেখার কথা তার আগে কারও মাথায় কখনও আসেইনি। সেই তারিখে বেরিয়েছিল বিশ্বকোষের প্রথম খণ্ড। বড়োরা সেদিন যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। যাক, এতদিনে এমন কিছু পাওয়া গেল, যা দিয়ে ছোটোদের অসীম কৌতূহল নিবৃত্ত করা যাবে! কে করলেন সেই বৃহৎ কর্মযজ্ঞের সূচনা? এমন চমৎকার একটা কনসেপ্ট যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত, অনেক উচ্চশিক্ষিত পণ্ডিত কেউই তো হবেন তিনি, তাই না! সেই ভদ্রলোকের নাম আর্থার মি, যিনি ইউনিভার্সিটি দূরে থাক, স্কুলের গণ্ডিই পেরোতে পারেননি। কয়েক বছর পড়ার পরই ১৪ বছরের বালক মিকে স্কুলের ক্লাসরুম ছেড়ে স্থানীয় সংবাদপত্রে চাকরি নিতে হয়েছিল জীবিকার তাগিদে। ওখানে তিনি প্রিন্টিং মেশিন দেখাশোনা-সহ টুকটাক কাজ করতেন। ইংল্যান্ডের নটিংহ্যামের কাছে স্ট্যাপলফোর্ডে জন্ম তাঁর। সংবাদপত্রে কাজ করার সময় তিনি বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে ধীরে ধীরে যোগাযোগ বাড়াতে থাকেন। বিবিধ বিষয়ে জ্ঞানার্জনের জন্য তিনি দিনরাত বইয়ের সমুদ্রে ডুবে থাকতেন। স্কুলে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হলেও তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন পুরোপুরি নিজের অধ্যবসায়ের জোরে। সমসাময়িকদের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, তরুণ আর্থার মি কোনও ধরনের দ্বিধা কিংবা লজ্জা না রেখেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সবার কাছ থেকে জানতে চাইতেন। অসীম জ্ঞানস্পৃহা থেকে বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল মিয়ের মধ্যে। তাঁর একটা অদ্ভুত অভ্যেস ছিল, আর তা হলো, কোনও একটি বিষয় নিয়ে বিশদে জেনে নেবার পর তিনি অর্জিত জ্ঞান সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পছন্দ করতেন; বিশেষ করে, শিশুদের সাথে খেলাচ্ছলে ওদের নানান তথ্যে সমৃদ্ধ করা ছিল তরুণ আর্থার মিয়ের নেশা। ১৪ বছর বয়সে তিনি যে সংবাদপত্রে কর্মচারী হিসেবে যোগদান করেছিলেন, ২০ বছর বয়সে সেটার সম্পাদক হয়েছিলেন সাধনার জোরে। তিনি 'দ্য চিল্ড্রেনস নিউজপেপার' নামে একটি সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার স্লোগান ছিল: যা-কিছু ভালো, খবরে থাকুক তা-ই। মিয়ের জীবনদর্শন ছিল: আমরা সৌন্দর্যকে যতটা ভালোবাসি, আমরা ঠিক ততটাই সুন্দর। ১৯৪৩ সালে তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগে তাঁর শেষইচ্ছে কী ছিল, জানেন? তিনি অনুরোধ করে গিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর কেউ যেন তাঁর কফিনে ফুল না দেয়, তাঁর শেষকৃত্যে কেউ যেন সঙ্গে করে ফুল নিয়ে না আসে। বরং যাঁরা তাঁকে ভালোবাসেন, তাঁরা যেন অসুস্থ ও বিকলাঙ্গ শিশুদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে অর্থ দান করেন। ওতেই তাঁর আত্মা শান্তি পাবে। এই মহৎ হৃদয়ের মানুষটির মৃত্যুর পর তাঁর শেষইচ্ছেটি অনেকেই পূরণ করেছিলেন। অসহায় শিশুদের জন্য তাঁদের দেওয়া সকল উপহারের গায়ে লেখা ছিল: আর্থার মিয়ের