[আবৃত্তির স্ক্রিপ্ট | শিরোনাম: "অস্থির বুকের পলক"]
ধরন: দ্বৈত আবৃত্তি | ভয়েস: পুরুষ (নীড়) ও নারী (তিথি)
পটভূমি: আবছা নৈশাবরণ, নীরবতা, আবেগময় দূরত্ব
ব্যাকগ্রাউন্ড: স্নিগ্ধ পিয়ানোর সুর বা ধীর বিটে ইনস্ট্রুমেন্টাল
(সাউন্ডইফেক্ট: একটানা ফোন রিং, দূরে হালকা বৃষ্টির শব্দ)
নীড় (উদ্বিগ্ন কণ্ঠে): কতক্ষণ ধরে তোমাকে ফোন করছি, তিথি...
কেন কল রিসিভ করছ না?
তিথি (ঠান্ডা কণ্ঠ): এমনি।
নীড়: তুমি কোথায়?
তিথি (কল্পনার মত ধ্বনি): আকাশে।
নীড়: ওই রুম থেকে বেরিয়ে এসো... দরজা লক করেছ কেন?
(দীর্ঘ নিঃশ্বাস, নীরবতা)
নীড় (আবেগে নরম হয়ে): কী হলো? ফোন কেটো না...
পাশের রুমে এসো... আমার বুকের মধ্যে এসে ঘুমোও।
(দরজা খোলার শব্দ)
নীড়: দরজা খোলো, তিথি।
তিথি: বলো।
নীড়: কী করছিলে এতক্ষণ?
চলো আমার সঙ্গে।
তিথি (মৃদু সুরে):
কিছু না... গান শুনছিলাম।
নীড় (ঝাঁঝালো কণ্ঠে): কী?! গান বললে?
এত আস্তে কথা বলো কেন?
একটা প্রশ্নের উত্তর পেতেই—তোমাকে কত বার জিজ্ঞেস করতে হয়?
তিথি (ক্ষমাপ্রার্থী সুরে): আচ্ছা... আর করব না এমন।
নীড়: এসো... জড়িয়ে ধরো আমায়।
তিথি: এলাম।
নীড় (অভিমানী স্বরে): তুমি কি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে?
তিথি (ভালোবাসায় পরিপূর্ণ): হুঁ, দেবো।
তোমার শরীর ছুঁয়ে দিতে ভালো লাগছে...
তোমার পায়ের কাছেই যদি থাকতে বলো,
আমি কখনোই কোথাও যেতাম না, নীড়...
(নীরবতা... একটানা পিয়ানোর সুর)
নীড় (ধীরে ধীরে): ঘুমিয়ে গেছ?
তিথি (নরম কণ্ঠে): তুমি আমার পায়ের ওখানে মাথা রেখে কাঁদছ কেন, নীড়?
এসো... আমার বুকের মধ্যে এসো...
তোমার জায়গা তো এখানে—আমার বুকের পাঁজরে।
নীড়: ওটা তোমায় মানায় না, তিথি।
আমি এখানেই ঠিক আছি।
তিথি: এসো বলছি...
আমার বুকে এসো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেবো।
নীড় (ভেজা হাসি): তুমি ভীষণ পাগল।
তিথি: আর তুমি আমার কাছে এক বিস্ময়, নীড়।
(আবহসঙ্গীত বদলায়—হালকা দুঃখভরা সুর)
তিথি: আমি তোমার কষ্ট বাড়াতে চাইনি...
বিশ্বাস করো, নীড়।
নীড়: তোমার জন্য খুব মায়া লাগে, তিথি।
তুমি যেন এক মায়াবী ঘোরে ভেসে-চলা, গন্তব্যহীন পথ।
তিথি (স্বস্তিমেশানো বিষণ্নতায়): তোমার কাছে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই, নীড়।
আর কিছু সময় পরেই চলে যাব...
এই মুহূর্তটা আমার কাছে অমূল্য।
কারণ এই প্রহর শেষে—
আর কোনোদিন তোমার মুখোমুখি হব না...
(থেমে...) কথা দিচ্ছি।
(ব্যাকগ্রাউন্ডে মৃদু গান – "মেঘভাঙা আলো")
তিথি: গান শুনছ?
মনে আছে, মিউজিক সবসময় আমাদের আত্মার দূরত্ব কমিয়ে দিত...
নীড়: নিশ্চয়ই মনে আছে।
তিথি (ঠান্ডা দৃঢ়তায়): আমি তোমাকে ভালোবাসি, নীড়।
ভালোবাসবও।
তোমায় জানিয়ে গেলাম।
(নীরবতা... পিয়ানো থামে)
নীড় (আবেগে গলা কাঁপে): "তুমি আমায় দেখবে না!"
ঠিক আছে, তিথি...
তুমি এভাবেই নাহয় রেখো আমায়
তোমার দৃষ্টিসীমার বাইরে...
তিথি (মৃদু): যাবে না?
বসে আছ কেন?
নীড়: তোমার আয়নার কাঁচে তাকিয়ে—
আমাদের স্মৃতিগুলো দেখছিলাম...
তাই দেরি হচ্ছে।
তিথি (ধীরে): তোমার কাছে এসে দাঁড়াতেই,
তোমার চুলগুলো ছুঁয়ে দিলাম...
পারিনি নিজেকে আটকে রাখতে—
তোমায় জড়িয়ে ধরতেই হলো।
জানো, বুকের ভেতরটা এত অস্থির লাগছে...
তুমি থাকো...
নীড় (নিসর্গে ডুবে): তোমার ঠোঁটে রেখে যাচ্ছি আমার ভালোবাসা...
তিথি (নরম হাসিতে): পাগল একটা তুমি...
চলো, যেতে হবে।
দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দাও আমায়।
নীড়: সব কিছু নিয়েছ তো, তিথি?
কিছু ফেলে যাচ্ছ না তো?
তিথি: না... (মনে মনে) (পাগলটা বুঝতেই পারল না...
আমি নিজেকেই পুড়িয়ে অবশেষে ফিরে যাচ্ছি...)
নীড় (চোখে জল): সাবধানে যেয়ো...
আমাকে পৌঁছে একটা টেক্সট করবে তো, তিথি?
বলো না?
তিথি (অন্তরের আর্তিতে): করব...
(তোমার সঙ্গে হয়তো আর কখনও কথা হবে না, নীড়...)
(দীর্ঘ নিঃশ্বাস, নীরবতা)
নীড় (শেষবার): পাগলি... শোন...
(দূরে দরজা বন্ধ হবার শব্দ। আবহসংগীত ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়)
[সমাপ্ত]