তোমার অপেক্ষায় আমার চোখে কত কত বার যে জল ঝরেছে, তা আমার মনেও পড়ে না।
তোমার অপেক্ষায় আমি প্রতিদিনই মন খারাপ করে বসে থেকেও, ‘কাল আবার মেসেজ পাঠিয়ে দেখব…যদি মায়া হয়, যদি ওর মন পালটায়…’ নিজেকে এইসব প্রবোধ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি অনেক অনেক বার।
তোমার অপেক্ষায় আমি কত যে রাত্রি সকালের আলোর মতন চোখ মেলে কাটিয়েছি একটানা, তার হিসেব কেউ জানে না, আমিও…না।
তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমি বড়ো হতে শিখেছি, সমাজের বড়ো…স্বভাবের বড়ো…কাব্যিক শোনাল কি? আরে দেখো! তোমার অপেক্ষায় থেকে থেকে তো আমি কাব্যের জগতটা পর্যন্ত চিনে ফেলেছি!
আমি এখন খুব ভালো করেই জানি, কখন মুরাকামি পড়তে হবে, আর কখনই-বা পড়তে হবে শহীদ কাদরি! আমাকে তুমি ভয় দেখাও? কীসের ভয় গো ওটা?
ভালো কথা, তোমার অপেক্ষায় থেকে থেকে আমি তো ভয় বানানটাই ভুলে গেছি। হা হা… যেই মেয়েকে গুষ্টিসুদ্ধ লোক মিলেও বই নিয়ে বসাতে পারেনি, তোমার অপেক্ষা সেই মেয়েকে দিয়ে পাতার পর পাতা অঝোরে লিখিয়ে নিয়েছে।
জানো সে খবর? জানো না। রাখবেই-বা কেন? প্রেমিকাদের খবর কি আর টেলিভিশনে দেখায়? দেখায় তো শুধু চাল-ডালের দাম বাড়ার খবর, করোনায় মৃত লাশেদের খবর। লাশ যতদিন জিন্দা থাকে, ততদিন কে খবর নেয়? আর কারাই-বা সে খবর প্রচার করে!?
রে বাবা…খবরদার, এগুলোকে আবার অভিমান ভেবে নিয়ো না যেন, যদিও আমি জানি, তুমি ওসবের ধারটাও ধারো না! অভিমানের মতন অত ঐশ্বর্যের খোঁজ তোমার মতন ব্যাংকার মানুষ কি আর রাখবে!?
তোমার অপেক্ষা ভুলতে যখন সমুদ্রের কাছে গেলাম, আমার গল্প শুনে সমুদ্র বেচারাও কেঁদে ভাসিয়ে দিল। আমিই শুধু দেখলাম, আর কেউ দেখল না।
তোমার অপেক্ষায় আমি নিজেকে জড়িয়ে ধরতে শিখেছি। শক্ত করে নিজবাহুতে নিজেকে জড়িয়ে আদর করতে বড্ড হাসি পেত একসময়। তবে এখন বেশ লাগে। নিজের চুলে নিজেরই বিলি কেটে দিতে খুব আরাম লাগে।
শোনো কিছু কথা। শুধুই আমি জানি, কত রাত অপেক্ষা করে করে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এসেছে, কত রাত আমি শুধু বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে কাটিয়েছি।
আমি আসলে চিঠিটা লিখতে বসেছিলাম তোমাকে সেই কথাগুলো জানানোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু কিছুই লিখতে পারছি না!
আচ্ছা, আমি কি গিলে ফেলেছি কথাগুলো? না কি কথাগুলোই গিলে ফেলেছে আমাকে?