জন্য। মানুষ তার মানসিকতার সমান বড়ো। ৫। পৃথিবীবিখ্যাত ফরাসি সেলোবাদক পল টর্টেলায়ারকে মানুষ তাঁর জাদুময় সুরমূর্ছনার জন্য যতটা মনে রেখেছে, তার চাইতে অনেক বেশি মনে রেখেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীব্যাপী শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেবার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত তাঁর সলো কনসার্টগুলির জন্য। এই মহান সুরের পথিক বিশ্বাস করতেন, একজনের বিশ্বাস জোর করে আরেকজনের উপর চাপিয়ে দেওয়া কিংবা চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করা অন্যায়। একেকটা মানুষ, একেকটা পথ। প্রতিটি পথই তার পথিকদের ছায়াশীতল আশ্রয় দেয়, তাই প্রতিটি পথই সত্য ও সুন্দর। অন্যের যে পথ, সেটার প্রতি বীতশ্রদ্ধ কিংবা অসহিষ্ণু হওয়াই পৃথিবীর সমস্ত অশান্তির মূল কারণ। তিনি প্রায়ই বলতেন, বহুদিন আগে আমি একটা কথা শুনেছিলাম, যা সবসময়ই আমার মাথায় ঘোরে: যখন কেউ তোমার দিকে এক পেয়ালা চা এগিয়ে দেয়, তখন তুমি যদি বলো, পেয়ালার হাতলটা ডানদিকে, তবে সে বলবে, হাতলটা বামদিকে; এবং তোমাদের দু-জনের কথাই ঠিক। এ পৃথিবীর সবচাইতে দামি কথাটি শ্রীরামকৃষ্ণ বলে গেছেন আজ থেকে দেড়-শো বছরেরও বেশি সময় আগে: যত মত, তত পথ। সহজ কথা, সুন্দর দর্শন। মেনে চললে নিজে ভালো থাকা ও অন্যকে ভালো থাকতে দেওয়া যায়। মস্তিষ্ককে কখনোই, কোনও অবস্থাতেই কোনও কিছুর কাছে বর্গা দিতে নেই; বর্গা দিলেই অশান্তি। ভাবনা: নয়-শো ছেষট্টি ……………………………………………………… ১। দশ বছরের অর্কের সাথে ওদের স্কুলের হেডমাস্টারের কথা হচ্ছে। : অর্ক, এবারের ইদের ছুটি কোথায় কাটাচ্ছ? : ফরিদপুরে, স্যার। : ফরিদপুরের কোথায়? : তাম্বুলখানা গ্রামে। : বলো তো দেখি, তাম্বুলখানায় কে জন্মেছিলেন? (শিক্ষক মনে মনে আশা করেছিলেন, অর্ক নিশ্চয়ই জসীম উদ্দীনের নামটা বলবে।) : আমার মা, বড়ো মামা আর ছোটো মামা। (চোখে-মুখে বেশ গর্ব নিয়ে উত্তর দিল ছোট্ট অর্ক।) ২। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট্ট একটা গ্রামের চার্চে এক ফাদারকে ধর্মোপদেশ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। দীর্ঘসময় খরচ করে তিনি সেদিনের জন্য একটা স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছিলেন, কিন্তু গিয়ে দেখলেন, সেই ছোট্ট গির্জাঘরে তাঁর কথা শুনতে মাত্র একজন বয়স্ক কৃষক এসেছেন। তাঁর একটু মন খারাপ হলো। তিনি কৃষককে বললেন, আপনি বাদে আর কেউ তো এল না। আপনি কি তবুও আমার ধর্মোপদেশ শুনতে চান? না কি চলে যাবেন? কিছুক্ষণ ভেবে বৃদ্ধ কৃষক ধীরে ধীরে উত্তর দিলেন, এক বালতি মুরগির খাবার তৈরি করে আমি যদি আমার বাড়ির উঠোনের পেছনে নিয়ে যেতাম, আর সেই খাবার খেতে মাত্র একটিও মুরগি আসত, তবুও আমি মুরগিটাকে খাওয়াতাম। ফাদার ছিলেন বয়সে যুবক। বৃদ্ধ কৃষকের উত্তর শুনে তিনি খুব খুশি হলেন এবং তাঁর পরিশ্রমের ফসল মনপ্রাণ উজাড় করে ঢেলে দিলেন। