পরিচয় দিতে হবে না, আমি আপনাদের চিনি।
আপনারা সুখের কবি, একই সাথে সুখী কবি।
সুখকর কবিতা আপনাদের কলম দিয়েই বেরোক!
আপনারা সবাই মিলে ছন্দের পর ছন্দ গেঁথে
গড়ে তুলুন এক একটা ইতিহাসমুগ্ধ প্রেমের সৌধ।
মগজের ও মননের চিরমধুচন্দ্রিমায় ডুবে থাকুন
যুগের পর যুগ বিনাক্লেশে, বিনাকুণ্ঠায়, বিনাউদ্বেগে।
আমি আপনাদের সম্প্রদায়ভুক্ত নই।
আমি আপনাদের মতো করে
সুন্দর কথার মালা গাঁথতে পারি না।
চেষ্টা আমি করে দেখিনি, তা অবশ্য নয়।
তবে ব্যর্থ হয়েছি। সত্যিই আমি পারি না!
আমি বাতাসে নাক পাতলে বারুদের ঘ্রাণ পাই। টের পাই,
কিছু পোড়াবারুদের ফেলে-যাওয়া চিহ্ন বাতাসে ভর করে আছে।
আমি শ্বাস নিতে গেলে অক্সিজেনে কম পড়ে যায়।
সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো নিঃশ্বাস-নেওয়া
আমার জন্মগত অধিকার। আমি এটাই জানতাম একসময়।
আমার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কেন, আমি জানি না।
আমি মাত্র একফুসফুসসমান বাতাসের জন্য
আকুল হয়ে আছি, বহু দিন হলো।
এই দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্ত হতে
আমি সবুজের কাছে গিয়েছিলাম।
বেশি কিছু চাইতে নয়, মাত্র
একবুক তাজা হাওয়ার খোঁজে।
হঠাৎ তীব্র শিস দিয়ে, আমার বাঁ কানের ঠিক পাশ দিয়ে
বাতাসের এলোচুলে বিলি কেটে বেরিয়ে গেছে
একঝাঁক জ্যান্ত বুলেট।
আমি ভয় পেয়ে সেখান থেকে ফিরে আসি।
ফিরে এসে সাগরপারের বেলাভূমিতে
খানিকটা হাঁটাহাঁটি করি, এই আশায় যে,
যদি কখনও জলের ঝাপটায়
একমুঠো মিষ্টি স্নিগ্ধ বাতাস
আমায় সুখ দিতে আসে, পথ ভুল করে হলেও!
প্রিয় সুখী কবিগণ!
ভাবছেন, এবার বুঝি বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়া!
ভুল ভাবছেন। আপনাদের ভাবনার আয়াস
ভেঙে দিচ্ছি বলে কিছু মনে করবেন না।
যাক গে! যা হলো, তা শুনুন তবে।
আমার সুখস্বপ্নের মুহূর্তে, ভুস্ করে কোত্থেকে এক
বেপরোয়া টর্পেডো ভেসে ওঠে!
তেড়ে আসে এক এক করে মারণাস্ত্র!
আমি মাটিতে লুকোতে গিয়ে
কোথাও কোনও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাইনি।
আমি জলের কাছাকাছি গিয়েও কেবলই
জলের তলফুঁড়ে আসা অবিশ্রান্ত শঙ্কাধ্বনি শুনতে পেয়েছি।
আপনারাই বলুন,
আমি আর কোথায়ই-বা যেতে পারতাম?
বলবেন তো, ওই আকাশের কাছাকাছি চলে যান!
পাখির মতো ডানা মেলে
আকাশের চোখে চোখ রেখে উদাত্ত হবার দীক্ষা নিন!
ব্যস্! থামুন অনুগ্রহ করে!
আমি কবি, কবিতা আমিও কিছু লিখেছি।
আমি জানি, এর পরের লাইনে আপনারা কোথায় যাবেন।
সুধী! জেনে রাখুন, আমি ওখান থেকেও ঘুরে এসেছি।
বিকট রকেটের ঘায়ে ঘায়ে বিক্ষত হতে কেমন লাগে,
আপনারা জানেন না।
মেঘের গায়েও যে অগ্নিগিরির বিষাক্ত ধোঁয়া
আটকে থাকে, তার অভিজ্ঞতা
আপনাদের কখনও নিতে হয়নি। অতএব,
আপনারা চুপ করে থাকুন,
আমাকে বলতে দিন।
মহোদয়গণ, আপনারা একটু ভেবে বলবেন,
আমি আজ কোথায় যাই?
প্রেমের কবিতা আমি লিখি না, তাই
আপনারা বিভিন্ন সময়ে আমায় অনেক অভিশাপ দিয়েছেন।
আমাকে ক্ষমা করবেন, আমাকে কখনও
জানতে দেওয়াই হয়নি,
প্রেমের কবিতার সত্যিকারের শরীরটা কেমন হয়!
আপনারা লিখুন। আপনাদের সোনার দোয়াত কলম হোক।
আমি আপনাদের চোখ দিয়ে প্রেম দেখব,
আমি আপনাদের মন খুঁড়ে ভালোবাসা খুঁজে নেব।
এই জীবনে, আমার কলম এখনও পর্যন্ত
এমন একবিন্দুও কালি ঝরায়নি,
যে কালিতে দ্রোহ বাদে অন্য কিছুর খোঁজ আমি কখনও পেয়েছি।
আমার কোনও ভোর নেই,
আমার কোনও রাত্রি নেই।
আমার সামনে কেবলই সময় আছে।
সময়ের মন কিংবা শরীর, সে যেমনই হোক না কেন,
আমি তা থেকে কেবলই বারুদের ঘ্রাণ পাই!