তুমি যখন অফিস করে ঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করবে,
আমি তখন মস্ত বড়ো এক দানবাকৃতি চানাচুরওয়ালা হয়ে
তোমার সামনে এসে চানাচুর বেচব।
অ্যাই চানাচুর…র…র…চানাচুর…র…র…গরম গরম চানাচুর…র…র…
ঝিল্লি ঝিল্লি জোব্বা পরে ঠিক তোমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে তোমাকে ঠিকই হাসিয়ে যাব।
...হাসো...?
তুমি ক্লান্ত-শ্রান্ত চোখে আমার দিকে একপলকও না তাকিয়ে বেশ বরাবরের মতোই
তাড়িয়ে দেবে…!
বলবে…ধুর ছাই! আমি চানাচুর কিনব না! যাও…যাও…
তারপর, ধরো, তুমি রিকশা ডাকলে।
আমি ঝটপট রিকশাওয়ালার বেশ ধরে
ঠিকই হাজির হব।
খুব সহজ তো! ছেঁড়া একটা গেঞ্জি পরে…আর ফুটোওয়ালা একখান মোবাইল প্যান্ট…হাঁটু অবধি ওঠানো…চলবে না?
প্যাডেল মেরে মেরে ঠিক তোমার সামনে আসব রংবেরঙের আলপনা-আঁকা রিকশা চড়ে।
কোথায় যাবে? কোনো ভাড়া লাগবে না, বাপু! চড়ে বসো না! যাই না তোমায় নিয়ে কিছুপথ?
তুমি দূর দূর করে তাড়িয়ে দেবে…
বলবে, লাগবে না গো…যাও, যাও!
বরং হাঁটবে আজ…উঠবে না তা-ও আমার রিকশায়! হুহ্!
তুমি আনমনে হাঁটতে ধরলে, তখন…?
আমি আসব এক ফুল-বেচুনি ছুকরি সেজে। মুখে কালি মেখে…ওড়না কোমরে বেঁধে…চলবে, হুঁ? ময়লা কোনো সালোয়ার-কামিজে? তেলেতেলে চুলে…কষে বেণী করে?
ফুল নেবে গো, দাদা…ফুল?
লাল গোলাপ-কটা মাত্র দশ টাকা…নেবে?
খুউব মানাবে বউদির খোঁপায়!
ভাত খাব কটা…তোমার টাকায়…নাও না, দাদা!
যাও, যাও! ফুল দিয়ে করবটা কী? হ্যাঁ?
...গেলি আমার সামনে থেকে!
তাড়িয়ে দিলে তো? কুছ পরোয়া নেই!
তুমি খানিকক্ষণ মুদির দোকানে থামবে বোধ হয়…
ওই তো…থেমেছ…স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি!
আমি একদৌড়ে ঢুকি দোকানের গুদামে…
তুমি মালিককে বললে, ভায়া, এক সের চিনি দাও তো!
দোকানের কর্মচারী আমি টুপি আর পাঞ্জাবি-পাজামা পরে দাঁড়িপাল্লায় চিনি মাপতে গেলাম আর অমনিই…
চিনির বস্তাটা পড়ে আমার সারাগায়ে লেগে একাকার হয়ে গেল! ...কী করব, বলো! কখনও মাপিনি যে!
অভিমানী তুমি ঠোঁট বাঁকিয়ে বিতৃষ্ণাতে ফেললে বলেই, লাগবে না তোমার চিনি!
আমার জন্য চিনিও কিনলে না!
কী যে অকর্মণ্য আমি!
তুমি হাঁটা ধরেছ আবার…
ঘরের দিকে।
এসে গেছ কাছেই এবার…
এই তো…সদরদরজা খুলে ঢুকছ!
আমি তোমার উঠোনের শান্ত বেড়াল এবার। কুচকুচে কালো গা, ছাইরঙা গোলগোল চোখ পাকিয়ে দেখছি তোমায়।
তুমি খুউব কাছেই আমার,
তোমার পা-দুটো আমার সামনেই।
তুমি দোরগোড়ায় এসে কড়া নাড়লে,
ওপাশ থেকে বউদি বলে, আসিইইই…
এদিকে আমি তোমায় দেখছিই তো দেখছি…চেয়ে চেয়ে…
কী সুন্দর হাতটি তোমার…ঘড়ি পরেছ…ল্যাভেন্ডার রঙের শার্ট, তার হাতাটি মোড়ানো কনুই পর্যন্ত।
ওপাশের হাতে কিছু কাগজ হবে হয়তো।
ক্লান্ত চোখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে তুমি।
দরজা এবার খুলল বউদি।
আমি এবার ঝড়ো হাওয়া…
তোমার স্ত্রীর কালো চুল উড়িয়ে চলে গেলুম তোমার তিন বছরের ছেলের নরম সফেন গালে;
চুমু খেয়ে ওকে তুলে দিলেম তোমার কোলে।
বাবা…ও বাবা…সোনাবাবা...আদরবাবা...
কী যে খুশি দেখাচ্ছে তোমাকে! কী নির্ভার! কী যে ক্লান্তিহীন!
আহা, নিজের মানুষটার কোলে পরের ছেলেকেও দেখতে এত আরাম!
চানাচুর…চানাচুর…
চানাচুর? তুমি চানাচুর খাও নাকি আবার?
কবে থেকে…অ্যাঁ?
আচ্ছা, নিয়ে আসব গো কাল…
চানাচুর…চানাচুর…