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কথা বললেন তিনি। ধর্মোপদেশ দেওয়া শেষ করে তিনি কৃষককে বললেন, আজকের এই সেশনটি আপনার কেমন লেগেছে? মতামত দিলে আমার ভালো লাগবে। বৃদ্ধ কৃষক আবারও উত্তর দিলেন, "এক বালতি মুরগির খাবার তৈরি করে আমি যদি আমার বাড়ির উঠোনের পেছনে নিয়ে যেতাম, আর সেই খাবার খেতে মাত্র একটিও মুরগি আসত, তবুও আমি মুরগিটাকে খাওয়াতাম।" এইটুকু বলে একটু থেমে কৃষকটি হেসে বললেন, "...তবে আমি কখনোই মুরগিটাকে পুরো এক বালতি খাবার খেতে দিতাম না, বরং ওখান থেকে ঠিক ততটুকুই দিতাম, যতটুকু সে খেতে পারবে।" ফাদারের মনে হলো, শেখাতে এসে আজ তিনি নিজেই অনেক কিছু শিখে গেলেন। ৩। একটা টার্ম আছে: দ্য সাইলেন্ট সাফারারস। এ ধরনের মানুষ কখনোই নিজের দুঃখ কাউকে বুঝতে দেয় না এবং সবসময়ই হাসিমুখে থাকে। দেখলে মনে হবে, ওদের জীবনে আনন্দের কোনও সীমা নেই। শুধু তা-ই নয়, ওরা সবাইকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করার চেষ্টা করে এবং বিমর্ষ মানুষকে নানান উপায়ে উৎসাহ জোগায়। ওদের সঙ্গে থাকলে মনে হবে, জীবন সুন্দর, বেঁচে থাকা আজও চমৎকার। ওরা মানুষকে স্বপ্ন দেখতে এবং স্বপ্নের পথে হাঁটতে শেখায়। দীর্ঘসময় ধরে লোকের কষ্টের কথা ধৈর্য নিয়ে শোনে এবং অন্যের জীবনে আলো ছড়ানোর জন্য কাজ করে যায়, যদিও ওদের নিজেদের জীবন গভীর নৈরাশ্যের আঁধারে পরিপূর্ণ। নিজের কষ্টকে সবার চোখ থেকে আড়ালে রাখার মধ্যেই ওরা জীবনের ঐশ্বর্য খুঁজে পায়। ওদের চেষ্টাই থাকে নিজেকে লুকিয়ে রাখার এবং ভুল করেও নিজের সমস্যার সামান্যতমও কাহিনি কাউকেই না বলার। সারাক্ষণই দৈহিক কিংবা মানসিক যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে থাকলেও ওরা কখনোই কোনও কিছু নিয়ে অভিযোগ করে না এবং যে-কোনও পরিস্থিতিতেই সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রার্থনা করে যায়। ওরা সাধারণ মানুষ নয়, বরং অতিসাধারণের ছদ্মবেশে মহৎ হৃদয়ের কিছু দেবদূত। কষ্টের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে পাওয়া অভিযোগহীনতার জীবনই শান্তির জীবন। ৪। কলিংবেলের শব্দে দরোজা খুলে গৃহকর্ত্রী দেখলেন, বাইরে একজন অপরিচিত লোক দাঁড়িয়ে। : ম্যাডাম, আপনি কি সেক্স করতে পারেন? স্বাভাবিকভাবেই, খুব বিরক্ত হয়ে লোকটার মুখের উপর দরোজা বন্ধ করে দিলেন তিনি। মিনিট পাঁচেক পর আবার কলিংবেল বেজে উঠল। : ম্যাডাম, আপনি কি সেক্স করতে পারেন? এবার লোকটাকে গালাগালি করে আগের তুলনায় দ্বিগুণ জোরে দরোজা বন্ধ করে দিলেন ভদ্রমহিলা। "চলে যাচ্ছি, কিন্তু আমি কাল আবার আসব, ঠিক এই সময়েই। উত্তরটা রেডি রাখবেন, ম্যাডাম!"... কথাটা চেঁচিয়ে বলে লোকটা চলে গেলেন। মহিলার স্বামী বিকেলে অফিস থেকে ফিরলে স্বামীকে সব খুলে বললেন তিনি। সব শুনে প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়ে স্বামী বললেন, "আমি কালকে অফিসেই যাব না! আসুক হারামজাদা!" ঠিক ওই সময়ে আবার কলিংবেল বেজে উঠল। নিজের লাইসেন্স-করা পিস্তল হাতে দরোজার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন মহিলার স্বামী। : ম্যাডাম, আপনি কি সেক্স করতে পারেন? আজ মহিলাটি