চাঁদ নেই, চারিদিকে অমলিন জোৎস্নার আলো নেই,
আছে ঘোর অমানিশা, বাঁশঝাড়ের শরশর শব্দ
আর ডাহুকের আর্তনাদ!
আমায় ভুল বুঝো না, নিখিলেশ।
এমন সময় যদিওবা তোমার আধেকটা নিয়ে এসে আমার পাশে বসলে,
তবু আমার একাকিত্ব আমাকে তোমার হতে দেয়নি।
যেদিন তুমি একাকিত্বের হাতে আমায় সঁপে দিলে,
সেদিন থেকেই কেবল এই একাকিত্ব আমায় আর একা করে দেয়নি কখনও।
আজ এই মুহূর্তে পিপুল গাছের গা ছুঁয়ে বইছে হু-হু বাতাস,
ঝাঁঝালো সে ঘ্রাণে তোমার গন্ধ মিলে তৈরি হলো এক নতুন সুবাস।
আমার নাকে এসে লাগতেই একঝলকে
আমি আর আমার একাকিত্ব আমাদের অতীতে ভাসি,
যেখানে তুমি নাক ডোবাও আমার চিবুকে, চুলে, বক্ষদেশে,
যেখানে আমি পুষে রাখি তোমার স্পর্শের তৃপ্তি।
নিখিলেশ, ভুল বুঝো নাকো!
পুরোনো সেই তৃপ্তিতেই আমি আজও তৃপ্ত,
আজকের তুমিতে নেই কোনো পরিচিত সুবাস,
যেন এই এখানে খোলস ছেড়ে পালিয়েছে ভুজঙ্গম।
তুমি পালালে কি? না কি হারালে?
তোমায় দেখে মনে হতো,
এ জগতে আজও বাস করে মানুষ ঈশ্বরের মতো!
বাস্তবিকই তা-ই হলো দেখো,
তোমার হয়েও আমি আজ তোমার দ্বারাই হতাহত…রক্তাক্ত...নিহত!
তুমি না থেকেও রয়ে গেছ পুরোটাই, দেখো,
অথচ তুমি আর নেই কোত্থাও!
তুমিও ঈশ্বরেরই মতো আমায় এক সম্বল দিলে…একাকিত্ব!
জানো, এই যে এই পুকুরের জল, শুকনো পাতার মর্মর শব্দ—
আমার হয়ে আজকাল বিদ্রোহ করে,
তোমায় এই ঘোর অমানিশায় হারিয়ে ফেলতে।
না হয়েও যতটুকু হয়ে আছ, তাকে মিলিয়ে দিতে,
আবার বাবুইপাখির বাসার ভেতর যেমন জোনাকি জ্বলে জ্বলে নিভে যায়, আলো দিয়ে যায়,
তেমনি করে বুঝি—এ পৃথিবীতে
নিখাদ একাকিত্ব বলেও তো কিছু নেই।