হাসিমুখে আন্তরিক কণ্ঠে উত্তর দিলেন, "হ্যাঁ হ্যাঁ, পারি! আপনি প্লিজ ভেতরে আসুন!" লোকটা ভেতরে না ঢুকে চরম উত্তেজিত স্বরে বললেন, "দারুণ! তাহলে দয়া করে স্বামীর সাথে এই বিদ্যাটা কাজে লাগান এবং আপনার স্বামী হারামজাদাকে বলবেন যেন আমার স্ত্রীকে আর কোনোদিন বিরক্ত না করে!" ৫। এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা ডাক্তারের চেম্বারে গেলেন। : ডাক্তার সাহেব, আমার সমস্যার কথা বলতে আমি ভীষণ বিব্রতবোধ করছি, কিন্তু আপনার কাছে তো বলতেই হবে। : বলুন, কী হয়েছে। : আমার পায়ুপথ দিয়ে প্রায় সবসময়ই বায়ু নির্গত হয়। তবে কখনোই কোনও শব্দ হয় না এবং কোনও ধরনের দুর্গন্ধও ছড়ায় না। এই যেমন ধরুন, আপনার এখানে আসার পর থেকে অন্তত পনেরো বার আমি এই কাজ করেছি, কিন্তু কেউই টের পায়নি। এখন আমার করণীয় কী? : আচ্ছা, বুঝতে পারছি। আমি ওষুধ লিখে দিচ্ছি, আপনি সাত দিন পর আসবেন। ওষুধগুলো প্রতিদিন তিনবেলা নিয়ম করে খেতে ভুলবেন না যেন! এক সপ্তাহ পর ভদ্রমহিলা ডাক্তারের চেম্বারে গেলেন। তাঁর কণ্ঠস্বরে বিরক্তি ও রাগের ছাপ স্পষ্ট। : আপনি আমাকে কী ওষুধ দিয়েছেন, আমি জানি না; কিন্তু আপনার ওষুধ খাওয়ার পর আমার শারীরিক সমস্যা আগের চাইতে বেড়ে গেছে। : কীরকম? : বায়ু নির্গত হবার পরিমাণ আগের মতোই আছে, একটুও কমেনি; বরং ওষুধ খাওয়ার পর এখন নতুন আরেকটা সমস্যা যোগ হয়েছে। আগে কোনও গন্ধই ছিল না, আর এখন দুর্গন্ধের জন্য নিজেই টিকতে পারি না। আপনি আমাকে কী ওষুধ দিলেন? : শান্ত হোন, ম্যাডাম। আপনার তীব্র সাইনাসের সমস্যা ছিল, ওটা সেরে গেছে, তাই এখন আপনি ঘ্রাণ পাচ্ছেন। আজকে আমি আপনার শ্রবণশক্তি ঠিক করার জন্য ওষুধ লিখে দিচ্ছি। ৬। (সৈনিকদের উদ্দেশে) কমান্ডার: তোমাদের মধ্যে কে গান ভালোবাসো? হাত তোলো। দুই জন সৈনিক দ্রুত হাত তুলল। "এদিকে এসো! কুইক!" স্যার ওদের রুচির প্রশংসা করবেন ভেবে ওরা খুশিমনে একদৌড়ে সবার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। "আমাদের বিল্ডিংয়ের লিফটটা নষ্ট হয়ে গেছে। যাও, আমার মেয়ের হারমোনিয়ামটা বাসায় রেখে আসো।" ওরা নিজদায়িত্বে জেনে নিল, কমান্ডারের বাসা নয়তলায়। ৭। টিচার: এ পৃথিবীতে সবচাইতে সুখের মৃত্যু হচ্ছে: ঘুমন্ত অবস্থায় মৃত্যু। কেবল ভালো মানুষেরাই এভাবে মরতে পারে। নাদিয়া: মিস, তাহলে আমার দাদু নিশ্চয়ই একজন ভালো মানুষ ছিলেন। টিচার: কেন? নাদিয়া: কারণ মৃত্যুর সময় তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। টিচার: আহা, সত্যিই তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। কীভাবে মারা গেলেন? হার্ট অ্যাটাকে? নাদিয়া: না না মিস, দাদুর হার্টের অসুখ ছিল না। টিচার: খুবই দুঃখজনক। মৃত্যুর সময় তিনি কোথায় ঘুমিয়ে ছিলেন? খাটে? ইজিচেয়ারে? নাদিয়া: না মিস, তিনি তখন ছিলেন বাসে। টিচার: আহারে, এত ভালো মানুষটা! পাশের যাত্রীরা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি? নাদিয়া: কীভাবে করবে? তাঁর পাশে তো কোনও যাত্রীই ছিল না। তিনি তো তখন বাস চালাচ্ছিলেন।